বিশ্বনবী (সঃ)_এর দোয়ার ভান্ডার পার্ট 1
বিশ্বনবী (সঃ)_এর দোয়ার ভান্ডার
Table of Contents
ابسمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহর পরিচয়
এ বিশ্ব জগত যিনি সৃষ্টি করেছেন, যাঁর নিয়ন্ত্রণে সৃষ্ট জীবের জন্ম-মৃত্যু তিনিই মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। মহান আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার বা শরীক নেই, তিনিই সর্বময় ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারী।
তাঁর অশেষ রহমত ও করুণার মাধ্যমেই পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং মহান আল্লাহ্পাক সম্পর্কে মুসলমান মাত্রই সম্যক ধারণা অর্জন করা বিশেষ প্রয়োজন। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল।
মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর কিছু গুণাবলী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা হচ্ছে-“(হে নবী (সাঃ)!) আপনি বলে দিন যে, মহান আল্লাহ্ পাক একক, আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন।
তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর জ্ঞান, শক্তি এবং গুণ-গরীমায় অন্য কেউই তাঁর সমান নয়।”
অনাদিকাল থেকেই মহান আল্লাহ্ স্বীয় অস্তিত্ব এবং মহিমার সাথে বিরাজ করছিলেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
সৃষ্টিকুলের উন্নতি-অবনতি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। এ জগতে আল্লাহ্র কর্তৃত্ব এবং মালিকানা ছাড়া অন্য কারও কোন অধিকার নেই।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে- “তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ বা উপাস্য নেই। তিনি (আল্লাহ্) চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী খাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শও করতে পারে না। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে এসব। কিছুর একমাত্র মালিক তিনি (আল্লাহ্)।”
আমাদের মাথার উপর যে সুবিশাল আকাশসমূহ বিস্তৃত রয়েছে অথচ এসবের মধ্যে কোন খুঁটি নেই। একমাত্র আল্লাহ্র আদেশেই এগুলো প্রতিষ্ঠিত আছে। এ ব্যাপারে মহা পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষণা হচ্ছে-“তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশসমূহকে খুটিহীনভাবে শামীয়ানার মত ঝুলিয়ে রেখেছেন, যা তোমরা দেখছ।”
মানুষকে কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। যথা: আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে- “আল্লাহ্ তিনিই যিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মাটির উপরই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদেরকে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
এছাড়াও পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে তথা যেদিকেই চোখ যায় সে দিকেই মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলী বিরাজমান রয়েছে। এবিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- “বিশ্বের সর্বত্র আমার নিদর্শনাবলী প্রকাশিত হচ্ছে এবং মানুষের নিজের মধ্যেও। তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না?”
প্রখ্যাত মুফাস্স্সির হযরত ইমাম রাযী (রহঃ) মহান আল্লাহ্ পাকের একত্ববাদের উপর প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ এক হাজারেরও অধিক প্রমাণ (যুক্তি) তুলে ধরেছেন। ঘটনাক্রমে তিনি এক আরব বেদুঈন মুসলমানকে কথা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব এবং একত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
আরব বেদুঈন লোকটি বিস্ময়ভরা কণ্ঠে উত্তর দিলেন যে, মরুভূমিতে বালির ওপর পায়ের চিহ্ন দেখে যদি পথিকের পরিচয় পাওয়া যায়। দূর হতে ধোঁয়া দেখে যদি আগুনের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে বাধ্য করে।
তাহলে এ বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, নদী-নালা, তরঙ্গ ইত্যাদি ফুলে-ফলে ভরা বাগান, বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি মিশ্রিত সুশোভিত পৃথিবীর এত সবকিছু দেখেও কি প্রমাণিত হয় না যে, এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা, নিয়ন্ত্রণকর্তা অবশ্যই আছেন? আর তিনিই হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, মুক্তিদাতা মহান আল্লাহ্ তা’আলা।
মহান আল্লাহ্ তা’আলার একত্ববাদ কিংবা অস্তিত্বের উদাহরণ কোন মানুষ তো দূরের কথা সৃষ্টিকুলের কারো পক্ষেই তা লিখে শেষ সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন-“হে নবী!
আপনি বলে দিন, যদি লেখার জন্য সমুদ্রের পানিসমূহ কালি বানানো হয় তাহলে আমার কথা, আমার গুণ-গান ইত্যাদি লেখা শেষ না হতেই সাগরের পানিসমূহ শেষ হয়ে যাবে। এরূপভাবে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের পানি একসাথ করলেও তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।”
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের ফযীলত মজার
ফযীলতঃ পবিত্র হাদীস গ্রন্থে নবী আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেন- মহান আল্লাহ্ তা’আলার আসমায়ে হুসনা (গুণবাচক সুন্দর নামসমূহ) ৯৯টি। এগুলো দ্বারা দোয়া প্রার্থনা করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ দান করে উল্লেখ করেন-
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا .
(ওয়ালিল্লাহিল আসমাউল হুসনা ফাদ’উহু বিহা)
অর্থ: আল্লাহ্ তা’আলার সবগুলো নামই সুন্দর, অতএব তোমরা এসব নামের দ্বারাই তাঁকে ডাক।
সুতরাং যে ব্যক্তি এসব নামসমূহ মুখস্থ করে ওযীফার মত করে পড়তে থাকবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই বেহেস্তে প্রবেশ করবে।
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই পবিত্র নামসমূহ পড়বে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হেসনে হাসীন নামক পুস্তকে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রতিদিন এই নামসমূহ পড়লে সে কখনও অন্নকষ্টে পড়বে না।
ইসলামের পরিচয়
আল্লাহ্ তা’আলার নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। তাই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন ইসলাম সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে জলদগম্ভীর স্বরে বলেন-
উচ্চারণ: ইন্নাদ্ দ্বীনা ‘ইন্দাল্লাহিল ইসলাম।
অর্থাৎ-“মহান করুণার আধার আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর নিকট মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” কেননা কেবল ইসলামই দিতে পারে সঠিক পথের সন্ধান, যে পথে চললে আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
আরবী ইসলাম শব্দটি “সালমুন” ধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ হল শান্তি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। অভিধানবেত্তাগণ ইসলাম শব্দের অভিধানগত অর্থ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন, ইসলাম শব্দের অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা ও মুসলমান হওয়া।
পারিভাষিক অর্থ-সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করা এবং মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান করা ও তদনুযায়ী জীবন গঠন করা।
একথা বাস্তব সত্য যে, ইসলামের প্রতিটি নিয়ম-নীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে জীবনের কোন পদেই বাধা আসবে না, বরং ইহকাল ও পরকালে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করা যাবে। কেননা, ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে জীবন পরিচালনা করবে তা ইসলামে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম নবী ও মানব সত্যের দিশারী হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যুগে যুগে, দেশে দেশে এ মহাপবিত্র ইসলাম তথা তার মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং সবশেষে বিশ্ব মানবজাতির হেদায়াতের জন্য তথা তাঁর মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠার সার্বিক দায়িত্বসহ নিখিল বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করেছেন।
প্রত্যেক নবী-রাসূল ইসলাম ধর্মের অমীয় বাণীসমূহ সারা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে গিয়ে বহু বাধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও পবিত্র ইসলামের প্রচারকার্য চালিয়ে গিয়েছেন।
আল কোরআন
মহান আল্লাহ্ তা’আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জীবনের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়সমূহ রাসূলগণের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের দ্বারা মানুষদেরকে শিক্ষাদান করেছেন।
এ নির্দেশানুসারে যারা পরিচালিত হয়েছেন তাঁরা অবশ্যই জাগতিক জীবনে উন্নতি এবং পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আর যারা এর অবাধ্যতা করেছে তারা হয়েছে পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত ও চির জাহান্নামী। আসমানী কিতাব মতান্তরে অনেকই আছে, তন্মধ্যে চারখানা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ চারখানা এবং পূর্ববর্তী
আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী মহাপবিত্র “ফুরক্বান” যা মহাপবিত্র কোরআন হিসেবে আমাদের নিকট পরিচিত। এ মহাপবিত্র কোরআনের সত্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক অগণিত প্রমাণ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
পবিত্র কোরআনের প্রথমেই ঘোষণা হয়েছে-“এটি এমন একটি কিতাব (যা আল্লাহ্র পক্ষ হতে এসেছে) এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি খোদাভীরুগণের জন্য পথ নির্দেশক।”
খোদাভীরু মুসলমানগণ এ পবিত্র কোরআনের নির্দেশানুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনায় ব্রতী হতে লাগলেন। তাদের সঙ্গী-সাথী অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনেরা তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ শুরু করল যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বানানো কথাসাহিত্য মাত্র এটি কোন মতেই আল্লাহ্র কালাম হতে পারে না।
অমুসলিমদের এসব কটুক্তির জবাবে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআন হাকীমে ঘোষণা করলেন- “আর যদি আমার নির্বাচিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ মহাপবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনের উপর সন্দেহ করে থাক, তাহলে তোমরা এ সূরার অনুরূপ একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো।
আর এজন্য আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের ভ্রান্ত উপাস্যদেরকে তোমাদের সাহায্য করার জন্য ডাক, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।”
আল্লাহ্র সৃষ্টজীব মানুষের পক্ষে কোনভাবেই পবিত্র কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা একটি সূরা তৈরি করা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন- “তোমরা কোন মতেই কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা সূরা তৈরি করতে পারবে না।”
তদানীন্তন আরব দেশের একজন বিখ্যাত অমুসলিম কবি কোরআন শরীফের আয়াত ও সূরার অনুরূপ বাক্য-বিন্যাসের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা সাধনা করে ব্যর্থ হয়ে পবিত্র কোরআনের যথার্থতা এবং সত্যতা স্বীকার করে বলেছিলেন-এ কোরআন মজিদ কোন মানুষের বানানো কালাম নয়।
কারণ এ কোরআন যদি কোন মানুষ কর্তৃক বানানো কালাম হত, তাহলে কোরআনের অনুরূপ আয়াত কিংবা সূরা বানানো মানুষের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব হত। এটি যেহেতু এক আল্লাহ্ প্রেরিত বাণী সেহেতু এতে হস্তক্ষেপ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।
পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত
পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃতি আলোচিত হল।
- হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে দশটি নেকী পাবে।
আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। সুতরাং এ তিনটি অক্ষর পাঠ করলে ত্রিশটি নেকী পাওয়া যাবে।”
- হযরত ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ আছে- “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে।” (বুখারী শরীফ)
- হযরত আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- “রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তোমরা ঐ জিনিস হতে অনেক মূল্যবান আর কোন জিনিস পাবে না, যা স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র জবান হতে বের হয়েছে। তথা আল-কোরআন।”
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন যে-পবিত্র কোরআনের মর্যাদায় অনেক লোক মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে, আর কোরআন শরীফের অমর্যাদার কারণে অধিকাংশ লোক নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। (মুসলিম শরীফ)
- পবিত্র হাদীস শরীফে আরও উল্লেখ আছে- “যে ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআন মজিদ পাঠ করে এবং তদানুযায়ী ‘আমল করে, কিয়ামাতের দিন (পুরস্কার স্বরূপ) তার মাতা-পিতাকে সূর্যের আলো অপেক্ষাও জ্যোতির্ময় টুপি পরিধান করান হবে।”
- যারা কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে জানে না তাদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে-“যার অন্তরে কোরআনের কোন অংশ নেই, সে ব্যক্তি বিরান (জন-মানবহীন) ঘরের মত।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করেনি বা কোরআন পড়তে জানে না সে অনুপযুক্ত লোক। সুতরাং তার জীবনের কোন মূল্য নেই।
- তিরমীযি শরীফের হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে উদ্ধৃত এক হাসীসে বর্ণিত আছে- নফল ‘ইবাদাতসমূহের মধ্যে মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াতের ছাওয়াব অনেক বেশি। সুতরাং তোমরা সর্বদা পবিত্র কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করবে।
কেননা হাশরের মাঠে পবিত্র কোরআন মজিদ তার পাঠকের জন্য (মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট) সুপারিশ করবে।
অন্য এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-মানুষের মৃত্যুর পর যখন তাকে কবরে দাফন করা হবে তখন মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন করার সময়ে মৃতের পক্ষ হতে একজন যুবক বলবে ইনি আমার বন্ধু!
আমি তাঁকে একাকী ভাবে ছেড়ে যেতে পারি না। কেননা দুনিয়াতে থাকাকালীন সময়ে এ ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করেছিল আর এখন আমিই তার ঐ পবিত্র কোরআন। সুতরাং আপনাদের প্রশ্ন আপনারা করতে পারেন, আমি কিন্তু আমার এ বন্ধুকে বেহেস্তে না পৌছায়ে তাঁর নিকট হতে বিদায় নিতে পারব না।
এরপর মৃতব্যক্তির নিকট আত্মপরিচয় দিয়ে বলবে, আমি আপনার দুনিয়াতে পাঠকারী ঐ কোরআন যা আপনি কখনও উচ্চৈঃস্বরে কখনও নিম্নস্বরে পাঠ করতেন। এখন আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, মুনকার -নাকীরের প্রশ্নের জন্য আপনার কোন ভয় নেই।
এরপর ফিরিস্তাদের প্রশ্নের পর তাঁকে বেহেস্তের পোশাক ও বিছানা দান করা হবে। যাঁর সাথে দুনিয়ার কোন কিছুর তুলনা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। (হাকেম) মহান করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের সকলকেই কোরআন মজিদ পাঠ করে সকল নি’আমাতসমূহ অর্জন করার তৌফিক দান করুন।
উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল, কোরআন মজীদ পাঠ করলে আল্লাহ্ এবং রাসূলের প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। যে কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়, যে কোরআন শিক্ষা এবং ‘আমলের ফলে মাতা-পিতাকে নূরের টুপি দান করা হবে,
কবর, হাশর ও মহান আল্লাহ্ নৈকট্য লাভ করে ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভের বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। সাধ্য থাকতে কখনও সে কোরআন পাঠে অবহেলা করা সমীচীন নয়।
তাই সকলেরই উচিত হাতে সময় থাকতে এখনও কোরআন মজিদ সহীহ-শুদ্ধভাবে পাঠের অভ্যাস করে নিজের জীবনকে সুন্দর- সুশৃংখলভাবে সাজানোর চেষ্টা করা।
‘ইলম শিক্ষা করার বিবরণ
‘ইলম দু’প্রকার। যথা: দুনিয়াবী ‘ইলম ও দ্বীনী ‘ইলম। দুনিয়াবী ‘ইলম শিক্ষা না করলে ইহকালীন উন্নতি হাছিল হয় না, আর দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা না করলে পরকালীন উন্নতি হাছিল হবে না। ইহকাল অস্থায়ী আর পরকাল চিরস্থায়ী।
মানুষ ইহকাল লাভের জন্য দুনিয়াবী ‘ইলম লাভ করার নিমিত্ত হাজার হাজার টাকা খরচ করতে রাজী কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের মুক্তিলাভের জন্য দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করতে টাকা খরচ করতে রাজী হয় না। সমাজের এ অবস্থার কারণ দ্বীনী ‘ইলমের অজ্ঞতা এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা।
অথচ দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করার ব্যাপারে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন- “প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ‘দ্বীনী এলেম শিক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য (ফরয)।” এ ফরয ত্যাগ করলে দোযখে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব শামীর ১ম খণ্ডের ৪০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “দ্বীনী ‘ইলম দরকার পরিমাণ শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে ‘আইন,
অপরের উপকারের জন্য প্রয়োজনের বেশি শিক্ষা করা ফরযে কিফায়া, বিদ্যার সাগর হওয়া মুস্তাহাব।” উল্লিখিত বর্ণনায় বুঝা গেল একশত জনের মধ্যে একশত জন মুসলমান নর-নারীর উপরই দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করা ফরয।
এ ‘ইলম শিক্ষা করা প্রথম প্রকারের ‘ইবাদাত। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- “সমস্ত রাত জেগে থেকে নফল ‘ইবাদাত করার চেয়ে এক ঘণ্টাকাল ‘ইলম শিক্ষা করা উত্তম।
বর্তমান জমানার মুসলমান সমাজ দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষার ফরয তরক করে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলছে এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে দ্বীনী ‘ইলম শিখাতে অনিচ্ছুক। মোটকথা নিজেরাও ফরয ‘ইলম শিক্ষা করা থেকে বিরত থেকে জীবনটা নষ্ট করছে, সন্তান-সন্ততিদের জীবনটাও নষ্ট করে ফেলছে।
এক্ষণে পরকালের শাস্তি হতে মুক্তি পেতে হলে নিজেদেরকে দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষার ফরয আদায় করতে হবে এবং নিজ সন্তানদেরকেও দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষার ফরয আদায় করাতে হবে।
সন্তানদেরকে দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা দিলে মৃত্যুর পর কবরে থেকে দোয়া পেতে থাকবে এবং হাশরের মাঠে পুরস্কার স্বরূপ নূরের টুপি এবং রুমাল পাওয়ার আশা আছে। দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায়,
তাহলে তাদের মর্যাদা খুবই উচ্চস্তরে হবে, এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে ঘোষণা হয়েছে। হযরত রাসূলে কারীম (সা) ইরশাদ করেন-“যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম তাজা করার জন্য ‘ইলম শিক্ষা করে আর এমতাবস্থায় সে মারা যায়,
তাহলে বেহেস্তের মধ্যে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি মাত্র স্তরের ব্যবধান হবে।” অর্থাৎ নবুওয়াতের স্তর ব্যতীত সে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
বুখারী এবং মুসলিম শরীফের এক হাদীসে আছে, রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-“মহান আল্লাহ্ পাক যার মঙ্গল বা কল্যাণ কামনা করেন তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি উক্ত ‘ইলম বণ্টনকারী মহান আল্লাহ্ উক্ত ‘আলেমকে তা বুঝার শক্তি দান করেন।”
‘ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সাঃ) আরও ঘোষণা করেন-“দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করতে সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও সেখানে গিয়ে দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা কর।”
প্রকাশ থাকে যে, শামী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, শরী’আতের ‘ইলম দু’ভাগে বিভক্ত। যথা: ফিক্বাহ যা শারীরিক ‘ইবাদাত আর তাসাওউফ যা অন্তর পরিশুদ্ধির বিদ্যা। সুতরাং উভয় প্রকার ‘ইলমই প্রয়োজন পরিমাণ শিক্ষা করা ফরয।
ঈমানের বিবরণ
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন অদৃশ্য বস্তুতে বিশ্বাস স্থাপন করা। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে দৃশ্যমান এ বিশ্বের মাঝে সকল সৃষ্টি যেমন-জ্বিন-মানুষ, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, জীব-জানোয়ার, সাগর- মহাসাগর, কীট-পতঙ্গ,
