Table of Contents
দাঁত ও মুখের সাধারণ কথা (About oral cavity)
দাঁতের রোগ সমূহ, দাঁত ও মুখের সাধারণ কথা About oral cavity দাঁত নানাভাবে কৌতুহলোদ্দীপক, বৈশিষ্টপূর্ণ। মানুষ শরীরের অন্যান্য অংশের মত জন্মের সময় দাঁত নিয়ে জন্মায় না। জন্মের পরে দাঁত উঠে।
আবার ছোটবেলার সব দুধ দাঁত পড়ে আবার নতুন করে স্থায়ী দাঁত ওঠাও শরীরের আর কোন অংশে হয় না।
প্রত্যেক মানুষেরই দুই সেট দাঁত থাকে। ছোট বেলার দুধ দাঁতের সেট ও পরে স্থায়ী সেট।
দুধ দাঁত থাকে ২০টি ও স্থায়ী দাঁত থাকে ৩২। ২০ টি দুধ দাঁত ৬ মাস বয়স থেকে উঠা শুরু করে এবং ২ থেকে ৩ বছর বয়সে শেষ হয়।
বত্রিশ টি স্থায়ী দাঁতের মধ্যে ২০টি স্থায়ী দাঁত দুধ দাঁত পড়ে নতুন করে উঠে এবং বাকি ১২ টি একবারেই উঠে। এগুলো মাড়ির বড় শক্ত দাঁত। এই একবারে উঠা ১২ টি দাঁতের মধ্যে ৪ টি দাঁত ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে উঠে।
পিছনের মাড়ির দাঁত বলে কোন কোন মা এটা ঠিক মতো লক্ষ্য করেন না বা ভুল করে দুধ দাঁত বলে মনে করেন এবং যথারীতি অযত্ন করেণ।
এই ৪ টি মাড়ির দাঁত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাঁত। তাই এই দাঁত গুলোর যে কোন একটি নষ্ট হয়ে হারাতে হলে পরবর্তীতে ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলাটি সারাজীবনের জন্য দাঁতের রোগের রুগী হয়ে যাবেন,
বিশেষ করে দাঁতটি হারাবার সাথে সাথে যদি প্রতিস্থাপন (Replace) না করা হয়। আবার এই ছয়/সাত বছর থেকেই দুধ দাঁত পড়ে স্থায়ী দাঁত উঠতে শুরু করে।
প্রথম শুরুটা হয় নীচের পাটির সামনের দাঁত দিয়ে। দুধ দাঁত পড়ে ২০ টি স্থায়ী দাঁত ও একবারে উঠা অন্য ৮টি স্থায়ী দাঁত, মোট ২৮টি স্থায়ী দাঁত বারো/তের বছর বয়সের মধ্য উঠা শেষ হয়।
এছাড়া বাকি ৪টি আক্কেল (Wisdom) দাঁত উপরের ও নীচের পাটির শেষে সাধারণতঃ ১৮ বছর বয়সে বা এর পরে উঠে।
দুধ দাঁত পড়ে স্থায়ী দাঁত উঠে বলে অনেক মায়েরা দুধ দাঁতের খুব একটা যত্ন নেননা।
কিন্তু দুধ দাঁতে খুব সহজেই দন্তঃক্ষয় (Dental Caries) রোগ হয়। যা থেকে অসহ্য ব্যথা, খেতে না পারা, মাড়ি বা চোয়াল ফুলে যাওয়া- হতে পারে।
এ ছাড়া অসময়ে দুধ দাঁত ফেলতে হলে বাচ্চার স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা (Displaced) ভাবে উঠে; চোয়ালের গঠন ঠিক মত হয় না; ভাল ভাবে খেতে না পারায় বাচ্চা অপুষ্টিতে ভোগে; দেখতে খারাপ দেখায় বলে বাচ্চা মনকষ্টে ভোগে।
দাঁত এমনভাবে তৈরী হয় এবং বিন্নস্ত থাকে যে আমরা নানা রকম খাবার খাওয়ার সময় মাড়ি আঘাত প্রাপ্ত হয় না। এ ছাড়া সঠিক বিন্নস্ত দাঁতের সারি জিহ্বা কে এর ভিতরে রাখে এবং গাল ও ঠোট কে বাইরে রাখে।
দাঁত সর্বক্ষন লম্বা/বাড়তে (Grow) থাকে। কিন্তু উপরের ও নীচের দাঁত একে অপরকে বাধা দেয় বলে দাঁত লম্বা হয় না। এ ছাড়া দাঁত ক্রমাগত সরতে (Drifting) থাকে। পাশের দাঁতের বাধায় দাঁত সরতে পারে না।
উপরের দাঁতের নীচের তল (খাওয়ার তল, Occlusal Surface) ও নীচের দাঁতের উপরের তল (খাওয়ার তল, Occlusal Surface) এমন ভাবে
