ছোটদের গল্পের বই
ছোটদের গল্পের বই, রূপকথার গল্প নিয়ে আমাদের এই পোস্টটি আপনি অনেক সুন্দর এবং মজাদার ও হাসির গল্প পাবেন আমাদের এই পোস্ট এ
Table of Contents
ব্যাঙের বড় হওয়া
একদিন এক ডোবার পাশে মাঠে চরছিল একটা ষাঁড়। ডোবার এক ব্যাঙ ষাঁড়টাকে দেখে ভাবল, ইচ্ছে করলে তো আমিও আর মতো বড় হতে পারি । এই ভেবে মস্ত ষাঁড়টার মতো বড় হবার জন্য ব্যাঙ দম টেনে নিজের শরীরটাকে ফোলাতে লাগল ।
ডোবার পাড়েই রাখালছেলেরা খেলা করছিল। ব্রাঙের শরীল যখন ফুলে খানিকটা বড় হয়েছে সে তখন ছেলেদের ডেকে বলল, ওহে ছেলেরা, এদিকে একবার তাকিয়ে দেখো তো ষাঁড়টা কি আমার চেয়েও বড়?
ব্যাঙের কথা শুনে রাখাল ছেলেরা হাসতে শুরু করল। একজন বলল, কোথায় তুমি আর কোথায় ষাঁড়। তুমি কখনও ষাঁড়ের মতো বড় হতে
পারবে না।
শুনে ব্যাঙ গেল চটে। সেআরও বেশি দম টেনে শরীর ফোলাবার চেষ্টা করতে লাগল ।
ফুলে উঠে তার পেটের চামড়া যখন টান টান হয়ে গেল ব্যাঙ আবার ছেলেদের ডেকে বলল, কী হে, এবার কিরকম দেখছ? এবারেও কি ষাঁড়টা আমার মতো বড়?
শুনে মজা পেয়ে ছেলেরা হৈ হৈ করে উঠল। তারা বলল, ষাঁড় তোমার চেয়ে ঢের ঢের বড়। তুমিকি করে ষাঁড়ের মতো বড় হবে?
শুনে ব্যাঙের রাগ আরও বেড়ে গেল। ছেলেরা এখনও ষাঁড়টাকেই বড় বলছে!
সে ছেলেদের ডেকে বলল, তবে এবার দেখ-
বলে দম টেনে পেটটাকে যতখানি ফোলানো সম্ভব তার চাইতেও বেশি ফোলাতে গেল, অমনি পটাং করে পেট গেল ফেটে । সঙ্গে সঙ্গে অক্কা পেল ব্যাঙ ।
নীকিথা ঃ নিজের ক্ষমতা না বুঝে কাজ করতে গেলে বিপত্তিই ঘটে থাকে।
বক ও সারস
একদল বক প্রতিদিনই এক কৃষকের ক্ষেতে এসে ফসল খেয়ে যায়। কৃষক বক তাড়াবার অন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই পেরে ওঠে না । বকের দল একদিন ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় তো পরদিনই আবার ঝাঁক বেঁধে ক্ষেতে এসে নামে। বকের উৎপাতে বেচারা কিষাণের একেবারে নাজেহাল অবস্থা ।
একদিন চাষীর এক বন্ধু তাকে বলল, এভাবে হবে না ভাই। কেনেস্তারা পিটিয়ে আর ঢিল ছুঁড়ে কখনও বক তাড়ানো যায় না। ক্ষেতের ধান বাঁচাতে হলে গোটা ঝাঁকটাকে ধরার ব্যবস্থা কর।
বন্ধুর কথা শুনে চাষী পরদিনই ক্ষেতে ফাঁদ পেতে রাখল। আর সেইদিনই সবকটা বক ফাঁদে আটকা পড়ল ।
সেই বকের ঝাঁকে সেদিন একটা সারসপাখিও ছিল। ভাগ্যদোষে সে-ও বকেদের সঙ্গে বন্দি হল। ফাঁদে বকের ঝাঁক ধরাপড়েছে দেখে কৃষক তো লাঠি নিয়ে তেড়ে এলো।
সারসপাখি দেখতে বকের মতো হলেও আকারে অনেকটাই বড়। কৃষক ছুটে এসে তার উঁচিয়ে থাকা লম্বা গলাটাই সবার আগে চেপে ধরল। এতদিনের পোষা রাগে সে তখন ফুঁসছিল।
বিপদ বুঝতে পেরে সারস কাতর গলায় কৃষককে বলল, ভাই, আমি তোমার কোন ইত করিনি। আমায় তুমি মেরো না।
বকেদের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলাম। যদি জানতাম তোমার ক্ষেতের ধান নষ্ট করার জন্য তারা এখানে আসছে, তাহলে কখনওই আমি তাদের সঙ্গে আসতাম না।
কৃষক বলল, আমি তোমার কোন কথাই শুনব না। দুষ্ট বকগুলো আমার অনেক ক্ষতি করেছে। তাদের সঙ্গে যখন ধরা পড়েছ তখন তোমাকে ও তাদের মতোই সাজা পেতে হবে।
অনেকবার বকগুলোকে তাড়াবার চেষ্টা করেও পারিনি। তাই আমি শপথ করেছি, ঝাঁকের সব কটা বককেই গলা টিপে মারব। তোমাকেও মরতে হবে।
এই বলে চাষী সবার আগে সেই নির্দোষ সারসকেই গলা টিপে মারল ।
শিক্ষামূলক ঃ দুর্জনের সংসর্গ ভয়াবহ।
চাষী ও কালকেউটে
এক চাষী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছিল। এমন সময় এককালকেউটে তার গর্ত থেকে বেরিয়ে ছোবল মারল ছেলেটির পায়ে। বিষের জ্বালায় ছটফট করতে করতে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেল । ছেলের শোকে পাগল হয়ে চাষী কুড়ুল হাতে ছুটল সাপকে মারতে ।
সাপ তো ছোবলমেরেই ছুটে গিয়ে গর্তে ঢুকেছে। চাষী এসে গর্তের কাছে কুডুল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর চাষী দেখল, সাপ গর্তের বাইরে মাথা বেরকরেছে।
সঙ্গে সঙ্গে সে কুডুল বাগিয়ে মারল কোপ। কিন্তু কুডুলের ঘা সাপের মাথায় না পড়ে পড়ল পাথরের গায়ে। সাপও সঙ্গে সঙ্গে সুড়ুৎ করে ঢুকে গেল গর্তের ভেতরে।