গাছপালা যা কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি এ সবের পালনকর্তা এবং তার সৃষ্টি সম্পর্কে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তিনটি বিয়ের মাধ্যমে ঈমানের প্রতিফলন ঘটে থাকে।
যথা: ১। মুখে স্বীকার করা, ২! অন্তরে সে কথা বিশ্বাস করা, ৩। কাজের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা এবং এসব কিছু বাস্তবায়নের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর রিসালাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।
কোন লোক যখন لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ )লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) “আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্ প্রেরিত রাসূল।” এ পবিত্র বাক্যটি মুখে উচ্চারণ করল এবং অন্তরেও বিশ্বাস স্থাপন করল, এরপর
যথাযথভাবে হুকুমসমূহ সে পালন করল তখনই সে ব্যক্তি মু’মিন হল।
আল্লাহ্, রাসূল, ফিরিস্তা, তাব্দীর, কিয়ামাত, বেহেস্ত, দোযখ ইত্যাদি বিষয়াবলী সত্য বলে বিশ্বাস স্থাপন করল এবং সে অনুযায়ী ‘আমল করারও অঙ্গীকার করল, যার মাধ্যমে তার বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তি প্রমাণিত হয়। কারণ মুখে স্বীকারের সাথে কাজের মিল না থাকলে সেটি নিছক মুখের বুলি মাত্র।
কোরআনের পরিভাষায় এটি কালিমা তাইয়্যেবাহ। কালিমা এমন একটি খোদায়ী আহ্বান যা প্রতিটি মু’মিনের জীবনে নিয়ে আসে নিরাপত্তা, স্বস্তি ও প্রশান্তি। ঈমান হল একটি বিরাট গাছের মত। যার শিকড় মাটির নিচে আর শাখা-প্রশাখা সমূহ আকাশে ছড়িয়ে আছে।
প্রভুর আদেশে সে সর্বদা তার ফল দিয়েই যাচ্ছে। মূলকথা হল কালিমার সকল ‘আমলই হল ঈমানের দাবি।
ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তরেরও অধিক। এর মধ্যে সর্বোচ্চটি হল “কালিমা ত্বাইয়্যেবাহ” মুখে উচ্চারণ করা। আর সর্বনিম্নটি হল “কষ্টদায়ক বস্তুসমূহ রাস্তা হতে দূরে সরিয়ে ফেলা।”
আর লজ্জাশীলতা হল ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম শাখা। আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন এবং তাঁর আনুগত্যের প্রতি নিজেকে সোপর্দ করার নামই হল অদৃশ্যে বিশ্বাস বা “ঈমান বিলগায়েব।” ঈমান বিলগায়েবের মোটামুটি দু’টি দিক রয়েছে।
যথাঃ ১। নিরাকার, আকৃতি-প্রকৃতিহীন আল্লাহ্র স্বত্বা এবং অস্তিত্বের স্বীকৃতি, তাঁর পবিত্র নামসমূহ এবং গুণাবলীসমূহের স্বীকৃতি। এরপর তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধসমূহ মেনে চলার অঙ্গীকার, যাকে বলা হয় “ঈমানে মুজমাল”।
২। (ক) আল্লাহ্র স্বত্বা এবং তাঁর অস্তিত্বে স্বীকৃতি। (খ) সকল ফিরিস্তাদের প্রতি স্বীকৃতি। (গ) আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি স্বীকৃতি। (ঘ) রাসূলগণের প্রতি স্বীকৃতি। (ঙ) কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস। (চ) ভাগ্যের ভালো-মন্দ আল্লাহ্র পক্ষ হতে হয়ে থাকে এ কথার প্রতি বিশ্বাস।
(ছ) মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস করা, একে বলা হয় “ঈমানে মুফাচ্ছাল”।
মানুষ তার ইহজীবনের কর্মকাণ্ডসমূহ সম্পর্কে পরকালীন জীবনে জবাবদিহীতার কথাকে স্মরণ করে যাবতীয় কাজ সমাধা করবে।
দুনিয়ার জীবনে তাওহীদ, রিসালাত ও ভালো-মন্দের দিকটা আল্লাহর দরবারে পেশ করে আখিরাতের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাই উচিত। মানুষের অন্তরে পরকালীন জবাবদিহীতার গুরুত্ব যদি সম্যকভাবে স্থান না পায় তবে তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।
ঈমানের কঠিন অগ্নি পরীক্ষা হচ্ছে, আমরা কোন বস্তুকে স্বচক্ষে দেখব না অথচ তার প্রতি আমাদের দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে এটি অত্যন্ত দৃঢ় মানসিকতার পরিচায়ক। মহান আল্লাহ্র কুদরতের নিদর্শনাবলী আমাদের সম্মুখে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়।
যা আমাদেরকে হতাশাগ্রস্ত অবস্থা হতে উদ্ধার করতে পারে। এতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবার ঈমানের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের প্রতি কোরআন এবং হাদীসের কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হল। জান্নাত প্রাপ্তির জন্য একান্ত শর্ত হল ঈমান।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-“যার হাতে আমার জীবন সে পাকজাতের কসম, তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
অন্য এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- “কাফির ব্যক্তিরা বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না, আর কোন মু’মিন বান্দা দোযখে প্রবেশ করবে না।
উল্লিখিত হাদীস সমূহের আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ্ এবং তদীয় রাসূলের উপর যারা আদৌ বিশ্বাস স্থাপন করবে না, তারা কখনও বেহেস্তের সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারবে না। আর যারা মহান আল্লাহ্ এবং তদীয় রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয়েছে, তারা কখনও দোযখের শাস্তি পাবে না।
সুতরাং মানব জাতির উচিত তারা যেন মহান আল্লাহ্ এবং তদীয় রাসূলের নির্দেশিত পথে নিজেদের জীবন পরিচালনা করে জীবনকে ধন্য করে।
কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ ঘোষণা দিবেন- “হে আমার বান্দাগণ! আজকের এ কঠিন দিনে তোমাদের ভীতসন্ত্রস্ত হবার কোন কারণ নেই।
তোমরা যদি আমার নির্দেশাবলীর ওপর আনুগত্য প্রকাশ করে থাক, তাহলে তোমাদের স্ত্রীগণকে নিয়ে আজকের দিনে তোমরা আনন্দের সাথে চির শান্তিময় রমণীয় স্থান বেহেস্তের উদ্যানে প্রবেশ কর।”শুরী চান দিনাজনী
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ পাক ঘোষণা করেন- “আর যারা ঈমান গ্রহণের পর নেক কাজসমূহ সম্পাদন করেছে তারাই জান্নাতবাসী। উক্ত জান্নাতে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।
মহান আল্লাহ্ অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন- “যারা ঈমান এনেছে এবং তার সাথে শিরক করেনি তারাই সুখ-শান্তি এবং নিরাপত্তার অধিকারী এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।”
ঈমান প্রধাণত দু’প্রকার। যথা: ১। ঈমানে মুজমাল (সংক্ষিপ্ত ঈমান) ২। ঈমানে মুফাচ্ছাল (বিস্তারিত ঈমান) নিম্নে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
আল্লাহর উপর ঈমান
দৃশ্যমান এ বিশ্বভুবনে অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে যা মানুষের পক্ষে গণনা করা খুবই কষ্টসাধ্য। এসব জীব-জন্তু, গাছ-পালা কে সৃষ্টি করেছেন? কেন সৃষ্টি করছেন? কে তাদের লালন-পালন করেন?
এতসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষক ও সাধু ব্যক্তিগণ মহান আল্লাহ্র অসীম কুদরতের অনেক প্রমাণ ও পরিচয় পেয়ে থাকেন। আল্লাহ্র পরিচয়ের জন্য সাধারণ দৃষ্টিতে আমাদের একান্ত পরিচিত কতিপয় প্রাণীসমূহের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই আল্লাহর কুদরত ও শক্তির পরিচয় পাওয়া যাবে।
এ জন্য সহজ হল, যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে যে, এক সময়ে (জন্মের পর) যে নিতান্ত অসহায় ছিল। যার কোনরূপ চলার শক্তি ছিল না, নড়াচড়ার শক্তি ছিল না, সে কথা বলতে পারত না।
ধীরে ধীরে সে ছোট্ট শিশুটি বড় হয়ে চলাফেরা করে একদেশ হতে অন্যদেশে ঘুরে বেড়াতে পারে এবং অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকে। তার এসব কাজের জন্য নিশ্চয়ই একজন পালনকর্তা, ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা অবশ্যই রয়েছেন। আর তিনিই হচ্ছেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এ বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ তা’আলা।
মহান আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টিজগতের মধ্যে এক বিচিত্র সৃষ্টি হচ্ছে উট। যে মরুভূমিতে কোন প্রাণী টিকতে পারে না অথচ সে মরুভূমিতে বিনা কষ্টে উট চরে বেড়ায় এবং অনেক বড় বড় বালুকাময় মরুভূমিতে মালামালের বোঝা নিয়ে পাড়ি জমায়।
এরা নিজের ইচ্ছামত নাকের ছিদ্র বন্ধ করতে এবং খুলতে পারে। মাঝে মধ্যে যখন মরুভূমিতে ধুলির ঝড় আরম্ভ হয় তখন উট নিজেদের নাকের ছিদ্র বন্ধ করে রাখে যাতে করে ধুলা-বালি নাকের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে।
উটের পিঠে আরোহণ করে মানুষ এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। মহান আল্লাহ্ তাদের পায়ের পাতা খুব নরম তুলতুলে করে দিয়েছেন। যাতে বালির উপর চলাচল করার সময় তাদের পা আটকিয়ে না যায়।
অনেক সময় এরা মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ১০/১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত পথ অতিক্রম করে থাকে। এ দীর্ঘ সময়ে পানি না পেলে তারা পিপাসায় কাতর হয়ে যায়। মহান আল্লাহ্ এ প্রাণীটির পাকস্থলির পার্শ্বে আলাদা একটি থলে দান করেছেন, উটেরা সে থলের মধ্যে পানি জমা করে রাখে।
মরুভূমিতে চলার সময় কাতর হয়ে গেলে তারা ঐ থলেতে সঞ্চিত পানি হতে পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করে। উট যেমন অনেক বড় ধরণের প্রাণী তেমনি তাদের খাদ্য-খাদকও অনেক বেশি। উটের চোয়াল খুবই শক্ত।
এজন্য এরা মরুভূমিতে শক্ত বাবলা গাছের ডালসমূহ বিনাকষ্টে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক উট সম্পর্কে ঘোষণা করে বলেন-“তারা কি দেখে না যে, কত কায়দা কৌশল করে উটকে সৃষ্টি করা হয়েছে?” (সূরা গাশিয়া)
পবিত্র কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ তা’আলা জন্তু-জানোয়ার সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, যার সংক্ষিপ্তসার হল- “মহান আল্লাহ্ তা’আলা চতুষ্পদ জীবসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। যা হতে তোমরা শীতের বস্ত্র তৈরি করে থাক এবং আরও অনেক উপকার পেয়ে থাক।
এসব প্রাণীসমূহ হতে কতকের গোস্ত তোমরা খেয়ে থাক। সন্ধ্যা বেলায় চারণভূমি হতে এসব জন্তুসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে এনে রাখ। আর সকাল বেলায় যখন আবার সেগুলোকে মাঠে চরানোর জন্য নিয়ে যাও তখনকার সে দৃশ্যটি কতই না সুন্দর দেখায়।
কোন কোন পশু তোমাদের ভারী বোঝাসমূহ এক শহর হতে অন্য শহর-বন্দরে পৌঁছায়ে দেয় অথচ সেখানে পৌঁছতে তোমাদের অনেক কষ্ট হত। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য অত্যন্ত মেহেরবান।
তিনি তোমাদের জন্য উট, হাতি, ঘোড়া, ইত্যাদি প্রাণীসমূহ সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা সেগুলোতে আরোহণ করতে পার। আর সেগুলো তোমাদের জন্য সৌন্দর্যের উপকরণও বটে। আর তিনি এমন বহু প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, যাদের সম্পর্কে তোমরা কিছুই অবগত নও।
অসংখ্য, অগণিত পশু-পাখি দ্বারা মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। জ্ঞানী লোকদের জন্য এতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। পাখিরা আকাশে উড়ে বেড়ায়, পাখিদের উড়ার মধ্যেও মহান আল্লাহ্র সৃষ্টির নিদর্শন ও কুদরতের প্রমাণ পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে উল্লেখ হয়েছে- “তারা কি তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পাখিসমূহকে দেখে না?
যে পাখিরা উড়ার সময় ডানা বিস্তার করে থাকে। আবার কখনও ডানা গুটিয়ে থাকে, মহান আল্লাহ্ তা’আলাই ঐ সমস্ত পাখিসমূহকে এভাবে শূন্যে চলার শক্তি দান করেছেন।” (সূরা মূল্ক)
আর এক ধরনের ক্ষুদ্র জীব মৌমাছি। এদের অস্তিত্ব এবং সাংগঠনিক কার্যাবলী দেখে সত্যিই আশ্চর্য হতে হয়। এসব ছোট্ট মৌমাছিরা দলবদ্ধভাবে বাসা বেঁধে মহান আল্লাহ্র সৃষ্ট বিভিন্ন গাছের পাতা, ফল-ফুলসমূহ হতে রস আহরণ করে বাসায় এনে জমা করে যা মধু আকার ধারণ করে।
এরপর এক বিশেষ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ে ঐ মৌমাছির বাসা কেটে সে মধুর চাকা আহরণ করে পরিশুদ্ধ করে রোগমুক্তির জন্য পান করে থাকে। এছাড়া এ মধু দ্বারা রুটি, মুড়ি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশিয়ে খায়।
এর ভেতরেও মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। মহান আল্লাহ্ সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাতের খিদমতের জন্য ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। মানুষ স্বীয় জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেকের দ্বারা এসব হতে বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে।
যেমন-গাছ-গাছালি, তরু-লতা, শাক-সব্জি ইত্যাদি গাছ-গাছালীতে সুন্দর সুন্দর সুশোভিত বাগান সাজিয়ে রেখেছেন। এসব তরু-লতা ও শাক-সবজিসমূহের কোনটিকে মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আবার কোনগুলো ঔষধ হিসেবে, আবার কোনগুলো দিয়ে কাঠ তৈরি করে বিভিন্ন প্রকারের আসবাবপত্র তৈয়ার করে থাকে।
এসবের ভেতরেও মহাপরাক্রম-
শালী কুদরত ওয়ালা আল্লাহর কুদরতের অসীম নিদর্শন পাওয়া যায়। উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, আসমান, জমিন, নদী-নালা এবং এসবের মধ্যে যা কিছু বিচরণ করছে এ সবের নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক। আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই।
সুতরাং এতসব শক্তিমান, কুদরতওয়ালা মহান আল্লাহ্ই একমাত্র উপাসনা পাওয়ার যোগ্য, তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য হতে পারে না। এছাড়া বিশ্বভুবনের যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই মহান আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের নিদর্শন আমাদের সামনে ভেসে ওঠে।
পাহাড়-পর্বতে আমাদের চক্ষুর অন্তরালে, জনারণ্যে, সমুদ্রের তলদেশে অসংখ্য জীব-জন্তুর অস্তিত্ব রয়েছে। সেসব প্রাণীরাও নিজ নিজ আহার পাচ্ছে, বংশ বৃদ্ধি করছে, শত্রুর আক্রমণ হতে নিজেদেরকে রক্ষা করছে।
একটি ক্ষুদ্র প্রাণীও না খেয়ে থাকে না, সদা-সর্বদাই তাদের প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তা তাদের খাদ্য দান করছেন। সারকথা, জীব-জন্তু ছোট হউক কিংবা বড় হউক কেউই আল্লাহ্র রহমত হতে বঞ্চিত নয়।
ফিরিস্তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মাটি, পানি, আগুন ও বাতাসের সমন্বয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের শিখা দিয়ে। আর ফিরিস্তাগণকে সৃষ্টি করেছেন নূর দিয়ে। আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে ফিরিস্তাদের সৃষ্টি একটু ব্যতিক্রমধর্মী।
কারণ ফিরিস্তারা কোন পুরুষও নন আর মহিলাও নন। এনাদের পানাহার, তন্দ্রা, নিদ্রা কিছুই নেই। সর্বদা এনারা মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে মগ্ন থাকেন এবং আল্লাহ্র নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন।
এনাদের আকৃতি-প্রকৃতি কোন মানুষেরই জানা নেই, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন- “মহান আল্লাহ্ তা’আলা ফিরিস্তাগণকে দু’তিন, চার ডানাবিশিষ্টভাবে সৃষ্টি করে স্বীয় সংবাদ বাহকরূপে নিয়োজিত করেছেন।
আবার যখন ইচ্ছা করেন তখন তাদের আকৃতি-প্রকৃতি নিজ ইচ্ছায় পরিবর্তন করে থাকেন।” -সূরা ফাত্বের
ফিরিস্তাগণের মোট সংখ্যা কত তা একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কেউ জানে না। দায়িত্ব এবং মর্যাদার দিক দিয়ে সকল ফিরিস্তা এক সমান নয়। ফিরিস্তাগণের মধ্যে চারজন ফিরিস্তাই সর্বপ্রধান।
যেমন- ১। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) ২। হযরত মীকাঈল (আঃ) ৩। হযরত ‘আযরাঈল (আঃ) ও ৪। হযরত ইস্রাফীল (আঃ)। নিম্নে এনাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হল।
১। হযরত জিব্রাঈল (আঃ): ইনি এত দ্রুতগতি সম্পন্ন যে, চোখের পলকে শত-সহস্র মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে পারেন। মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে নবী ও রাসূলগণের নিকট ওহীসমূহ পৌছায়ে দেয়াই ছিল তাঁর কাজ।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট তিনি অসংখ্যবার আল্লাহ্র নির্দেশে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফ হতে জানা যায়, হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর একান্ত পরিচিত হযরত দাহিয়াতুল কালবী নামক সাহাবীর আকৃতিতেই বেশির ভাগ আগমন করেছেন।
বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসেই তিনি বেশির ভাগ রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন। হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়, পবিত্র রমজান মাসে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ)-কে এক খতম কোরআন মজিদ পাঠ করে শুনাতেন।
আর এক খতম রাসূলে কারীম (সাঃ) জিব্রাঈল (‘আঃ)-কে পাঠ করে শুনাতেন। হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট হযরত জিব্রাঈল (‘আঃ) যে ওহী নিয়ে আসতেন তৎকালীন কাফির মুশ্রিক্রা এ কথা বিশ্বাস করত না; বরং তারাও এ ব্যাপারে নানারূপ ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
কাফিরদের এরূপ উক্তির জবাবে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনে এর সত্যতা সম্পর্কে ঘোষণা করেন- “হে কাফির অবিশ্বাসীগণ! পবিত্র কোরআন মাজীদকে তোমরা রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর মনগড়া কথা বলে মনে করে থাক।
প্রকৃতপক্ষে এটি রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর মনগড়া কথা নয়; বরং তা একজন মহা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন দূতের কথা। উক্ত দূত হযরত জিব্রাঈল (আঃ) অত্যন্ত শক্তিশালী। যিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে ‘আরশে ‘আযীম হতে বাণীসমূহ নিয়ে এসে রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট পৌঁছায়ে দিয়ে থাকেন।”
২। হযরত মীকাঈল (আঃ): ইনি মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। যেমন- (ক) তিনি আকাশ হতে মহান আল্লাহ্র আদেশক্রমে মেঘসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যখন যেখানে মেঘ-বৃষ্টি, ঝড় ইত্যাদি হওয়া দরকার মহান আল্লাহর নির্দেশে সে কাজ সমাধা করেন। (খ) মহান আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত রিযিকসমূহ সৃষ্ট জীবের মধ্যে বণ্টন করে থাকেন।
৩। হযরত ‘আযরাঈল (আঃ): হযরত ‘আযরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ্ পক্ষ হতে আদিষ্ট হয়ে যাবতীয় সৃষ্টিকুলের রূহ কবজ করার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তিনি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের ‘আরশের নিচে সিদরাতুল মুনতাহা নামক একটি বরই (কুল) গাছের নিচে বসে আছেন, ঐ গাছের পাতায় সমস্ত প্রাণীদের নাম-ঠিকানা সবকিছুই সুন্দরভাবে লেখা রয়েছে।
কোন প্রাণীর হায়াত যখন শেষ হয়ে যায়, তখন ঐ বরই গাছের একটি পাতা হযরত ‘আযরাঈল (আঃ)-এর সম্মুখে ঝরে পড়ে। তখন সে নাম-ঠিকানা অনুযায়ী যে প্রাণীর রূহ যেভাবে কবজ করার কথা লেখা থাকবে, ঠিক সেভাবেই কবজ করে থাকেন।
৪। হযরত ইস্রাফীল (আঃ): ইনি মহান আল্লাহ্র নির্দেশে সিঙ্গা মুখে
নিয়ে অপেক্ষা করছেন এবং নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে উক্ত সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিলেই কিয়ামাতের ধ্বংসলীলা আরম্ভ হয়ে যাবে।
এছাড়া আরও কয়েকজন ফিরিস্তার দায়িত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
(ক) কিরামান-কাতিবীন বা সম্মানিত লিখকগণ : মানব জাতি এবং জ্বিন জাতিসমূহের দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রকার কর্মকাণ্ড লেখার জন্য মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে একদল ফিরিস্তা নিযুক্ত আছেন।
এসব ফিরিস্তাদ্বয় মানব ও জ্বিন জাতির প্রত্যেকের দু’কাঁধে নিয়োজিত হয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনের পাপ-পুণ্যসমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখেন, যা পরবর্তীতে হাশরের মাঠে মানুষ তাদের কৃতকর্মের ফলাফলরূপে দেখতে পাবে।
(খ) মুনকার এবং নাকীর: এ দু’জন সম্মানিত ফিরিস্তা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে কবরবাসীকে প্রশ্নোত্তর করবেন। যে সকল কবরবাসী মুর্দাগণ তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন তাদের আত্মাকে “ইল্লীয়্যীন” বা সুখময় স্থানে রাখা হবে।
আর যারা তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে না তাদের আত্মাকে সাত তবক জমিনের নিচে “সিজ্জীন” বা দুঃখময় স্থানে রাখা হবে এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
(গ) রুমাত ফিরিশতা: উল্লেখ্য যে, মুনকার ও নাকীর ফিরিস্তাদ্বয় কবরে প্রশ্নোত্তর করার জন্য আসার পূর্বে কবরবাসির নিকট “রুমাত” নামক একজন ফিরিস্তা আসবেন এ ব্যাপারে হাদীসে উল্লেখ আছে-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন- একদা রাসূলে কারীম (সাঃ) আমাকে ডেকে বললেন, হে ইবনে সালাম! জেনে রেখ কবরে মুনকার-নাকীর নামক ফিরিস্তাদ্বয়ের পূর্বে “রুমাত” নামক একজন ফিরিস্তা আসবেন যার চেহারা হবে খুবই আলোকোজ্জ্বল। তিনি কবরে এসে মুর্দাকে উঠায়ে বসায়ে বলবেন, “হে কবরবাসী!
