গল্পের বই,
ভূমিকা
গল্পের বই, ছোটরা গল্প পড়তে ভালোবাসে, বিশেষত পশুপাখির গল্প, নীতিকথার গল্প। ছোটদের উপপাঠ্য হিসাবে নীতিকথার গল্পের বিকল্প নেই । গল্পগুলো ইশপ, হিতোপদেশ, পঞ্চতন্ত্র ও জাতক থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এই গল্পগুলো কয়েক হাজার বছর ধরে সব দেশের ছোটদের নীতিশিক্ষা দিয়ে এসেছে । এই গল্পগুলো আজও ছোটদের অপরিহার্য পাঠ্য।
এই গল্পগুলো থেকে ছোটদের মনে দয়া, পরোপকার, প্রীতি, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণ বিকশিত হবে। এছাড়া গল্পের শেষে নীতিকথা উল্লেখ করে গল্পপাঠের আনন্দকে খর্ব করা হয়নি। ছোটরা একদিন নিজেই নীতিগুলি আবিস্কার করবে।
সাধারণ কথাবার্তায় ব্যবহার করা হয় এমন মার্জিত শব্দ দিয়ে সহজ-সরল বাক্যে গল্পগুলো লেখা হয়েছে। “শিক্ষণীয় গল্প” গ্রন্থটি পড়ে সকল ছেলে-মেয়েরা বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে বলে আমি আশা করি।
Table of Contents
গল্পের বই
শেয়াল আর আঙুর
একবার একটা শেয়ালের খুব খিদে পেয়েছি- ল। সে বনের মধ্যে কিছু খাবার যোগাড় করতে পারেনি। তখন সে এক চাষির আঙুরের বাগানে ঢুকেছিল। বাগানের একটা মাচায় পাকা পাকা আঙুরের থোকা বুঝছিল । পাকা ও রসাল আঙুর দেখে শেয়ালের বড় লোভ হলো। কিন্তু আঙুরগুলো ছিল বেশ উপরে, শেয়ালের নাগালের বাইরে।
শেয়াল কিছুদূর থেকে দৌড়ে এসে একটা লাভ দিল। কিন্তু সে আঙুরের থোকা ধরতে পারল না। বারবার চেষ্টা করেও শেয়াল আঙুরের নাগাল পেল না। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে শেয়াল নিজে নিজে বলল, “আমি মোটেই আঙুর খেতে চাইনি। তাছাড়া, আমার মনে হয় এই আঙুরগুলি বেশ টক।”
নীতিকথা : পেলে না, তাই বলছ মন্দ ৷
গল্পের বই / কাক আর জলের কলসি
একদিন একটা কাকের ভীষণ তেষ্টা পেয়েছিল। এমন সময় সে একটা মাটির কলসি দেখতে পেল। কলসিটায় অল্প জল ছিল। তাই কলসির উপরে বসে, গলা বাড়িয়েও কাক জলের নাগাল পেল না। জলের জন্য সে কলসিটাকে কাত করার চেষ্টা করল। কিন্তু কলসিটা ছিল বেজায় ভারী ।
এমন সময় কাক, কিছুদূরে কতকগুলো পাথরের টুকরো দেখতে পেল। তখন তার মাথায় একটু বুদ্ধি এল। সে ঠোঁটে করে এক একটা পাথরের টুকরো এনে কলসিতে ফেলতে লাগল। পাথরের টুকরো পড়ে পড়ে কলসির তলার জল অনেক উপরে উঠে এল ।
বুদ্ধিমান কাক তখন ইচ্ছামতো জল পান করে তৃষ্ণা মেটাল ৷
নীতিকথা : বুদ্ধি থাকলে উপায় হয় ।
গল্পের বই / লোভী কুকুর
একটা কুকুর ছিল বড় লোভী। সে একদিন মাংসের দোকান থেকে এক টুকরো মাংস চুরি করেছিল। তখন সে একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়ে মাংসের টুকরোটা খাবে মনে করেছিল । তাই সে মাংসের টুকরো মুখে নিয়ে দৌড়াতে লাগল ।
পথে, খালের উপরে ছিল একটা সাঁকো। কুকুরটা সেই সাঁকোর উপর দিয়ে দৌড়াচ্ছিল । এমন সময় সে খালের জলে নিজের ছায়া দেখতে পেল। কিন্তু সে নিজের ছায়াটাকে অন্য একটা কুকুর মনে করল। লোভী কুকুরটা দেখল, সেই অন্য কুকুরের মুখেও এক টুকরো মাংস রয়েছে! লোভী কুকুরটা তখনই তা কেড়ে নিতে চাইল । তাই সে ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের মুখ থেকে চুরি করা মাংসের টুকরোটা খালের জলে পড়ে তলিয়ে গেল ।
নীতিকথা : অতি লোভ ভালো নয় ।