চাষী বুঝতে পারলগতবাসী সাপকে মারা সহজ কাজ নয়। এদিকে সাপ রেগে থাকলেও মুশকিল। কোন ফাঁকে আবার ছোবল মেরে কী বিপদ ঘটায়।
চিন্তা ভাবনা করে চাষী স্থির করল, নিরাপদে ক্ষেতের কাজ করতে হলে সাপের সঙ্গে শত্রুতা করে লাভ নেই। বরং ভাব থাকলে সাপ ক্ষতি করবে না ।
চাষী তখন গর্তের কাছে নিচু হয়ে বসে সাপকে ডেকে বলল, ওহে ভাই সাপ, এসো, আমরা নিজেদের ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে নিই। যা হবার হয়েছে। এখন থেকে আমরা বন্ধুর মতো থাকব ।
চাষীর কথা শুনে গর্তের ভেতর থেকেই সাপ বলল, না হে, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাকাতে আমি রাজি নই। আমাদের বিবাদটা হল রক্তের। কালকেউটে আরও বলল, আর সব কিছু ভুলে গেলেও ছেলের শোক তুমি কোন দিন ভুলতে পারবে না।
ছেলের কবর যখন তোমার চোখে পড়বে, তখন বন্ধুত্বের কথা আর তোমার মনে থাকবে না। আমাদের এই রক্তের শত্রুতা ঘুচবার নয় ৷
নীতিকথা : জাতিগত শত্রুতা যার সঙ্গে সে কখনও বন্ধু হয় না।
পায়রা ও পিঁপড়ে
একদিন এক পিঁপড়ে নদীতে জল খেতে গিয়ে হঠাৎ জলে পড়ে গেল। হাবুডুবু খেতে খেতে সে ভেসে যেতে লাগল নদীর স্রোতে।
নদীর তীরে গাছের ডালে বসেছিল একপায়রা। পিঁপড়ের দুরবস্থাদেখে তার খুবই মায়া হল।
পিঁপড়েকে বাঁচাবার জন্য তখন সে গাছ থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে জলে ফেলে দিল। পিঁপড়ে তো হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে চলেছে। এমন সময় সামনে পাতা পেয়ে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে উঠে বসল।
পায়রা তখন আবার উড়ে গিয়ে পাতাটা জল থেকে তুলে এনে তীরের ঘাস জঙ্গলে ফেলে দিল। পায়রার দয়ায় এভাবে প্রাণ ফিরে পেয়ে পিঁপড়ে মনে মনে পায়রাকে ধন্যবাদ জানাল।
এদিকে হয়েছে এক কাণ্ড। পায়রা তো বসেছিল গাছের ডালে। তাকে দেখে এক ব্যাধ চুপিচুপি তীরধনুক হাতে সেই গাছতলায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার চোখ আর তীরের মুখ পায়রার দিকে ফেরানো পায়রা এসবের কিছুই টের পেল না ।
ঘাসের ডগায় বসে পিঁপড়ের কিন্তু সবই নজরে পড়ল। সে দেখল, খানিক আগে যে পায়রা তার প্রাণ বাঁচিয়েছে, ব্যাধের তীরের মুখে তারই এবার প্রাণ যেতে বসেছে।
পিঁপড়ে তাড়াতাড়ি করে ব্যাধের কাছে এগিয়ে গেল। তারপর তার পায়ে আচমকা এমন কামড় বসাল যে ব্যাধ জ্বালায় অস্থির হয়ে পা ঝাড়তে লাগল । আর তাইতে তার হাতের ধনুক থেকে তীর ফসকে বেরিয়ে গেল অন্যদিকে। শব্দ পেয়ে পায়রাও তৎক্ষণাৎ গাছ ছেড়ে উড়ে গেল ।
শিক্ষামূলক ঃ নিঃস্বার্থ পরোপকার বিফলে যায় না ।
সিংহ ও খরগোস
একদিন এক সিংহ বনে শিকার খুঁজছিল। এক জায়গায় এসে সে দেখতে পেল, এক খরগোশ নিশ্চিন্তে গাছতলায় ঘুমিয়ে আছে। খরগোশকে ধরার জন্য সিংহ যেই লাফ দিতে যাবে ঠিক সেই সময়েই তার চোখ পড়ল আরও বড় শিকারের ওপরে।
কাছেই একটা হরিণ কচি লতাপাতা খাচ্ছিল। সিংহকে সে দেখতে পায়নি । হারণকে দেখার পর সিংহ ভাবল, খরগোশ ঘুমুচ্ছে, এই সুযোগে হরিণটাকে মেরে পরে খরগোশকে মারব। হরিণের মাংসের সঙ্গে খরগোশের সুস্বাদু মাংস জমবে ভাল ।
এইভেবে সে খরগোশকে গাছতলায় রেখে হরিণেরপেছনে ধাওয়া করল। হরিণ দুর্বল প্রাণী হলেও তার পায়ের শক্তির তুলনা হয় না। দৌড়ে তার সঙ্গে পালণ্ঢা দিতে পারে খুব কম জানোয়ারই ।
সিংহের আভাস পেয়েই হরিণ পলকের মধ্যে দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। সিংহ চেষ্টাকরেও তাকে ধরতে পারল না ৷
নিরাশ হয়েসে তখন খরগোশকে ধরবে বলে সেই গাছতলায় ফিরে এল ।
সিংহ যখন জঙ্গল ভেঙ্গে হরিণের পেছনেধাওয়া করেছিল, শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল খরগোশের। বিপদের আভাস আঁচ করে সে সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সিংহ ফিরে এসে দেখল গাছতলা শূন্য। খরগোশ কখন হাওয়া হয়ে গেছে ।
শিক্ষামূলক : বাড়তি লাভের আশায় যারা পাওয়া ধন অবহেলা করে তাদের অনুতাপ করতে হয়।
নেকড়ে ও গাধা
একদিন এক গাধা বনের ধারে চরছিল। এমন সময় সে দেখতে পেল, একটা নেকড়ে চুপি চুপি তার দিকে এগিয়ে আসছে। নেকড়ের মতলব বুঝতে পেরে গাধা খোঁড়ার ভান করে হাঁটতে লাগল । কাছে এসে নেকড়ে গাধাকেজিজ্ঞেস করল; হ্যাঁ ভাই, তোমার পায়ে চোট পেলে কী করে?