তুমি তোমার জীবনের যাবতীয় কর্মের হিসাব লিপিবদ্ধ কর।” তখন কবরবাসী অজুহাত পেশ করে বলবে যে, কলম কোথায়? কাগজ কোথায় যে আমি এসব লিখে দেব?
তখন সে “রুমাত” নামক ফিরিস্তা বলবেন, তোমার কাফনের কাপড়কে কাগজ, হাতের আঙ্গুলকে কলম এবং মুখের থুথুকে কালিরূপে ব্যবহার কর। আদিষ্ট হয়ে কবরবাসী তার জীবনের সকল পুণ্য কার্যাবলী লিপিবদ্ধ করবে কিন্তু পাপের কথা সে লিখতে চাইবে না।
এরপর এক পর্যায়ে ফিরিস্তার ধমকে এবং গুরুজের আঘাতে সে কবরবাসী নিজের জীবনের গুনাহরাশি সমূহও
এরপর তাকে বলা হবে, হে কবরবাসী!
তোমার হাতের সীল দ্বারা এতে মোহরাংকিত করে দাও। নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে কবরবাসী তাই করবে। এরপর উক্ত কাপড়খানি মুর্দার গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে উক্ত “রুমাত” নামক ফিরিস্তা চলে যাবেন। এরপর প্রশ্ন-উত্তরকল্পে মুনকার এবং নাকীর নামক ফিরিস্তাদ্বয় কবরে আসবেন।
রিদ্বওয়ান ফিরিস্তা: বেহেস্তবাসীদের যাবতীয় সেবার কাজে ইনি নিয়োজিত রয়েছেন। ইনি বেহেস্তের অন্যান্য ফিরিস্তাগণের প্রধান হিসেবে যাবতীয় কাজের সমাধান দেবেন।
মালেক ফিরিস্তা: ইনি দোযখের যাবতীয় শাস্তি দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। দোযখের অন্যান্য ফিরিস্তাগণের প্রধান হিসেবে তিনি যাবতীয় শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেবেন।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্র অগণিত, অসংখ্য ফিরিস্তা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন যাদের নাম কিংবা সংখ্যা কারও জানা নেই।
সুতরাং উল্লিখিত গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত ফিরিস্তাগণের প্রতিও আমাদেরকে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে। কারণ ফিরিস্তাগণের প্রতি ঈমান স্থাপন করাও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঈমানের অঙ্গ হিসেবে ফরয।
আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস
মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ পাক দুনিয়ার আদি মানব হযরত আদম (আঃ) হতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রাসূলগণকে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে যেসব বিধানসমূহ দান করেছেন সেগুলোকে আসমানী কিতাব বলে।
পবিত্র হাদীস শরীফের বর্ণনায় সেসব আসমানী কিতাবসমূহের সংখ্যা ১০৪ খানা বলে প্রতীয়মান হয়। এসবের মধ্যে ৪ খানা কিতাব ও বাকি ১০০ খানা সহীফা বলে প্রসিদ্ধ।
এসব আসমানী কিতাবসমূহের মূল বক্তব্য ছিল মহান আল্লাহ্র একত্ববাদ এবং উল্লিখিত বিধি-বিধানসমূহ মানুষ তাদের স্বীয় বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটায়ে ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভের পথ সুগম করা।
সুতরাং যারা এসব বিধি-বিধানসমূহ সঠিকভাবে বিশ্বাস করেছে তাদের জন্য রয়েছে চির শান্তিময় রমনীয় স্থান বেহেস্ত উদ্যান, আর যারা এগুলোকে অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ কষ্টদায়ক শাস্তির স্থান দোযখের আগুন।
আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি তৎকালীন অমুসলিম কাফির সম্প্রদায়ের লোকেরা সন্দেহ প্রকাশ করে এগুলোকে যাদুকরের যাদুক্রিয়া বলে অভিহিত করত। তখন মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঐ সকল অমুসলিম কাফিরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা দিলেন-
“কোরআনের সূরাসমূহের মত তোমরা নিজেরাও দশটি সূরা রচনা করে হাজির কর এবং এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’আলাকে ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সহযোগীকে ডেকে নাও।” কিন্তু তৎকালীন আরবের কোন লোক এ চ্যালেঞ্জ মেনে নেয়ার সাহস পেল না।
তখন মহান আল্লাহ্ পুনরায় ঘোষণা করলেন- “হে অবিশ্বাসী কাফির সম্প্রদায়গণ! আমার বান্দা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর আমি যে বাণীসমূহ নাযিল করেছি এতে যদি তোমাদের কোনরূপ সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা কোরআনের মত একটি সূরা রচনা কর।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উম্মি হয়ে যদি এমন একটি গ্রন্থ রচনা করতে পারেন বলে তোমাদের ধারণা হয়ে থাকে, তাহলে তোমরাও অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে দেখাও দেখি! তোমরাত সকলেই নামকরা বড় বড় কবি-সাহিত্যিক।
দশটি সূরার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম-দশটির প্রয়োজন নেই, একটি মাত্র সূরা রচনা করে দেখাও!” এবারও আরবের কোন লোক অগ্রসর হবার সাহস পেল না।
তখন মহান আল্লাহ্ পুনরায় ঘোষণা দিলেন- “যদি তাদের দাবীসমূহ সত্য হয় তাহলে তারা কোরআনের কোন বাক্যের সমতুল্য একটি বাক্য মাত্র রচনা করুক।” টোন লাইন নাইতর্জী চ্যানেল সালাম।
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহর এতসব ঘোষণায় সাড়া দিয়ে তৎকালীন মক্কা-মদীনার অবিশ্বাসী কাফির সম্প্রদায়ের পণ্ডিতরা একটি সূরা তো দূরের কথা, একটি বাক্য পর্যন্ত রচনা করতে পারেনি। অথচ তারা সকলেই তৎকালীন সময়ের খ্যাতিমান পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল।
শেষ পর্যন্ত কাফিররা এ কোরআনের উপর বিশ্বাস না করলেও একথা স্বীকার করেছে যে, এ কোরআন কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয় বরং এটি ঐশী বাণী।
মহান আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত ১০৪ খানা কিতাবের মধ্যে পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, ১০০ খানা সহীফা বা ছোট কিতাব। বাকী ৪ খানা বড় কিতাব। নিম্নে এগুলো কোন নবীর উপর নাযিল হয়েছিল তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
১০০ খানা সহিফা যথাক্রমে- হযরত আদম (আঃ)-এর উপর দশখানা। হযরত শীস (আঃ)-এর উপর পঞ্চাশ খানা। হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর উপর ত্রিশখানা। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উপর দশখানা।
৪ খানা কিতাব যথাক্রমে-
১। তাওরাত: এ আসমানী কিতাবখানা হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর পরিপূর্ণভাবে লিখিত আকারে, সিনাই নামক পর্বতে নাযিল হয়েছিল। হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুসারীগণকে বণী ইসরাঈল সম্প্রদায় বলা হয়।
২। যাবুর: এ আসমানী কিতাবখানা নাযিল হয়েছিল তৎকালীন সময়ের বাদশাহ এবং নবী হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর। পবিত্র হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-হযরত দাউদ (আঃ) এত সুন্দর কন্ঠের অধিকারী ছিলেন যে, যাবুর কিতাব যখন তিনি তিলাওয়াত করতেন তখন পশু-পাখি, জ্বিন-ইনসান এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তাঁর তিলাওয়াত শুনার জন্য অধির আগ্রহের
সাথে অপেক্ষা করত।
৩। ইঞ্জীল: এ আসমানী কিতাবখানা হযরত ঈসা রুহুল্লাহ (আঃ)-এর উপর নযিল হয়েছিল। তাঁর অনুসারী সম্প্রদায়কে ‘ঈসায়ী বা খ্রিস্টান বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৪। কোরআন: এ আসমানী কিতাবখানা সর্বশেষ নবী ও রাসূলগণের সর্দার বা সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল। এটি সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব বলে খ্যাত। এ পবিত্র কোরআন মাজীদের মধ্যে উল্লেখিত ১০০ খানা সহীফা এবং অন্য তিনখানা কিতাবের মূল বিষয়বস্তুসমূহ বিদ্যমান।
এ কিতাবখানা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য তাদের সকল প্রকার বিধি-বিধান এবং সকল সমস্যার সঠিক সমাধান দানকারী একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব। যেসব লোক এ কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এর সর্বময় বিধি-বিধান অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তি জীবন,
সামাজিক ও পারিবারিক সর্বক্ষেত্রে পরিচালিত করবে সে সব লোক ইহকালীন জীবনে পরম সুখ-শান্তি এবং পরকালীন জীবনে অনাবিল শান্তির নীড় সুখময় স্থান বেহেস্ত উদ্যান লাভ করে ধন্য হতে পারবে। মানব জাতির ইসলামী জীবন-বিধান এ কিতাবের উপরই নির্ভরশীল।
সকল প্রকার আসমানী কিতাবসমূহকে মহান আল্লাহর বাণী হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু মহা পবিত্র কোরআন মজীদ অবতীর্ণ হবার পর পূর্ববর্তী সকল কিতাবসমূহের হুকুমসমূহ পালনবিধি রহিত হয়ে গেছে।
এ ছাড়া তাওরাত ও ইনজীল কিতাবের অনুসারীগণ পরবর্তীতে তাদের স্বপক্ষীয় করে তোলার জন্য কিছু কিছু আয়াত পরিবর্তন করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্র অশেষ অনুগ্রহে পবিত্র কোরআনকে কেউ পরিবর্তন করতে পারেনি আর কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও তা পারবে না।
কেননা এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন- “নিশ্চয়ই এ কিতাবের বাণীসমূহ আমি নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণ করব।” সুতরাং যার হিফাযতের দায়িত্ব মহান আল্লাহর হাতে ন্যাস্ত তাতে কোনরূপ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
উল্লিখিত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হল, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানী পরিচায়ক হিসেবে প্রতিটি মুসলমানের জন্য একান্ত ফরয।
রাসূলগণের উপর বিশ্বাস
মানুষ সৃষ্টির সেরা শ্রেষ্ঠ জীব। কিন্তু এ মানব গোষ্ঠীর প্রকাশ্য শত্রু হল বিতাড়িত শয়তান। মানুষ মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদত-বন্দেগী করবে এটাই সর্বকাল ও সর্বযুগের নিয়ম। কিন্তু চিরশত্রু শয়তান তা কোনমতেই হতে দেবে না।
সুতরাং সে বিভিন্নরূপ ধারণ করে এবং প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। মানুষ যাতে বিতাড়িত শয়তানের প্রলোভনে পড়তে না পারে, সেজন্য মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।
নবী-রাসূলগণ মহান আল্লাহ্ পক্ষ হতে কিতাবপ্রাপ্ত হয়ে সে অনুযায়ী লোকদেরকে চলার জন্য নির্দেশ দিতেন। ঐ কিতাবসমূহের মধ্যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সকল প্রকার বিধি-বিধানসমূহ লিপিবদ্ধ ছিল। নবী-রাসূলগণের চরিত্র ছিল অত্যন্ত নিখুঁত যা সাধারণ মানুষের জন্য অনুকরণীয় ছিল।
তাঁদের মন-মানসিকতা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উদার এবং দয়ায় পরিপূর্ণ। যার কারণে নবী-রাসূলগণ অনেক নির্যাতিত হয়েও মানুষের কল্যাণ এবং তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে গেছেন।
পয়গাম্বরগণের সকলেই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান নন। কারো কারো মর্যাদা কারো কারো চেয়ে বেশি ছিল। তবে সবচেয়ে মর্যাদাশালী হলেন আমাদের প্রিয় নবী সাইয়্যেদুল মুরছালীন, যাঁর উপাধি খাতামুন্নাবিয়্যীন। তিনিই দুনিয়ার শেষ নবী, তাঁর পরে আর কোন নবী এ দুনিয়াতে আগমন করবেন না।
কারণ কিয়ামত পর্যন্ত যত লোকজন আসবেন তাদের সকলেরও তিনি নবী। তিনি মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত বাণীসমূহ নিজ জীবনে প্রতিপালন করে এবং সে অনুযায়ী মানুষ আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করার সুবিধার জন্য স্বীয় হাদীসের মাধ্যমে কিয়ামত, হাশর-নশর, বেহেস্ত-দোযখ ইত্যাদি সকল বিষয়েরই বর্ণনা করে গেছেন।
সুতরাং তাঁর অবর্তমানে নায়েবে রাসূলগণ এসব বিষয়াবলি সম্পর্কে লোকদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন।
হযরত আদম (আঃ) হতে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে একলাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দু’লাখ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
নবী-রাসূলগণের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকজন নবী-রাসূলগণ যথাক্রমে: হযরত আদম (আঃ), হযরত শীষ (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইদ্রিস (আঃ), হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত ইসমাইল (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ),
হযরত সালেহ (আঃ), হযরত লূত (আঃ), হযরত শু’আইব (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারুন (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহ্ইয়া (আঃ), হযরত হুদ (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ),হযরত ইলিয়াস (আঃ), হযরত জুলকি (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)।
উল্লেখ্য যে, সকল নবীগণই মহান আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছেন তাই সকল নবীগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামী পরিচায়ক হিসেবে সকল মুসলমানের জন্য একান্ত ফরয।
কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস
কিয়ামত শব্দের অর্থ মহাপ্রলয়ের দিন। সেদিন একমাত্র মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না। সেদিনের উপর যার বিশ্বাস নেই,সে অমুসলিম, বেঈমান, কাফির। মহান আল্লাহ্ মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পর তাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য একটা সুন্দর বিধি-বিধান দান করেছেন।
সে অনুযায়ী মানুষ নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছে কি না,সে ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, শেষ বিচারের দিন তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। এরপর শেষ বিচারের দিন মানুষ স্বীয় কাজকর্মের হিসাব নিকাশ দান করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাবে।
যারা মহান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জগতে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছে সেদিন তারা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে। অর্থাৎ চিরআল্লাহরথায়ী সুখময় স্থান অমরপুরী বেহেস্ত উদ্যানের অধিবাসী হবে।
আর যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করেনি, তারা লাঞ্ছনা, অপমান এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তিরস্কৃত হয়ে দুঃখময় স্থান জাহান্নামে নিপতিত হবে।
আদি মানব হযরত আদম (আঃ) হতে আরম্ভ করে দুনিয়ার সর্বশেষ যে শিশুটি এসেছে, এদের প্রত্যেক প্রাণীকেই সেদিন অর্থাৎ হাশরের মাঠে মহান আল্লাহ্ তা’আলার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পেশ করতে হবে।
সেদিন নেক্কার বান্দাদের ডানহাতে ‘আমলনামা থাকবে আর গুনাহগার লোকদের বাম হাতে তাদের ‘আমলনামা থাকবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা করেন-“যে ব্যক্তিকে হাশরের দিন তার ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে ‘আমলনামা হাতে পেয়ে সে ব্যক্তি লোকদেরকে বলতে থাকবে, এ দেখ আমার ‘আমলনামা।
তোমরা এটা পাঠ করে দেখ! দুনিয়ার জীবনে আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমি নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হব। আর সে কথা স্মরণ করেই আমি আমার জীবনকে পরিচালিত করেছি। সে ব্যক্তি ঐ দিন পরম আনন্দে থাকবে।
পরিশেষে সে অমরপুরী বেহেস্ত উদ্যানের অধিবাসী হবে।” অপরদিকে যাদের ‘আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন- “যে ব্যক্তিকে তার ‘আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, আমাকে ‘আমলনামা না দিলে খুবই ভালো হত।
জানি না হিসাব-নিকাশে আমার পরিণাম কি দাঁড়াবে! সেদিন প্রত্যেকেই নতজানু হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। সকলকেই তাদের স্বীয় ‘আমলনামা দেখার জন্য ডাকা হবে। মহান আল্লাহর পক্ষ হতে তাদেরকে তখন বলা হবে, দুনিয়ার জীবনে তোমরা যা করেছিলে আজ তার বিনিময় পাবে।
এ দেখ আমার হাতে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের কর্মফলসমূহের খতিয়ানের কপি। এ খতিয়ানেই লিপিবদ্ধ করা আছে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের সকল কর্মকাণ্ড। তোমরা যখনই যে কাজ করেছিলে সাথে সাথে তা আমি সম্মানিত ফিরিস্তাগণের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করিয়ে রেখেছি।”
পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ সে দিনটিতে মানুষের দুঃখ-কষ্টের কোন অন্ত থাকবে না। সকলেই নিজেদের মুক্তির চিন্তায় পেরেশান থাকবে। আদরের স্ত্রী-পুত্র, কন্যা, ভাই-বোন, মা-বাপ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সেদিন কেউ কারও কোন পরিচয় দেবে না।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা দিয়ে বলেন- “হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। আর ঐদিনকে ভয় কর যেদিন পিতা-পুত্রের কোন উপকারে আসবে না।
সেদিন মানুষের ‘আমলনামার তারতম্য অনুসারে তাদের মধ্যে ব্যবধান হবে। কেউ সুখ-শান্তিতে থাকবে আবার কেউ অশান্তির চরম শিখরে থাকবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ হয়েছে- “কতকের চেহারা সেদিন হাসি-খুশি থাকবে, আবার কতকের চেহারা থাকবে মলিন।”
বদকার দোযখী লোকদের থেকে সেদিন বেহেস্তের অধিবাসীগণকে আলাদা করে রাখা হবে। সেদিন মানুষের হাত, পা অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা যেসব কাজ-কর্ম সে দুনিয়ায় জীবিত থাকাকালে করেছিল তারাই তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ আছে- “ঐদিন মুখের জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এবং হাতসমূহ কথা বলবে এবং পাসমূহ সাক্ষ্য দেবে, সে ব্যক্তি ইহকালীন জীবনে যেসব কাজকর্ম করেছে।”
