আয়াতুল কুরসী বাংলা
Table of Contents
আয়াতুল কুরসী বাংলা
আয়াতুল কুরসী
ফযীলতসমূহ : (১) প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর এবং রাতে এশার নামাযের পর শোয়ার সময় যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাক উক্ত পাঠকারীর স্বয়ং রক্ষণাবেক্ষণকারী হবেন। জ্বিন-পরী, দেও-দানবের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়া যায় । সকল প্রকার বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট দূর হয় । মনের সকল প্রকার নেক বাসনা পূর্ণ হয় এবং রুজী-রোজগারে উন্নতি হয় । প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর বিশেষ করে ফরয নামাযের পর একবার করে পাঠ করলে অত্যন্ত আরামের সাথে রুহ কবজ করা হয়। ঘর হতে বের হবার সময় অথবা বিদেশে রওয়ানা হবার সময় এ আয়াতসমূহ পাঠ করলে সকল প্রকার বিপদ হতে নিরাপদে থাকা যায় এবং যাবতীয় উদ্দেশ্য সফল হয় ।
(২) পবিত্র হাদীস শরীফে এ আয়াতকে কোরআন শরীফের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত বলে বর্ণনা করেছে। এ আয়াতে মহান আল্লাহ্ তাআলার কুরসী বা পবিত্র অবস্থান সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে বলে একে আয়াতুল কুরসী নামে অভিহিত করা হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলার বিশেষ কতগুলো গুণ এবং প্রশংসার বিষয় উল্লিখিত হয়েছে।
পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিতভাবে পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া উক্ত ব্যক্তির আর কোন রোগ হতে পারে না। এছাড়া রাতে শোয়ার সময় এ দোয়া পাঠ করে ঘুমালে বাড়ীঘর নিরাপদে থাকবে । জ্বিন ও ইনসানের ক্ষতি হতে রক্ষা পাবার জন্য এশার নামাযের পর তিনবার উক্ত দোয়া পাঠ করে দু’হাতে তিনবার ফুঁ দিয়ে তিনটি তালি বাজাবে । ইনশাআল্লাহ নিরাপদে রাত যাপন করবে।
উচ্চারণ : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা-হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু । লা- তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওউম, লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতে ওয়ামা ফিল আরদ্বি মান যাল্লাযী ইয়াশফা’উ “ইন্দাহু ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম । ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহী ইল্লা বিমাশাআ ওয়াসিআ কুরসীয়্যুহুচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা ওয়াহুয়াল ‘আলীয়্যুল ‘আযীমু।
অর্থ : এক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্ অনাদি, অনন্ত,চিরজীবন্ত, স্হপনকর্তা, রক্ষাকর্তি আল্লাহ্ চির-চৈতন্যময়, এক মুহূর্তকালের জন্যও তিনি চেতনাহীন হন না বা নিদ্রাভিভূত অথবা তন্দ্রাভিভূত হন না। এক আল্লাহ্ই আকাশ-পৃথিবীতে জীবজন্তু,চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, মানব-দানব, দেবতা-ফেরেশতা, শক্তি, বিজ্ঞান যা কিছু আছে সে সবের মালিক ও স্বত্বাধিকারী এবং একচ্ছত্র বাদশাহ। আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে কারো আদেশ করা দূরে থাকুক তাঁর নিকট সুপারিশ করারও ক্ষমতা কারো থাকবে না শুধু তিনি যাদেরকে সন্তুষ্ট হয়ে অনুমতি দিবেন শুধু তাঁরাই সুপারিশ করতে পারবেন, তাছাড়া তিনি যার উপর সন্তুষ্ট নন তেমন কেউ একটু সুপারিশও করতে পারবে না।
আল্লাহর রাজত্ব, আল্লাহর সিংহাসন সমস্ত আকাশ পৃথিবীব্যাপী। সমস্ত আকাশ পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণে আল্লাহ্ বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না। আল্লাহ্ শক্তি আল্লাহ্র মহিমা তার চেয়ে অনেক বেশি, অনেক ঊর্ধ্বে ।
সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়াত
সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়াত