গল্পের বই / পিঁপড়ে আর ঘুঘু
এক গ্রীষ্মের দুপুরে একটা পিঁপড়ে নদীতে জল পান করতে গিয়েছিল। একটা ঘাসের পাতা বেয়ে সে প্রায় জলের কাছে পৌঁছে গেল। হঠাৎ, পা পিছলে সে নদীর জলে পড়ে হাবুডুবু খেতে লাগল ।
একটা ঘুঘু পাখি ডুবন্ত পিঁপড়েটাকে দেখতে পেয়েছিল। পিঁপড়ের বিপদ দেখে তার দয়া হল। সে তখনই একটা শুকনো পাতা এনে পিঁপড়েটার কাছে ফেলল । পিঁপড়ে সেই শুকনো পাতায় চড়ে নিরাপদে তীরে পৌঁছে গেল ।
একদিন পিঁপড়ে দেখল- এক শিকারি ঘুঘুটাকে লক্ষ্য করে তির ছুড়ছে। উপকারী ঘুঘুটার বিপদ দেখে পিঁপড়ে তখন শিকারের পায়ে কুটুস করে কামড়ে দিল। পিঁপড়ের কামড় খেয়ে শিকারির হাত কেঁপে গেল। তাই তির লাগল না ঘুঘুর গায়ে । এই সুযোগে ঘুঘু ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল ।
নীতিকথা : উপকার করলে উপাকার পাওয়া যায় ।
গল্পের বই / বাঘ আর বক
একবার একটা বাঘের গলায় একটা হাড় ফুটেছিল। এজন্য বাঘের গলায় খুব যন্ত্রণা হয়েছিল । যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বাঘ বনের মধ্যে ছোটাছুটি করতে লাগল । যে প্রাণীর সঙ্গে তার দেখা হয়, তাকেই সে বলে, “ভাই হে, আমার গলা থেকে হাড়টা বার করে দাও না।” কিন্তু কেউ রাজি হয় না।
অবশেষে বাঘ একটা বকের কাছে গিয়ে বলল, “তুমি যদি আমার গলা থেকে হাড়টা বের করে দাও, তবে তোমায় পুরস্কার দেব।” পুরস্কারের লোভে বক রাজি হলো। সে তার লম্বা ঠোঁট দিয়ে বাঘের গলা থেকে হাড়টা বের করে দিল । বক তখন বাঘের কাছে পুরস্কার চাইল ।
বাঘ রেগে বলল, “বাঘের মুখের মধ্যে মাথাটা ঢুকিয়ে আবার যে তা ফিরে পেয়েছিস- সে তো যথেষ্ট পুরস্কার! যদি তোর প্রাণের মায়া থাকে, তবে এখান থেকে পালা।”
নীতিকথা : দুষ্টের কথা বিশ্বাস করতে নেই ।
গল্পের বই / শিয়াল আর কাক
একদিন ভোরে এক কাক একটা রুটি চুরি করেছিল। রুটি মুখে নিয়ে কাক একটা গাছের ডালে গিয়ে বসল। এখানে বসেই সে সকালের জলখাবারটা খাবে মনে করল । এমন সময় একটা ধূর্ত শেয়াল কাকটাকে দেখতে পেল। শেয়াল কাককে ঠকিয়ে ওই রুটিখানা নিজে খেতে চাইল । তাই সে গাছটার তলায় গিয়ে কাককে শুনিয়ে বলতে লাগল, “সুপ্রভাত, সুপ্রভাত! আজ আমার ভাগ্য ভালো, তাই আপনার মতো সুশ্রী কাকের দেখা পেলাম।
আমার মনে হয়- আপনার যেমন সুন্দর রূপ, তেমনই মিষ্টি আপনার গলা!’ নিজের প্রশংসা শুনে কাক খুব খুশি হলো। সে তার মিষ্টি গলা শেয়ালকে শোনাতে চাইল । “কা’- “বলে যেই সে গান ধরল, অমনি তার মুখ থেকে রুটিটা মাটিতে পড়ার আগেই শেয়াল তা লুফে নিয়ে বনের মধ্যে পালিয়ে গেল।
নীতিকথা : প্রশংসায় আত্মহারা হলে ঠকতে হয়।
গল্পের বই / পিঁপড়ে আর ফড়িং
এত শীতের সকালে একটা পিঁপড়ে তার ভাঁড়ার ঘরে বসেছিল। এমন সময় কনকনে শীত আর ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে একট ফড়িং সেখানে এসে হাজির হলো। ফড়িং পিঁপড়েকে ডেকে বলল, “ভাই, তোমার ভাঁড়ার থেকে আমায় কিছু খাবার দেবে? আমার ঘরে কিছুই খাবার নেই।” পিঁপড়ে দুঃখিত হয়ে বলল, “তুমি কি হেমন্তকালে কিছু খাবার সঞ্চয় করনি?” ফড়িং বলল, “না। তখন আমি সময় পাইনি।” পিঁপড়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “শীতের জন্য খাবার সঞ্চয় করতে সময় পাওনি! কোন কাজে ব্যস্ত ছিলে, শুনি?”