হঠাৎ করেই কিয়ামত আরম্ভ হবে না। এর পূর্বে কিছু কিছু ছোট-বড় ঘটনা ঘটবে যাতে মানুষ বুঝতে পারবে যে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। হাদীসের আলোকে নিম্নে কিয়ামতের ছোট-বড় কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা করা হল। চলন জাগছেচ চরক শুল্পীত (চাল) নিতার নামেই।
কাল কিয়ামতের ছোট ছোট ‘আলামতসমূহ
কিয়ামত সংঘটিত হবার পূর্বে মানুষ যে সকল ছোট ছোট আলামতসমূহ দেখবে তা নিম্নরূপ। যথা: মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে। মিথ্যা, বানোয়াটি কথাকে লোকেরা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করবে। আমানতের খিয়ানত করবে।
অর্থাৎ কারও নিকট কোন কিছু আমানত রাখলে সে ব্যক্তি ঐ আমানতের জিনিস ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাবে। পুরুষ লোকেরা মেয়েলোকের বশ্যতা ও আনুগত্যতা করবে।
নিজেদের সন্তানরা মাতা-পিতার সাথে নাফরমানি করবে অর্থাৎ সন্তান মাতা-পিতার অবাধ্য হয়ে চলবে। অনুপযুক্ত লোকদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে।
গরিব, অসহায়, অনাথ লোকেরা হঠাৎ ধনী হয়ে যাবে এবং বিরাট বিরাট ঘরবাড়ি নির্মাণ করবে। দুনিয়া লাভ করার জন্যে মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করবে। মানুষের লজ্জা-শরম থাকবে না। মিথ্যা- জুয়াচুরি, অন্যায়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা হবে।
সমাজে বিধর্মীদের প্রভাব প্রবলভাবে দেখা দেবে। মানুষ নিজ পিতা-মাতাকে শত্রু ধারণা করে বন্ধু-বান্ধবকে আপন বলে মনে করবে। পূর্ববর্তী পুণ্যবান লোকদেরকে মানুষ গালিগালাষ করবে এবং ধর্মীয় শিক্ষা লোপ পাবে।
মদ পান, ব্যভিচার এবং মূর্খতা ও পশুত্ব আচরণ বৃদ্ধি পাবে। নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা এত কম হবে যে, প্রতি পঞ্চাশ জন মহিলার পরিচালক হবে মাত্র একজন পুরুষ। এসব ছোট ছোট নিদর্শনসমূহ দেখা যাবে।
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে এসব কাজকর্ম হতে তাওবা করে হিদায়াতের তৌফিক দান করুন।
কিয়ামতের বড় বড় ‘আলামতসমূহ
কিয়ামতের পূর্বেকার ছোট ছোট ‘আলামতসমূহ পূর্ণতা লাভের পর বড় ‘আলামতসমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে। নিম্নে এর কয়েকটি বিবরণ উল্লেখ করা হল।
ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আগমন: হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আবির্ভাবের মাধ্যমেই কিয়ামতের বড় বড় লক্ষণসমূহ আরম্ভ হবে। ইমাম মাহ্দী (আঃ) চল্লিশ বছর বয়সের সময় পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফরত অবস্থায় আবির্ভূত হবেন।
সমগ্র পৃথিবী যখন ইসলামী অনুশাসনের চরম অধঃপতনে পতিত হবে, তখনই মহান আল্লাহ্ পাক নির্যাতিত মুসলিম জাতিকে মুক্তির জন্য ইমাম মাহ্দী (আঃ) কে ইসলামী পথ নির্দেশনা দিয়ে পাঠাবেন।
ইমাম মাহ্দী (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে আবির্ভূত হয়ে নবুওয়াতীর ধারায় ইসলামী খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর বুকে ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন ৷
ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর রাজত্বকালের মেয়াদ হবে মাত্র ৯ বছর। দাজ্জাল নামক বেঈমান কাফির এবং তার অনুচরদের সাথে তাঁর বিরাটাকারের যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে দাজ্জালকে দলবলসহ ধ্বংস করার পর মুসলমানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে ইমাম মাহ্দী (আঃ) আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমাবেন।
দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ: দাজ্জাল ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের বংশোদ্ভূত হবে। সিরিয়া এবং ইরাকের মধ্যবর্তী কোন এক স্থান হবে তার জন্মস্থান। দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে। সে হবে অত্যন্ত বিকট চেহারা বিশিষ্ট।
তার কাছে থাকবে যাদুমন্ত্রের ভূয়া বেহেস্ত এবং দোযখ। সে বললে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকবে। কোন লোককে একবার হত্যা করার পর পুনরায় জীবিত করতে পারবে। দাজ্জালের অনুসারী লোকজনরা অসংখ্য ধন-সম্পদের অধিকারী হবে।
একমাত্র পবিত্র মক্কা এবং মদীনা শরীফ ছাড়া দাজ্জাল দুনিয়ার সর্বত্রই যাতায়াত করতে সক্ষম হবে। তার বাহন হবে বিশালাকারের একটি গাধা। সে গাধাটি নদী-নালাসমূহ অনায়াসেই স্বীয় যাদুমন্ত্রের বলে পাড়ি দিতে সক্ষম হবে।
তার পায়ে পানি পর্যন্ত স্পর্শ করবে না। এ গাধায় চড়ে সে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবে। অনেক দুর্বল ঈমানের লোকজন দাজ্জালের এহেন অদ্ভুত কাণ্ড দেখে ঈমানহারা হয়ে দাজ্জালের দলভুক্ত হয়ে যাবে।
কিন্তু একমাত্র প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিগণই তার এ সকল কাজের বিরোধিতা করবে। সমগ্র বিশ্ব পরিভ্রমণ শেষে দাজ্জাল তার অনুচরদেরকে নিয়ে পবিত্র মক্কা এবং মদীনা শরীফে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে কিন্তু মহান আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানীতে এসব পবিত্র স্থানসমূহে সে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না।
এর পর সে সিরিয়া এবং দামেস্কের দিকে রওয়ানা হবে। কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আঃ) পূর্ব হতেই সেখানে অবস্থান করে মুসলমানদেরকে সাথে করে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকবেন।আয়াত তিমি।
ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ: পবিত্র হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় যে, একদিন হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ) মুসলমানদেরকে নিয়ে দামেস্কের মসজিদে ‘আছরের নামাযের প্রস্তুতি নিবেন তখন হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে ঐ মসজিদের মিনারায় এসে অবতরণ করবেন এবং সিঁড়ি লাগানোর জন্য আহ্বান করবেন, সিঁড়ি লাগানো হলে তিনি সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসবেন।
(পরিচয়প্রাপ্ত হয়ে) হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-কে নামাযের ইমামতি এবং যুদ্ধের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে চাইবেন কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) উত্তরে বলবেন, নেতৃত্বের জন্য নয় বরং ইসলামের পরম দুশমন মরদুদ দাজ্জালকে হত্যা করার জন্যই আমি এসেছি।
আমাকে কেবলমাত্র পাপিষ্ঠ নরাধম দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য নির্দেশ দিন। পরদিন মরদুদ দাজ্জালের দলের সাথে মুসলমানগণের ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হবে।
এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হবে। ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে একটা বল্লম বা নেযা অর্থাৎ সাধারণ অস্ত্র দ্বারা “বাবে লোদ” নামক স্থানে হত্যা করে ফেলবেন এবং দাজ্জালের অন্যান্য সঙ্গী-সাথীগণ মুসলমানদের হাতে দলবলে ধ্বংস হয়ে যাবে।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম মাহ্দী (আঃ) দাজ্জালকে ধ্বংস করে অল্পকিছুদিন পরই ইন্তেকাল করবেন। এরপর হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ঈসা (আঃ) এ দুনিয়াতে চল্লিশ বছর খিলাফতের কাজ পরিচালনা করবেন। ঈসা (আঃ)-এর সময়ে ইয়াজুয-মা’জুয নামক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে। ঈসা (আঃ)
মুসলমানদেরকে নিয়ে মহান আল্লাহ্র বিশেষ নির্দেশে “তৃরে সাইনায়” (সিনাই পাহাড়ে) অবস্থান নিবেন। ইয়াজুয-মা’জুযের ফিতনা ও জুলুম শেষ হবার পর সদলবলে মুসলমানদেরকে নিয়ে ঈসা (আঃ) পুনরায় লোকালয়ে ফিরে আসবেন এবং মুসলমানদেরকে নিয়ে সুখ-শান্তিতে স্বর্গরাজ্যের ন্যায় বসবাস করতে থাকবেন।
এভাবে দুনিয়াবী জীবনে চল্লিশ বৎসর পূর্ণ হলে মহান আল্লাহ্ হুকুমে তিনিও মৃত্যুবরণ করবেন। ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে পবিত্র মদীনা শরীফে নবী (সাঃ)-এর রওজার পার্শ্বে দাফন করা হবে। (পবিত্র মদীনায় রওজা শরীফের পার্শ্বে এখনও একটি কবরের জায়াগা খালি রয়েছে। হাজী সাহেবানরা হয়ত সে স্থানটি দেখে থাকবেন)
ইয়াজুয মাজুযের ফিত্না: ইয়াজুয-মাজুয ইয়াফেছ ইবনে নূহ (আঃ)-এর বংশধর। এরা দানবের মত তৎকালীন মানব সমাজে এসে মানুষের উপর অনেক অত্যাচার করত। হযরত জুলকারনাইন বাদশাহ্ দু’টি পাহাড়ের মধ্যস্থলে তাদেরকে ভেতরে রেখে চতুর্দিকে শক্ত প্রাচীর দিয়ে আটকে রেখেছেন।
মহান আল্লাহর নির্দেশে যখন তারা দুনিয়াতে আসবে তখন তারা সমগ্র দুনিয়াকে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করবে। তারা সংখ্যায় এত বেশি হবে যে, তাদের সাথে মোকাবিলা করার মত কারও শক্তি থাকবে না।
এ জন্যই হযরত ঈসা (আঃ)-কে তার অনুচর মুসলমানদেরকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার জন্য নির্দেশ দিবেন। ঈসা (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে স্বীয় দলবলসহ গিয়ে আশ্রয় নিবেন। কিছুদিন পর মহান আল্লাহ্ নির্দেশে ইয়াজুয ও মা’জুযের দল ধ্বংস হয়ে যাবে।
এরপর ঈসা (আঃ) সদলবলে লোকালয়ে এসে চল্লিশ বছর কাল রাজত্বের মেয়াদ পূর্ণ হলে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে মৃত্যুবরণ করবেন। (দাফন সম্পর্কে পূর্বের আলোচনাটি দেখে নিবেন)।
পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় এবং তাওবাহর দরজা বন্ধ: হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর পুনরায় মানুষ দ্বীন-ধর্ম ছেড়ে দিয়ে গোমরাহীর পথে পা বাড়াবে। ধীরে ধীরে নেক্কার বান্দার সংখ্যা কমে যাবে আর মানুষ অন্যায় এবং পাপাচারের পথকেই ভালোবাসবে। কিছুকাল যাবত এ অবস্থা চলার পর মানুষ দেখতে পাবে সমস্ত আকাশ ধূয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এ
ধূয়ার প্রকোপে মু’মিন লোকদের একপ্রকার সর্দিজ্বর হয়ে তারা মারা যাবে। আর কাফির সম্প্রদায়েরা বেহুঁশ হয়ে থাকবে। স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুদিন পর আবার দিন-রাত হতে থাকবে। অতঃপর ঐ বছর কুরবানীর ঈদের পর এমন এক মস্তবড় রাত হবে যা স্বাভাবিক তিন রাতের সমান হবে।
সে রাতে মানুষ, জ্বিন, গরু-ছাগল, হাস-মুরগী ইত্যাদি পশুপাখি সকলেই অস্থির হয়ে পড়বে বাইরে যাবার জন্য। কিন্তু এত রাতে বের হবার কোন উপায় থাকবে না। এরপর হঠাৎ করে মানুষ দেখতে পাবে যে, সামান্য আলো নিয়ে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয়েছে।
বেশ কিছুদূর উঠে আবার সূর্য অস্ত যাবে। অস্তমিত হবার পর সূর্য আবার স্বাভাবিক নিয়মেই পূর্বদিক হতে উদিত হতে থাকবে। এরপর হতে আর কারও তাওবা কবুল করা হবে না এবং নতুন করেও কোন লোক মুসলমান হতে পারবে না। এতসব আলোচনার উপরও ঈমানের ভিত্তি হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয।
দাব্বাতুল আরদ্বের আত্মপ্রকাশ: তাওবার দরজা বন্ধ হবার পর হঠাৎ একদিন একটি প্রাণীর আবির্ভাব হবে, এ প্রাণীটি অদ্ভুত আকৃতি বিশিষ্ট হবে। যেমন এটি লম্বায় হবে ষাট হাত, মাথা ও শিং হবে গরুর মাথা এবং শিং এর মত।
ঘাড় হবে উটের মত লম্বা। কান হবে হাতির কানের মত খুব বড়। বুক দেখতে মনে হবে বাঘের বুক, গায়ের রং হবে বিভিন্ন রকমের। লেজ হবে দুম্বার লেজের মত ছোট। আর মুখ হবে মানুষের মুখের মত। সে মানুষের ভাষায় কথা বলবে।
বর্তমান সাফা এবং মারওয়া নামক পাহাড়দ্বয় ভূমিকম্পের কারণে ফেটে গেলে এ অদ্ভুত প্রাণীটি সেখান হতে বের হয়ে আসবে। উক্ত প্রাণীটি হবে অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন। সমগ্র পৃথিবী এ প্রাণীটি ভ্রমণ করবে।
ভ্রমণের সময় উক্ত অদ্ভুত প্রাণীটির হাতে হযরত মূসা (আঃ)-এর মো’জিযা সম্বলিত সে লাঠিটি থাকবে এবং হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর হাতের আংটি।
উক্ত লাঠি দ্বারা সে মু’মিনদের কপালে একটি দাগ টেনে দিবে আর কাফির বেঈমানদের কপালে একটি দাগ টেনে দিবে, এতে কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। খুব দ্রুততার সাথে এ কাজ সমাধা করার পর উক্ত অদ্ভুত প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যাবে।
কিয়ামত বা মহাপ্রলয়: দাব্বাতুল আরদ্ব নামক অদ্ভুত প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যাবার কিছুদিন পর হঠাৎ করে দক্ষিণ দিক হতে সমগ্র পৃথিবীতে একটি আরামদায়ক মৃদু বাতাস বইতে থাকবে। এতে বাকি সকল মু’মিনের বগলে একটি অসুখ দেখা দিবে, যার ফলে সকল মু’মিনরাই মারা যাবে।
তখন সমগ্র পৃথিবীতে হাবশী কাফিরদের রাজত্ব চলবে। সে কাফির সম্প্রদায়ের লোকেরা এত জালেম এবং মূর্খ হবে যে, তারা পবিত্র কা’বা ঘরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। কাকার লোকাল লোভেই জিন্তু-বেতে মেলার-কাৎ, নুরী জুনা এরপর সমগ্র পৃথিবীতে অভাব অনটন দেখা দিবে।
বর্তমান সিরিয়া নামক স্থানে সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খুবই সস্তায় পাওয়া যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল মানুষ সিরিয়ার দিকে যাত্রা করবে। এরপর যারা অবশিষ্ট থাকবে তাদেরকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক হতে একটি অগ্নিশিখা এসে ধাওয়া করে সিরিয়ার দিকে নিয়ে যাবে।
সেখানে সকলে তিন/চার বছর পর্যন্ত অবস্থান করবে। সকল লোক সিরিয়াতে কাজ করতে থাকবে। এভাবে একদিন তথা ১০ই মুহাররম শুক্রবার সকলেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকবে, তখন মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন।
আওয়াজ শুনে সকল লোক আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। শিঙ্গার আওয়াজ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ অবস্থা দেখে মানুষ বেহুঁশ হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে কিন্তু সিঙ্গার আওয়াজ এতই বিকটতর হতে থাকবে যে, মানুষ বেহুঁশ হয়ে এক পর্যায়ে মারা যাবে এবং সকল সৃষ্ট জগৎসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে।
সেদিন বা সে সময়ে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া একটি প্রাণী পর্যন্ত কোথাও থাকবে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা দেয়া হয়েছে-“ঐদিন (তথা কিয়ামতের দিন)মানুষ পতঙ্গের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে আর পাহাড়সমূহ ধূনা তুলার মত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।”
এমতাবস্থায় চল্লিশ বছর কেটে যাবে। পুনরায় মহান আল্লাহর হুকুমে ইস্রাফীল (আঃ) দ্বিতীয় বার সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিলে হাশরের মাঠ প্রস্তুত হয়ে যাবে। এভাবে চল্লিশ বছর কেটে যাওয়ার পর পুনরায় ইস্রাফীল (আঃ) তৃতীয় বার সিংগায় ফুঁৎকার দিবেন।
এবার মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতি নিয়ে হাশরের মাঠে স্বীয় দুনিয়াবী জীবনের সকল কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ দান করার জন্য সমবেত হবে।
হাশরের মাঠে মানুষ ১২টি কাতারে বিভক্ত হবে
হাশরের ময়দানে বান্দা তার দুনিয়াবী জীবনের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ দেয়ার জন্য নিজেদের কর্মফল অনুযায়ী হাশরের মাঠে উঠতে থাকবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে মহান আল্লাহর ঘোষণা হল-“শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হলে মানুষ হাশরের মাঠে দলে দলে বিভক্ত হয়ে উঠবে।”
১। দুনিয়ার জমিনে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকেরা বানরের আকৃতিতে উঠবে। ২। দুনিয়ার জমিনে থেকে হারাম বস্তু ভক্ষণকারী লোকেরা শূকরের আকৃতিতে উঠবে। ৩। দুনিয়ার জমিনে অন্যায়ভাবে বিচারকারীগণ অন্ধের আকৃতিতে উঠবে।
৪। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী লোকেরা আগুনে পুড়ে ক্ষত-বিক্ষত দেহাকৃতি নিয়ে উঠবে। ৫। যে সব আলেম লোকদের কথায় এবং কাজে মিল ছিল না তাদের মুখ হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। কারণ তার জিহ্বা লম্বা হয়ে বুক পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে, জিহ্বাকে ছোট করার জন্য জিহ্বা কাটার কারণে রক্ত প্রবাহিত হওয়া অবস্থায় উঠবে।
৬। ‘ইবাদাত-বন্দেগীতে অহংকারী লোকেরা অন্ধ এবং বোবা হয়ে উঠবে। ৭। জিনাকার লোকদের দু’পা মাথার চুলের সাথে কপালের উপর বেঁধে দেয়া হবে, এ অবস্থায় তারা হাশরের মাঠে উঠবে। ৮। মসজিদে বসে যেসব লোক গল্পগুজব করেছে সে সকল লোকেরা মাতাল অবস্থায় উঠবে।
৯। চোগলখোরদের জিহ্বা অনেক দূর লম্বা করে উঠান হবে। ১০। আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্যকারীরা ও নির্দেশ আদায়ের ব্যাপারে অবহেলাকারী লোকেরা মাতালের মত এদিক-সেদিক হেলা-দোলা অবস্থায় উঠবে। ১১। নিন্দুক, দুর্নাম রটনাকারী, চোগলখোর লোকেরা গন্ধকের জামা পরিহিত অবস্থায় উঠবে। ১২। সুদখোর লোকেরা শূকরের আকৃতিতে উঠবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট সাহাবাগণ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে বাসনা করলেন। নবী কারীম (সাঃ) উত্তরে বললেন-এটি একটি জটিল প্রশ্ন বটে। তবে আমার উম্মত হাশরের মাঠে ১২টি দলে বিভক্ত হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে হযরত মা’আয (রাঃ) হতে এক হাদীসে বর্ণিত আছে-