ফযীলতসমূহ : (১) প্রতিদিন সকালে ও বিকালে নিম্নের আয়াতসমূহ পাঠকারী ব্যক্তির মনের সকল আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হয় এবং সকল প্রকার -মুসীবাত দূর হয় আর পাঠকারীর কোনরূপ অভাব অনটন থাকে না। রাত্রে শোয়ার সময় পাঠ করলে নিরাপদে থাকা যায়। এছাড়া এ দোয়া পাঠ করে মহাन আল্লাহর নিকট যা চাওয়া হয় ইন্শাআল্লাহ্ তা পূরণ হয়।
(২) পবিত্র বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ আছে যে, উক্ত আয়াতসমূহ রাতের বেলায় পাঠ করলে ইন্শাআল্লাহ্ নিরাপদে থাকবে। এছাড়া উক্ত আয়াতসমূহ যথানিয়মে পাঠ করে মহান আল্লাহর নিকট যা প্রার্থনা করবে মহান আল্লাহ্ তার সে প্রার্থনা কবুল করবেন।
(৩) অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে যে, উক্ত আয়াতে কারীমা ‘আরশের নিচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। এটি আল্লাহ্ তাআলার রহমত, নৈকট্য লাভের উছিলা ও দোয়া । এটা ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর অন্তত একবার করে পাঠ করা উচিত।
সুতরাং এ দোয়াটি নিজেরা শিক্ষা করতে এবং স্ত্রী-পুত্র ও সন্তানদেরকে শিক্ষা দান করার জন্য হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া নিয়মিতভাবে পাঠের ফলে নিম্নলিখিত ফল লাভ করা যায় ।
(৪) উক্ত সূরা রাতে পাঠ করে ঘুমালে কোনরূপ চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে না।
(৫) কঠিন বিপদের সময়ে আয়াতুল কুরসী এবং নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে বিপদ হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
(৬) একটি নির্দিষ্ট সময়ে আয়াতুল কুরসী ও নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ পাঠ করলে আর্থিক অভাব দূর হয়, ঋণ পরিশোধ হয়, শত্রুর শক্তি কমে যায় এবং মনের আশা পূর্ণ হয় ।
উচ্চারণ ঃ আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহে মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনূনা । কুল্লুন আমানা বিল্লাহে ওয়ামালা-ইকাতিহি ওয়াকুতুবিহি ওয়া রুসূলিহি, লানুফাররিকু বাইনা আহাদিম্ মির রুসূলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না ওয়াআত্মা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়াইলাইকাল মাছীরু। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফছান ইল্লা উস’আহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাছাবাত। রাব্বানা লা তুআখেযনা ইন্নাছীনা আও আখত্বানা রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল ‘আলাইনা ইছরান কামা হামালতাহু ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাক্বাতালানা বিহি ওয়া ফু ‘আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ার হামনা আনতা মাওলানা ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন।
অর্থ : যা কিছু রাসূলের রব অবতীর্ণ করেছেন, তার প্রতি রাসূল ও মুমিনরা ঈমান এনেছে, সবাই আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব এবং রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে ; তারা বলে : আমরা রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করি না, আরো বলে, শুনেছি ও পালন করেছি, হে রব! আমরা মাফ চাই, তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন। আল্লাহ সামর্থ্যের বাইরে কারো উপর দায়িত্ব চাপান না, প্রত্যেকেই কর্মফল ভোগ করবে ; আর রব! ভুল কিংবা ত্রুটি করলে আমাদেরকে অপরাধী করো না ; হে রব! আমাদের উপর গুরু-দায়িত্ব দিও না, যেমনটি দিয়েছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের ; হে রব ! আমাদের উপরে এমন বোঝা চাপিও না যা বহন করিবার শক্তি আমাদের নাই, আমাদেরকে মার্জনা কর, ক্ষমা কর, এবং দয়া কর, তুমিই আমাদের প্রভু-মনিব, তাই কাফের দলের উপর আমাদের বিজয়ী কর।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