ফড়িং বলল, “সারাটা হেমন্তকাল আমি গান গেয়ে কাটিয়েছি । তাই সময় পাইনি।” পিঁপড়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, “বেশ করেছ! শীতকালটা তবে তুমি নেচে কাটিয়ে দাও।”-এই বলে পিঁপড়ে তার ভাঁড়ার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল ।
নীতিকথা : কাজের সময় কাজ না করলে কষ্ট পেতে হয়।
গল্পের বই / শেয়াল আর ছাগল
একবার একটা শেয়ালকে গাঁয়ের কুকুরেরা তাড়া করেছিল । কুকুরের তাড়া খেয়ে পালাবার সময় শেয়াল একটা কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কুয়োটা গভীর ছিল না, তার মধ্যে বেশি জলও ছিল না। তবু অনেক চেষ্টা করেও শেয়াল কুয়ো থেকে উঠে আসতে পারল না ।
এমন সময় একটা বুড়ো ছাগল কুয়োর কাছে এল । সে কুয়োর মধ্যে শেয়ালকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ওখানে কী করছ, ভাই?” চালাক শেয়াল বলল, “কুয়োর জল খাচ্ছি। এমন চমৎকার জল এদেশে আর নেই! এসে খেয়ে দেখতে পার।” শেয়ালের কথায় ছাগলটা তখনই লাফিয়ে কুয়োর মধ্যে নেমে পড়ল । শেয়ালের এই সুযোগ।
সে ছাগলের পিঠে দাঁড়িয়ে, কোনো রকমে, কুয়ো থেকে উপরে উঠে এল । বোকা ছাগল কুয়োর মধ্যেই পড়ে থাকল ।
বনে চলে যাওয়ার আগে, শেয়াল হতভাগ্য ছাগলটাকে উপদেশ দিল, “ভাই, ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার আগে পরিণামটা ভেবে নিয়ো।”
নীতিকথা : বিপদে পড়া লোকের উপদেশে কান দেওয়া উচিত নয় ৷
গল্পের বই / ইঁদুরের সভা
এক সময় একটা গোলাবাড়িতে অনেকগুলো ইঁদুর সুখে বাস করত। একদিন, একটা মোটা বিড়াল এল সেখানে। তারপর, ইঁদুরের লোভে বিড়ালটা সেই গো- লাবাড়িতেই থেকে গেল। তখন থেকে ইঁদুরদের বিপদের আর সীমা থাকল না । একদিন ইঁদুরেরা গোপনে একটা সভা করল । এই সভার আলোচনার বিষয় ছিল- বিড়ালের অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায় ঠিক করা। এই সভায় অনেকে অনেক উপায়ের কথা বলল।
কিন্তু কোনো উপায়ই সকলের মনের মতো হলো না । অবশেষে একটা নেংটি ইঁদুর বলল, “বিড়ালের হাত থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো- বিড়ালটার গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া। তা হলে, বিড়ালের চলাফেরার সময় ঠুনঠুন ঘণ্টা বাজবে। তা শুনে আমরা সাবধান হতে পারব।” এই সহজ উপায়ের কথা শুনে সকলে উৎসাহে হাততালি দিয়ে উঠল । হাততালি থামল, একটা বুড়ো ইঁদুর বলল, “বিড়ালটার গলায় ঘণ্টা বাঁধতে কে যাবেন, উঠে দাঁড়ান।” কেউ উঠে দাঁড়াল না ৷
নীতিকথা : কাজের কথা বলা যত সহজ করা তত সহজ নয় ৷
গল্পের বই / অহংকারী দাঁড়কাক
একবার একটা দাঁড়কাক কতকগুলো ময়ূর-পালক কুড়িয়ে পেয়েছিল। দাঁড়কাকটা সেই রঙিন পালকগুলো নিজের গায়ে গুঁজে নিয়েছিল। তখন তার মনে হয়েছিল যে তাকে ময়ূরের মতোই সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে আর কুৎসিত কালো কারুদের দলে সে থাকে কেন? এই ভেবে অহংকারী দাঁড়কাকটা ময়ূরদের সঙ্গে থাকতে গেল । ময়ূরেরা কিন্তু সহজেই তাকে কাক বলে চিনতে পারল।
তাই তারা দাঁড়কাকটার গা থেকে ময়ূর-পালকগুলো খুলে নিয়ে, ঠুকরিয়ে তাড়িয়ে দিল।
মনের দুঃখে দাঁড়কাকটা আবার নিজের দলে ফিরে আসতে চাইল। কিন্তু কাকেরা এই দলত্যাগী দাঁড়কাকটাকে তাদের দলে ঠাঁই দিল না ।