১। নিজ পাড়া প্রতিবেশী লোকদেরকে কষ্ট দানকারী ব্যক্তি যদি তাওবা না করে মারা যায়, তাহলে সে লোক হাত-পা বিহীন অবস্থায় উঠবে। ২। নামাযে অলসতাকারী লোক বিনা তওবায় মারা গেলে জানোয়ার এবং শূকরের আকৃতিতে উঠবে।
৩। যারা মালের যাকাত আদায় না করবে তারা সাপ-বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ বিশাল পেট বিশিষ্ট হয়ে উঠবে। ৪। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যারা মিথ্যা বানোয়াটি করবে সে সকল লোকদের মুখ হতে রক্ত এবং আগুন বের হতে থাকবে আর তাদের পেটের নাড়ি-ভুঁড়িসমূহ হাশরের মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকবে।
৫। মহান আল্লাহকে ভয় না করে যে সব লোক চোখের আড়ালে পাপ কাজ করবে তাদের শরীর হতে পঁচা মৃতদেহ হতেও বেশি দুর্গন্ধ বের হবে। ৬। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী লোকেরা গলা কাটা অবস্থায় উঠবে। ৭। সত্য কথা গোপনকারী লোকদের মুখ হতে পুঁজ পড়তে থাকবে।
৮। জিনাকার লোকদের কপালের চুলের সাথে দু’পা বাঁধা অবস্থায় উঠবে আর তাদের লজ্জাস্থান হতে পুঁজ এবং রক্ত ঝরতে থাকবে। ৯। ইয়াতীমের মাল নষ্টকারী লোকদের মুখ, কান, চোখ বিকৃত রং এবং পেট আগুনে ভর্তি অবস্থায় উঠবে।
১০। পিতা-মাতাকে কষ্ট দানকারী নাফরমান লোকেরা শ্বেত-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত অবস্থায় উঠবে। ১১। মদ-শরাব ইত্যাদি নেশাকারী লোকদের দাঁত হবে ষাঁড়ের শিং এর মত লম্বা আর তাদের ওষ্ঠদ্বয় বুকের উপর ঝুলে থাকবে এবং তাদের জিহ্বা পেট ও উরুর উপর লম্বালম্বীভাবে থাকবে।
পেট হতে গলিত ধাতু বের হবে। ১২। পূণ্যবান লোকেরা এমনভাবে কবর হতে উঠে হাশরের মাঠের দিকে যাবে যে, তাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল নূরের মত উজ্জ্বল হবে। সেদিন নেককার লোকেরা বিদ্যুৎ গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে বেহেস্ত উদ্যানে প্রবেশ করবে।
এ সকল নেক্কার লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন যে-“মহান আল্লাহ্ ঐ সকল নেককার বান্দাদের উপর সন্তুষ্ট আর ঐ সকল নেককার বান্দাগণও আল্লাহ্র উপর সন্তুষ্ট। তারা ঐ সকল লোক যারা তাদের স্বীয় প্রভুকে ভয় করেছে।
অতঃপর সকলের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। এর পর ন্যূনতম ঈমানের অধিকারী লোকও স্বীয় কর্মফল অনুযায়ী শাস্তি ভোগের পর শেষ পর্যন্ত বেহেস্তে প্রবেশ করবে। আর যাদের কোনরূপ ঈমান থাকবে না তারা চীরজীবনের জন্যই দোযখবাসী হবে।
হিসাবকার্য শেষ করে সকলকে স্বীয় কৃতকর্ম অনুযায়ী ফলাফল দান করার পর মৃত্যুকে বেহেস্ত-দোযখের মধ্যখানে রেখে পশুর আকৃতি ধারণ করিয়ে জবাই করা হবে। এরপর সকলকে বলা হবে, তোমরা যে যেখানে স্থান পেয়েছ সেখানেই বসবাস করতে থাক।
কারণ তোমাদের আর কোনরূপ মৃত্যু হবে না। উল্লিখিত আলোচনাসমূহ দিবালোকের ন্যায় সত্য, এ কথা স্বীকার করা ঈমানের পরিচায়ক। সুতরাং এ ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের জন্যই ফরয।
তাকদীরের উপর বিশ্বাস
তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মানুষের সকল কর্মের ফলাফল ভালো হউক, খারাপ হউক অর্থাৎ যখন সে যে অবস্থায় থাকে মহান আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী থাকে এবং এ বিধানসমূহ মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নির্ধারিত এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- “মহান আল্লাহ্ পাক এ বিশ্ব ভুবন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্ট জীবের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।”
মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। কারণ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহই সর্বময় শক্তির একচ্ছত্র অধিকারী। তাই তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল ভালো-মন্দ হয়ে থাকে। তিনি যাকে ইচ্ছা কোনকিছুর অধিপতি করেন, আবার যাকে খুশি পথের ভিখারী করে দেন।
মহান আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে হিদায়াতের রাস্তা দান করেন আর যাকে ইচ্ছা করেন না কেউই তাকে হিদায়াত করতে পারে না।
এসব বিষয়ের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তাদেরকে মৃদু ধমক দিয়ে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- “মহান আল্লাহ্র নির্ধারিত বিধানের উপর যারা বিশ্বাসী নয়, তাদের উচিত তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য খোঁজ করা।
উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্র বিধানসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের উপর অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালামে ঘোষণা করেন-
“যত প্রকার বালা-মুসীবাত তোমাদের উপর এসে থাকে, তা দুনিয়ার কোন অংশে কিংবা তোমাদের নিজেদের উপর হউক তা প্রকাশ পাবার পূর্বেই আমার নিকট লিপিবদ্ধ আছে।” অর্থাৎ কখন, কোথায়, কার উপর কি ধরনের বিপদ বা বালা-মুসীবাত কিভাবে আসবে এ সবকিছু আগে হতেই মহান আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
মানুষ যেহেতু আশরাফুল মাখলুকাত, সুতরাং তারা ভালো-মন্দ বিচার- বিভেদ করার ক্ষমতা রাখে। সে যখন ভালো কাজ করে ভালো ফলাফল পাবে তখন তাকে বুঝতে হবে যে, এটি আমার প্রভুর পক্ষ হতে হয়েছে।
আর যখন খারাপ কাজ করে খারাপ ফলাফল পাবে তখনও তাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে, খারাপ কাজের ফলাফল খারাপ হয়েছে, তাও মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতেই হয়েছে। আর যদি চেষ্টাতে বিফল হয়ে যায় তাও ধারণা করতে হবে যে, এ কাজের ফলাফল আমার তাকদীরে নেই।
তাই চুপচাপ অলস হয়ে বসে না থেকে বিবেক-বিবেচনা করে ভাল কাজ করার জন্য সবসময় মন-মানসিকতাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বাধ্য করতে হবে। আর খারাপ, অন্যায়, গর্হিত কাজসমূহ হতে বিরত থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। আর তাকদীরের এ সবের উপর ঈমানের পরিচায়ক হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয।
পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস
মানব জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যু। এ মৃত্যুর হাত থেকে কোন লোকই রক্ষা পাবে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে-“প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
দেখা যায় জগতের শুরুতে যারা ছিল তাদের কেউই বেঁচে নেই। আজ যারা জীবিত ভবিষ্যতে তারাও থাকবে না। এমনিভাবে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) প্রথমবারে সিঙ্গায় ফুঁক দিলে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে,
দ্বিতীয়বারে ফুঁক দিলে হাশরের মাঠ তৈরি হবে, এরপর তৃতীয়বারে ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে সকল প্রাণীসমূহ কবর হতে উঠে (বিভিন্নভাবে যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে) স্বীয় জীবনের কাজ-কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভু আল্লাহ্র সম্মুখে হাশরের মাঠে জীবিতাবস্থায় উঠতে থাকবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে-
“অতঃপর যখন (তৃতীবার) সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন সকলকেই স্বীয় কবরসমূহ হতে (হাশরের মাঠে) তাদের প্রভুর সম্মুখে দলে দলে উপস্থিত হতে হবে।” সেদিনের অবস্থা হবে খুবই ভয়ঙ্কর। সূর্য হবে মাথার উপর অতি নিকটবর্তী, জমিন হবে তামার।
সূর্যের তাপে তামার জমিন উত্তপ্ত হয়ে মানুষ স্বীয় কর্মানুপাতে ঘর্মাক্ত হয়ে কারও পায়ের গিরা পর্যন্ত, কারও হাঁটু পর্যন্ত, কারও উরু পর্যন্ত এভাবে বুক, গলা এমনকি কোন কোন লোক ঘামের পানিতে সাঁতরাতে থাকবে।
উদানক চতুর হাশরের মাঠে পস্থিতির সময় হতেই মূলত মানুষের সত্যিকারের জীবন আরম্ভ হবে। দুনিয়ার এ জিন্দেগী মুসাফির লোকদের মত সামান্য সময়ের জন্য বিশ্রামের জায়গা মাত্র। এ মুসাফিরখানাতে এসে পরকালীন জীবনের জন্য কিছু পাথেয় তৈরি করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি।
এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় কেটে যাওয়ার পর মৃত্যুর মাধ্যমে মুসাফেরী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এরপর সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) হতে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে শিশুটির জন্ম হবে সে শিশুটিও ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের তথা হাশরের মাঠে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার জিন্দেগীর সকল কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভুর সম্মুখে
উপস্থিত হতে হবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে-“এ মাটি হতেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুনরায় এ মাটিতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং আবার এ মাটির ভেতর হতেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে।”
সুতরাং বুঝা গেল যে, প্রতিটি প্রাণীকেই জীবন-মৃত্যুর পর হাশরের মাঠে একত্রিত হতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- “যেদিন তোমাদেরকে মহান আল্লাহ্ তা’আলা একত্রিত করবেন, অবশ্যই সে দিনটির আগমন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।”
কারও অন্তরে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত্যুর পর এ জড়দেহ কোন পশু-পাখি খেয়ে ফেলেছে, সাগরের পানিতে মাছের পেটে চলে গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে বা পোড়ানো হয়ে ছাই-ভস্ম করা হয়েছে।
কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে, এসব ক্ষতবিক্ষত বা নিশ্চিহ্ন দেহ আবার কিরূপে একত্রীভূত করা হবে? এ প্রশ্নের একটি উত্তরই যথেষ্ট যে, যখন কিছুই ছিল না মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীনতা হতে অস্তিত্ব দান করলেন সে অস্তিত্ব যতই বিনষ্ট হউক না কেন তাকে পুনরুত্থান করা মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষে অবশ্যই সম্ভব।
ময়দানে হাশর: মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গার ফুঁকে মানুষ কবর হতে দলে দলে উঠে হাশরের মাঠে জমা হবে। এ হাশরের মাঠের অবস্থান দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী ৫০ হাজার বছরের সমান হবে এবং এ সময়ের মধ্যে হাশর মাঠের বিভীষিকাময় অবস্থার ইঙ্গিত পূর্বে কিছুটা দেয়া হয়েছিল।
এ মাঠের জমিন হবে তামার, সূর্য মানুষের মাথার আধা হাত উপরে থেকে স্বীয় বুক দিয়ে তাপ দেবে। মানুষ ক্ষুৎপিপাসার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়বে। সেদিন মানুষের মাথার মগজ রোদের তাপে গরম হয়ে টগবগ করতে থাকবে।
এসব ছাড়াও অসংখ্য কষ্ট হবে যা কোন ভাষা, লেখনী বা কল্পনায়ও আনা সম্ভব নয়। এহেন কঠিন হাশরের মাঠে মাত্র সাত শ্রেণীর লোক মহান আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে এবং নেককার লোকেরা হাউজে কাউসারের অমীয় সুধা পানে সক্ষম হবে। আর খাদ্য হিসেবে এক টুকরা রুটি পাবে, যেটি খাওয়ার ফলে তাদের আর ক্ষুধা-পিপাসা লাগবে না।
মুক্তিপ্রাপ্ত সাত শ্রেণীর লোকদের বিবরণ
হাশরের মাঠে যে সকল লোক মুক্তিলাভ করবে তাদের মধ্যে সাত শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এদের পরিচয় দেয়া হল।
১। ন্যায়পরায়ণ রাজা বাদশাহ: বিচারের সময় যারা কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে সঠিকভাবে বিচার করেছেন এবং জনসাধারণকে এক সমান নজরে দেখেছেন।
২। ‘ইবাদাতকারী যুবক: অর্থাৎ যে যুবক নিজের কু-প্রবৃত্তির তাড়নায় পরিচালিত না হয়ে বরং আল্লাহর প্রেমে পড়ে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে ‘ইবাদাত-বন্দেগী করেছে এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর শাস্তির ভয়ে যার চক্ষু হতে পানি বের হয়েছে।
৩। সৃষ্ট জীবের সাথে ভালোবাসাকারী: দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য লাভের লোভ না করে যদি আল্লাহ্র কোন নেক বান্দাকে ভালোবেসে থাকে ঐ সব লোক।
৪। সৎ-চরিত্রবান লোক: সুন্দর রূপসী ষোড়শী তৃন্নী তরুণীর অসৎ এবং খারাপ উদ্দেশ্যে আহ্বান শুনেও আল্লাহ্র ভয়ে যে ব্যক্তি আত্মসংযম করেছে সেসব লোক।
৫। একাগ্রচিত্তে আল্লার ইবাদাতকারীগণ: নির্জনে আল্লাহকে ডেকেছে এবং আযাবের ভয়ে কান্নাকাটি করেছে ঐ সব লোক।
৬। গোপনে দানকারী: যে ব্যক্তি গোপনে দান-খয়রাত করেছে এতে কোনরূপ লোক দেখানো উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকি ডান হাতে দান করার সময় বাম হাতও জানে না যে, কি দান করেছে।
৭। মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী: ঐ সকল লোক যারা সদাসর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা’আতে নামায আদায়ে তৎপর থাকত এবং মসজিদের সাথে সবসময় সম্পর্ক রাখত।
এছাড়াও সে কঠিন হাশরের মাঠে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর হাতে থাকবে সত্যবাদীতার ঝাণ্ডা। দুনিয়ার সকল সত্যবাদীগণ তাঁর ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন আর মুজাহিদ এবং সাধুগণও সে পতাকার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত ওমর (রাঃ)-এর হাতে থাকবে ন্যায়পরায়ণতার ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল ন্যায়পরায়ণ লোকগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল দানশীল ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত আবু দারদাহ (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দারিদ্র্যতার ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল দরিদ্র লোকজন তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত উবাই ইবন কা’আব (রাঃ)-এর হাতে থাকবে কিরাআতের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল ক্বারীগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত মা’আয (রাঃ)-এর হাতে থাকবে বিজ্ঞতা বা জ্ঞানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত বেলাল (রাঃ)-এর হাতে থাকবে আযানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল মুয়াযয্যিনগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর হাতে থাকবে শাহাদাতের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল শহীদ এবং নির্দোষভাবে হত্যা হওয়া ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
সেদিন মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়ে বলবেন- “কোথায় যালেম সম্প্রদায়েরা! আস দেখি আজ তোমাদের দম্ভ কোথায় এবং কিরূপ ছিল এর হিসাব দাও। সেদিন কারও উপর কোনরূপ যুলুম করা হবে না, যার যার কৃতকর্মের ফলাফল যথাযথভাবে তাদেরকে দেয়া হবে।
উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যাবে যে, আমরা আরশের নিচে স্থান পাব কি না? আর আমরা কোন ঝাণ্ডার নিচে স্থান পাবার উপযুক্ততা অর্জন করেছি! সে ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে আমাদেরকে বাকি জীবনের সম্মুখ পথে অগ্রসর হওয়া উচিত,
নতুবা এসব কারণে কর্মফল ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক সোজা পথে পরিচালিত করে তার করুণা এবং কৃপা দান করুন।
মীযান বা পাল্লা: হাশরের মাঠে মানুষের ‘আমলের অর্থাৎ কর্মফলের পরিমাপের জন্য মীযান বা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। এ দাঁড়িপাল্লাতে মানুষের ‘আমলের নেকী-বদীসমূহ ওজন করা হবে। এতে কারও প্রতি কোনরূপ পক্ষপাতিত্ব করা হবে না।
এ মীযান বা পাল্লা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন কারীমে ঘোষণা করেন-“অতঃপর যার নেকীর ওজন ভারী হবে সে ব্যক্তি পরম রমনীয় স্থানে অবস্থান করবে এবং যার নেকীর ওজন হাল্কা হবে সে ব্যক্তির অবস্থান হবে হাবিয়াহ নামক দোযখে।”
মহাপবিত্র কোরআন মজীদের এ আলোচনা হতে এ কথাই বুয়া যায় যে, যার নেকী বেশি তার নেকীর পাল্লা ভারী হবে, আর যার বদীর পাল্লা ভারী হবে তার জন্য রয়েছে ভীষণ কষ্টকর স্থান দোযখ। আর যাদের নেকী ও বদীর পাল্লা উভয়ই সমান হবে, তাদেরকে বেহেস্ত এবং দোযখের মধ্যবর্তী “আরাফ” নামক স্থানে রাখা হবে।
মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইচ্ছা করলে দোষী ব্যক্তির নেকীর পাল্লা ভারী করে তাকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।
জনৈক ব্যক্তি ছিল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। সে ব্যক্তি ৯৯ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করেছিল। সে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তখনকার দিনে একজন মাওলানা সাহেবের নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে ফতোয়া চাইল। উত্তরে মাওলানা সাহেব বললেন যে, “তুমি জাহান্নামী।”
এ কথা শুনা মাত্র ঐ দুষ্ট লোকটি বলল, তোমাকে হত্যা করেই তাহলে সংখ্যা ১০০ পূর্ণ করে নেই। একথা বলে সে মাওলানা সাহেবকেও হত্যা করল। এরপর দুষ্ট লোকটি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করল এবং পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ রওয়ানা হল।
লোকটির মৃত্যু হল। মৃত্যুর পর দু’দল ফিরিস্তার মধ্যে তর্ক বেঁধে গেল। তর্কের কোন মীমাংসা করতে না পেরে তারা দু’দলই মহান আল্লাহ্র নিকট মীমাংসার জন্য প্রার্থী হল। মহান আল্লাহ্ তাদেরকে বললেন, মৃত লোকটির পথকে দু’ভাগ করে মেপে দেখা যাক, অবস্থা কি হয়?