গাধা বলল, বন্ধু, আমার দুর্ভাগ্যের কথা আর বলো না। বুনো কাঁটা ফুটে খোঁড়া হয়েছি। পায়ে এত যন্ত্রণা হচ্ছে যে ভালকরে চলতে পারছি না । তুমি ভাই দেখেশুনে আমাকে খেয়ো। পা থেকে কাঁটাটা আগেভাগে না বার করলে তোমার গলায় ফুটে যেতে পারে।
নেকড়ে বলল, হ্যাঁ কথাটা বলেছ ঠিক ভাষা। দেখি তোমার পায়ে কোথায়কাটা ফুটেছে। গাধা এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিল। সে তার পেছনের একটা পা তুলে ধরল । নেকড়ে কাঁটা খুঁজবার জন্য এগিয়ে গেল তার পায়ের কাছে।
সঙ্গে সঙ্গে দমাস করে তার মুখে পড়ল গাধার প্রচণ্ড এক লাথি চোখে অন্ধকার দেখে ছিটকে পড়ল নেকড়ে। তার দাঁত সব কটি গেলখসে পড়ে। মুখ হল রক্তাক্ত।
কোনও রকমে কাতরে-মাতরে উঠে দাঁড়িয়ে নেকড়ে গাধাকে বলল, ভাই আজ আমার উচিত শিক্ষাই হল। মা আমাকে শিকার ধরতে শিখিয়েছিল। কিন্তু শিকার ধরতে এসে আমি অহেতুক তোমার ব্যাপারে নাক গলিয়েছিলাম।
শিক্ষামূলক ঃ অ-কাজে মাথা গলালে দুর্ভোগই বাড়ে ।
কুকুরের ভোজ খাওয়া
একদিন এক গৃহস্থ তার বন্ধুকে দুপুরে খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাই রান্নাঘরে ভাল ভাল খাবার তৈরি হতে লাগল। রান্নার আয়োজন দেখে সেই বাড়ির পোষা কুকুরটি খুবই খুশি হয়েছিল। সেও তার বন্ধু রাস্তার কুকুরকে দুপুরে তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে এল।
রান্নাঘরের বাইরে দুজনে বসেছে। সুস্বাদু লোভনীয় খাবারের গন্ধেজল গড়াচ্ছে জিভে। আনন্দে পথের কুকুর ভাবল, বন্ধু তো দেখছি আমার জন্য আয়োজন খুব ভালই করেছে। মনে হচ্ছে আগামীকালও সারাদিন কিছু খাওয়ার দরকার করবে না।
পথের কুকুর আহ্লাদে বন্ধুকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে লেজ নাড়তে লাগল । এমন সময় দোরগোড়ায় কুকুরের আনাগোনা চোখে পড়ল সতর্ক রাঁধুনীর। সে দৌড়ে বেরিয়ে এসে খপকরে পথের কুকুরের একটা ঠ্যাং ধরে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল ।
শিক্ষামূলক ঃ না জেন বুঝে অতিথি হলে বোকা বনতে হয় ।
বুনো ঘোড়ার ভাগ্য
সবুজ পান্নার মতো কচি ঘাসে ভরা এক মাঠ। সেখানে একা মনের সুখে ঘাস খেতে এক বুনো ঘোড়া। এত ঘাস সেই মাঠে ছিল যে ঘোড়ার একার পক্ষে খেয়ে শেষ করা সম্ভব ছিল না। তাই বুনো ঘোড়া মনের আনন্দে দিন কাটাত।
একবার বন থেকে এক হরিণ সেই ঘাসের মাঠে এল চরতে। তার যেমন ফেলে ছড়িয়ে খাওয়ার স্বভাব, নিজে যতটা ঘাস খায় নষ্ট করে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে দিন দিন মাঠের খাওয়ার উপযুক্ত ঘাস কমে যেতে লাগল। দেখে শুনে চিন্তায় পড়ল বুনো ঘোড়া।
এভাবে মাঠের ঘাস নষ্ট হতে থাকলে কষ্টটা তারই বাড়বে। বনের ভেতরে হিংস্র জন্তুর উৎপাত বেশি। সেখানে ঢুকে খাবার খোঁজার বিপদ অনেক। দুষ্ট হরিণটাকে কিভাবে তাড়ানো যায় সেই উপায় খুঁজতে লাগল বুনো ঘোড়া। শিং-এর গুঁতো খাবার ভয়ে হরিণের কাছে ঘেঁষতে পারে না।
দূরে দাঁড়িয়ে কেবল রাগে ফুঁসতে থাকে। শেষমেশ,অনেক ভাবনাচিন্তার পরে বুনো ঘোড়া এক মানুষের শরণ নিল। গিয়ে বলল, ভাই তুমি যদি একটু সাহায্য কর তাহলে আমার খুব উপকারহয়। মানুষ বলল, কী উপকার করতে হবে, বল?
