নেক আমল সম্পর্কে হাদিস
Table of Contents
শিশু মোহাম্মদের চরিত্র
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) শৈশব হতেই ছিলেন সৎ বিনয়ী ও পরোপকারকারী একজন আদর্শ মানব । দুগ্ধ পান কালে তিনি হালিমার এক স্তনের দুধ পান করতেন। আর অপরটি দুধ ভাই আব্দুল্লাহর জন্য ছেড়ে দিতেন। ছোট বেলাতে তিনি ছোট বাচ্চাদের খেলাধূলা দেখতেন। কিন্তু কখনও নিজে খেলায় অংশ গ্রহণ করতেন না। হায়া-লজ্জা এরূপ ছিল যে জীবনে কখন উলঙ্গ হননি। এমনকি কেউ তার বদন হতে কাপড়ও সরিয়ে নিতে পারেনি।
একদা শৈশবে তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে কাবা ঘরের পাথর সরাচ্ছিলেন। পাথরের ওজনে তাঁর পবিত্র স্কন্ধে দাগ বসে যাচ্ছিল। তাই তাঁর চাচা তাঁর লুংগি খুলে তাঁর কাঁধে দেয়ার মানসে কাপড় টান দিলে সাথে সাথেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁর চরিত্র মাধুরীতে সকলেই ছিল অভিভূত। তার প্রশংসা সকলেই মুখেই ছিল উচ্চারিত । তিনি ছিলেন ধনী গরীব সকলেরই আপনজন । ব্যক্তিগত কারণে তিনি কাউকে কখনো কিছু বলেননি । তাইতো সকলে মিলে তাকে শৈশব কালেই ‘আল আমীন” উপাধীতে ভূষিত করেছিল ।
সিরিয়ায় ব্যবসায়িক সফর
আরবের এক ধনবতী মহিলা। নাম তার খাদীজা। তিনি ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতী। তার খ্যাতি ছিল সমগ্র আরব জুড়ে। বিশ্বস্ত ও আমানতদার লোকদের মাধ্যমে স্বীয় অর্থ সম্পদ দিয়ে ব্যবসা করান ছিল তার পেশা। বহু লোক তার মাধ্যমে সম্পদশালী হয়েছে। নবীয়ে করীম (স)-এর সততা, বিশ্বস্ততা দেখে বহুদিন থেকে তিনি তাঁর প্রতি ছিলেন খুবই দুর্বল। অবশেষে তিনি সাহস করে বলেই ফেললেন-যদি আপনি আমার ধন-রত্ন নিয়ে ব্যবসায়িক সফরে যেতে রাজি হন, তবে আমি অন্যদের তুলনায় আপনাকে অধিক লভ্যাংশ দিব।
আর আপনার খেদমতের জন্য আমার গোলাম মায়সারা তাকে আপনার সঙ্গী হিসেবে প্রদান করব। রাসূল (সঃ) এ সফরের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি সেড়ে নিলেন, এবং ১৬ই জিলহজ্ব সিরিয়া অভিমুখে ব্যবসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন এবং অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সিরিয়ায় মালামাল বিক্রি করে তথা হতে অন্য মাল ক্রয় করে নিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করলেন। হযরত খাদীজা (রাঃ) এগুলো বিক্রি করে দ্বিগুণ মুনাফা লাভ করলেন এবং তাঁর কৃত ওয়াদা মুতাবিক রাসূল (সঃ)-কে অধিক
লভ্যাংশ প্রদান করলেন।
নাস্তুরা রাহেবের ভবিষ্যতদ্বাণী
সিরিয়ার ব্যবসায়িক সফরের কোন একস্থানের সময় নাস্তুরা নামক জনৈক রাহেবের সাথে হযরত (সঃ)-এর সাক্ষাৎ ঘটে। ঐ রাহের হযরতের সেবক মায়সারার পরিচিত ছিল । তাই সে মায়সারাহকে জিজ্ঞাসিল, মায়াসারাহ! তোমার সঙ্গী এ ভদ্র লোক কে? মায়সারা জবাব দিল, ইনি মক্কার ‘আল আমীন’ সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের এক ইয়াতীম সন্তান। খাজা আবু তালিবের ভাতীজা । তখন নাত্তুরা বলল, ইনি অদূর ভবিষ্যতে নবী হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
নেক আমল সম্পর্কে হাদিস
রাসূল (স)-এর পরিণয়
ধনবতী খাদীজা এমনিতেই ছিল হুজুর (সঃ)-এর প্রতি অত্যাধিক দুর্বল। তদুপরী ব্যবসায় অভূতপূর্ণ সফলতা অর্জন করায় তিনি যেন হযরত (সঃ)-কে পাবার আশায় ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। তিনি একজন বিধবা বৃদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও পঁচিশ বছরের যুবক মুহাম্মদ (সঃ)-কে পাওয়ার আশায় উদগ্রীব হয়ে উঠলেন এবং কোন সংকোচ না করেই খাজা আবু তালিবকে এ প্রস্তাব পাঠান । খাজা আবু তালেব তাৎক্ষণিক কিছু না বলে স্বীয় ভাতীজার সাথে সংগোপনে আলাপ সেরে বিবাহের সম্মতির কথা হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে জানিয়ে দিলেন।