উচু-নীচু (Pits and Fissures) থাকে যে খাওয়ার সময় ঠিক ঠিক মতো ফিট (Fit) হয়, বেশী নড়াচড়া করতে না পারে এবং খাদ্যকনা ঠিক মতো চিবানো হয়। এই সব কিছুর একটা সুন্দর ভারসাম্য (Balance) থাকে।
কিন্তু কোন কারণে অসময়ে একটি দাঁত পড়ে গেলে বা ফেলতে হলে এই পুরো ব্যালান্স/ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে নানা রকম জটিল সমস্যা তৈরী হতে পারে।
মুখের ভিতর পুরোটাই মিউকাস ঝিল্লি (Mucous Membrane) দ্বারা আবরিত (Covered) থাকে। এর নীচে ছোট ছোট লালা গ্রন্থি, স্বাদ গ্রন্থিগুলো থাকে। সাদামাটা ভাবে বলা যায় যে দুই রকমের মিউকাস ঝিল্লি সমগ্র মুখের ভিতর ঢেকে রাখে।
এর একটি হলো একটু শক্ত ও পিঙ্ক রং-এর (Keratinized) ও অন্যটি লাল নরম (Non-keratinized)। যেখানে খাবারের ঘসা-ঘসি লাগে সেখানেই একটু শক্ত ও পিঙ্ক রং-এর মিউকাস ঝিল্লি থাকে।
যেমন মাড়ি ও জিহ্বার উপরের অংশে। এই একটু শক্ত (Keratinized) অত্যন্ত জরুরী। এটা কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলে (মাড়ির রোগে বা কোন ভুল কাটা-কাটিতে) ওই দাঁত রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
অনেক সময়ে বেশী রক্তশুন্যতা ও নানা রকম ভিটামিনের অভাবেও জিহ্বার উপরের Keratinization নষ্ট হতে পারে। তখন খেতে গেলে জালা-পোড়া করা সহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয়।
দাঁতের সমস্যাসহ নানা কারণে মিউকাস ঝিল্লিতে ঘা (Ulcer) হতে পারে এবং এর থেকে পরবর্তীতে ক্যান্সারও হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তা’ হলে তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
২। দুধ দাঁতের সময় মতো ও সঠিক যত্ন নিতে হবে।
২। ৬-৭ বছরে উঠা প্রথম মাড়ির দাঁতের (1st Molar) দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
৩। মাড়ি ও জিহ্বার উপরের শক্ত (Keratinized) অংশ নষ্ট না হয় এবং মুখের ঝিল্লিতে যেন ঘা না হয়।
দাঁতের রোগ সমূহ (Dental Diseases):
এবার আসা যাক মুখ ও দাঁতে কি রকমের রোগ হয়। দাঁতের রোগ হওয়াটাও কৌতূহলোদ্দীপক, অনন্য।
আমাদের শরীরের সম্পূর্ণ বহির্ভাগ এবং ভিতরের যে অংশের সাথে বাইরের সংযোগ থাকে (যেমন পরিপাক-তন্ত্র, শ্বাস-তন্ত্র ইত্যাদি) তা, চামড়া (Skin) ও মিউকাস ঝিল্লি দ্বারা ঢাকা থাকে।
এর উপর অনবরত জীবানু (Bacteria) বাসা বাঁধতে থাকে। কিন্তু এই স্কিন বা ঝিল্লির উপরের অংশ ক্রমাগত ঝরে পড়তে থাকে বলে আমরা জীবানু সংক্রমন (Infection) থেকে বেচে যাই।
একমাত্র দাঁতের উপরের অংশই ঝরে পড়ে না। তাই জীবানু সহজেই দাঁতের উপর মজবুত বাসা তৈরী করে। আবার রোগ তৈরী হয় শরীরের ভিতর জীবানুর প্রবেশের (Invade) মাধ্যমে।
কিন্তু দাঁতের উপর মজবুত বাসার জীবানু প্রথমে শরীরে প্রবেশ না করে ওখানে বসেই এসিড ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে যা দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ তৈরী করে।