বুনো ঘোড়া বলল, আমি যে মাঠে ঘাস খাই, সেখানেএক দুষ্ট হরিণ এসে জুটেছে। সে যতটা খায় তার চাইতে অনেক বেশি ঘাস নষ্ট করে। এভাবে মাঠের ঘাস নষ্ট হলে কিছুদিন পরেই আমি না খেয়ে মারা পরব। দুষ্ট হরিণটাকে শায়েস্তা করা দরকার। এই উপকারটুকু করে তুমি আমাকে বাঁচাও ৷
মানুষ হেসে বলল, এই কাজ? এ আর এমনকি ব্যাপার। কষে দু’ঘা দিলেই হরিণ মাঠ ছেড়ে পালাতে পথ পাবে না।
বুনো ঘোড়া খুশি হয়ে বলল, দয়া করে তুমি তাই কর ।
মানুষ এক মুহূর্ত কি চিন্তা কর:ল। পরে হেসে বলল, তোমার উপকারের জন্য এ কাজটুকু করতে আমার আপত্তি নেই। আমাকে কি করতে হবে শোন, তোমার পিঠে চেপে যেতে হবে সেই ঘাসের মাঠে। চলবার সময় আমি টান খেয়ে পড়ে যেতে পারি। তাই তোমার মুখে লাগাম লাগাতে হবে।
তারপর শক্ত লাঠি হাতে নিয়ে হরিণকে তাড়া করতে হবে। বুনো ঘোড়া বলল, বেশ তাই কর। মানুষ তখন ঝটপট ঘোড়ার মুখে লাগাম লাগিয়ে তার পিঠে চেপে বসল।
তারপর হরিণ তাড়ানোর নাম করে ঘোড়াকে ছড়ি-পেটা করে নিজের বাড়ির খোয়াড়ে এনে বন্দি করল। বুনো ঘোড়ারা সেদিন থেকে চিরকালের জন্য মানুষের বাহনে পরিণত হল ।
শিক্ষামূলক ঃ রাগে অন্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইলে বড় কোন শক্তির পরাধীন হতে হয়।
গাধা ও ছাগল
এক চাষীর ছিল একটা গাধা। দিনভর সে ভারি ভারি বোঝা বইত। তাই চাষী তাকে হৃষ্টপুষ্ট রাখার জন্য অনেকখাবার দিত। গাধা সব সময় অত খাবার খেয়ে উঠতে পারত না। চাষী একটা ছাগলও পুষত। সেই ছাগল গাধার সুখ দেখে মনে মনে হিংসায় জ্বলত ।
একদিন ছাগল গাধাকে ডেকে বলল, ভাই তোমাকে অনেকদিন থেকে দেখছি আর বড়ই কষ্ট পাচ্ছি। তোমার জীবনে শান্তি বলে কিছু নেই। দিন ভর কত বোঝা তোমাকে টানতে হয়, কিন্তু সেই মতো বিশ্রাম তো নিতে পার না।
একবার ভেবে দেখেছো কি, এইভাবে বিশ্রাম না পেয়ে শরীর যখন ভেঙ্গে পড়বে তখন তোমার অবস্থাটা কি হবে?
ছাগলের দরদ মাখা কথা শুনে গাধার মনেও দুঃখ এল। সে বলল, তুমি ঠিকই বলেছো ভাই। এ কথাটা কোনওদিন আমার মাথায় আসেনি।
আমি কেবল মুখ বুঝে হাড়ভাঙ্গা খাটুনিই খেটে চলেছি। উৎসাহ পেয়ে ছাগল বলল, কথাটা আমি অনেকদিন থেকেই তোমাকে বলব বলে ভাবছি সুযোগ হচ্ছিল না। তোমাকে একটা পরামর্শদিতে পারি, যদি শোন।
গাধা দু পা এগিয়ে এসে বলল, তুমি হলে আমার বন্ধু । বহুদিন থেকে দুজনে এক মনিবের বাড়িতে আছি তুমি যা বলবে আমার ভালর জন্যই তো বলবে। ছাগল বলল, হ্যাঁ তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বলছি শোন। সকাল হলেই তো তোমাকে পিঠে বোঝা নিয়ে বেরুতে হয়।
তোমার যদি পায়ে চোট লেগে যায় তাহলে এই বোঝা টানার হাত থেকে রেহাই পেতে পার। তাই বলছিলাম, যদি পা ভাঙার ভান করে একটা গর্তে গড়িয়ে পড়ে যেতে পার তাহলে মনিব তোমাকে কিছুদিন বিশ্রাম দিতে বাধ্য হবে। আর এভাবে বিশ্রাম পেলে তোমার শরীরও সুস্থ থাকবে।
ছাগলের পরামর্শ গাধার খুব মনে ধরল। তাই পরদিনই সে সেই মতো কাজ করল। কিন্তু বেচারা গাধা পা ভেঙ্গে পড়ে যাবার ভান করতে গিয়ে সত্যি সত্যি পা ভেঙ্গে বসল ।
গাধার অবস্থা দেখে তার মনিবের তো পড়ল মাথায় হাত। গাধা অচল হয়ে থাকলে তার রোজকার মোট বইবে কে? সে তাই তাড়াতাড়ি ছুটল পশু- চিকিৎসকের বাড়ি।
চিকিৎসক এসে অনেকক্ষণ ধরে গাধাকে পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিল। তারপর চাষীকে বলল, মশায় গাধার পা ভালরকম জখম হয়েছে। ওষুধের সঙ্গে তাকে ছাগলের ফুসফুসের ঝোল মিশিয়ে তাকে ছাগলের ফুসফুসের ঝোল মিশিয়ে খাওয়াবেন। তাহলে দিনেই সেরে উঠবে।
চিকিৎসকের ব্যবস্থামতো চাষী পরদিনই গাধাকে খাওয়াবার জন্য তার ছাগলটিকে মারল ।
শিক্ষামূলক ঃ হিংসার ফলশুভ হয় না।
শেয়াল ও সিংহ
পশুদের রাজা সিংহ। যেমনি বিরাট তার চেহারা তেমনি তার গর্জন। তাকে দেখলে তো বটেই, দূর থেকে তার গর্জন শুনলেই বনের পশুরা ভিরমি খেতো, প্রায় আধমরা হয়ে যেত।
এক শেয়াল এমন এক বনে বাস করতো যেখানে কোনো সিংহ ছিল না একদিন ক্ষিধের জ্বালায় অস্থির হয়ে শেয়াল ঘুরতে ঘুরতে এমন এক বনে এসে পড়লো, যে বনে পশুরাজ সিংহ বাস করতো। শেয়াল তখন খাবারের খোঁজে ঐ বনে ঘুরছিল। এমন সময় একটু দূরে সিংহ ডেকে উঠল।
সেই ডাক শোনামাত্র শেয়াল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে বসে পড়লো । একটু পরে সিংহ যখন তার সামনে হাজির তখন শেয়াল তার ভয়ংকর চেহারা দেখে ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে গেল ।
এরপর শেয়াল আর একদিন সেই বনে এসে আবার সিংহের দেখা পেল। এবার ভয় যে তার না করলো তা নয়, তবে আগের বারের মত অজ্ঞান আর হল না। বরং কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইল॥হ্যা, বিরাট চেহারাই বটে, তবে আমারই মত পশু ছাড়া এ আর কিছুই তো নয়।
আমায় তো সেদিন খেয়ে ফেলেনি এই ভেবে শেয়াল তাকে দেখে আর পালালো না । এর পরের বার বনে এসে সিংহের সঙ্গে যখন তার দেখা হল।তখন তাকে দেখে ভয় যে তার একেবারেই করলো না তা নয়।তবু বাইরে ভয়ের কিছু না দেখিয়ে তার সামনে দিয়ে স্বচ্ছন্দে চলে গেল।
এরপর অবশেষে এমন একদিনও এল, যখন সে সিংহকে দেখে তাকে কিছুমাত্র ভয় না পেয়ে তার সামনে গিয়ে বললো, কি গো বন্ধু, ভাল আছো তো?