আর এক ও মুদারের সর্দারগণের উপস্থিতিতে এ বিয়ে সময় আবু তালিব, বনু হাশিম অনুষ্ঠিত হলার বিয়ের খুত্বা আবূ তালিব নিজেই পাঠ করলেন। মোহরানার টাকাও স্বীয় সম্পদ হতে পরিশোধ করে দিলেন। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, নবী করীম (সঃ)-এর যৌবন কালটা এ বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে কাটিয়ে দিলেন। এমনকি হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় হুজুর (সঃ) অন্য কার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি এবং হুজুর (স)-এ সকল সন্তান তার গর্ভেই জনা নেয়। তবে শুধু মাত্র তৃতীয় পুত্র ইবরাহীম বাদী মারিয়া কিবতীয়ার গর্ভে জন্ম লাভ করেন।
হুযুর (সঃ)-এর সন্তানদের নাম
হুজুর (সঃ)-র তিন জন পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাদের নাম হল- (১) হযরত কাসিম (২) হযরত তাহের (৩) হযরত ইবরাহীম, এবং চারজন কন্যা সন্তানের পিতা ছিলেন। তাদের নাম হল- হযরত যয়নব (রাঃ)। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ)। হযরত রুকাইয়া (রাঃ)। ও হযরত ফাতেমা (রাঃ)। হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গর্ভে দু’পুত্র দুইপুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। তারা হলেন-হযরত হাসান (রাঃ) ও হুসাইন (রাঃ)।
হুজুর (সঃ)-এর বাকী স্ত্রীগণ
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় হুজুর (সঃ) অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেননি। হযরত খাদীজা (রাঃ) মৃত্যুর পর তিনি আর দশ জন স্ত্রী গ্রহণ করেন। যার মধ্যে একমাত্র হযরত আয়শা সিদ্দীকাহ (রাঃ)-ই ছিলেন কুমারী, বাকী সকলেই ছিলেন বিধবা। যাদের অধিকাংশকেই হুজুর (সঃ) তাদের দুঃখ লাঘব করার জন্য স্বীয় পরিণয়ে আবদ্ধ করেছেন।
যাদের পবিত্র নাম নিম্নে প্রদত্ত হল
(১) হযরত সাওদাহ্ বিনতে যামআহ্ (রাঃ) (২) হযরত আয়শাহ সিদ্দীকাহ্ (রা) (৩) হযরত হাফসাহ্ (রা) (৪) হযরত যয়নব বিনতে খোয়ায়মাহ (রাঃ) (৫) হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) (৬) হযরত যয়নব বিনতে জহশ (রা) (৭) হযরত জুয়ায় রিয়াহ্ (রা) (৮) হযরত উম্মে হাবীবাহ্ (রাঃ (৯) হযরত সাফিয়্যাহ (রা) (১০) হযরত মায়মুনাহ্ (রা)। হুজুর (সঃ)-এর পবিত্র রমণীগণের মধ্যে দু’জন অর্থাৎ হযরত খাদীজা (রাঃ) ও হযরত জয়নব বিনতে খোযায়মাহ্ (রাঃ) হুজুর (সঃ)-এর জীবদ্দশাতে ইন্তেকাল করেন। বাকী নয়জন নবী করীম (সঃ)-এর ওফাতের সময় জীবিত ছিলেন।
ন্যায় বিচারে মহানবী (সঃ)
(মহানবী (সঃ)-এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ পূর্ণ হল তখন কুরাইশগণ বায়তুল্লাহ্ শরীফকে পুনঃনির্মাণের মনস্থ করল। যেহেতু এ কাজটি অত্যন্ত সৌভাগ্যের তাই প্রত্যেকেই এ কাজে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক ছিল। একথা চিন্তা করে কুরাইশগণ এ নির্মাণ কাজ সকল গোত্রের মাঝে বণ্টন করে দিল। নির্মাণ কাজ যখন হজরে আওয়াদ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল, তখন তাদের সম্মুখে নতুন সমস্যা দেখা দিল। প্রত্যেকেই হজরে আয়াদ-কে স্থাপন করার মনস্থ করল। এমনকি এ ব্যাপারটি সংঘর্ষের রূপ ধারণ করল।
সকল গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোকেরা এ ব্যাপারে মশওয়ারায় বসল। তারা চিন্তা করতে লাগল কি করে এ সংঘর্ষকে এড়ান যায়। সকলেই মসজিদে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল। বহু কথোপকথনের পর এ সিদ্ধান্ত হল যে, মসজিদের একটি দরজা নির্ধারণ করে বলা হল যে, যে ব্যক্তি এ দরজা দিয়ে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিব। এ সিদ্ধান্তের পর সকলেই মসজিদে বসে আগন্তুকের অপেক্ষা করতে লাগল ।
