নবী রাসুলের প্রয়োজনীয়তা
Table of Contents
নবী রাসুলের প্রয়োজনীয়তা
নবী-রাসূলের প্রয়োজনীয়তা
আদিপিতা হযরত আদম (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমনের পর থেকেই এ পৃথিবীতে মানব বসতির সূচনা হয়। ধীরে ধীরে যখন আদম সন্তান পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগল তখন মানব জাতির মধ্যে শয়তান দ্বীয় কু-মন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে বিপথগামী করতে লাগল আর মানুষ তখন স্বীয় সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গেল। বিভিন্ন ধরনের কুৎসায় লিপ্ত হতে লাগল তারা। আর সেই দুযোর্গময় মুহূর্তে মানবতার মুক্তির জন্য প্রয়োজন ছিল মুক্তির দিশারী কিছু মহামানবের আগমনের।
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ ঐ সময় মানবজাতির রুশদ ও হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রসূলগণকে। যাদের সঠিক সংখ্যা আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। তবে আনুপাতিক হারে বলা হয় তাদের সংখ্যা এক লক্ষ বা দু লক্ষ চব্বিশ হাজার।
পয়গম্বর প্রেরণের এ সুমহান ধারার সূচনা হয়েছিল আদিপিতা হযরত আদম (আঃ) হতে এবং এর পরিসমাপ্তি হয়েছে সায়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়ীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর মাধ্যমে।
কয়েকজন নবীর মুবারক নাম
হযরত আদম (আঃ)। হযরত শীস (আঃ)। হযরত ইসমাঈল (আঃ)। হযরত ইসহাক (আঃ)। হযরত ইয়াকুব (আঃ)। হযরত ইউসুফ (আঃ)। হযরত দাউদ (আঃ)। হযরত সুলায়মান (আঃ)। হযরত মুসা (আঃ)। হযরত হারুন (আঃ)। হযরত ইয়াহ্ইয়া (আঃ)। হযরত যাকারিয়া (আঃ)। হযরত ইয়াস (আঃ)। হযরত ইউনুস (আঃ)। হযরত লূত (আঃ)। হযরত সালেহ (আঃ)। হযরত হুদ (আঃ)। হযরত শুয়াইব (আঃ)। হযরত হিয্ফীল (আঃ)। হযরত ইউশা ইবনে নূন (আঃ)। হযরত শামউইল (আঃ)। হযরত ঈসা (আঃ) ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সঃ)।
আসমানী গ্রন্থ
আল্লাহ্ তায়ালা মানব জাতির হিদায়েতের জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী ও রাসূল। আর তাঁদের প্রতি যে প্রত্যাদেশ বা হুকুম-আহ্কাম অবতীর্ণ করেছেন, তাই ইতিহাসে ছহীফা ও আসমানী গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত । এ আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল ‘আল কুরআন” যা সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুদীর্ঘ তেইশ বছর পর্যন্ত সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে অবতীর্ণ করা হয়েছে। এছাড়া তাওরাত হযরত মুসা (আঃ)-এর উপর, যাবুর হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর, ইঞ্জিল হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তারপর কোন নবী আসবে না। হ্যাঁ তবে হযরত ঈসা (আ) কিয়ামতের পূর্বে তাঁর উম্মত হয়ে পৃথিবীতে আগমন করবেন। আর তার উপর অবতীর্ণ কিতাব কুরআন মাজীদের পর আর কোন নতুন কিতাব আসবে না। সর্বশেষ নবীর আগমন ও সর্বশেষ কিতাবের অবতরণের পর পূর্বেকার সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। কাজেই পূর্বের ধর্মের কোন আইন-কানুন, আদেশ-নিষেধ বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
সর্বশেষ নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