যদিও পরবর্তীতে এই জীবানুগুলোও শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে আরও ক্ষতিকর ব্যথাযুক্ত রোগ তৈরী করে। এই জীবানুগুলো দন্তঃক্ষয় (Dental Caries) ও মাড়ির রোগ (Gum disease/Periodontal disease) তৈরী করে।
এই রোগ দুইটিই সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে। সব মানুষই কোন না কোন সময় এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আরো কিছু জীবানুঘটিত রোগ মুখে হয়ে থাকে যা সংখ্যায় নগন্য।
দন্তঃক্ষয় বা Dental Caries:
দন্তক্ষয় বা Dental caries একটি জীবানুঘটিত রোগ যার ফলে দাঁতে গর্ত হয় ও পরে দাঁত ব্যথা থেকে শুরু করে মারাত্মক প্রদাহ হয়ে চোয়াল ফুলে যেতে পারে।
অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে দাঁতে পোকা হয় এবং পোকার কামড়েই দাঁত ব্যথা হয়। আসলে পোকা বলে কিছু নেই। জীবানুর দ্বারা দাঁতের সংক্রমনের জন্য দাঁত ব্যথা হয়।
খাবার গ্রহনের পর যদি দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হয়, তবে খাদ্যকনা বিশেষ করে কার্বহাইড্রেট (Carbohydrate) জাতীয় খাদ্য কনা ও ব্যাকটেরিয়া মিলে এক ধরণের এসিড তৈরি করে।
মিষ্টি, চকলেট, ঠান্ডা পানীয়, ও অন্যান্য নরম খাবার (যেমন বার্গার, আইসক্রীম) থেকে বেশী ও শক্তিশালী এসিড তৈরি হয়। এই এসিড দাঁতের অত্যন্ত শক্ত অংশ দাঁতের এনামেল গলিয়ে ছোট ছিদ্র তৈরি করে।
এ অবস্থায় দাঁতে কালো দাগ বা খুব ছোট গর্ত দেখা যায়। এনামেলে ছোট গর্ত হওয়ার পর পরেই কম শক্ত ডেন্টিন-এ বড় গর্ত হয়ে যায়। বাইরে থেকে রোগী তাই ঐ এনামেলের ছোট গর্তই দেখতে পায়।
ভিতরে যে অত বড় গর্ত তা টেরও পায় না। এই সময় ঠান্ডা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁত শির শির করে। এই অবস্থায় সাধারণ ফিলিং (Filling) করে সহজেই দাঁত রক্ষা করা যায়। পরে এই গর্তে জীবানু বাসা বাধে
এবং দন্ত-মজ্জা বা নার্ভে প্রদাহ (Inflammation, Dental Pulpitis) করে।
প্রথম অবস্থায় (Reversible Pulpitis) ঠান্ডা পানি বা বাতাসে ক্ষনিকের জন্য যথেষ্ট ব্যথা হয়।
এই অবস্থায়ও দাঁতে ফিলিং করে দাঁত রক্ষা করা যায়। পরবর্তীতে ঠান্ডা ও গরম দুই রকমের পানিতেই শির-শির, ব্যথা বা প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি হয় (irreversible Pulpitis)। এ অবস্থায় আর চিকিৎসা সহজ থাকে না।
তখন ব্যয় সাপেক্ষ কিছুটা জটিল চিকিৎসা (Root Canal Treatment, RCT) প্রয়োজন হয়। এরপরও চিকিৎসা না করালে হাড়ে সংক্রমন হয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করে।
মাড়ির রোগ বা Periodontal Disease:
দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে জীবানুর আক্রমনে মাড়ির রোগ হয়। দন্তঃক্ষয়-এর মত মাড়ির রোগ (Periodontal Disease)-ও একটি বহুল প্রচলিত অসুখ এবং
অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। মাড়ির রোগের আসল নাম Periodontal Disease। প্রচলিত অর্থে আমরা একে মাড়ির রোগ বা Gum Disease বলে থাকি।
সাধারণতঃ সুস্থ মাড়ি হয় মজবুত এবং এর রঙ হয় হালকা গোলাপী (Pink)। মাড়ির কাছে শক্ত ভাবে বাসা বাধা জীবানু নানা রকমের ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে যা মাড়িতে নানা স্তরে (Grade/Stage) প্রদাহ (Gingivitis) তৈরী করে।