ঘটনাক্রমে হুজুর (সঃ)ই সর্ব প্রথম ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন এবং তাঁকে দেখামাত্র সকলেই সমস্বরে বলে উঠল, ইনিই তো আল আমীন আমরা তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে সকলেই প্রস্তুত ।
নবী করীম (সঃ) তাদের সমস্ত ঘটনা শুনে বললেন, আপনারা একটি চাদর নিয়ে আসুন। চাদর আনা হল। হুজুর (সঃ) চাদরখানা বিছিয়ে হজরে আওয়াদকে স্বহস্তে চাদরে রেখে বললেন, প্রত্যেক গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এ চাদরখানার চতুর্পার্শ্ব ধরে খানায়ে কাবা’র কাছে নিয়ে চলুন। তারা সকলে তাই করল। তখন হুজুর (সঃ) স্বীয় হস্ত মুবারক দ্বারা পাথর খানা উঠিয়ে যথাস্থানে রেখে দিলেন। ফলে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সুন্দর সমাধান হয়ে গেল ৷
নবুওয়াত প্রাপ্তি
রাসূল (সঃ)-এর আদতে মুবারাকাহ ছিল যে, তিনি হেরা গুহায় গিয়ে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এ হেরা গুহাতে তিনি একাধারে অনেকদিন কাটিয়ে দিতেন । হুজুর (সঃ)-এর বয়স যখন চল্লিশ বছর একদিন হল, তখন ঐশীদূত হযরত জিব্রাঈল আমীন এসে বলল, (ইয়া মুহাম্মদ ইকরা) হে, মুহাম্মদ তুমি পড় । প্ৰতি উত্তরে মহানবী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললেন, (মা আনা বিকারিন) আমিতো পড়তে জানি না। তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাঁকে পরপর তিন বার বুকের সাথে মিলিয়ে চাপ দিলেন। এরপর মহানবী (স) পড়তে লাগলেন
উচ্চারণ: ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজী খালাক্ব, খালাকাল ইনসানা মিন আলাক্ব। ইকরাহ ওয়া রাব্বুকাল আকরামুল্লাজী আল্লামাবিল ক্বালাম । আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়া’লাম ।
অর্থঃ পড় তুমি সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের নামে। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত হতে সৃষ্টি করেছেন। পড় তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা
দিয়েছেন। মানুষকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না ।
এরপর নবী করীম (সঃ) বাড়িতে চলে আসলেন এবং হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে বললেন আমায় কম্বল মুড়ি দিয়ে দাও। হযরত খাদীজা (রাঃ) দেখলেন মহানবী (সঃ)-এর শরীরে উষ্ণতা অত্যাধিক বেড়ে গেছে। তিনি তার সেবা সুশ্রুষা করতে ব্যাপৃত হলেন। রাসূল (সঃ) ধীরে দীরে হেরা গুহার বিস্তারিত বিবরণ খুলে বললেন
ওয়ারাকা বিন নওফলের দরবারে হযরত খাদীজা (রাঃ)
ওয়ারাকা বিন নওফল ছিলেন হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই। তিনি ছিলেন একজন খ্রিষ্টীয় পণ্ডিত বা খ্রিস্টীয় ধর্ম যাজক । তিনি ইয়াহুদী হতে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত খাদীজা তার কাছে গিয়ে মহানবীর বিস্তারিত বিবরণ খুলে বললেন। সাথে সাথেই ওয়ারাকা খাদীজা-কে বললেন, এতে কোন ভয়ের কারণ নেই । তিনি সর্বশেষ নবী হবেন আমি ইঞ্জিলে তার বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। হযরত খাদীজা ফিরে গেলেন আপন গৃহে ।
ইসলাম প্রচারের প্রথম ধাপ
নবুয়াত প্রাপ্তির পর তিন বছর পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত গোপনভাবে চলতে থাকে। আর এ গোপন দাওয়াতের ফলেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ)। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত যায়েদ বিন হারিছ (রাঃ)। হযরত উসমান (রাঃ), হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা), হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা), হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাঃ), হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ),