বেচারা দাঁড়কাকটা সেই দিন থেকে একা ।
নীতিকথা : বোকারা ধার করা ধন নিয়েও গর্ব করে।
গল্পের বই / লেজকাটা শেয়াল
একবার একটা খেঁকশেয়াল একটা ফাঁদের মধ্যে ধরা পড়েছিল । সে কোনো রকমে ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিল। কিন্তু তার লেজটা ফাঁদে কাটা গিয়েছিল। পাছে অন্য শেয়ালেরা তাকে ‘লেজকাটা’ বলে ঠাট্টা করে- এই লজ্জায় সে কয়েকদিন তার গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকল ।
অবশেষে লেজকাটা শেয়ালটা অন্য শেয়ালদের ডেকে একটা সভা করল । সেই সভায় সে বলল, “বন্ধুগণ, আমাদের দেহের উপর রয়েছে একটা ল্যাজের বোঝা। ল্যাজ না থাকলে আমরা বেশ আরামে চলাফেরা করতে পারি। এই দেখুন, আমি আমার লেজটা কেটে বাদ দিয়ে কত আরামে আছি। তাই বলি, আপনারাও আপনাদের লেজগুলো কেটে ফেলুন।”
একটা ধেড়ে শেয়াল বলল, “আপনার পরামর্শ মানতে আমরা রাজি নই। আপনার লেজটা যদি কাটা না যেত তা হলে আপনি এই পরামর্শ দিতেন না । আমরা আমাদের লেজ নিয়ে সুখে আছি।”
নীতিকথা : নিজের দুর্দশা ঢাকতে অপরকে দুর্দশায় ফেলা ।
গল্পের বই / নেকড়ে বাঘ আর মেষশাবক
একবার একটা ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ঝরনায় জল খাচ্ছিল । এমন সময় সে দেখতে পেল- নিচে কিছুদূরে একটা মেষশাবকও ঝরনায় জল খেতে নেমেছে। নেকড়ে বাঘ উপর থেকে চিৎকার করে বলল, “ওরে হতভাগা, আমার খাবার জল ঘোলা করিস কেন?” মেষশাবক বিনীতভাবে বলল, “আপনি ভুল বলছেন। জল উপর থেকে নিচের দিকে আসে। ঝরনার জল আপনার কাছ থেকেই আমার দিকে আসছে।” নেকড়ে বাঘ রেগে বলল, “বেশি কথা বলবি না। আমি তোকে চিনি । তুই না গত বছর আমায় গালাগাল দিয়েছিল?”
মেষশাবক ভয়ে ভয়ে বলল, “গতবছর তো আমার জন্মই হয়নি!” নেকড়ে বলল, “তবে তুই গালি দিনি, তোর বাপ দিয়েছে। সে তো একই কথা!”
এই বলে হিংস্র নেকড়েটা নিরীহ মেষশাবকের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল ।
নীতিকথা : দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।
গল্পের বই / সিংহ আর নেংটি ইঁদুর
একদিন বনের মধ্যে এক সিংহ ঘুমিয়েছিল। এমন সময় একটা নেংটি ইঁদুর ছোটাছুটি করতে করতে সিংহের গায়ের উপরে উঠে পড়েছিল। সিংহের ঘুম ভেঙে গেল। সে তার কঠিন থাবা দিয়ে ইঁদুরটাকে ধরে ফেলল।
বেচারা নেংটি ইঁদুর ভয়ে কেঁদে ফেলল। সে মিনতি করে বলল, “মহারাজ, দয়া করে আমায় ছেড়ে দিন । আপনার দয়ার কথা আমি সারা জীবন মনে রাখব।” সিংহের দয়া হলো। সে ইঁদুরটাকে ছেড়ে দিল
কয়েকদিন পরে সেই সিংহটা শিকারিদের জালের ফাঁদে আটকে পড়েছিল। সে অনেক টানাটানি করেও শক্ত দড়ির জাল ছিঁড়তে পারল না। তখন সে রাগে আর ভয়ে ভীষণ গর্জন করতে লাগল ।
নেংটি ইঁদুরটা দূর থেকেই সিংহের গর্জন শুনতে পেয়েছিল। সে ছুটে এসে তার ধারালো দাঁত দিয়ে জালের দড়ি কেটে ফেলল । সিংহ বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে তার ছোট্ট বন্ধুটিকে অনেক ধন্যবাদ দিল।
নীতিকথা : ছোট্ট দয়াও বড় হয়ে ফিরে আসে।
গল্পের বই / কুকুর আর নেকড়ে
এক রাতে একটা পোষা কুকুরের সঙ্গে একটা নেকড়ে বাঘের দেখা হয়েছিল । নেকড়ে বাঘ কুকুরকে জিজ্ঞাসা করল, “ভাই, তোমায় বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখছি। এত খাবার কোথায় পাও?