উচ্চারণ : হুয়াল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লাহু ‘আলেমুল গাইবে ওয়াশ্ শাহাদাতি হুয়ার রামানুর রাহীমু। হুয়াল্লাহুল্লাযী লাইলাহা ইল্লাহু, আল মালেকুল কুদ্দুসুসসালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আযীযুল জাব্বারুল মুতাকাব্বিরু । সুবহানাল্লাহে ‘আম্মা ইউরিকূনা। হুয়াল্লাহুল খাা লেক্বল বারেউল মুছাওয়্যেরু লাহুল আসমাউল হুসনা, ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতে ওয়ালআরদ্ধে ওয়াহুয়াল ‘আযীযুল হাকীমু ।
অর্থ : আল্লাহ্ তিনি, যিনি ব্যতীত আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই, তিনি গুপ্ত, প্রকাশজ্ঞ, তিনি দয়ালু , দয়াময়। আল্লাহ্ তিনিই যিনি বাদশাহ, পবিত্র, নির্দোষ, মহান, কাফেরগণ কর্তৃক বর্ণিত অংশীদারদের থেকে আল্লাহ্ পবিত্র। তিনি আল্লাহ্, স্রষ্টা, নির্মাতা, রূপদাতা, তাঁর বহু সংখ্যক উত্তম নাম আছে। তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে আসমান ও জমিনের সমুদয় বস্তু, তিনি প্রতাপশালী, সুকৌশলি।
ফযীলত : যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর নিম্নলিখিত তিনটি আয়াত পাঠ করবে মহান আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফিরিশ্তা পাপসমূহের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দোয়া করার জন্য নিযুক্ত করেন। আর পাঠকারী ব্যক্তি ঐদিন মৃত্যুবরণ করলে ইনশাআল্লাহ্ শহীদের মর্যাদা লাভ করবে ।
আয়াতে কুতুব
আয়াতে কুতুব
উচ্চারণ : ছুম্মা আনযালা ‘আলাইকুম মিম্ বা’দিল গাম্মি আমানাতান্ নু‘আসাই ইয়াগশী ত্বায়িফাতাম মিনকুম, ওয়াত্বায়িফাতুন, ক্বাদ আহাম্মাতহুম আনফুসুহুম ইয়াযুনুনা বিল্লাহি গাইরাল হাক্বকি যন্নাল জাহিলিয়্যাতি, ইয়াকুলূনা হাল লানা মিনাল আমরি মিন শাইয়্যিন। কুল ইন্নাল আমরা কুল্লুহু লিল্লাহি । ইউখফুনা ফী আনফুসিহিম মা লা ইউবদূনা লাক্, ইয়াকুলূনা লাও কানা লানা মিনাল আমরি শাইয়্যুম মা ক্বতিলনা হাহুনা। ক্বল লাও কুনতুম ফী বুয়ুতিকুম লাবারাযাল্লাযীনা কুতিবা ‘আলাইহিমুল কাতলু ইলা মাদ্বাজি’য়িহিম, ওয়ালি ইয়াবতালিয়াল্লাহু মা ফী ছুদূরিকুম ওয়ালি ইউমাহহিছা মা ফী ক্কুলূবিকুম । ওয়াল্লাহু ‘আলীমুম্ বিযাতিচ্ছুদূরে ।
ফযীলত : পবিত্র কোরআন শরীফের এ আয়াতটি আয়াতে কুতুব নামে প্রসিদ্ধ। এ আয়াত পাঠের অসংখ্য ফযীলত রয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি ফযীলত উল্লেখ করা হল ।
(১) এ আয়াতের নিয়মিত আমলকারী মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে সমর্থ হয় এবং এর দ্বারা সংসারে সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
(২) ফজর ও মাগরিবের পর নিয়মিতভাবে পাঠকারীর পরিবারস্থ সকলে ইনশাআল্লাহ নিরাপদে বাস করতে পারবে।
(৩) কোন কঠিন উদ্দেশ্য সফল হবার জন্য ৪০ দিন পর্যন্ত ৪০০ বার করে পাঠ করলে উদ্দেশ্য সফল হবে।
(৪) শত্রুকে ধ্বংস করার জন্য ৯ দিন পর্যন্ত ২৯ বার করে পাঠ করলে শত্রু ধ্বংস হবে।
(৫) হিংসুকের হিংসা হতে রক্ষা পাবার জন্য ২৯ দিন পর্যন্ত ২৯ যার করে পাঠ করলে রক্ষা পাওয়া যায়।
(৬) চাকুরি লাভের জন্য ১০ দিন পর্যন্ত ১০ বার করে পাঠ করতে হয়।
(৭) ধন-সম্পত্তি, ছেলেমেয়ে ও শরীর সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক ৫ বার করে পাঠ করবে।
(৮) কোন শত্রুর সাথে দেখা করতে যাবার সময় এবং সকল প্রকার উদ্দেশ্য সফল হবার জন্য দিনে তিনবার পাঠ করতে হয়।
আয়াতে শেফা বা কঠিন রোগ মুক্তির দোয়া
আয়াতে শেফা বা কঠিন রোগ মুক্তির দোয়া
উচ্চারণ : ওয়াইয়াশফি ছুদূরা ক্বাওমিম্ মু’মিনীনা ওয়া শিফাউঁলিমা ফিচ্ছুদূরি ইয়াখরুজু মিম্বুত্বনিহা শারাবুম মুখতালিফুন আলওয়ানুহু ফীহি শিফাউন্লিন্নাসি । ওয়া নুনাযযিলু মিনাল ক্বোরআনি মাহুয়া শিফাউওঁ ওয়া রাহমাতুঁল্লিল মু’মিমীনা । ওয়াইযা মারিদ্বতু ফাহুয়া ইয়াশফীনা কুলহুয়া লিল্লাযীনা আমানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।
ফ্যীলত : উল্লিখিত আয়াতে কারীমাকে আয়াতে শেফা বলা হয় । কোনরূপ কঠিন রোগ হতে মুক্তি লাভের জন্য এটি বিশেষ উপকারী ।
নিয়ম : সাদা চিনা মাটির বাসনে মেশক ও জাফরান কালি দ্বারা উক্ত আয়াতসমূহ লিখে পানি দ্বারা ধৌত করে খাওয়াতে হয় অথবা তাবিজরূপে গলায় বেঁধে দিতে হয় ।