এরপর তার দু’দিকের পথ মাপ দেয়ার পর দেখা গেল যে, মক্কা শরীফের দিকের রাস্তায় সে আধা হাত পরিমাণ বেশি অগ্রসর হয়েছে। তখন মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা দিলেন যে, লোকটি বেহেস্তী। তখন তাকে বেহেস্তের ফিরিস্তারা নিয়ে গেল। দয়াময় আল্লাহ্ তা’আলা এভাবেই নেকীর পাল্লাকে ভারী করে থাকেন।
পুলসিরাত: কঠিন হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর মহান আল্লাহ্ তা’আলা সকল লোকদেরকে স্বীয় নবীগণের সাথে পুলসিরাত পাড়ি দিতে নির্দেশ দেবেন। পুলসিরাত অর্থাৎ পুল, তবে এটি দুনিয়ার কোন পুলের মত সাধারণ পুল নয়।
এটি হবে চুলের চেয়েও চিকন আর তলোয়ারের চেয়েও ধারাল। এ পুলটির নমুনা হল দশ হাজার বছর নিচের দিকে যেতে হবে দশ হাজার বছর সোজা যেতে হবে, আবার দশ হাজার বছর উপরের দিকে উঠতে হবে।
এর দৈর্ঘ্য মোট ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা হবে। এ পুল হাশরের মাঠ হতে আরম্ভ হয়ে বেহেস্তের মাঠ পর্যন্ত হবে। এ পুলের নিম্নভাগে দোযখসমূহ অবস্থিত। পুলসিরাত পার হবার সময় নেক্কার লোকদের জন্য আগে-পিছে আলো থাকবে আর ঐ পুলটি তাদের নিকট অত্যন্ত প্রশস্ত বলে মনে হবে।
নির্বিঘ্নে নেক্কার লোকগণ এ পুল পার হবেন। তাদের কেউ বিজলীর ন্যায়, কেউ বাতাসের ন্যায়, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহণকারীর ন্যায়, কেউ দৌড়ে, কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। অপরদিকে গুনাহ্গার লোকেরা এ পুল পার হবার সময় ঘোর অমাবশ্যার ন্যায় মনে করবে এবং কোন মতেই তারা এ পুল পার হতে পারবে না।
এ পুল পার হতে গিয়ে তারা হাত-পা কেটে দোযখে পতিত হবে। হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর সকল মানব-দানবকেই এ পুলসিরাত পাড়ি দিতে হবে।
সুতরাং সকলকেই এ দুনিয়ার জীবনেই পরকালের জীবনের এসব অলোচনা শুনে সতর্ক হয়ে নেকাজ করে নিজের জীবনকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী গঠন করে উল্লিখিত ঘাঁটিসমূহে নির্বিঘ্নে পাড়ি দেয়ার সম্বল তৈরি করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে নেক ‘আমল করার তৌফিক দান করুন।
পবিত্র আল-কোরআনে দোয়ার আদেশ / দোয়ার ভান্ডার
মহান আল্লাহ্ তা’আলার অনুগত যারা তারা সব সময়ই একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার দরবারেই মাথা নত করবে। বিপদাপদ ও বালা মছিবত হতে নিজের মুক্তি লাভের জন্য তাঁরই দরবারে প্রার্থনা করবে। মান-সম্মান, ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্তুতি সম্পর্কীয় সব ধরনের সৎ উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার জন্য তাঁরই দরবারে আবেদন-নিবেদন করিবে।
বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা’আলাও তাহাই চেয়ে থাকেন। বান্দা তাঁরই দরবারে পরে থাকা, সুখ-সমৃদ্ধির দিনে তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অপরদিকে দুঃখ-দৈন্যের দিনে তাঁরই দয়া ও করুণা ভিক্ষা চাওয়াই হচ্ছে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রধান সোপান।
দোয়া, ইস্তেগফার, ফরিয়াদ, মুনাজাত, আবেদন-নিবেদন তথা নিজের দীনতা-হীনতা প্রকাশ করে বান্দাগণ আল্লাহর রহমত লাভ করে, আর পাপীরা পাপ মুক্ত হয় এবং নেককারদের মরতবা ও মর্যাদা আরও উন্নত হয়। মূলকথা, দোয়ার বরকতে মানুষ উভয় জাহানের কল্যাণ ও কামিয়াবী হাসির করে।
রাহমানুর রাহীমও বান্দার দ্বীন-দুনিয়ার ভালই চেয়ে থাকেন। এই জন্য তিনি পবিত্র কোরআনে কালামের মাধ্যমে বান্দাগণকে তাঁহারহা দরবারে দোয়া করিবার নির্দেশ দিয়াছেন। পক্ষান্তরে, যারা তাঁহার দয়া ও করুণা হতে নিরাশ হয় এবং তাঁহার দরবারে কিছু না চায়, তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহর দেয়া নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য, আরও অধিক নেয়ামত অর্জন করার জন্য, রোগ-ব্যধি ও বালা-মুছিবত হতে নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের উচিত উঠা-বসায়, কথা-বার্তায়, পোশাকে, খাওয়া-দাওয়ায়, শয়নে-জাগরণে ইত্যাদি কাজে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ রাখা।
আর ভাল ভাল দোয়া পাঠ করে কার্যতঃ তাঁর বন্দেগী ও গোলামীর পরিচয় দেয়া।
পবিত্র কোরআনে মজীদে এরশাদ হয়েছে, ফাফুরুনী আকুরকুম ওয়াশকুরূরী ওয়ালা তাফ্ফরূন। অর্থাৎ, “হে আমার বান্দাগণ!
তোমরা আমাকে স্মরণ করিও, তাহলে আমি তোমাদিগকে স্মরণ করব। আর আমার নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করিও এবং (আমার দান ও অনুগ্রহের কথা ভুলে গিয়ে) আমার নাফরমানী করো না।”
অন্য এক আয়াতে আরও স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ হয়েছে যে, উদ্নী আস্তাজিব লাকুম। অর্থাৎ, “তোমরা আমাকে ডাকিও; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।”
দোয়া সম্পর্কে কতিপয় হাদীস
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন: আদ্ দুয়াউ মুখখুল ইবাদাতি। অর্থাৎ, “দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সারবস্তু বা মগজ। ছায়াগাত
অন্য এক হাদীসে আছে, “মুমিন বান্দাদের জন্য দোয়া হাতিয়ার স্বরূপ।
অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে মানুষ যেমন শত্রুর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষা করে শত্রুর উপর জয়ী হয়, ঠিক তেমনিভাবে দোয়ার মাধ্যমে সে প্রাকৃতিক বালা-মুছিবত হতে নিরাপদ হয়ে শয়তান ও নক্সের উপর জয়ী হয়ে জীবনে সত্যিকার কামিয়াবী হাসিল করতে পারে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “যখন কোন মুসলমান কোন বিষয়ে দোয়া করে, তখন হয়তো সে যা চায় তাই পেয়ে থাকে, নতুবা তার উপর হতে কোন মুছিবত উঠায়ে দেয়া হয় অথবা তার দোয়া পরকালের জন্য জমা করে রাখা হয়। (আহমদ ও বায্যার)
আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, মুমিন বান্দাদের কোন কোন দোয়া দুনিয়ায় কবুল না হয়ে থাকলে এর পরিবর্তে পরকালে তারা এত বিপুল পরিমাণে নেক অর্জন করবে যে, নেকের আধিক্য দেখে তারা এ বলে আক্ষেপ করবে আহা! আমাদের কোন দোয়াই যদি দুনিয়ার জীবনে কবুল না হত, তবে না জানি কিরূপ নেকের অধিকারী হতে পারতাম আজ।
দোয়া করার সঠিক সময় / দোয়ার ভান্ডার
উঠতে বসতে, খেতে-পরতে, দিতে-নিতে ইত্যাদি কাজেই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র নাম স্মরণ করবে। এছাড়াও এমন কতগুলো বিশেষ বিশেষ সময় ও মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোন দোয়া করা হলে সাধারণতঃ
তা বিফল হয় না। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য বান্দার আবেদন নিবেদন শুনার জন্য সব সময়ই তৈরি আছেন।
বান্দার সব সময়ের দোয়াই তিনি কবুল করতে পারেন এবং তা করেও থাকেন। এরপরেও তিনি কতগুলো সময়ের মাঝে খাস বরকত নিহিত রেখেছেন। সেই সঠিক সময়ে অল্প এবাদত ও সামান্য পরিশ্রম করেই আমরা বিপুল ছাওয়াবের অধিকারী হতে পারি।
তাই দোয়া কবুল হওয়ার কয়েকটি সঠিক সময়ের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। আযানের সময় [আবু দাউদ, দারমী]
২। আযানের পর থেকে নামাযের একামত পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়।
৩। জুম্মার নামাযের দিন আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।[তিরমিযী]
৪। জেহাদের ময়দানে ভীষণ লগাই চলাকালে। [আবু দাউদ]
৫। তাহাজ্জুদের সময় থেকে সোবহে সাদেক পর্যন্ত। [মিশকাত]
৬। ফরয নামায সমূহের পরক্ষণে। [তিরমিযী]
৭। সেজদার অবস্থায়। [মেশকাত]
৮। শবে কদর, শবে বরাত ও দুই ঈদের আগের রাত্রি। [আবু দাউদ]
৯। হজ্জের আগের রাত্রিতে। [আবু দাউদ]
দোয়া কবুল হওয়ার কিছু শর্ত
দোয়া কবুল হওয়ার কতগুলো শর্ত রয়েছে, আর সে সমস্ত শর্ত পুরোপুরি পালন হয় না বলেই আমাদের বেশির ভাগ দোয়া আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ব্যর্থ হয়ে যায়। নিচে কয়েকটি শর্তের বর্ণনা দেয়া হলো।
১। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের রহমতের উপর প্রচুর বিশ্বাস রাখা। দোয়া করার সময়ে বান্দার অন্তরে আল্লাহ্র রহমতের উপর যত গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থাকবে, তার দোয়া তত তাড়াতাড়ি কবুল হবে।
২। তাওয়াজ্জুত এবং হুজুরে ক্বাল্ব অর্থাৎ পূর্ণ এখলাছ ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া করা। দোয়া করার সময়ে মনোযোগ না থাকলে সেই দোয়া কবুল হওয়ার কোনই নিশ্চয়তা নেই। অতএব যত বেশি আন্তরিকতা দোয়ার সাথে যোগ হবে, দোয়া কবুল হওয়ার আশাও তত বেশি দৃঢ় হবে। এটা বহু পরীক্ষিত যে, হুজুরে ক্বাল্বের সাথে কোন নেক দোয়া করা হলে তা কবুল হয়।
৩। দোয়া করার সময়ে কায়মনোবাক্যে কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা। এটা আল্লাহ্র কাছে খুবই পছন্দনীয়। নিজের আজেয়ী ও দীনতা-হীনতা প্রকাশ করে অন্তরের সবটুকু আবেগ জড়ায়ে, পেছনের গোনাহগুলোর জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে কেঁদে কেঁদে দোয়া করবে।
আর নির্জনে দোয়া করবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন-উদ্ভ রাব্বাকুম তাদাররুয়াঁও ওয়া খুফইয়াতান।
অর্থাৎ, “তোমরা তোমাদের আল্লাহ্ তাআলাকে কান্না জড়িত কণ্ঠে এবং নির্জনে ডাকিও।” হাদীস শরীফে আছে- “আল্লাহ্ শাস্তির ভয়ে ও তাঁর রহমত লাভের আশায় যে চক্ষু কান্না-কাটি করে, এটার জন্য দোযখের আগুন হারাম।”
৪। হালাল রাস্তায় উপার্জিত হালাল রিযিক খাবে। কেননা হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন-“মানুষের খাদ্য যে পর্যন্ত হালাল না হবে, সে পর্যন্ত তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
৫। “আমার বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার” অর্থাৎ মানুষকে ন্যায়ের নির্দেশ দেয়া আর অন্যায় হতে বারণ করা। হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেন-“ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। দুই অবস্থার এক অবস্থা নিশ্চয়ই হবে; হয় তোমরা ন্যায়ের নির্দেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে, আর না হয় অবিলম্বে তোমাদের উপর আল্লাহ্র আযাব নাযিল হবে, আর তখন তোমরা আল্লাহ্র নিকট দোয়া করবে কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল হবে না। [তিরমিযী]
দোয়া করার আদব এবং নিয়মাবলি
আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করার কতিপয় আদব নিম্নে বর্ণিত হইল-
১। অত্যন্ত “আজিযী ইনকেসারী” অর্থাৎ চরম অনুনয় বিনয়ের সাথে দোয়া করবে।
২। অযু অবস্থায় দোয়া করবে, অযু ছাড়া দোয়া করা অনুচিত বা বেয়াদবী। চালান ফ্যানরু আ rede se
৩। দোয়ার মাঝে নিজের অতীত পাপের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করবে এবং ভবিষ্যতে কোন প্রকার পাপ না করার জন্য তওবা করবে।
৪। নিজের অন্যায়ের জন্য নেক কাজের উসীলা দিয়ে দোয়া করবে।
৫। দুই রাকাত নফল নামায পড়ে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করবে।
৬। দোয়ার আরম্ভে এবং শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করবে।
৭। দোয়া করার সময় উভয় হাত দুই কাধ বরাবর উঠাবে। দুই হাতের তালু চেহারার বরাবর রাখবে। সাত সায়াত
৮। দোয়ার শেষে “আমীন” বলতে বলতে দুই হাতের মাধ্যমে চেহারা মুছবে।
৯। কোন গুনাহের কাজে সফলতা লাভের জন্য দোয়া করবে না।
১০। দোয়ার সাথে কোন রকম শর্ত লাগাবে না।
১১। দোয়ার সাথে কোন রকম শর্ত লাগাবে না।
১২। অন্যায়ভাবে অন্যের অনিষ্ঠ কামনা করে দোয়া করবে না।
১৩। ছোট বড় সব মাকসুদের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারেই দোয়া করবে।
১৪। ঈমান ও একীনের সহিত অন্তরকে আল্লাহ্ তাআলার দিকে আকৃষ্ট রেখে দোয়া করবে।
১৫। দোয়ার মধ্যে বখিলী করবে না। অর্থাৎ নিজের ও সকলের জন্য সমভাবে দোয়া করবে।
তেত্রিশ আয়াতের ফযীলত
জ্বিন-পরী আক্রান্ত ও বান-টোনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উক্ত তেত্রিশ আয়াতের তাবিজ লিখে পানিতে ভিজিয়ে সে পানি তের দিন পর্যন্ত পান করালে এবং গোসলের পর কোমর পানিতে নেমে তের দিন পর্যন্ত উক্ত তাবিজ ভেজান পানি মাথা হতে সমস্ত শরীরে ঢেলে দিলে ইনশাআল্লাহ্ উক্ত রোগাক্রান্ত রোগীর রোগ মুক্ত হবে। এক তাবিজে ভাল না হলে উল্লিখিত নিয়মে ২, ৩, ৪, ৫ বা ৭টি তাবিজ ব্যবহার করতে হবে।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ – الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ – مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ – إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمُ . غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ .
উচ্চারণ : আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন। আর রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন, ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন। ইহদিনাচ্ছিরাত্বালমুস্তাক্বীম। ছিরাত্বাল্লাযীনা আন’আমতা ‘আলাইহিম, গাইরিল মাগছবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্লীন।
اله ذلك الكتبُ الأَرَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلوةَ وَمِمَّا رَزَقْنَهُمْ يُنْفِقُونَ – وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ
وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُؤْمِنُونَ – أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ .
উচ্চারণ : আলিফ-লাম-মীম-যালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফীহি, হুদাঁল্লিল মুত্তাক্বীনাল্লাযীনা ইউ’মিনূনা বিল গাইবি ওয়া ইউক্বীমূনাচ্ছালাতা ওয়ামিম্মা রাযাক্কনাহুম ইউনফিকুন। ওয়াল্লাযীনা ইউ’মিনূনা বিমা উনযিলা ইলাইকা ওয়ামা উনযিলা মিন ক্বাবলিকা ওয়াবিল আখিরাতি হুম ইউক্বিনূন। উলাইকা ‘আলা হুদাম্ মির রাব্বিহিম ওয়া উলাইকা হুমুল মুফলিহুন।
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ . لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمُ – لَهُ مَا فِي السَّمواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَالَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهُمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيِّ الْعَظِيمُ . لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنُ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُروة الوثقى – لا أَنْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمُ اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمتِ إِلَى النَّوْرِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِينَهُمُ الطَّاغُوتُ
يُخْرِجُونَهُمْ مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَبُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ . لان بين تلكل النيا
উচ্চারণ: আল্লাহু লাইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু। লা তা-খুযুহু সিনাতুওঁওয়ালা নাওম্। লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি, মান যাল্লাযী ইয়াশফা’উ ‘ইন্দাহু ইল্লা বিইযনিহী, ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইয়্যিম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শায়া, ওয়াছি’আ কুরছিয়্যু হুচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা, ওয়াহুয়াল ‘আলীয়্যুল ‘আযীম।
লাইকরাহা ফিদ্দীনি ক্বাদ তাবাইয়্যানার রুশদু মিনাল গাইয়্যি ফামাই ইয়াকফুর বিতত্বাগুতি ওয়া ইউ’মিন বিল্লাহি ফাক্বাদিছ তামছাকা বিল’উরুওয়াতিল- উছক্কা লানফিছামালাহা ওয়াল্লাহু সামী’উন ‘আলীম। আল্লাহু ওয়ালিয়্যুল্লাযীনা আমানু ইউখরিজুহুম মিনাযযুলুমাতি ইলানুরি। ওয়াল্লাযীনা কাফারু আওলিয়াউহুমুতত্বাগুতি ইয়াখরুজুনাহুমমিনান্নুরি ইলাযযুলুমাতি উলাইকা আছহাবুন্নারি হুম ফীহা খালিদূন।
لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ – فَيَغْفِرُ لِمَنْ مَنْ يَشَاء وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءَ . كُلَّ آمَنَ مَنْ رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلَّ آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ . بِاللهِ وَمَلْئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرَسُلِهِ – لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رَسُلِهِ – وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطْعَنَا – غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ . لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا
كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا – رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلَنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ وَاغْفِرْ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا مَالَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَا مَوْلَنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ .
উচ্চারণ: লিল্লাহি মাফিচ্ছামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি ওয়া ইন তুবদূ মাফী আনফুসিকুম আওতুখফুহু ইউহাসিবকুম বিহিল্লাহু। ফাইয়াগফিরু লিমাই ইয়াশাউ ওয়াইউ ‘আযযিবু মাহ্ইয়াশাউ ওয়াল্লাহু ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীরু। আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনূনা কুলুন আমানা বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহী ওয়াকুতুবিহী ওয়ারুসূলিহী।
লা নু ফারিকু বাইনা আহাদিম্ মির রুসূলিহী, ওয়াক্বালূ ছামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছীরু। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস’আহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া’আলাইহা মাকতাসাবাত রাব্বানা লাতুআখিয্যা ইন্নাসীনা আও আখতানা।
রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল ‘আলাইনা ইছরান কামা হামালতাহু ‘আলাল্লাযীনা মিনক্কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা ত্বাক্কাতালানা বিহী ওয়া’অফু ‘আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহাম্ম্মা আনতা মাওলানা ফানছুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন।
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَلَاارْضِ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَسِيْئًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتِ بِأَمْرِهِ الآلَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبْرَكَ اللَّهُ رَبِّ الْعَلَمِينَ .
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ . وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفٌ 6 وَطَمَعًا – إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ – قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِادْعُوا الرَّحْمَنِ أَيَّامًا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تَخَافَتْ بَهَا وَابْتَغُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً – وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذُ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكَ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُ وَلِي مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا .
উচ্চারণ: ইন্না রাব্বাকুমুল্লাহুল্লাযী খালাক্কাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা ফী সিত্তাতি আইয়্যামিন ছুম্মাছতাওয়া ‘আলাল’আরশি ইউগশিল্লাইলা ওয়ান্নাহারা ইয়ুত্বলিবুহু হাছিছাওঁ ওয়াশ্শামছা ওয়াল ক্কামারা ওয়ান্নুজূমা মুছাখারাতিম্ বিআমরিহী আলা লাহুল খালকু ওয়াল আমরু তাবারাকাল্লাহু রাব্বুল ‘আলামীনা।
উদ’উ রাব্বাকুম তাদ্বাররু’আঁও ওয়া খুফইয়্যাতান ইন্নাহু লা ইউহিব্বুল মু’অতাদীন। ওয়ালা তুফছিদূ ফিল আরদ্বি বা’অদা ইছলাহিহা ওয়াদ’উহু খাওফাওঁ ওয়া তামা’আন। ইন্না রাহমাতাল্লাহি ক্কারীবুম মিনাল মুহছিনীনা।
কুলিদ’উল্লাহা আওয়িদ’উর রাহমানি আইয়্যামান তাদ’উ ফালাহুল আছমাউল হুছনা, ওয়ালা তুজহারু বিছালাতিকা ওয়ালা তাখাফাত বিহা ওয়াবতাগু বাইনা যালিকা সাবীলা। ওয়া কুলিল হামদু লিল্লাহিল্লাযী লাম ইয়াত্তাখিযু ওয়ালাদান ওয়ালাম ইয়াকুঁল্লাহু শারীকুন ফিল মুলকি ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু ওয়ালিইয়্যুম মিনায় যুল্লি ওয়াকাব্বিরহু তাকবীরা।
وَالصَّفْتِ صَفَا فَالرَّجِرَاتِ زَجْرًا فَالتَّلِيتِ ذِكْرًا – إِنَّ الهَكُمْ لَوَاحِدٌ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ
الْمَشَارِقِ إِنَّ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةُ الْكَوَاكِبِ وَحُفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ – لَا يَسْمَعُونَ إِلَى الْمَلَاءَ الْأَعْلَى وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبِ دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاحِبُ الآمَنْ خَطِفُ الْخَطَفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ . فَاسْتَفْتِهِمْ أَهُمْ أَشَدَّ خَلْقًا أَمْ مِّنْ خَلَقْنَا – إِنَّا خَلَقْنَهُمْ
مِنْ طِينٍ لأَزِبٍ .