নাম মোহাম্মদ, পিতা আব্দুল্লাহ্, দাদা আব্দুল মুত্তালিব। মাতা আমেনা, দুধ-মা হযরত হালীমা সাদীয়া (রাঃ) । তাঁর বংশ পরস্পরা এভাবে-মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আবদে মনাফ, ইবনে কুসাইবিনে কিলাব ইবনে কুররাহ, ইবনে কা’ব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফিহার, ইবনে মালিক ইবনে নাযার, ইবনে কিনানাহ্, ইবনে কুযায়মা, ইবনে মুদরিকাহ্, ইবনে ইলয়াম, ইবনে মুদার, ইবনে নিযার, ইবনে মাআদ, ইবনে আদনান। এ পর্যন্ত বংশ পরস্পরা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত। এরপর থেকে হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত বংশ পরস্পরায় মতানৈক্য রয়েছে।
হুজুর (সঃ)-এর জন্ম
তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল মুতাবিক হিজরী পূর্ব ৫৩ সালের ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদেকের সময় আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সময় হযরত আমেনার পেট হতে একটি আলোকবর্তিকা নির্গত হয়। যা পূর্ব পশ্চিমে আলোকিত করে ফেলে। পারস্য রাজ কিসরার শাহী মহলে ভূমিকম্পন শুরু হয়। ফলে চৌদ্দটি গম্বুজ ধ্বসে পড়ে। পারস্যের শ্বেত উপসাগর হঠাৎ করে শুকিয়ে যায়। পারস্যের হাজার বছরের পুরাতন অগ্নিকুণ্ড আকস্মিকভাবেই নির্বাপিত হয়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হয়ে হুজুর (সঃ) হাতে এক মুষ্ঠি মাটি নিয়ে আকাশের দিকে তাকান ।
রাসূল (সঃ)-এর পিতৃবিয়োগ
নবী করীম (সঃ)-এর জন্মের সাতমাস পূর্বে পিতা আব্দুল্লাহ্ তার পিতা আব্দুল মুত্তালিবের নির্দেশে খেজুর আনয়ন করতে মদীনায় গমন করেন। রাসূল (সঃ) তখন মাতৃগর্ভে। নিয়তির এ খেলা কে বুঝতে পারে? সে সফরই ছিল তাঁর অন্তিম সফর। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই তিনি মদীনার পথে ইহধাম ত্যাগ করেন ।
হালিমা সা’দিয়ার কোলে মোহাম্মদ (সঃ)
মক্কার সম্ভ্রান্ত বংশের নিয়ম ছিল। তারা তাদের সন্তানকে জন্ম দেয়ার পর দুগ্ধ পানের জন্য পার্শ্ববর্তী কোন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিতেন। যেন শিশুরা সু-স্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধ ভাষা আয়ত্বে করতে পারে। অপরদিকে বিভিন্ন মওসুমে গ্রাম্য মহিলরাও মক্কায় দুগ্ধ পোষ্য শিশুর সন্ধানে বিচরণ করত । নবী করীম (সঃ)-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তায়েফের বনী সাদ গোত্রের সাথে দুগ্ধ পোষ্য নবজাতকের সন্ধানে হালিমা সাদিয়া (রাঃ)-ও মক্কায় গমন করেন। তায়েফে তখন চলছিল দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহারে অর্ধাহারে হালিমার গিয়েছিল শুকিয়ে।
তার কোলের সন্তানও পর্যাপ্ত দুধ পেত না। ফলে সারা রাত ক্রন্দন করে কাটাত। তবুও উত্তম পুরস্কারের লোভে হালিমা দুগ্ধ পোষ্য নবজাতকের সন্ধানে মক্কায় গমন করেন।
হালিমার আরোহী গাধাটি ছিল খুবই দুর্বল। ফলে সে সঙ্গী-সাথীদের সাথে চলতেও ছিল অক্ষম। তাই তার সঙ্গী-সাথীরা অত্যন্ত অবজ্ঞা ও বিরক্তি বোধ করছিল। যাহোক, বহু কষ্টে তিনি মক্কায় পৌঁছলেন। কিন্তু মক্কায় পৌঁছে সকরেই স্বীয় পছন্দ মত নবজাতক নিয়ে প্রস্থানের প্রস্তুতি নিল।
তবে হালিমার দুর্বলতার কারণে তার ভাগ্যাকাশে কোন নবজাতকের সন্ধান মিলল না। অপরদিকে মুহাম্মদ (সঃ) নিতান্ত পিতৃহীন হওয়ায় কোন মহিলাই তাকে গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিল না । কেননা এতে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের সম্ভাবনা ছিল না। রাতের বেলায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বাক্যালাপের পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার চাইতে এই এতীম শিশুটি নিয়ে যাওয়াই ভাল। তাই তারা মা আমেনার কাছ থেকে শিশু মোহাম্মদ (সঃ) কে স্বীয় তাবুতে নিয়ে আসল ।