কুকুর বলল, “আমার প্রভু আমায় দুবেলা পেটপুরে খেতে দেন। তুমি যদি প্রভুর কাজকর্ম করে দাও, তবে তিনি নিশ্চয় তোমায় খেতে দেবেন।” নেকড়ে বলল, “পেট- পুরে খেতে পেলে আমি কাজ করতে রাজি।” কুকুর বলল, “তবে এসো আমার সঙ্গে।” কুকুরের সঙ্গে নেকড়ে বাঘ গ্রামের দিকে চলল। এমন সময় নেকড়ে বাঘ দেখল— কুকুরের গলায় একটা দাগ।
তাই সে কুকুরকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার গলায় কীসের দাগ?” কুকুর বলল, “বুঝলে ভাই, দিনের বেলায় আমায় কোনো কাজ থাকে না। তাই প্রভু দিনের বেলায় আমায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। এ তারই দাগ।” নেকড়ে বাঘ চিন্তিত হয়ে বলল, “তবে আমি তোমার প্রভুর কাজ করব না। তোমার মতো পরাধীন থাকার চেয়ে অনাহারে থাকাও ভালো।” এই বলে নেকড়ে বাঘ বনে ফিরে গেল ।
নীতিকথা : পরাধীনতার চেয়ে অনাহারে থাকাও ভালো ।
গল্পের বই / খরগোশ আর কচ্ছপ
একদিন একটা খরগোশ আর একটা কচ্ছপের মধ্যে দৌড়ের বাজি হয়েছিল। বনের পশুরা সকলে এই বাজি দেখতে এসেছিল। শেয়াল হয়েছিল বিচারক। বিচারক হুক্কাহুয়া বলে হাঁক দিতেই দৌড় শুরু হয়ে গেল ।
দৌড় শুরু হতেই খরগোশ এক ছুটে অনেক দূর চলে গেল। কচ্ছপ বুকে ভর দিয়ে থপথপ্ করে চলতে লাগল ।
অনেকদূর দৌড়ে গিয়ে খরগোশ থামল। সে মনে মনে বলল, “কচ্ছপ অনেক পিছনে পড়ে আছে । আমি এখন একটু জিরিয়ে নিই।” খরগোশ একটা বড় গাছের ছায়ায় বসে পড়ল । একটু পরে তার ঘুম পেল। তাই সে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল । কচ্ছপ একবারও না থেমে কেবলই চলতে লাগল ।
এভাবে চলতে চলতে সে প্রায় দৌড়ের সীমায় পৌঁছে গেল। এমন সময় খরগোশের ঘুম ভাঙল। চারদিকে তাকিয়ে কচ্ছপকে দেখতে না পেয়ে খরগোশ আবার দৌড়াতে লাগল। কিন্তু ততক্ষণে কচ্ছপ শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। খরগোশ তাই দৌড়ের বাজিতে কচ্ছপের কাছে হেরে গেল ।
নীতিকথা : ধীর হলেও স্থির যারা তারাই কাজে সফল হয়।
গল্পের বই / মিথ্যাবাদী রাখাল
এক রাখাল ছেলে বনের কাছে মেষ চরাত। সারাদিন একা একা মেষ চরাতে তার ভালো লাগত না। তাই সে মাঝে মাঝে মাঠের চাষিদের সঙ্গে অনেক রকম মজা করত । একদিন এই রাখাল ছেলে ‘বাঘ! বাঘ!’ বলে চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকার শুনে মাঠের চাষিরা লাঠি বাঘ তাড়াতে এল। চাষিরা কাছে এসে দেখে রাখাল দিব্যি মেষ চরাচ্ছে। বাঘটাঘ কিছুই নেই! চাষিরা রাখালকে এমন মিছামিছি চিৎকার করতে নিষেধ করে গেল ।
চাষিদের নিষেধ না শুনে এই রাখাল প্রায়ই ‘বাঘ বাঘ’ বলে চিৎকার করত। চাষিরা এসে তাকে বকাবকি করে চলে যেত।
একদিন সত্যি সত্যি বাঘ এল! রাখাল ভয়ে ‘বাঘ! বাঘ!’ বলে আর্তনাদ করল। কিন্তু সেদিন চাষিরা তাকে সাহায্য করতে এল না। তারা ভেবেছিল রাখাল আজও মিথ্যা চিৎকার করছে।
রাখাল একটা গাছে চড়ে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচাল বটে, কিন্তু তার কয়েকটি মেষ বাঘের পেটে গেল ।
নীতিকথা : মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না ৷
গল্পের বই / চাষি আর তার ছেলেরা
এক গ্রামে এক বুড়ো চাষি বাস করত। এই চাষির ছিল দুটি অলস ছেলে । ছেলে দুটি কোনো কাজকর্মই করত না। বুড়ো চাষি অনেক চেষ্টা করেও তাদের কাজকর্ম শেখাতে পারেনি। মরবার আগে চাষি তার দুই ছেলেকে ডেকে বলল, “আমার যা কিছু সম্পদ তা সবই আমাদের আঙুরের বাগিচায় রয়েছে।
বুড়ো চাষি মারা গেল । চাষির ছেলেরা মনে করল- আঙুরের বাগিচার মাটির নিচে তাদের বাবা নিশ্চয় সোনাদানা রেখে গেছে। পাছে অন্যেরা চুরি করে নিয়ে যায়, তাই তারা দুই ভাই বাগিচার মাটি কোপাতে লাগল ।