উচ্চারণ : ওয়াচ্ছাফ্ফাতি ছাফ্ফান। ফাযযাজিরাতি যাজরান,ফাত্তালিয়াতি যিকরান। ইন্না ইলাহুকুম লা ওয়াহিদুন রাব্বুচ্ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়ামা বাইনাহুমা ওয়ারাব্বুল মাশারিক্কি ইন্না যাইয়্যান্নাচ্ছামাআদ্দুনিয়া বিযীনাতেনিল কাওয়াকিবু ওয়া হিফ্যামিন কুল্লে শাইত্বানিম্ মারেদিনা লা ইয়াসমা’উনা ইলাল মালায়িল আ’অলা ওয়াইউক্কযাফুনা মিনকুল্লি জানিবিন দুহুরাওঁ ওয়ালাহুম ‘আজাবুওঁ ওয়াছিবুন ইল্লা মান খাত্বিফাল খাতাফাতা ফাআতবা’আহু শিহাবুন ছাক্কিবুন। ফাছতাফতিহিম আহুম আশাদ্দু খালক্কান আমমান খালাক্কনা ইন্না খালাক্কনাহুম মিন ত্বীনিনলাযিবিন।
يمَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمواتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوا لَا تَنْفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطانِ فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبْنِ يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّنْ نَّارٍ وَنَحَاسٍ فَلَا تَنْتَصِرَانِ .
উচ্চারণ: ইয়া মা’আশারাল জ্বিন্নি ওয়াল ইনসি ইনিস্তাত্বা’অতুম আন তানফুযূ-মিন আক্কত্বারিচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ফানফুযূ লা তানফুযূনা ইল্লা বিসুলত্বানিন, ফাবিআইয়্যে আলা ইরাব্বিকুমা তুকাযয্যিবান। ইউরসালু ‘আলাইকুমা শুয়াযুম্ মিন্ নারিওঁ ওয়ানুহাসুন ফালা তানতাছিরানি।
لَو أَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشِيَةِ اللَّهِ – وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ – هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ الأَهُوَ عَلِمُ الْغَيْبِ والشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ – هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ الأَهُوَ . الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلْمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحْنَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ – هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ – قُلْ أُوحِيَ إِلَى أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنَّ فَقَالُو إِنَّا سَمِعَنَا قُرْآنَا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَأَمَنَّا بِهِ – وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا وَأَنَّهُ تَعَلَى جَدُّ رَبَّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا وَأَنَّهُ كَانَ يَقُولُ سَفِيهُنَا
عَلَى اللهِ شَطَطًا.
উচ্চারণ: লাওআনযালনা হাযাল কুরআনা ‘আলা জাবালিল লারাআইতাহু খাশি’আম্ মুতাছাদ্দি’আম মিনখাশিয়াতিল্লাহি। ওয়াতিলকাল আমছালু নাদ্বরিবুহা লিন্নাসি লা’আল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারুন। হুয়াল্লাহুল্লাযী লাইলাহা ইল্লাহু। ‘আলিমুল গাইবি ওয়াশাহাদাতি হুয়ারাহমানুর রাহীমু।
হুয়াল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লাহু। আলমালিকুল কুদ্দুসুচ্ছালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আযীযুল জাব্বারুল মুতাকাব্বিরু। সুবহানাল্লাহি ‘আম্মা ইউশরিকুন। হুয়াল্লাহুল খালিকুল বারিউল মুছাওয়্যিরু লাহুল আসমাউল হুসনা ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতি ওয়ালআরদ্বে ওয়াহুয়াল ‘আযীযুল হাকীম।
কুল উহিয়া ইলাইয়্যা আন্নাহুসতামা’আ নাফারা মিনাল জিন্নি ফাক্কালু ইন্না সামি’অনা কুরআনান ‘আজাবাইঁ ইয়াহ্দী ইলার রুশদি ফাআমান্নাবিহী। ওয়ালান নুশরিকা বিরাব্বিনা আহাদান ওয়াইন্নাহু তা’আলা জাদ্দু রাব্বিনা মাত্তাখিঘু ছাহিবাতাওঁ ওয়ালা ওয়ালাদান, ওয়াইন্নাহু কানা ইয়াকুলু সাফীহুনা ‘আলাল্লাহি শাত্বাত্বা।
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبْ – مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا
كَسَبَ – سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ، وَامْرَانَهُ طَ حَمَّا لَةَ
الْحَطَبِ – فِي جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ – قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
- اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا
أَحَدٌ – قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ – مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ – وَمِنْ شَرِّ
غَاسِقٍ إِذَا وَقَـبْ – وَمِنْ شَرِّ النَّفْتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ
شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ . قُلْ حَسَدَ – قُلْ أَعُوذُ بِرَبِ النَّاسِ مَلِكِ
النَّاسِ – الهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – الَّذِي
يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ .
উচ্চারণ: কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুনা, লা আ’অবুদু মা তা’অবুদূন। ওয়ালা আন্তম ‘আবিদূনা মা আ’অবুদ। ওয়ালা আনা ‘আবিদুম্মা ‘আবাদতুম ওয়ালা আন্তম ‘আবিদূনা মা আ’অবুদ। লাকুম দীনুকুম ওয়ালিইয়াদ্বীন। কুলহুয়াল্লাহু আহাদ আল্লাহুচ্ছামাদ।
লামইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুঁল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। কুল আ’উযু বিরাব্বিল ফালাক্কি মিনশারি মা খালাক্কা ওয়ামিন শাররি গাসিক্কিন ইযা ওয়াক্কাবা ওয়ামিন শারিন নাফ্ফাসাতি ফিল’উক্কাদি ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
কুল আ’উযু বিরাব্বিন্নাসি মালিকিন্নাসি ইলাহিন্নাসি মিনশাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস, আল্লাযী ইউওয়াসওয়িছু ফী ছুদূরিন্নাসি মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাসি।
উক্ত তেত্রিশ আয়াতের শুরুতে আলহামদু সূরা এবং শেষে চার কুল যোগ করে লেখা হল, উল্লেখিত সূরাসমূহ তেত্রিশ আয়াতের বাইরে। (ক্কাওঃ জামীল)
ফযীলতসমূহঃ
(১) যে ব্যক্তি উক্ত তেত্রিশ আয়াত পাঠ করবে সে সকল প্রকার অত্যাচারী, গীবত রটনাকারী, হিংসুক ও জালেমের জুলুম হতে ইনশাআল্লাহ্ হিফাজতে থাকবে। রাতের বেলায় পাঠ করে ঘুমালে চোর-ডাকাতের উপদ্রব হতে রক্ষা পাবে এবং মাল-সম্পদ নিরাপদে থাকবে।
(২) তেত্রিশ আয়াত নিয়মিত পাঠকারীর সকল নেক মাকছুদ পূর্ণ হবে। নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবে ও সর্বদা মহান আল্লাহর রহমতের মাঝে থাকবে।
(৩) এর তাবিজ বানিয়ে ছোট ছেলে-মেয়েদের গলায় বেঁধে দিলে তারা সর্বপ্রকার বালা-মুছীবাত হতে হিফাজতে থাকবে।
(৪) বন্দী অবস্থায় থেকে তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমতে বন্দী হতে মুক্তি লাভ করবে।
(৫) সকাল-বিকাল পাঠ করলে আর্থিক উন্নতি লাভ হবে।
(৬) গরীব লোকেরা একাগ্রচিত্তে এ আয়াতসমূহ পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ্ মালদার হবে।
সবচেয়ে বেশি ফযীলতের দোয়া
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
ফযীলতঃ পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, উল্লিখিত চারটি কালাম মহান আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় এবং সর্বাপেক্ষা ফযীলতপূর্ণ। এছাড়া পবিত্র হাদীস শরীফে এ কথাও উল্লেখ আছে, নবী (সাঃ) সর্বদা এ কালামসমূহ পাঠ করতেন এবং আসমানের নিচে জমিনের উপর যা কিছু আছে এসব কিছু হতেও অনেক বেশি ভালোবাসতেন।
একটি অতি মূল্যবান কালাম
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهُمْ لَا اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا مِنْ رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ تَقْنَطُوا مِنْ رَّحْمَةِ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ . دو
উচ্চারণ: কুল ইয়া ‘ইবাদিয়াল্লাযীনা আছরাফূ ‘আলা আনফুসিহিম, লা তাক্কনাতৃ মির্ রাহমাতিল্লাহি। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুয যুনুবা জামী’আন। ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীমু।
ফযীলত : নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন যে- “এ আয়াতের পরিবর্তে সমগ্র দুনিয়াও গ্রহণ করতে রাজী নই।” একজন সাহাবী আরজ করলেন। যদি সে ব্যক্তি শির্ক করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন- “সাবধান! যদিও সে শিরক করে” এ কথাটি নবী (সাঃ) তিনবার করে বললেন।
নিয়ম: অত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে তাওবাহ-ইস্তেগফার করে এবং কখনও পাপ কাজ না করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে খাঁটি অন্তরে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের মুনাজাতে পাঠ করবে।
৯৯ রোগের মহৌষধ
لا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ .
উচ্চারণ: লা-হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্।
ফযীলতঃ পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, উল্লিখিত দোয়াটি ৯৯টি রোগের মহৌষধ। তবে সর্বনিম্ন রোগ হল দুশ্চিন্তা।
অসীম পাপ মার্জনার দোয়া :
شد هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَاتُوبُ اسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا . إِلَيْهِ .
উচ্চারণ : আসতাগ ফিরুল্লাহাল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।
ফযীলত: প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর তিনবার এবং আছরের নামাযের পর তিনবার করে পাঠ করলে সমুদ্রের পানিসমূহের মত অসীম পাপ মার্জনা করা হবে।
কঠিন কাজ উদ্ধারের দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَلَا مَوْتًا ولا حيوةً وَلَا نُشُورًا وَلَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَخُذُ إِلَّا مَا اتَّقِي إِلَّا مَا وَتَبْتَنِي اللَّهُمَّ وَفَقْنِي أَعْطَيْتَنِي وَلَا أَنْ لِمَا تُحِبُّ وَتَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ فِي عَافِيَتِي .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি লা আমলিকু লিনাফসী দ্বাররাওঁ ওয়ালা নাফ’আঁও ওয়ালা মাউতাওঁ ওয়ালা হায়াতাওঁ ওয়ালা নূশরাওঁ ওয়ালা আসতাত্বী’উ আন আখুযা ইল্লা মা আ’অত্বাইতানী ওয়ালা আন আত্তাক্কী ইল্লা মা ওয়াতাইতানী। আল্লাহুম্মা ওয়াফিক্কনী লেমা তুহিব্বু ওয়াতারদ্বা মিনাল ক্বাওলি ওয়াল ‘আমালি ফী ‘আফিয়াতী।
রুযী-রোযগার বৃদ্ধির আমল
- يَا رَازِقٌ )ইয়া রাযিক্কু) হে রিযিক দানকারী।
ফযীলত : হযরত বড়পীর সাহেব (রহঃ) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাযের পর এ দোয়া পাঠ করবে অতি অল্পদিনের মধ্যে তার রুযীতে অনেক বরকত হবে।
নিয়ম: তাহাজ্জুদ নামাযের পর কিবলামুখী হয়ে নামাযের অবস্থায় বসে শ্বাসকে নাভীর নিচ হতে উক্ত কালিমাটি জোরে আঘাত করবে। প্রথম আঘাত ডান জানুতে আর দ্বিতীয় আঘাত কলবের মধ্যে এভাবে ১০০ বার করবে।
রুযী-রোযগার বৃদ্ধির দ্বিতীয় আমল
اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ .
উচ্চারণ : আল্লাহু লাত্বীফুম্ বি’ইবাদিহী ইয়ারযুক্কু মাইঁইয়া শাউ ওয়াহুয়াল ক্বাওয়িয্যুল ‘আযীযু।
ফযীলত: উল্লেখিত আয়াতটি যথানিয়মে দৈনিক একশতবার করে পাঠ করলে ইন্শাআল্লাহ্ রুযীতে অনেক বরকত হবে। (এটি অনেক পরীক্ষিত)
মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার আমল
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ .
উচ্চারণঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি’অমাল ওয়াকীলু।
ফযীলত : সকল প্রকার মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য উল্লিখিত দোয়াটি তিনশত তেরবার করে পাঠ করবে। মামলা-মোকদ্দমার জন্য এ ‘আমলটি অত্যন্ত ফলদায়ক।
নিয়ম: অত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে একাগ্রতার সাথে উক্ত দোয়াটি তিনশত তেরবার পাঠ করে কয়েক মরতবা দরূদ শরীফ পাঠ করে মুনাজাতের পর কাজে বের হবে, ইনশাআল্লাহ শুভ ফল লাভ হবে। ফি গোলাহ’ লোভে শিক্ষাক
তাবিজাত ও দ্রব্যজাত
প্রস্তুতি-প্রতিটি দোয়া তাবিজ পড়া ও লেখার পূর্বে ‘আমলকারী ব্যক্তি ত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে পবিত্র অন্তরে কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে।
ছাড়া উক্ত ‘আমলকারী ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত নামায আদায়কারী এবং সকল কার পাপকাজসমূহ হতে মুক্ত থাকতে হবে, আর নিজে এবং নিজ রিবার-পরিজনকে সর্বদা পাক-পবিত্র ও নামাযী বানাবার জন্য চেষ্টা-সাধনা রতে হবে। এসব গুণসম্পন্ন ব্যক্তি যদি নিম্নরূপ ‘আমলসমূহ দ্বারা তদবীর রেন তাহলে ইনশাআল্লাহ শুভ ফল লাভ করবেন।
চেহেল কাফ
كَفَكَ رَبُّكَ كَمْ يَكْفِيكَ وَاكِفَةً كَفَكَافُهَا . كَكَمِي كَانَ مِنْ كُلُكَ تَكَرَّ كُرَّاً كَكَ الْكُرِّ فِي كَبَدِي نَحْكِـ مُشَكْشَكَةٍ كَلُكُلُكٍ لَكَكَا كَفَاكَ الْكَافُ مَا بِى كَفَـ A كُرْبَتَهُ يَا كُوكَبَا كَانَ يَحْكِي كَوْكَبَ الْفَلَكِ .
উচ্চারণ : কাফাকা রাব্বুকা কাম ইয়াক্বীকা ওয়াকিফাতান ফকাফুহা। কাকামীনিন কানা মিন কুলুকিন তাকাররা কুররা কাকাররিল কুররি ফী কাবাদী তাহ্কী মুশাকশাকাতিন কালুকলুকিন লাকাকা কাফাকাল কাফু মাবী কাফা কুরবাতাহু ইয়া কাওকাবা ইয়াহকী কাওকাবাল ইলাকি।
সাপ, বিচ্ছু দংশনের তদবীর
سَلَامٌ عَلَى الْيَاسِينَ سَلَامٌ عَلَى نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ شُجَّةٌ قَرْنِيَةِ مِلْحَةٌ بَحْرٌ فَقْطًا . بِسْمِ اللَّهِ شُجَّةٌ
উচ্চারণ: সালামুন ‘আলা ইলাইয়াসীন, সালামুন ‘আলা নূহিন ফিল ‘আলামীনা, বিসমিল্লাহি সুজ্জাতুন কারনিয়্যাতুম মিলহাতুন বাহুরুন ক্বাফত্বান।
নিয়ম: সাপ, বিচ্ছু দংশন করলে উক্ত দংশিত স্থানে উল্লেখিত দোয়াসমূহ পাঠ করে ফুঁ দেবে এবং যে কোন রশি বা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে দংশিত স্থানের উপরে বাঁধ দিবে যেন বিষ উপরে উঠতে না পারে।
আগুনে পোড়া ভাল হবার তদবীর
اذْهَبِ الْبَاسَ رَبُّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لِأَشَافِي إِلَّا أَنْتَ .
উচ্চারণ : আযহাবিল বা’সা রাব্বুন্নাসি ইশফি আন্তাশাফী লা শাফী ইল্লা আন্তা।
নিয়ম: আগুনে পোড়া গেলে উল্লেখিত দোয়াটি একটি ডিমের কুসুমে ফুঁ দিয়ে সামান্য কপুর গুড়া মিশ্রিত করে জ্বলন্ত স্থানে লাগায়ে দিলে ইন্শাআল্লাহ্ ঠাণ্ডা হয়ে ভাল হবে।
আগুন নেভানোর তদবীর
- اَللهُ أَكْبَرُ )আল্লাহু আকবার)
আল্লাহ্ অনেক মহান।
নিয়ম: কোন ঘরে বা স্থানে আগুন লাগলে খাস অন্তরে পবিত্র মুখে উচ্চ আওয়াজে উল্লেখিত শব্দ দু’টি উচ্চারণ করলে আল্লাহর ইচ্ছায় আগুন নিভে যাবে।
স্বামী-স্ত্রীর মহব্বত বৃদ্ধির তদবীর
وَلَوْ انْفَقْتُ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ
قُلُوبِهِمْ وَلَكُنَّ اللهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ .
উচ্চারণ: ওয়ালাও আনফাক্কতা মা ফিল আরদ্বি জামী’আম মা আল্লাফা বাইনা কুলুবিহিম ওয়ালা কিন্নাল্লাহা আল্লাফা বাইনাহুম ইন্নাহু ‘আযীযুন হাকীমুন।
নিয়ম: উল্লেখিত আয়াতটি ৭ বার পাঠ করে চিনি/মিশ্রী বা মিষ্টি দ্রব্যের উপর ফুঁ দিয়ে ঐ মিষ্টি দ্রব্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ে খেলে পরস্পরের মধ্যে গভীর ভালবাসা সৃষ্টি হবে।
চাকর-চাকরানী ও সন্তানদের পলায়ন বন্ধের তদবীর
إِنِّي تَوَكَلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ . مَا مِنْ دَابَّةٍ الأَهْوَاخِذْ بِنَا صِيَاتِهَا – إِنَّ رَبِّى عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمَ .
উচ্চারণ: ইনি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহি রাব্বী ওয়া রাব্বিকুম। মা মিন দাব্বাতিন ইল্লাহুয়া আখিযুম বিনাছিয়াতিহা। ইন্নারাব্বি ‘আলা ছিরাতিম মুসতাক্বীম।
ফযীলত ও নিয়ম: কারও চাকর-চাকরানী কিংবা সন্তানের পলায়নের অভ্যাস থাকলে তাদের মাথায় কপালের উপরিভাগের কয়েকগছি চুল ধরে নিম্নোক্ত দোয়াটি তিনবার পাঠ করে ফুঁ দিলে ইনশাআল্লাহ তাদের পলায়নের অভ্যাস দূর হবে।
চক্ষু রোগের তদবীর
اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِبَصَرِي وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنِّي
فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَانَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মাত্তি’অনী বিবাছারী ওয়াজ’আলহুল ওয়ারিছা মিন্নী ফাকাশাফনা ‘আনকা গিত্বাআকা ফাবাচ্ছারুকাল ইয়াওমা হাদীদুন।
নিয়ম: চোখের বিভিন্ন প্রকার পীড়ার জন্য ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধির জন্য উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করে চোখে ফুঁ দেবে এভাবে ২, ৩, ৫ দিন করলে ইনশাআল্লাহ্ চক্ষুরোগ আরোগ্য হবে।
ব্যথা-বেদনার তদবীর শিমলায়
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّمَا أَجِدُوا وَ أَحَاذِرُ .