রহমত বরকতের বারিধারা
এই ইয়াতীম শিশুকে নিয়ে তাবুতে যাওয়ার সাথে সাথেই রহমত ও বরকতের বারিধারা যেন তাদের উপর বর্ষিত হতে লাগল । হালিমার দুগ্ধ শূন্য স্তন দুধালো হয়ে গেল । স্বীয় সন্তান আব্দুল্লাহ ও নতুন সন্তান মোহাম্মদ তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়ল। আজ বহুদিন পরে এ দম্পতি একটু আরামে নিদ্রা যেতে পারলেন। প্রভাতের রবী উদয়ের পূর্বেই স্বামী জেগে উঠে বলল, হালিমা ! তুমি অতি ভাগ্যবতী! তুমি অত্যন্ত পূণ্যবান এক শিশু নিয়ে এসেছ।
তায়েফ প্রত্যাবর্তন
প্রভাতেই তারা সদলবলে স্বর্গভূমি তায়েফ অভিমুখে রওনা হল। এবারে হালিমা ও তার স্বামীকে দেখা গেল ভিন্ন চিত্রে। যে হালিমা সাথী-সঙ্গীদের বিরক্তির কারণ ছিল সে হালিমা এখন সবেচেয়ে দ্রুত চলতে লাগল । যার বাহন গাধাটি হাঁটতে ছিল অক্ষম সে গাধা দৌড়ে চলতে লাগল। যে সূর্যের কিরণে তারা ছিল অতিষ্ঠ সে সূর্য হালিমার জন্য আরাম দায়ক হয়ে গেল । হালিমার জন্য যে ভ্রমণ ছিল অত্যন্ত কষ্ট-ক্লেশের সে ভ্রমণ এখন তার জন্য জানা গেল আরাম-আয়েশের, আনন্দ-আহলাদের।
ভ্রমন করতে করতে এক সময় তারা পৌঁছে গেল তায়েফে। বাড়িতে গিয়ে হালিমা দেখল তাদের দুগ্ধ শুস্ক ছাগলগুলোর স্তন্য দুধে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। এভাবেই বরকত ও রহমতের দ্বারা তাদের কেটে গেল দুটি বছর। দু’বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নিয়ম মাফিক তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই হালিমার হৃদয় আজ শিশুটির জন্য নীরবে-নির্জনে কাঁদছে। কিন্তু কাঁদলে কি হবে তাঁকে সর্বদা রাখা সম্ভব নয়। তাই হালিমা শিশুটির অবস্থান তার কাছে আর দীর্ঘায়িত করার কৌশল খুঁজছিল। ঘটনাক্রমে সে বছর মক্কায় মহামারি দেখা দেয়। আর হালিমা এ মহামারির অজুহাত দেখিয়ে তিনি তাঁকে পুনরায় তায়েফে নিয়ে এলেন।
হুজুর (স)-এর মুবারক জবানে প্রথম বাক্য
হযরত হালীমা সাদিয়া (রা) বলেন, যখন তাঁর দু’বছর বয়স পূর্ণ হল, আমি তাকে স্তন দান হতে বিরত রাখলাম। তখন তাঁর পবিত্র জবান হতে আমি এ শব্দগুলো শুনতে পেলাম-
উচ্চারণ : আল্লাহ আকবর কাবীরান ওয়ালহাম্দু লিল্লাহ হামদান কাছীরান,ওয়া সুবহানাল্লাহ বুকরাতান ওয়া আছীলা ।
অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহান, তারই জন্য অগনিত প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা সর্বদাই আল্লাহ তায়ালা ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র
একদিনের ঘটনা : একদিন শিশু মোহাম্মদ (সঃ) তার দুধমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার ভাই আব্দুল্লাহ্ সারাদিন কোথায় থাকে? জবাবে হালিমা সাদিয়া (রাঃ) বললেন, সে তো ছাগল চড়াতে মাঠে যায়। তিনি বললেন। তবে আমি তার সাথে মাঠে যাব। তাই পরদিন থেকে তিনি আব্দুল্লাহর সাথে মাঠে যেতে লাগলেন। হঠাৎ একদিন আব্দুল্লাহ্ হাঁপাতে হাপাতে দৌড়ে এসে তার মাকে জানাল, মা! আমার কুরাইশী ভাইকে দু’জন সাদা পোশাকধারী লোক ধরে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করে ফেলেছে। আমি সে অবস্থায় তাকে রেখে চলে এসেছি।
একাকী হালিমা একথা শুনামাত্রই দৌড়ে মাঠে চলে এলেন। এসে দেখলেন রাসূল (সঃ) সুস্থ বসে রয়েছেন। তবে তার চেহারা মোবারকে ভীতির ভাব স্পষ্টই পরিলক্ষিত হচ্ছে। হালিমা তাকে কোলে তুলে, সোহাগ করে নিয়ে জিজ্ঞাসিলেন, বৎস। তোমার কি হয়েছে? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, দু’জন সাদা পোষাকধারী লোক আমার পেট থেকে কি যেন বের করে নিয়েছেন।