শিক্ষামূলক ঃ দূর থেকে অনেক কিছু ভাবা উচিত নয় ।
সিংহের ছালে ঢাকা গাধা-১
একদা এক বনে এক গাধা বাস করত। হঠাৎ একদিন তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি গজাল। সে কোথা থেকে যেন একটা সিংহের ছাল যোগাড় করে সেটা দিয়ে নিজের সারা শরীর ঢেকে সিংহ সেজে বনের পশুদের ভয় দেখিয়ে বেড়াচ্ছিল।
এইরকম করতে করতে একদিন তার সামনে পড়ল এক হিংস্র খেঁকশিয়াল। ছদ্মবেশী সিংহ তাকেও অমনি করে ভয় দেখাতে যাচ্ছিল, তখন খেঁকশিয়ালটি একটু আগেই এই ছদ্মবেশীকে গাধার মত ডাকতে শুনেছিল—তাই বলে বসল—আমি তোমায় দেখে ভয় পেতাম দাদা, যদি না একটু আগেই তোমায় গাধার ডাক ডাকতে শুনতান ৷
শিক্ষামূলক ঃ মূর্খ মুখ না খোলা পর্যন্ত বিজ্ঞ সাজতে পারে
সিংহের ছালে ঢাকা গাধা-২
অন্য একটা দূরের বনে আর একটা গাধা ছিল। তার মনেও একদিন দুষ্টু বুদ্ধি গজালো । আর কোত্থেকে একটা সিংহের ছাল জোগাড় করে সেটা গায়ে পরে গাধাটা বনের পশুদের ভয় দেখাচ্ছিল। তাকে দেখে মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তুরাও পড়িমরি করে ছুটে পালাচ্ছিল।
কিন্তু এক দমকা বাতাসে তার ছদ্মবেশ খুলে গেল। তখন সবাই তার স্বরূপ জেনে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে তার গায়ে সবাই মিলে মুগুর আর লাঠির ঘা মারতে মারতে শেষ পর্যন্ত গাধাটাকে মেরে ফেলল ।
শিক্ষামূলক ঃ চিরকাল কেউ কাউকে ঠকাতে পারে না ।
এক শূকরী ও এক কুকুরী
একদা এক কুকুরী ও এক শূকরীর মধ্যে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি চলছিল। তর্কটা হচ্ছিল এই নিয়ে যে কার বাচ্চা সহজেই ভূমিষ্ঠ হয়। কুকুরীটি বলল, শুনে রাখো—যত চারপেয়ে জন্তু আছে তাদের মধ্যে সবার চেয়ে বেশি সহজে এবং জলদি আমার পেট থেকে বাচ্চা বেরোয়।
শূকরীটিও সহজে ছাড়বার পাত্রী নয়। সেও চুপ করে থাকতে পারল না। সে আরও এক ধাপ গলা চড়িয়ে বলল, তা বেশ তো, ভাল কথা, কিন্তু একথা তুমি অস্বীকার করতে পার না, তোমাদের বাচ্চাদের তখন চোখ ফোটে না, কিছুই দেখতে পায় না তারা। ঐ বাচ্চাদের বড়ই কষ্ট হয়।
আর তোমার সব বাচ্চাগুলো বাঁচেও না। তাই তাড়াতাড়ি এরকম বাচ্চার জন্ম দিয়ে কী লাভ হয় তোমার?
শিক্ষামূলক ঃ হেলাফেলার কাজ নিখুঁত হয় না।
মোরগ ও বেড়াল
একদা গ্রামে এক বেড়াল ছিল। সে গৃহস্থের বাড়িতে এটা ওটা চুরি করে খেতো। একবার বেড়ালটা এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে একটা মোরগ ধরে নিয়ে এল। এখন সে মোরগটাকে মেরে খেতে চাইল। কিন্তু শুধু শুধু তো একজনকে মারা যায় না। একটা অজুহাত থাকা চাই তো!