উচ্চারণ : আ’উযু বিইযযাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাযিরু।
নিয়ম: পেটে কিংবা শরীরের অন্য কোন স্থানে ব্যথা-বেদনা হলে বেদনার স্থানে হাত রেখে উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করে ফুঁ দিয়ে ঘঁষে দিবে। ইনশাআল্লাহ বেদনা ভাল হয়ে যাবে।
সন্তান লাভের তদবীর
أَوْ كَظُلُمَاتِ فِي بَحْرِ الَّتِي بِغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ – إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ الله لَهُ نُورًا
فَمَا لَهُ مِنْ نُّورِ .
উচ্চারণ : আও কাযুলুমাতিন ফী বাহিরলল্লুজ্জিয়্যিই ইয়াগশাহু মাওজুম্ মিন্ ফাওক্কিহী মাওজুম মিন ফাওক্কিহী সাহাবুন যুলুমাতুন বা’অদুহা ফাওক্কা বা’অদ্বিন, ইযা আখরাজা ইয়াদাহু লাম ইয়াকাদ ইয়ারাহা ওয়ামান লাম ইয়াজ’আলিল্লাহু লাহু নূরান ফামা লাহু মিন নূরীন।
নিয়ম: ৪০টি লবঙ্গের মধ্যে প্রতি একটির ওপর সাতবার করে উক্ত দোয়া পাঠ করে ফুঁ দেবে, এভাবে ৪০টির ওপর ফুঁ দেবে। এরপর হায়েয হতে পবিত্র হবার সাথে সাথে প্রতি রাতে শোয়ার সময় উক্ত লবঙ্গ একটি একটি করে পানি ছাড়া খেয়ে স্বামীর সাথে রাত যাপনের পর যথাসাধ্য স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য কাজ সমাধা করবে। এভাবে ৪০ রাতে খাওয়া শেষ হলে ইনশাআল্লাহ্ সন্তান লাভ হবে।
সন্তান নষ্ট না হওয়ার তদবীর
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانَ وَهَامَةِ لا حَولَ وَلا قُوَّة الف الف عين لامة
إِلَّا بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمُ .
উচ্চারণ: আ’উযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিন ওয়া হামাতিন ‘আইনুন লামাত তাহ্ছানতা বিহুছনি আলিফ আলিফ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল ‘আলীয়্যিল ‘আযীম।
নিয়ম: গর্ভবতী মহিলার গলায় উল্লিখিত তাবিজটি ভালভাবে পাক-পবিত্র হয়ে এক টুকরা কাগজে গোলাপ মিশ্রিত মেল্ক জাফরান কালি দ্বারা লিখে বেঁধে দিলে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হবে না।
পুত্র সন্তান লাভের তদবীর / দোয়ার ভান্ডার
اللهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلَّ أُنْثَى وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامَ وَتَزْدَادُ ، وَكُلِّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ – عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرِ الْمُتَعَالِ يَا ذَكَرِيَّا أَنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ اسْمُهُ يَحْى لَمْ يَجْعَلْ إِلَهُ مِنْ قَبْلِ سَمِيًّا – بِحَقِّ مَرْيَمَ وَعِيسَى ابْنَا صَالِحًا طَوِيلَ الْعَمْرِ وَبِحَقِّ مُحَمَّدٍ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
উচ্চারণ: আল্লাহু ইয়া’অলামু মা তাহমিলু কুল্লা উনছা ওয়ামা তাগীদ্বুল আরহামা ওয়াতাযদাদু ওয়াকুল্লু শাইয়্যিন ‘ইন্দাহু বিমিক্কদারিন।
‘আলিমিল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাতিল কাবীরাল মুতা’আলি ইয়া যাকারিয়্যা আন্না নুবাশিরুকা বেগুলামিন ইসমুহু ইয়াহ্ইয়া লাম ইয়াজ’আল ইলাহু মিন কাবলি সামিয়্যা, বিহাক্কি মারইয়ামা ওয়াঈসা ইবনান ছালিহান ত্বাওয়ীলাল ‘উমরি ওয়াবিহাক্কি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা।
নিয়ম: যাদের কেবল মেয়ে সন্তান হয় তারা গর্ভস্থিত হবার পর
গোলাপের পানি ও জাফরান দ্বারা একটুকরা কাগজে উক্ত তাবিজটি লিখে و গর্ভিনীর গলায় বেঁধে দেবে, ইন্শাআল্লাহ্ ছেলে হবে। এছাড়া يَا مَتِين (ইয়া মাতীনু) পাঠ করে গর্ভিনীর পেটের উপর দিয়ে গোল রেখা টেনে দেবে, ইনশাআল্লাহ শুভ ফল পাবে।
প্রসব ব্যথা দূর করার তদবীর
وَالْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلْتْ ، وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ عَلَيْهِمُ الشَّقَّةُ أَهْيًا وَأَشْرَاهِيًا – مِنْ جَائِ يَافْتَمْ وَخَرْمَنْ جَايِّ يَافْتُ تَّخَوَاهِي بَزَائِ وَتُخَوَّاهِي مَزَائِ .
উচ্চারণ: ওয়া আলক্কাত মা ফীহা ওয়া তাখাল্লাত, ওয়া আযেনাত লিরাব্বিহা ওয়াহুক্কক্কাত, ‘আলাইহিমুশাক্কক্কাতু আহইয়ান ওয়া আশরাহিয়্যান। মিন জায়ি ইয়াফতাম ওয়া খারমান জায়ি ইয়াত্ তুখাওয়াহী বাযায়ী ওয়াতুখাওয়াহী মাযায়ী।
নিয়ম: প্রসব ব্যথা দূর করে দ্রুত সন্তান খালাসের জন্য উক্ত আয়াতখানি একটুকরা কাগজে লিখে পাক-পবিত্র কাপড়ে জড়ায়ে বাম রানের গোড়ায় সূতা দ্বারা পেঁচায়ে বেঁধে রাখবে, ইনশাআল্লাহ্ আতি তাড়াতাড়ি সন্তান প্রসব করবে। সন্তান আল্লাহর ইচ্ছায় প্রসব হবার সাথে সাথেই উক্ত তাবিজ খুলে ফেলবে, নতুবা নাড়ী-ভুড়িসহ বের হয়ে আসতে পারে।
বদনজরের তদবীর
مِنْ نَفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذَرِفَإِنَّ اللَّهَ وَمَا أَنْفَقْتُمْ يَعْلَمُهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارِ.
উচ্চারণ : ওয়ামা আনফাক্বতুম মিন নাফাক্কাতিন আও নাযারতুম মিন নাযিরিন ফাইন্নাল্লাহা ইয়া’অলামুহু ওয়ামা লিয্যালিমীনা মিন আনছারিন।
নিয়ম: খাসভাবে বদনজরের পানি পড়া দিতে হলে উল্লেখিত দোয়াটি ৩, ৫, ৭ বার পাঠ করে পানিতে ফুঁ দিয়ে উক্ত পানি পান করানোর ফলে ইনশাআল্লাহ বদনজর ভাল হবে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির তদবীর
কারও স্মরণশক্তি কমে গেলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নিম্নলিখিত আমল যথা নিয়মে পালন করবে।
১। শনিবার খালি পেটে-
فَتَعَالَ اللهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمُ .
উচ্চারণ: ফাতা’আলাল্লাহুল মালেকুল হাক্ককু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া রাব্বুল ‘আরশিল কারীম।
২। রবিবার খালি পেটে-
قُلْ رَبِّ زِدْنی علمًا
(কুল রাব্বি যিদনী ‘ইলমান।)
৩। সোমবারে খালি পেটে –
سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَى
(সানুক্করিউকা ফালা তানছা।)
৪। মঙ্গলবার খালি পেটে –
لأَنْحَرِّكُ بِهِ لِسَانِكَ لِنَجْعَلَ بِهِ و
(লাতুহাররিকু বিহি লিসানিকা লিনাজ’আলা বিহী।)
৫। বুধবার খালি পেটে . إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهَ
(ইন্না ‘আলাইনা জাম’আহু ওয়াকুরআনুহু।)
৬। বৃহস্পতিবার খালি পেটে –
فَإِذَا فَرَاثْنَاهُ فَاتَّبِعُ قرانه
(ফাইযা ক্বারা’নাহু ফাত্তাবি’উ কুরআনাহু।)
৭। শুক্রবার খালি পেটে –
إِنَّهُ يَعْلَمُ
الْجَهْرَ وَمَا يَخْفَى
(ইন্নাহু ইয়া’অলামুল জাহরা ওয়ামা ইয়াখফা।)
নিয়ম: স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য ৭ দিনে ৭ টুকরা রুটির ওপর উল্লিখিত দোয়াসমূহ পর্যায়ক্রমে লিখে খালি পেটে খাওয়ালে ইনশাআল্লাহ্ স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
পরীক্ষা পাসের তদবীর
نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتَحْ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ – حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ نِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرِ وَمَنْ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى . فَهُوَ حَسْبُه . الله يتَوَكَّلْ عَلَى
مَا تَصِفُونَ .
উচ্চারণ: নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীবুন ওয়া বাশশিরিল মু’মিনীনা, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’অমাল ওয়াকীলু নি’অমাল মাওলা ওয়া নি’অমান্নাছীরু। ওমাই ইয়াতাওয়াক্কাল ‘আলাল্লাহি ফাহুয়া হাসবুহু, ওয়াল্লাহুল মুসতা’আনু ‘আলা মা তাছিফুনা।
ফযীলত ও নিয়ম: পরীক্ষা পাস করার জন্য নিম্নের আয়াতটি লিখে টুপির ভেতর রেখে পরীক্ষা দিতে যাবে, ইনশাআল্লাহ পরীক্ষায় পাস করবে। এছাড়া উল্লেখিত দোয়াটি চাকরি লাভের জন্যও বিশেষ ফলপ্রদ।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টির তদবীর
ফযীলত ও নিয়ম : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করার জন্য নিম্নলিখিত আয়াতে কারীমাটি কোন মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ৭০৭ বার করে ৭ দিন পর্যন্ত পাঠ করে ফুঁক দিয়ে যাকে বাধ্য করার ইচ্ছা করবে তাকে খাওয়াবে। ইনশাআল্লাহ শুভ ফল লাভ হবে। (পরীক্ষিত)
وَمِنْ أَيْتِهِ إِنَّ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا الَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً .
উচ্চারণ: ওয়া মিন আয়াতিহি ইন্না খালাক্বা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াজান লিতাসকুনূ ইলাইহা ওয়া জা’আলা বাইনাকুম মুআদ্দাতাওঁ ওয়া রাহমাতান।
ফযীলত ও নিয়ম: যদি কোন লোক চাক্রি না পেয়ে বেকার থাকে তাহলে সে ব্যক্তি নিম্নোক্ত আয়াত ও নকশাটি এক টুকরা সাদা কাগজে লিখে নিজের ডান হাতে বেঁধে চাকরির খোঁজ করতে থাকবে। ইনশাআল্লাহ চাকরি মিলে যাবে।
مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوَى الْعَزِيزُ – لطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ الله لـ
উচ্চারণ : আল্লাহু লাত্বীফুম বি’ইবাদিহী ইয়ারযুকু মাইইঁয়াশাউ ওয়াহুওয়াল ক্বাওয়ীয়্যুল ‘আযীম।
ঋণ পরিশোধের তদবীর
یا باسط (ইয়া বাসেতু)
ফযীলত: প্রতিদিন সকালবেলায় মহান আল্লাহর এ পবিত্র গুণবাচক নামটি দশবার পাঠ করে নিজের হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে সে হাতের তালু মুখমণ্ডলে বুলায়ে দিলে সে ব্যক্তি কখনও গরীব থাকবে না। এ ছাড়া খানা শেষ করে হাত না ধুয়ে এ দোয়াটি ৭২ বার পাঠ করলে সে ব্যক্তি কখনও অর্থশূন্য হবে না।
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
নিয়ম: মসজিদে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা দিয়ে এ দোয়া পাঠ
করতে হয়।
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَاغْفِرْ لِي .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা ওয়াগফিরলী।
মসজিদ হতে বের হবার দোয়া
নিয়ম: মসজিদ হতে বের হবার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে এ দোয়া পাঠ করতে হয়।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা মিনফাদ্বলিকা।
ঘরে প্রবেশ করার দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرًا لَمَخْرَجَ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ
خَرَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبَّنَا تَوَكَّلْنَا .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলাযি ওয়া খাইরাল মাখরাজা বিসমিল্লাহি ওয়ালাযনা ওয়াবিসমিল্লাহি খারাজনা ওয়াআল্লাহি রাব্বানা তাওয়াকালনা।
ঘর হতে বের হবার দোয়া
بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لاحَولَ وَلا قُوَّةَ الَّا بِاللهِ .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
ঋণগ্রস্ত ও চিন্তিত অবস্থার দোয়া
بلوت اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعِجْزِ وَالْكَسْلِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ . وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدِّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়া আ’উযুবিকা মিনাল ‘ইজযি ওয়াল কাসলি ওয়া আ’উযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আ’উযুবিকা মিন গালাবাতিদ্দায়নি ওয়া ক্বাহরির রিজালি।
ফযীলত: যথানিয়মে উক্ত দোয়াটি পাঠ করলে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি অতি সহজে ঋণমুক্ত হয় এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির দুশ্চিন্তা দূর হয় এর জ্বলন্ত প্রমাণ হিসেবে একটি হাদীস পেশ করা হল।
তিরমীযি, আবু দাউদ ও ইবনে কাছীর নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, একদা নবী করীম (সাঃ) কোন একজন সাহাবীকে ঋণের চিন্তায় চেহারা মলিন দেখে তাঁকে উক্ত দোয়াটি শিক্ষা দিলেন। উক্ত দোয়া পাঠের ‘আমল দ্বারা দ্রুতভাবে তার ঋণ পরিশোধ হয়ে গেল এবং তার সকল সমস্যা দূর হয়ে গেল।
রোগী দেখতে গেলে পড়ার দোয়া
أَذْهِبِ البَاسَ رَبَّ النَّاسَ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي الأَشِفَاء
إِلَّا شِفَانُكَ شِفَاءٌ لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আযহিবি বাছা রাব্বান্নাছা ওয়াশফি আনতা আশশাফি লা শিফাআন ইল্লা শিফাউকা শিফাউল্লা ইউগ্বাদিরু ছাকামান।
কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় পড়ার দোয়া
اسْتَودِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ .
উচ্চারণ: আসতাউল্লাহা দি- নাকা ওয়াআমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমাালিকা।
দুধ পান করার সময় পড়ার দোয়া
بلا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ . ابعا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফীহি ওয়াযিদনা মিনতু।
নতুন কাপড় পরার সময়ের দোয়া
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أَوَارِي بِهِ أَوْرَتِي A
وَاتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي .
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি হিল্লাযি কাছানী মা উয়ারী বিহী আওরাতী ওয়া আতাযাম্মালু বিহী ফী হায়াতি।
সূর্যোদয় কালে পড়ার দোয়া
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَقَالَنَا يَوْمَنَا هَذَا وَلَمْ يُهْلِكْنَا بِذُنُوبِنَا .
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আক্বালানা ইয়াওমানা হাযা ওয়ালাম ইউহলিকনা বিযুনূবিনা।
ফযীলত : সূর্যোদয়ের সময়ে এ দোয়া পাঠকারী ব্যক্তি ইন্শাআল্লাহ্ সারাদিন নিরাপদে থাকবে।
কঠিন বিপদ-আপদ দেখা দিলে পড়ার দোয়া
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ – اللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِي
مُصِيبَتِي وَاخْلِفْ لِي خَيْرٌ مِنْهَا ..
উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’উনা, আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়াখলিফলী খাইরাম্ মিনহা।
ফযীলতঃ কারও কোন মৃত্যুর সংবাদ শুনে কিংবা কোন প্রকার বিপদ বা অসুবিধা দেখা দিলে উল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত।
এ ছাড়া যে কোন কঠিন ও জটিল কাজ উদ্ধারের জন্য এ দোয়াটি পাঠ করলে সে বিপদসমূহ এবং কঠিন ও জটিল কাজের ক্ষতির তুলনায় অতি উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহ্ তাকে ইহকালে ও পরকালে দান করবেন।
এ হাদীস হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) শুনে স্বীয় স্বামীর মৃত্যুর সময়ে তিনি উক্ত দোয়াটি পাঠ করেছিলেন। এর ফযীলতে দেখা গেল যে, তিনি ইহকালে ও পরকালে তাঁর মৃত স্বামীর চেয়েও উত্তম বিনিময় লাভ করলেন। অর্থাৎ তিনি পরবর্তীতে রাসূলে কারীম (সাঃ)-কে স্বামীরূপে পেয়ে ইহকালে ও পরকালে চির ধন্য হয়েছিলেন।
আয়নায় মুখ দেখার সময় পড়ার দোয়া
اللَّهُمَّ حَسَنْتَ خَلْقِى فَحَسّنْ خُلُقِى .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাসসানতা খালকি- ফাহাসসিন খুলুফি-।
রাতে ঘুমানোর সময় নিম্নের দোয়াসমূহ পাঠ করা সুন্নত
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।
اللَّهُمَّ وَقِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَوْ تَجْمَعَ عِبَادِكَ .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ওয়াক্বিনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব’আছু আও তাজমা’উ ‘ইবাদিকা।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ كُلِّهَا مِنْ شَرِّمَا خَلَقَ .
উচ্চারণ: আ’উযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তাম্মাতি কুল্লিহা মিন শাররি মা খালাক্কা।
ফযীলতঃ পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, শোয়ার বিছানায় গিয়ে উক্ত দোয়াটি পাঠ করে ঘুমালে কোন কিছুর অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
প্রতিদিন শোয়ার পূর্বে বা বিছানায় গিয়ে তাসবীহে ফাতেমী পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা হযরত ফাতিমা (রাঃ) একবার নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট একজন সেবক চাইলে নবী করীম (সাঃ) মা ফাতিমাকে এ দোয়াসমূহ শিক্ষা দিলেন।
নিয়ম : سُبْحَانَ الله )সুবহানাল্লাহি) ৩৩ বার। الْحَمْدُ لله )আলহামুদ লিল্লাহ্) ৩৩ বার এবং اَللَّهُ أَكْبَرُ )আল্লাহু আকবার) ৩৪ বার মোট একশত বার।
খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয়
পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, যদি কোন লোক ঘুমের ঘোরে কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে ব্যক্তি ঘুম হতে জেগে উঠার সাথে সাথে أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ রাজীম) তিনবার পাঠ করে বাম কাঁধের উপর আস্তে আস্তে ফুঁ দেবে।
আর যদি সম্ভব হয় তাহলে অযু করে দু’রাক’আত নামায আদায় করে স্বপ্নের খারাপ ফলাফল হতে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। এসব কোনকিছুই সম্ভব না হলে কমপক্ষে শোয়ার অবস্থা পরিবর্তন করে ঘুমাবে।
আর এ খারাপ স্বপ্নের কথা কারও নিকট বলবে না। অবশ্য একান্ত আবশ্যক বলে মনে করলে কোন অভিজ্ঞ আলেমের নিকট বলা যেতে পারে।
সাবধান! কোনরূপ স্বপ্ন না দেখে মিথ্যা বানোয়াটভাবে বর্ণনা করা কবীরা গুণাহ্!
এদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন না দেখে বলে থাকে যে, আমি স্বপ্নে দেখেছি এমন ব্যক্তিকে কিয়ামতের মাঠে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমীযি)
Read More: নেক আমল বই