হালিমা বাড়িতে এসে শিশু মোহাম্মদ (সঃ)-কে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গণকের কাছে গেলেন। গণক তাকে দেখেই চিৎকার করে বলতে লাগল, ওহে তায়েফবাসী। তোমরা এ শিশুকে হত্যা কর। এ শিশুই তোমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে খতম করে দিবে। আর সাথে সাথে আমাকে হত্যা কর। এ কথা শোনামাত্র হযরত হালিমা সাদিয়া (রাঃ) তাকে তিরস্কার করতে করতে চলে আসলেন।
মায়ের কোলে শিশু মোহাম্মদ (স)
এ ঘটনার পর হযরত হালিমা সাদিয়া (রা)-এর হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার হল । তিনি তার নিরাপত্তার অভাব অনুভব করতে লাগলেন। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। মা আমেনা এত ত্বরিৎ ফেরত দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হালিমা সাদিয়া (রা) তাকে বিস্তারিত বিবরণ খুলে বললেন। মা আমেনার এতে এ বিশ্বাস নিশ্চিতভাবে জন্মাল যে, তার সন্তান নিশ্চয় কোন এক মহৎ ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।
মা আমেনার ইন্তেকাল
জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা এ ইয়াতীম শিশু মায়ের আদর আহ্লাদে দিন কাটাতে লাগলেন। মা’ও তার সন্তানের খ্যাতি দেখার বাসনা নিয়ে স্বহস্তে লালন– পালন করতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছে ছিল অন্য রকম। তিনি তার হাবীবের লালন-পালনের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে নিলেন এবং মাত্র দু’বছর বয়সেই তাঁর থেকে মাতৃ স্নেহের বন্ধনকেও ছিন্ন করে দিলেন।
পিতৃ হারা, মাতৃ হারা সন্তানের লালন-পালনের পূর্ণ দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলেন দাদা আব্দুল মুত্তালিব। পিতা-মাতার অবর্তমানে স্বীয় দৌহিত্রকে আপন পুত্রের ন্যায় লালন-পালন করে বড় করতে লাগলেন। ফলে শিশু মুহাম্মদ (সঃ) পিতা-মাতার বিরহের কথা দিন দিন ভুলে যেতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা এ ছায়াটুকুও উঠিয়ে নিলেন। মাত্র দু’বছর পর অর্থাৎ হুজুর (সঃ)-এর বয়স যখন আট বছর তখন খাজা আব্দুল মুত্তালিবও পরপারে চলে গেলেন ।
আবু তালিবের সাথে সিরিয়া যাত্রা
দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিবের কাছে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বড় বড় হতে লাগলেন। চাচা স্বীয় ভাতিজাকে সযত্নে বড় করতে লাগলেন। হুজুর (সঃ)-এর বয়স যখন বার বছর দু’মাস দশদিন তখন চাচা আবু তালিব ব্যবসার। উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমনের মনস্থ করলেন। সাথে আপন ভাতিজাকেও নিয়ে নিলেন। ‘তায়মা’ নামক স্থানে তাদের যাত্রা বিরতি হল । হুজুর (সঃ) এক বৃদ্ধের নিচে নিদ্রা যাচ্ছিলেন। এক ইয়াহুদী আলেম-নাম তার বুহায়রা। সেখান দিয়েই অতিক্রম করছিল ঐ ব্যক্তি। মুহাম্মাদ (স)-কে দেখে সে থমকে দাড়াল।
জিজ্ঞাসা করল, এ শিশুটি কারব। আবু তালিব এগিয়ে এলেন। বললেন, আমার ভ্রাতৃষ্পুত্র। নাম তার মোহাম্মদ। বুহায়রা বলল, তুমি একে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন-সিরিয়ায়। বুহায়রা বলল, তবে তুমি তাকে নিয়ে সিরিয়ায় গমন কর না । কেননা, তথাকার ইয়াহুদীগণ তাকে পেলে হত্যা করে ফেলবে। যেহেতু তিনি সর্বশেষ নবী হবেন। আমি তাওরাতে তার বিস্তারিত বিবরণ শুনেছি। এ কথা শুনে চাচা আবু তালিব অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হলেন এবং লোক মারফত হযরত (সঃ)-কে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন ।
Read More: নেক আমল বই