সে তখন মোরগটাকে বললো, তুই মারাত্মক একটা আপদ, রাতে ডেকে মানুষকে স্বস্তিতে ঘুমোতে দিস্ না। মোরগটি উত্তরে বলল, এ তো আমি ভাল উদ্দেশ্যেই করি। রাত্রি শেষে আমার ডাকে ঘুম ভাঙলে মানুষরা সকাল সকাল তাদের দিনের কাজ শুরু করতে পারে।
বেড়াল তখন ভাবল—মোরগ কথাটা ঠিকই বলেছে। তাই কথাটা উড়িয়ে দিয়ে অন্য একটা দোষ ধরে বলল, তুই তোর মা-বোনেদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করিস্ । অত্যাচার করিস্ ।
মোরগ তখন শান্ত স্বরে উত্তর দিল—এতেই আমার মালিক খুশি হয়, বুঝে দেখো কথাটা, মালিকের সম্পদ বাড়ে। বেড়াল তখন বিরক্তি প্রকাশ করে বলল—নাঃ তোর সঙ্গে মেলা ফ্যাচ্ ফ্যাচ্ করার সময় আমার নেই।
কিন্তু তাই বলে আমার যে খিদে পুষে রাখতে হবে পেটে, তারও কোনো মানে নেই—তোকে আমি খাবোই। এই বলে বেড়াল মোরগটার টুটি চেপে ধরে মেরে খেয়ে ফেলল ।
শিক্ষামূলক : দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।
আহাম্মকের উলণ্ঢাস
অবশেষে বসন্তকাল এল। চারিদিকে ফুল ফুটে উঠল । প্রকৃতি নতুন সাজে সেজে উঠল। চারদিকে ঝলমলে রৌদ্রে। সে বড় সুখের সময়। সূর্যের বিয়ে হবে। চারিদিকে খবরটা রটে গেল। সকল জীবজন্তুরা আনন্দে মেতে উঠল। চারিদিকে যেন আনন্দের হাট বসে গেল।
সকল জীবজন্তুদের সঙ্গে ব্যাঙেরাও আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে লাগল । নেচে কুঁদে বেড়াতে লাগলো । এই সব দেখে জিরাফ আর চুপ করে থাকতে পারল না। সে ব্যাঙেদের সম্বোধন করে বললো দূর দূর বোকা আর আহাম্মকের দল কোথাকার!
সূর্যের বিয়েতে তোদের নাচন-কোঁদন করতে লজ্জা করছে না! এক সূর্যই গরমকালে খানা ডোবার জল শুকিয়ে সেগুলো কাঠ করে দেয়। তার বিয়ে হলে তার বউয়ের যদি ঐরকম একটা বাচ্চা হয় তাহলে তোদের দশা কী হবে একবার ভেবে দেখেছিস্?
তোদের সবাইকে জলের অভাবে ধনেপ্রাণে মরতে হবে। আর জীবজন্তুরাও রেহাই পাবে না। প্রাণিকুল জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব সূর্যের বিয়েতে আনন্দ করার কিছুই নেই এইসব শুনে ব্যাঙেরা হকচকিয়ে গিয়ে নাচন কোঁদন ত্যাগ করে ভাবতে বসলো। তাই তো জিরাফ তো ঠিকই বলেছে।
শিক্ষামূলক ঃ মগজে বস্তু না থাকলে যাতে আনন্দ করবার কিছু নেই, তাই নিয়েও লোকে আনন্দ করে থাকে ।
ইঁদুর ও নেউলের গল্প
একদা এক দেশে একদল নেউল বাস করতো। সেই দেশেই একদল ইঁদুরও বাস করতো। কিন্তু ওদের মধ্যে শান্তি ছিল না। সবসময় ওদের মধ্যে কলহ আর মারামারি লেগেই থাকতো। মারামারিতে প্রায়ই ইঁদুরের দল নেউলদের দলের কাছে হেরে ভূত হতো।
ইঁদুরের দল এই পরাজয়ের কারণ খুঁজে বার করার জন্যে এক জরুরি সভা ডাকলো। সেই সভায় ছোট বড়, প্রবীণ ও অভিজ্ঞ সব ইঁদুরই উপস্থিত ছিল। অবশেষে সভায় স্থির সিদ্ধান্ত হল, তাদের দলে কোনো সর্দার নেই বলে তাদের বার বার হেরে যেতে হচ্ছে।
এই সভাতেই কয়েকজন জোয়ান তাগড়া ইঁদুরকে তাদের দলকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে সেই সেই ভাগের সর্দার নির্বাচন করা হল। কিন্তু সব ইঁদুরই তো একরকম দেখতে! তাই দলের সর্দারকে সাধারণ ইঁদুররা চিনবে কি করে? অনেক ভেবে-চিন্তে কিছু কিছু শিং তৈরি করা হল।
আর সেই শিংগুলি এঁটে দেওয়া হল সর্দারদের মাথায়। এরপর আবার যখন নেউলদের সঙ্গে ইঁদুরদের খুব বড় একটা লড়াই বেধে গেল তখন সেই লড়াইয়েও নেউলদের তাড়া খেয়ে বহু ইঁদুর হতাহত হয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো। অন্যসব ইঁদুর চটপট করে তাদের গর্তে ঢুকে পড়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেলল।
কিন্তু যেসব সর্দার ইঁদুরদের মাথায় শিং লাগানো ছিল তারা ঐ শিং-এর জন্যে গর্তে ঢুকতে পারলো না। ফলে নেউলরা এসে তাদের অনায়াসে হত্যা করল।
শিক্ষামূলক ঃ নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে অতি উচ্চধারণা বিপদ ডেকে আনে।
একটি ইঁদুর ও সাপ এবং নেউলের গল্প
একদা এক গর্তে একটি ইঁদুর থাকতো। একদিন এক নেউল সেই গর্তের সামনে হাজির হল। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই কোথা থেকে যেন একটি সাপও সেখানে হাজির হ’লো। তারা দু’জনেই ইঁদুরের সন্ধানে এসেছিল। কিন্তু দেখা গেল সাপে আর নেউলে লড়াই বেধে গেল।
তাদের কাররই আর ইঁদুরকে মারার কথা মনে রইল না। গর্তের ইঁদুর এদের যুদ্ধে ব্যস্ত দেখে তার গর্ত থেকে বেরিয়ে এল। অমনি সাপ আর নেউল লড়াই থামিয়ে নিজেদের ঝগড়া ভুলে দু’জনেই ইঁদুরটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রাজনীতির ক্ষেত্রেও এরকমটা প্রায়ই দেখা যায়।
বিরোধরত দুইদল যখন দেখে তাদের সাধারণ বিপক্ষ কোনও দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন তারা নিজেদের বিবাদ ভুলে ঐ বিপক্ষ দলকে আক্রমণ করে।
শিক্ষামূলক ঃ জাতশত্রুরাও স্বার্থের জন্যে পরস্পরে জোট বাঁধে।
একটি দাঁড়কাক ও অন্য কাকেরা
এক ছিল দাঁড়কাক। নিজের জাতভাইদের চেয়ে সে ছিল বেশ জমকালো আর বড়সড় দেখতে। তাই সে একদিন জাতভাইদের অবহেলা করে বড় কাকদের কাছে গেল। গিয়ে বললো—ভাই আমি তোমাদেরই একজন, আমাকে তোমাদের দলে নাও ।
কাকের দল দেখল তাদের সঙ্গে এর কোন কিছুতেই মিল নেই, না চেহারায়, না গলার স্বরে। অতএব কাকের দল, দাড়কাককে বলল—যাও যাও, দূর হও এখান থেকে—মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ্ না করে এখান থেকে মানে মানে কেটে পড় ।
কাকের দলের কাছে আঘাত পেয়ে দাঁড়কাকটা যখন তার জাতভাইদের কাছে ফিরে এল, তখন তারাও তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল।
জাতভাইরা বলল, তুমি আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, ঘৃণা করে ত্যাগ করে গিয়েছিলে আবার আমাদের কাছে এসেছ, তোমার লজ্জা করছে না? দূর হয়ে যাও আমাদের সামনে থেকে !