ফেরেশতা পরিচিতি
ফেরেশতা পরিচিতি
মালায়েকা বা ফেরেশতা আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম এক সৃষ্টি। তারা নূরের তৈরি। নবী রসূলগণ ব্যতীত কোন মানব চোখ তাদেরকে দেখতে ও উপলব্ধি করতে পারে না। তারা পানাহার করে না। ঘুমায়ওনা । তন্দ্রাও তাদের আচ্ছন্ন করতে পারে না। তারা পুরুষ লিঙ্গও নয়। এমনকি তাদের সম্পর্কে ক্লিব লিঙ্গেরও কল্পনা করা যায় না। তারা সর্বদা খোদায়ী নির্দেশ পালনে ব্যাপৃত।
খোদায়ী জিকির তাদের জীবন ধারণ, কাম-ভাব তাদের মধ্যে দেয়াই হয়নি। আসমান জমীনে অসংখ্য ফেরেশতাকে আল্লাহপাক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। যাদের সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ বলতে পারে না। যারা কস্মিনকালেও আল্লাহর হুকুমের সীমা লংঘন করেন না। বরং আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে যে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে কাজ আঞ্জাম দিতে সদা সক্রিয়।
তাদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা হলো সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে বড় বড় চারটি কাজের জিম্মাদার বানিয়েছেন। চার ফেরেশতার নাম হল একঃ হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। দুই ঃ হযরত ইস্রাফীল (আঃ)। তিন ঃ হযরত মিকাঈল (আঃ)। চার : হযরত আযরাঈল (আঃ)।
হযরত জিব্রাঈল আমীন আঃ কে আল্লাহ্ তায়ালা আম্বিয়ায়ে কেরামের (আ) কাছে ওহী পৌছে দেয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন। হযরত ইস্রাফীল (আঃ)-কে আল্লাহ পাক কিয়ামত সংঘটিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি একটি সিংগা হাতে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশের প্রতীক্ষায় রয়েছেন । আল্লাহ্ নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে তিনি তাতে ফুৎকার দিবেন। ফলে সারা পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হবে।
হযরত মিকাঈল (আঃ) সৃষ্ট জীবের খাদ্যের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত এছাড়াও বৃষ্টি বর্ষণ, বায়ু প্রবাহ ও তারই অধীন। আর তার অধীনস্থ রয়েছেন আরো অনেক ফেরেশতাগণ। যাদের কতেক বায়ু, নদী-নালা ইত্যাদির দায়িত্বে নিয়োজিত এবং হযরত আযরাঈল (আঃ) সৃষ্ট জীবের জান কবজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত । তার অধীনেও অগণিত ফেরেশতা রয়েছে এবং ভাল মানুষের জান নেয়ার জন্য এক ধরনের ফেরেশতা নিয়োজিত। আর বদ লোকের প্রাণ বের করার জন্য কঠোর আকৃতির ফেরেশতা নিয়োজিত ।
এছাড়াও কিছু ফেরেশতা সর্বদা মানুষের সাথে থাকেন। তারা মানুষের ভাল-মন্দ আমল লিপিবদ্ধ করেন। তাঁদেরকে কিরামান কাতিবীন বলা হয় এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর নির্দেশে মানুষের মধ্য হতে শিশু, দুর্বল ও বৃদ্ধাদেরকে বিপদাপদ হতে রক্ষা করার দায়িত্বে নিয়োজিত
কিছু ফেরেশতা মানুষের মৃত্যুর পর কবরে প্রশ্ন করার কাজে নিয়োজিত।
তাদেরকে মুনকার নাকীর বলা হয় এবং কিছু ফেরেশতা জান্নাত ও জাহান্নামের শৃংখলার কাজে নিয়োজিত এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর আরশ বহন করার কাজে নিয়োজিত এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর তাসবীহ্ তাহ্লীল ও তাঁর পরিবত্রতা বর্ণনায় সর্বদা মশগুল। আর একদল ফেরেশতা রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং যেখানে আল্লাহর জিকির, ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় সে সকল মসলিশে উপস্থিত হয়। আর তথায় অংশ গ্রহণকারী সকলের ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য প্রদান করে ।
মানুষের সৃষ্টি
মানুষের সৃষ্টি
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ক্বোরআনেকারীমে সূরায়ে বাকারায় এরশাদ করেন-