প্রথমে কোদাল দিয়ে, পরে লাঙল দিয়ে তারা বাগিচাখানা চষে ফেলল । কিন্তু সোনাদানা কিছুই পেল না সোনাদানা না পেলেও সে বছর ওদের বাগিচায় প্রচুর আঙুর ফলেছিল। এই আঙুর বেচে দুভাই অনেক টাকা পেয়েছিল। তখন তারা বাপের কথার মানে বুঝতে পারল- ভালো চাষ করলে মাটিতেই সোনা ফলে ।
নীতিকথা : পরিশ্রমই উন্নতির মূলমন্ত্র ৷
গল্পের বই / শেয়াল আর বক
এক বনে একটা শেয়াল বাস করত। সে নিজেকে বনের অন্য পশুপাখির চেয়ে বেশি চালাক মনে করত। এই চালাক শেয়ালের প্রতিবেশী একটা বক। শেয়াল বককে ঠকিয়ে একটু মজা করতে চেয়েছিল। তাই সে একদিন বককে নিমন্ত্রণ করেছিল। বক শেয়ালের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে এল। শেয়াল চালাকি করে একটা থালায় কিছু পাতলা ঝোল পরিবেশন করল।
বক তার লম্বা ঠোঁট দিয়ে থালা থেকে এক ফোঁটা ঝোলও খেতে পারল না। একদিকে শেয়াল নিজেই থালার সবটুকু ঝোল চেটেপুটে খেয়ে নিল। বককে ঠকাতে পেরে শেয়াল মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু সে মুখে বলল, “আমি খুব দুঃখিত যে ঝোলটা আপনার পছন্দ হয়নি, তাই একটুও খাননি।” বক বলল, “আমি বেশ খেয়েছি!“” তারপর সে শেয়ালকে বলল, “কাল আপনি আমার বাড়িতে খাবেন।”
পরদিন এই চালাক শেয়াল সেজেগুজে বকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গেল । বক জানত, শেয়াল কাঁকড়া খেতে খুব ভালোবাসে। বক তাই কাকড়ার ঝোল রান্না করেছিল। কিন্তু সে থালায় পরিবেশন না করে ভারী কুঁজোর মধ্যে ঝোল পরিবেশন করেছিল। কুজোর সরু গলায় শেয়াল মুখ ঢুকাতে পারল না । কাকড়ার ঝোলের সুগন্ধে তার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছিল। তাই সে খিদের জ্বালায় কেবল কুঁজোর গা চাটতে লাগল। এদিকে বক তার লম্বা গলা কুঁজোর মধ্যে ঢুকিয়ে সহজেই সবটুকু ঝোল খেয়ে নিল। শেয়ালের অবস্থা দেখে বক জিজ্ঞাসা করল, “কেমন হয়েছে ঝোলটা?” শেয়াল আর কী বলে? সে জিভ চাটতে চাটতে বলল, “তা মন্দ কী!”
বাড়ি ফিরবার সময় শেয়াল আপন মনে বলল- বক আজ আমায় উচিত শিক্ষা দিয়েছে।
নীতিকথা : অন্যের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করবে, অন্যেও তোমার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করবে।
গল্পের বই / খরগোশ আর তার বন্ধুরা
একটা খরগোশের অনেক বন্ধু ছিল। এজন্য তার গর্বের সীমা ছিল না। সে মনে করত, যত উপকারী বন্ধু তার আছে, অন্য কারও তেমন নেই ।
একদিন সেই খরগোশ শুনতে পেল যে একদল শিকারি কুকুর সেদিকেই আসছে। ভয়ে খরগোশের মুখ শুকিয়ে গেল । তখন তার মনে পড়ল বন্ধুদের কথা । খরগোশ দৌড়ে গেল তার বন্ধু ঘোড়ার কাছে।
খরগোশ ঘোড়াকে বলল, “বন্ধু, শিকারি কুকুরেরা এদিকেই আসছে। তুমি পিঠে করে আমায় এখন অন্য কোথাও নিয়ে চলো।” ঘোড়া বলল, “আমি তোমার উপকার করতে সবসময়েই রাজি। কিন্তু বন্ধু, এখন আমার একটা ভীষণ জরুরি কাজ রয়েছে। কী করি, বলো তো? তুমি বরং আমাদের বন্ধু ষাঁড়ের কাছে যাও। সে নিশ্চয় তোমায় সাহায্য করবে।”
খরগোশ ছুটতে ছুটতে গেল ষাঁড়ের কাছে। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “বন্ধু, শিকারি কুকুরেরা এদিকেই আসছে। আমার খুব বিপদ। তুমি আমায় শিং দিয়ে কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে আমায় বাঁচাও।” ষাঁড় বলল, “এ আর বেশি কাজ কী! কতবার তো শিং দিয়ে গুঁতিয়ে কত শিকারি কুকুরকে দেশছাড়া করেছি। কিন্তু মুশকিল হল— এক্ষুনি আমি একটা কাজে বেরিয়ে যাচ্ছি। তুমি বরং আমাদের বন্ধু রামছাগলের কাছে যাও। সে ঠিক একটা উপায় করবে।”
খরগোশ তখন একে একে রামছাগলের কাছে, ভেড়ার কাছে, গাধার কাছে, শুয়োরের কাছে গেল । সকলেরই তাকে সাহায্য করার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু ঠিক এই সময়ে প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো জরুরি কাজ রয়েছে !