শিক্ষামূলক : নিজের বংশ পরিচয় দিতে কোনো সঙ্কোচ করতে নেই ।
অভিজ্ঞতা
একদা এক মাঠের পাশে একটা খাবার বাড়ি ছিল । খাবার বাড়ির সামনে একটা কুকুর ঘুমাচ্ছিল। তাকে ঐরকমভাবে ঘুমোতে দেখে পা টিপে টিপে এক নেকড়ে এগিয়ে এল তাকে ধরে খাওয়ার জন্য। কুকুরটা ততোক্ষণে জেগে গেছে।
নেকড়েটা সবে তার গায়ে কামড় বসাতে যাচ্ছে এমন সময় কুকুরটা একলাফে তার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল—শোন একটা ভাল কথা তোমাকে বলি। আমাকে এখন খেয়ে তোমার তেমন সুবিধে হবে না! আমি বড্ড রোগা হয়ে গেছি। পেটে বহু দিন ভালমন্দ পড়েনি।
তাই আমাকে খেয়ে তোমার পেটও ভরবে না। আমার মালিকের বাড়িতে আজ মহাভোজ হবে, আর সেই ভোজের খাবার খেয়ে একটু মোটাসোটা হয়ে নিই আমি। তারপর এসে আমাকে খেও, তাতে মজা পাবে, পেটও বেশ ভরবে তোমার।
কুকুরের এই কথা শুনে নেকড়ে তখন আর তাকে না খেয়ে চলে গেল । পরদিন কুকুরের ভোজ খাওয়া হয়ে গেছে ভেবে আবার সেই নেকড়ে এল । এসে দেখল কুকুরটা খামার বাড়ির ছাদের ওপর নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। সে তখন কুকুরটাকে ডেকে বলল—আমি এসে গেছি, এবার তুমি নেমে এস।
আমাদের চুক্তিমত কাজ কর ৷ কুকুরটা তখন হাসতে হাসতে বলল, নিচে মাটিতে ঘুমন্ত অবস্থায় যদি আমাকে আবার কোনোদিন খেতে আস তাহলে আমার ভোজ খাওয়া পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে যেও না।
শিক্ষামূলক ঃ অভিজ্ঞ লোকেরা বিপদে পড়ে বুদ্ধির জোরে রক্ষা পায় ।
শিকারী কুকুর
এক রাখালের এক শিকারী কুকুর ছিল। একদিন রাখাল কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিল। হঠাৎ শিকারী কুকুরটা একটা খরগোশকে পাশের একটা ঝোপের মধ্যে দেখতে পেল। আর দেখামাত্রই শিকারী কুকুরটা তাকে তাড়া করল। এবং খরগোশও কুকুরকে দেখতে পেয়েই দিল ছুট্।
কুকুরও ছটছে, খরগোশও ছুটছে। খরগোশও ছুটছে আর কুকুরও ছুটছে। কিন্তু ছুটলে হবে কী! খরগোশ চোখের নিমেষে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল ।
রাখালটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ সব দেখছিল।
কুকুরটা খরগোশটাকে ধরতে পারল না দেখে সে তাকে ব্যঙ্গ করে বলল—খুব বাহাদুর, অমনি একটা ক্ষুদ্র জীব খরগোশ, তার সঙ্গেও ছুটে এঁটে উঠতে পারলে না তুমি?
কুকুরটি এই ঠাট্টা হজম করে হেসে উত্তর দিল, ভায়া বুঝলে না তো— খরগোশটা ছুটেছিল প্রাণের দায়ে আর আমি ছুটেছিলাম শিকার করতে। তাই এই দুরকম ছোটায় বড় তফাৎ ।
শিক্ষামূলক ঃ শিকারের প্রয়োজনের চেয়ে প্রাণরক্ষার প্রয়োজন অনেক বেশি ।
পিঁপড়ে কেন চুরি করে?
পিঁপড়েরা আগে এমন চোর ছিল না। প্রথম দিকটায় তারা মানুষের মতই ব্যবহার করতো। মানুষের মতই চাষবাস করত এবং সৎ জীবন-যাপন করত। কিন্তু তারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ জিনিসে সন্তুষ্ট না থেকে লোভে পড়ে অপরের দ্রব্য চুরি করতে শুরু করল।
দেবতা জিউস তাদের এই মতিগতি দেখে তাদেরকে—আমরা এখন যে ছোট ছোট পিঁপড়ে দেখি সেই কীট-এ পরিণত করলেন। পিঁপড়েদের দেহ পাল্টে গেল।
তবুও তাদের স্বভাব পাল্টালো না—এদিকে ওদিকে ঘুরে ফিরে এখনও তারা সেই আগের স্বভাব মতই অপরের শ্রমলব্ধ যব-গমের দানা, চিনি, গুড় সব চুরি করে নিজের বাসায় নিয়ে যায়।
শিক্ষামূলক ঃ শাস্তি পেলেও দুর্জনদের স্বভাব বদলায় না ।
নিজের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতে গেলে
একদা এক দেশে এক ডাকাত ছিল। সে একবার একটা লোককে খুন করে ফেলল। আশেপাশের লোকেরা ডাকাতটাকে ধরতে গেলে সে ছুটে পালিয়ে গেল। পথে যে সব লোক ডাকাতটার সামনে পড়ল তারা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার হাতে ঐ লাল লাল দাগ কীসের?