উচ্চারণ : ওয়া ইজ ক্বালা রাব্বুকা লিল মালায়িকাতি ইন্নী জায়িলুন ফিল আরদি খালীফাহ্ ক্বালু আ-তাজ আলু ফীহা মাই ইউফসিদু ফীহা ওয়া ইয়াসফিকুদ্দিমা। ওয়া নাহনু নুসাবিহু বিহামদিকা ওয়ানুক্বাদ্দিসু লাকা। ক্বালা ইন্নী আ’লামু মা-লা তা’লামুন।
অর্থঃ স্মরণ করুন ঐ সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন- নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বলল-আপনি তথায় এমন জাতির সৃষ্টি করবেন, যারা তথায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে। আর রক্তপাত ঘটাবে। অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসায় গুণকীর্তন করছি ও আপনার পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। আল্লাহ্ বললেন, নিশ্চয় আমি যা জানি, তোমরা তা জান না ।
পরবর্তিতে আল্লাহ তায়ালা মাটির দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন এবং হযরত আদম (আঃ)-কে ফেরেশতাদের সম্মুখে উপস্থাপন করে তাদেরকে তাঁকে সেজদা করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহর হুকুমের তাবেদার ফেরেশতাগণ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস তাঁকে সেজদা করা হতে বিরত রইল আর বলল, আমি সেজদা করব আদমকে! অথচ তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। আর আমি সৃজিত হয়েছি স্বণ সাদৃশ্য অগ্নিকুণ্ড থেকে। তাই ইবলিস আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হল । আর তাকে চিরস্থায়ী শান্তি নিবাস জান্নাত হতে বের করে দেয়া হল । আর তখনই শয়তান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল যে, সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীব মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করবেনই । আর আল্লাহ তাকে বলে দিলেন, তুই আমার প্রিয় বান্দাকে কিছুতেই গোমরাহ্ ও পদচ্যুত করতে সক্ষম হবি না ।
বিশ্ব পরিমণ্ডল মানবের প্রাদুর্ভাব
বিশ্ব পরিমণ্ডল মানবের প্রাদুর্ভাব
আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) কে বেহেশতে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করে দিলেন এবং তার নিঃস্বঙ্গতা দেখ তার বাম পাজরের অভি হতে। হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তারা দু’জন পরমানন্দে বেহেশতে বসবাস করতে লাগলেন। কিন্তু ইবলিস শয়তান তাদের পিছু নিল। তাদেরকে বিপথগামী করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। আল্লাহ তা আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশতের একটি বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করতে নিষেধ করে দিলেন।
এ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল সে জাতীয় সকল ফল ভক্ষণ করা। কিন্তু আদম (আঃ) বুঝতে পারলেন, শুধু মাত্র ঐ বৃক্ষ ভক্ষণ করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। আর শয়তান এ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করল। আর হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার ধোকা দিয়ে তাদেরকে ঐ জাতীয় বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করাল। ফলে তারা আল্লাহর মর্জির খেলাফ করলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে দু’জনকে পৃথিবীর দু’প্রান্তে নামিয়ে দেয়া হল ।
ততক্ষণে তারা আপন অপরাধের কথা বুঝতে পারলেন এবং সেজদাবনত হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতে লাগলেন । তারা বললেন-
উচ্চারণ ঃ রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতার হামনা লানা কুনান্না মিনাল খা-সিরীন।
অর্থ : হে, আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নফসের উপর অত্যাচার করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব ।
এভাবে বহুদিন কান্নাকাটির পর আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ক্ষমা পরবশ হলেন, এবং তাদেরকে একত্রিত করে দিলেন, আর সে থেকেই বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানব সন্তানের বিস্তার লাভ শুরু হয়। তাইতো হযরত আদম (আ)-কে আদি পিতা বলা হয়