এই ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে মাড়ি প্রথমে ফুলে নরম ও লাল হয়ে যায় এবং সহজেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে আরম্ভ করে। বিশেষ করে দাঁত ব্রাশ করার সময়। এ ছাড়া মুখে দুর্গন্ধ হয়।
অনেক সময় ভোরে ঘুম থেকে উঠে মুখে রক্ত জমা দেখতে পাওয়া যায়। কখনও কখনও দাঁত শির শিরও করে।
মাড়ির রোগ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে দাঁতে লেগে থাকা জীবাণুগুলো আরো বেশী জমতে থাকে এবং আরো বেশী ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে দাঁতের গোড়ার হাড় ও পেরিওডন্টাল লিগামেন্টকে (Periodontal Ligament-যার দ্বারা দাঁত হাড়ের সাথে লেগে থাকে) সংক্রমন করে; যার ফলে দাঁত নড়া ও ব্যথা শুরু হয়।
এই অবস্থায় কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসাও জটিল হয়ে পরে এবং এক সময়ে দাঁত নড়ে পড়ে যায়।
এই দুটি রোগ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরী করে আছে।
অসংখ্য মানুষ এই রোগ ও এর জটিলতায় ভুগছে। এছাড়া আরও দুটি রোগ বা অবস্থার কথা লিখতেই হয়।
মুখ গহব্বরের ক্যান্সারঃ
বাংলাদেশে পুরুষদের যত রকমের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে মুখের ক্যান্সার হয় সবচেয়ে বেশী। তার প্রধান কারণ দাঁতের অযত্ন বা চিকিৎসায় উপেক্ষা বা গাফিলতি করা।
ভাঙা, ধারালো, চোখা দাঁত, খসখসে দাঁত, বাজে ভাবে বানানো নকল দাঁত ও মুখের ভিতর নোংরা থাকার জন্য জিহ্বা বা মুখের ভিতর ঘা হতে পারে। এ ঘা থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এ ছাড়া জৰ্দ্দা/তামাক সহ পান খাওয়ার অভ্যাস মুখে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
আঁকাবাঁকা ও অসমান দাঁতঃ
দাঁতের সাধারণ রোগগুলোর সাথে আছে উচুনিচু, আঁকাবাঁকা বা অসমান দাঁতের সমস্যা। এই সমস্যার জন্য দেখতে খারাপ, কথা বলতে অসুবিধার সাথে সাথে দন্তঃক্ষয় ও মাড়ির রোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
কারণ আঁকাবাঁকা/অসমান দাঁতের জন্য খাবার আটকানো সহজ হয়, আবার পরিষ্কার করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। আঁকাবাঁকা/অসমান দাঁতের সময় মত চিকিৎসা না করালে উপরোক্ত সমস্যার সাথে সাথে অন্যান্য জটিলতাও বাড়তে থাকে।
সাধারণত বংশগত কারণে দাঁত আঁকাবাঁকা বা উচুনীচু হয়। তাই যে মা বা বাবার দাঁতে উল্লেখিত সমস্যা আছে তাদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরো বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমাদের মাদের কারো কারো ধারণা আছে যে দুধ দাঁত যেহেতু অস্থায়ী, এর যত্নের খুব একটা প্রয়োজন নাই। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ দুধ দাঁতই স্থায়ী দাঁত এর পথ প্রদর্শক।
সময়ের আগে আগে দুধ দাঁত ফেলতে হলে বা সময়মত দুধ দাঁত ফেলে না দিলে স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। এ ছাড়া অসময়ে দুধ দাঁত ফেলে দিলে চোয়ালের গঠনও ঠিক মতো হয় না।