ডাকাতটি চপপট উত্তর দিল—ও, কিছু না! এইমাত্র আমি তুঁতগাছ থেকে নেমে এলাম কিনা তাই !
যে লোকগুলো তার পিছু পিছু ধাওয়া করে আসছিল তারা ততোক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেল। অতএব ডাকাতটা আর পালাতে পারল না।
তারা তার দেহে একটা ধারাল গোঁজ পুঁতে তাকে তুঁতগাছ ঝুলিয়ে দিল! তুঁতগাছটি তখন মৃত্যু পথযাত্রী ডাকাতকে বলল—তোমাকে মৃত্যু দণ্ড দিতে সাহায্য করার জন্যে আমার কিছুমাত্র আফসোস নেই, কারণ নিজে খুন করে হাতের রক্ত তুমি আমার গায়ের রক্ত হিসেবেই চালাতে চেয়েছিলে ।
শিক্ষামূলক ঃ ভাল লোকের গায়ে কাদা ছিটোতে গেলে সেও তোমায় ছেড়ে কথা বলবে না ।
বুঝতে পারিনি চান
একদা এক ডাঁশ ছিল। সে একদিন উড়ে এসে বসল এক ষাঁড়ের শিং-এর উপর। কিছুক্ষণ সেখানে বসে থাকবার পর ডাঁশটি ষাঁড়কে বলল—ভাই, তোমার শিং-এ আমি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি, তোমার কষ্ট হচ্ছে না তো?
আমি কি এখন উড়ে চলে যাব?
ষাঁড়টি তখন গম্ভীর স্বরে বলল—কে তুমি?
আর কখনই বা তুমি আমার শিং-এর ওপরে এসে বসেছো? টের পাইনি তো!
শিক্ষামূলক : তুচ্ছ ব্যক্তিদের থাকা না থাকায় কিছুই যায় আসে না।
পশু ও মানুষ করে
দেবতা জিউসের আদেশে প্রমিথিউস পৃথিবীতে পশু ও মানুষ দুই-ই সৃষ্টি করলেন। কিন্তু পশুর সংখ্যা বেড়ে গেল। দেবতা জিউস তখন প্রমিথিউসকে
বললেন—পশুর সংখ্যা বড় বেশি হয়ে গেছে। এদের কিছু সংখ্যককে তুমি মানুষে পরিণত কর।
দেবতা জিউসের কথামত প্রমিথিউস কিছু পশুকে মানুষ করে দিলেন। ফলে পশু থেকে মানুষ হল। আর তাদের চেহারা মানুষের মত হলেও প্রকৃতি ও আচার-আচরণ তাদের পশুর মতই রয়ে গেল । ফলে সেই সব পশু স্বভাবের মানুষ পৃথিবীতে একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াল ।
শিক্ষামূলক ঃ পশু স্বভাবের মানুষের থেকে মানুষকে দূরে থাকতে হয়।
কোকিল ডাকলেই বসন্ত আসে না
একদা এক দেশে এক তরুণ বাস করত। তার নাম ছিল পঢ়ুকোস। সে ছিল ভবঘুরে আর উড়নচন্ডী। সে পৈতৃক বিষয় সম্পত্তি কিছু পেয়েছিল। কিন্তু সে সব ফুঁকে উড়িয়ে দিয়েছিল অল্পদিনের মধ্যেই। অবশেষে তার ওড়াতে বাকী ছিল পরনের শুধুমাত্র একটা জামা ।
একবার একটা সোয়ালো পাখি কি করে যেন বসন্তকাল আসার আগেই তার নজরে এল। তাকে দেখে উড়নচন্ডী তরুণটি মনে করল এই তো গরম কাল এসে গেল, আর জামার দরকার কি? এই ভেবে সে জামাটাও বেঁচে দিল এরপর যথারীতি শীত জেঁকে বসল।
চারিদিক অমনি বরফে ছেয়ে গেল। তরুণটি পথে যেতে যেতে দেখল সেই সোয়ালোটা ঠাণ্ডায় জমে মরে পড়ে রয়েছে। তরুণটি তাকে ঐ অবস্থায় দেখেই বলে উঠল হতভাগা, তুইও মরলি, আর আমাকেও মেরে গেলি!
শিক্ষামূলক : সময় বুঝে সব কাজ করতে হয়। না হ’লে পদে পদে বিপদে পড়তে হয় ।
উট ও মানুষ
মানুষ যখন প্রথম উট দেখল তখন আঁৎকে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে গেল । উটের বিরাট বড় দেহ দেখে তাদের কি ভয়টাই না হয়েছিল। ভয়ে তারা তার কাছ থেকে দৌড়ে পালাল।
পরে যখন মানুষ বুঝল একে দেখে ভয় পাবার কোন কারণ নেই, বড় নিরীহ প্রাণী, তখন তারা নির্ভয়ে উটের কাছে এগিয়ে এল । ক্রমে মানুষ আরও বুঝতে পারল এই প্রাণীটির রাগটাগ বলেও কিছু নেই।
তখন তারা একে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে, এর নাকে দড়ি লাগিয়ে পিঠে জিন চড়িয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েদের তার ওপর বসিয়ে ঘুরে বেড়াতে পাঠাল ।
শিক্ষামূলক ঃ অন্তরঙ্গতা ভয় দূর করে।
Read More: গল্পের বই