অবশেষে বন্ধুদের সাহায্যের আশায় না থেকে খরগোশ প্রাণপণে দৌড়াল ।
নীতিকথা : বিপদের সময় সাহায্য করে সে-ই আসল বন্ধু ৷
গল্পের বই / গেঁয়ো ইঁদুর আর শহুরে ইঁদুর
এক গ্রামে একটা ইঁদুর বাস করত। তার বন্ধু বাস করত দূরের এক শহরে। একদিন সেই শহুরে বন্ধুটি গ্রামে বেড়াতে এল। শহুরে বন্ধুকে কাছে পেয়ে গেঁয়ো ইঁদুর খুব খুশি হলো। সে শহুরে ইঁদুরকে গাঁয়ের মাঠঘাট বনজঙ্গল আর খেতখামার দেখাল; নিজের ঘরবাড়ি দেখাল ৷
দুপুরে খেতে বসে গেঁয়ো ইঁদুর বলল, “কী খাবে বলো? গ্রামে যা যা পাওয়া যায়, সবই আমার ঘরে আছে। এই বলে সে তার বন্ধুকে কিছু শুকনো ফলমূল আর ধান-গম-যব খেতে দিল। এসব খাবার শহুরে ইঁদুরের পছন্দ নয়। তাই সে খেতে খেতে বলল, “সত্যি কথা বলতে কী, পাড়াগাঁয়ে তোমাদের খাওয়া-দাওয়া একেবারে সেকেলে। এসব শুকনো খাবার আজকাল শহরে কেউ খায় না।
তাছাড়া এভাবে মাটিতে বসাও আমার অভ্যেস নেই। শহরে এসো— দেখবে খাওয়া কাকে বলে!” একদিন গেঁয়ে ইঁদুর শহরে গেল। সেখানে তার বন্ধু একটা বড় বাড়িতে বাস করে । গেঁয়ো ইঁদুর গিয়ে শহুরে ইঁদুরের সেই বাড়িতে হাজির হলো । বন্ধুকে পেয়ে শহুরে ইঁদুরের খুব আনন্দ হলো। সারাদিন তারা দুজনে গল্প করে কাটাল ।
রাতে শহুরে ইঁদুর তার বন্ধুকে নিয়ে একটা খাবার ঘরে এল । এখানে কিছু আগেই বাড়ির লোকেরা লুচি-মাংস, পোলাও-কাবাব খেয়ে গেছে। তারই উচ্ছিষ্ট অনেক পড়ে রয়েছে। শহুরে ইঁদুর এসব সুখাদ্য যোগাড় করে গেঁয়ো ইঁদুরকে নিয়ে খেতে বসল। গেঁয়ো ইঁদুর অবাক হয়ে বলল, “এরকম রাজভোগ তুমি রোজ খাও নাকি!” শহুরে ইঁদুর বলল, “রোজ, কোনো কোনো দিন দই-মিষ্টিও খাই ।”
এমন সময় খাবার ঘরে ঢুকল এক বাঘা কুকুর। কুকুর দেখে শহুরে ইঁদুর খাবার ফেলে দে ছুট! গেঁয়ো ইঁদুরও ভয়ে একটা নর্দমার মধ্যে ঢুকে পড়ল। কুকুর চলে গেলে দুই বন্ধু গর্ত থেকে বেরিয়ে এল । তখন গেঁয়ো বলল শহুরে ইঁদুরকে, “গ্রামে আমরা শুকনো খাবার খাই বটে, তবে তোমাদের মতো মুখের খাবার ফেলে দিয়ে আমাদের পালাতে হয় না।”
এই বলে সে সেই রাতেই গ্রামে ফিরে এল ।
নীতিকথা : ভয়ে ভয়ে রাজভোগ খাওয়ার চেয়ে শান্তিতে শাক-ভাত খাওয়াও ভালো।
গল্পের বই / বাঘ ও পথিক
এক বনে একটা বাঘ ছিল। সে বুড়ো হয়ে গিয়েছিল। তাই সে ছোটাছুটি করে গায়ের জোরে শিকার ধরে খেতে পারত না ।
সেই বনের পাশেই ছিল একটা এঁদো ডোবা। বুড়ো বাঘটা রোজ সকালে এই ডোবার কাছে গিয়ে বসে থাকত। বাঘটার কাছে একটা সোনার বালা ছিল। দূরে কোনো পথিক দেখলে বাঘ তাকে ডেকে বলত, “ওহে পথিক, আমি এই সোনার বালাটি তোমায় দান করব। এসে নিয়ে যাও। আমার দাঁত পড়ে গিয়েছে, নখ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে! আমায় ভয় করো না ।
তবুও কেউ বাঘের কাছে বালা নিতে আসত না ।
একদিন এক লোভী পথিক বাঘের কথা শুনে বালা নিতে এলো । বাঘ বলল, “আগে গোসল করে এসো।” বাঘের কথামতো পথিক গোসল করতে গেল । গোসল করতে গিয়ে পথিক ডোবার কাদায় আটকে গেল। বুড়ো বাঘ তখন সহজেই তাকে ধরে খেয়ে ফেলল।
নীতিকথা : লোভ করলে পাপ হয় আর পাপের ফলে মৃত্যু হয় ।
গল্পের বই / পায়রা ও শিকারি
একদিন এক শিকারি পাখি ধরার জাল পেতেছিল। পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য পানির ওপর সে কিছু ধানও ছড়িয়ে রেখেছিল।