কিছু কিছু অভ্যাস যেমন অনেক দিন পর্যন্ত আঙুল চোষাও দাঁতকে উচুনিচু করে দেয়।
বাচ্চাদের দুধ দাঁতের দন্তঃক্ষয় রোগ
দুধ দাঁতের দন্তঃক্ষয় রোগ সম্মন্ধে একটু না লিখলেই নয়। আগেই লিখেছি কোনো কোনো মায়েদের ভুল ধারণা আছে যে অস্থায়ী দুধ দাঁতের খুব একটা যত্নের দরকার নাই।
কিন্তু বাচ্চাদের দুধ দাঁতে সহজেই দন্তঃক্ষয় রোগ হয় এবং এর ফলে দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা হয়, চোয়াল ফুলে যায়। দাঁতের রোগের চিকিৎসা ভীতির জন্য বাচ্চারা অসহযোগী হয় বলে ঠিকমতো চিকিৎসা করাটাও কষ্টসাধ্য।
কিছু কিছু মায়েরা রাতে বুকের বা বোতলের দুধ মুখে দিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াবার অভ্যাস করে। এটা খুব বাজে অভ্যাস। এর ফলে বাচ্চাদের একই সাথে অনেক দাঁতের দন্তঃক্ষয় রোগ (Rampant Caries/Nursing Bottle Caries) খুব অল্প বয়সেই হয়ে যায়।
এতে বাচ্চারা ব্যথায় খুব কষ্ট পায়, ঠিক মতো খেতে পারে না, দেখতে খারাপ হয় বলে মানসিক টানাপোড়নে পড়ে। আর এর চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এ সময়ে সবাই আদর করে বাচ্চাদের চকলেট-বিস্কুট বেশী বেশী উপহার দেয় অথবা বাচ্চারা খেতে ভাল বা খেতে কষ্ট কম বলে বেশী বেশী খেতে চায় অথবা কখনো কখনো বাচ্চারা দুধ বা অন্য খাবার খেতে চায় না বলে মায়েরা পুষ্টিহীনতার ভয়ে চকলেট-বিস্কুট-চিপ্স বেশী বেশী খাওয়ান।
এই সবগুলোই দন্তঃক্ষয় রোগ তৈরী করার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এ সময়ে দাঁতের যত্ন অত্যন্ত জরুরী।
বেশী বয়স্কদের দন্তঃক্ষয় রোগ
শক্ত টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা, বেঠিক ভাবে দাঁত ব্রাশ করা, অনেক দিন ধরে মাড়ির রোগে ভুগা, কামড়ের অসামঞ্জস্যতার কারণে বয়ষ্কদের মাড়ি সরে যেয়ে দাঁতের গোড়া (Root) বের হয়ে যায়।
এই সময় যদি বয়স্করা ঠিক মতো এবং যত্ন সহকারে দাঁত (বিশেষ করে দাঁতের গোড়া) পরিষ্কার না করেন তবে খুব সহজেই ঐ দাঁতের গোড়ায় দন্তঃক্ষয় রোগ হতে পারে যা খুব তাড়াতাড়ি গভীর গর্ত তৈরী করে।
এর কারণ দাঁতের গোড়ায় যে ডেন্টাল প্লাক জমে তাতে জীবাণুগুলো থাকে অন্য রকম।
এ ছাড়া অসময়ে অনেক দাঁত ফেলে দেওয়ার জন্য রয়ে যাওয়া দাঁতগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারে অনেক বেশী ক্ষয়ে যায়। এর ফলে শুধুমাত্র দাঁতের ব্যথাই হয় না, খাওয়া-দাওয়া হয়ে উঠে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। দেখতেও খারাপ হয়ে যায়।
দাঁত ও মুখের রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হয়:
১ । দন্ত:ক্ষয় রোগ (Dental Caries) দন্তক্ষয় রোগ বাচ্চা, অল্প বয়স্ক (Teen Age) এবং বেশী বয়স্কদের বেশী হয়।
২ । মাড়ির রোগ (Gingival or Periodontal Disease): মাড়ির রোগ সাধারণতঃ বাচ্চাদের হয় না। প্রাপ্ত বয়স্ক ও বেশী বয়স্কদের মাড়ির রোগ বেশী হয়; বিশেষ করে ৩৫ বছর বা তার উপরের বয়সের লোকদের।