এক ঝাঁক পায়রা উড়ে উড়ে যেতে ধানগুলো দেখতে পেল। তারা ধান খেতে নেমে এলো ফাঁদের উপর। ধান খেতে এসে তারা সবই জালে আটকে পড়ল। তখন তারা বেজায় হুটোপাটি লাগিয়ে দিল তখন পায়রাদের দলপতি হুকুম দিল, “থাম! যত হুটোপাটি করবে ততই বেশি জড়িয়ে পড়বে। ওই দেখো শিকারি আসছে।
শিকারির কথা শুনে পায়রাগুলো ভয়ে চুপ করে গেল। দলপতি আবার বলল, “এই জালটা খুব বড় নয়, বেশি ভারীও নয়। আমরা সবাই একসাথে জালটা নিয়েই উড়ব। যাব পাহাড়ের ওপারে। তারপর জাল থেকে বের হব। এসো, এক-দুই-তিন-”
এক ঝাঁক পায়রা একসাথে ডানা মেলে জাল নিয়ে উড়ে চলল । শিকারি তাই দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইল।
নীতিকথা : সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সব বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়া যায়।
গল্পের বই / কাক, হরিণ আর শেয়াল
এক বনে বাস করত একটা কাক আর একটা হরিণ। তাদের দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। ভোর হতেই খাদ্যের সন্ধ্যানে কাক দূর কোনো গায়ে উড়ে যেত। আর হরিণ বনের মধ্যে ঘুরে কচি ঘাস লাতাপাতা খেত। সন্ধ্যার আগে দুই বন্ধু ঘরে ফিরে এসে খানিকক্ষণ গল্প করত। তারপর ঘুমিয়ে পড়ত।
একদিন হরিণ বলল, “ভাই কাক, আজ আমাদের এক নতুন বন্ধু এসেছে। সে হলো এক শেয়াল ।
আমাদের বনের বাইরের কত খবর সে জানে!” কাক বলল, “ভালোই হলো। দিনের বেলায় এখন আর তোমায় একা থাকতে হবে না। কিন্তু ভাই হরিণ, এই নতুন বন্ধুটিকে আমরা এখনও ভালো রকম চিনি না। সেজন্য একটু সাবধানে থেক। তার সঙ্গে বেশিদূরে বেড়াতে যেও না।” কাকের পরামর্শ হরিণের তেমন পছন্দ হলো না ।
হরিণ এখন প্রতিদিন শেয়ালের সঙ্গে বনের বাইরে গ্রামের দিকে যায়। সেখানে চাষিদের জমির ফসল খায়। শেয়াল জানে, হরিণ একদিন চাষিদের হাতে ধরা পড়বে। চাষিরা হরিণকে মেরে চামড়া নেবে। মাংস ফেলে দেবে। শেয়ালের আশা, সে সেদিন সেই মাংস খাবে।
একদিন বিকালে কাক বাসায় ফিরে হরিণকে দেখতে পেল না। সে মনে মনে বলল, “হরিণের কোনো বিপদ হয়নি তো? যাই, একবার খুঁজে দেখি!” খুঁজতে খুঁজতে কাক অবশেষে হরিণের দেখা পেল। বন যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক ফসলের জমিতে চাষির জালের মধ্যে হরিণ ধরা পড়েছে। কাককে দেখতে পেয়ে হরিণ কেঁদে বলল, “ভাই কাক, শেয়ালের পরামর্শে এখানে এসে বিপদে পড়েছি!”
কাক জিজ্ঞাসা করল, “তোমার নতুন বন্ধুটি কোথায়?” হরিণ বলল, “বন্ধু নয়—সে আমার শত্রু । কচি ঘাসের লোভ দেখিয়ে আমায় এখানে এনে বিপদে ফেলেছে । সে আমার মাংস খাবার আশায় কাছেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।”
কাক বলল, “এই দেখ, পাঠি হাতে চাষি আসছে। এখন তুমি মড়ার মতো পড়ে থাক। আমি থাকব এই গাছটায় বসে। তোমায় মৃত মনে করে চাষি যেই জালটা তুলে নেবে অমনি আমি ডেকে উঠন। তুমি সেই মুহূর্তে দৌড়ে পালাবে।” জালের মধ্যে একটা হরিণ মরে রয়েছে দেখে চাষি জাপটা তুলে নিল। সময় বুঝে কাক কা-কা করে ডেকে উঠব, আর হরিণ হুড়মুড় করে উঠে ছুটে পালাল।
নীতিকথা। কারো মিষ্ট কথায় ভুলো না। যদি যেচে তোমার সাথে কেউ বন্ধুত্ব করতে আসে তবে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে নাও।
Read More: গল্পের বই