হযরত আবু উবায়দাহ্ ইবনুল জররাহ (রা), হযরত উবায়দা ইবনুল হারিস (রাঃ), হযরত সাঈদ বিন যায়দ আদভী (রাঃ), হযরত আবু সালমা মাখযুমী (রাঃ), হযরত খালিদ বিন যাঈদ বিন যায়দ আদভী (রাঃ), হযরত খালিদ বিন যাঈদ (রাঃ), হযরত উসমান বিন মাজউন (রাঃ), হযরত কুদামাহ বিন মাজউন (রাঃ), হযরত উবায়দুল্লাহ বিন মাজউন (রাঃ), হযরত আরকাম বিন আরকাম (রাঃ), হযরত সুহাইব রুমী (রাঃ), হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ), হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবীগণ
্রকাশ্য দ্বীনের দাওয়াত
নবুওয়াতের তৃতীয় বর্ষের শেষলগ্নে আল্লাহ্ তায়ালা অবতীর্ণ করলেন-
(ফাছদা’ বিমা তু মারওয়া আ’রিদ আনিল মুশরিকীন)
অর্থ তুমি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দাও! যা তোমায় আদেশ করা হয়েছে। আর পরওয়া করনা মুশরিকদেরকে। এ আয়াতে নবীয়ে করীম (সঃ)-কে প্রকাশ্যে দ্বীন প্রচারের
নির্দেশ প্রদান করা হয়।
নবী করীম (সঃ) মক্কার অদূরে সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন। কুরাইশ সম্প্রদায়কে আহ্বান করলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! এ আওয়াজ মক্কার অলিতে-গলিতে পৌঁছামাত্রই সাফা পাহাড়ের পদতলে জায়ায়েত হল মক্কা নগরীর সকল মানুষ। মহানবী (সঃ) তাদের লক্ষ্য করে বললেন, ওহে, আমার স্বজাতি! যদি আমি বলি এ পাহাড়ের অপর প্রান্তে শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে?
উত্তরে সকলেই সমস্বরে বলে উঠল,অবশ্যই বিশ্বাস করব। কেননা, আপনিতো আমাদের আল আমীন। আপনার কথা কিছুতেই মিথ্যা হতে পারে না। তখন নবী করীম (সঃ) বললেন, তবে শোন, আমি তোমাদেরকে এমন এক ভয়ানক অগ্নির ভয় দেখাচ্ছি, যা তোমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে। তোমরা মৃত্যু কামনা করবে। কিন্তু তথায় আর কোন দিন মৃত্যু হবে না। কাজেই তোমরা সে আযাব থেকে পরিত্রান লাভ কর ।
তোমরা বল,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ । অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই আর মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল। আর তোমরা ছেড়ে দাও তোমাদের মূর্তি অর্চনাকে । এরা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না। আর পারবেও না। এরাতো নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে অক্ষম। তবেই তোমরা সফলতা লাভ করতে পারবে। আর উভয় জগতে পরমানন্দে যিন্দিগী কাটাতে পারবে! মক্কার কুরাইশগণ শুনল না তার এ মায়াবী আহ্বান । তারা বুঝে শুনে তিরস্কার করল মহানবী (সঃ)-কে । আবু লাহাব পাথর ছুঁড়ে মারল প্রিয় নবী (সঃ) দিকে। আর বলল, (আলি হাজা জামাতানা) এজন্য আমাদের জমায়েত করেছ? বন্ধুর শানে এমন বেয়াদবী আচরণ আল্লাহ্ বরদাশত করতে পারলেন না। চিরস্থায়ী ঠিকানা তার জাহান্নাম নির্ধারণ করে দিলেন। ফলে সে ঈমানের এ মহা দৌলত হতে বঞ্চিত হল।
নেক আমল সম্পর্কে হাদিস – সমস্ত আরবের বিরোধিতা ও হুজুর (সঃ)-এর দৃঢ়তা
প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ চালাতে লাগলেন প্রিয় নবী (সঃ)।
কুরাইশদের মুর্খতা ও প্রতিমা পূজার অসারতা প্রকাশ হয়ে গেল। কুরাইশগণ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল। সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান মুহাম্মদ (সঃ) আবু তালিবের ভাতীজা, তাঁর সাথে অশালীন আচরণ করার দুঃসাহস নেই কার। কি করবে কুরাইশগণ! কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেল তারা। অবশেষেতারা খাজা আবু তালিবের কাছে এসে অভিযোগ দায়ের করল। তার ভাতীজাকে নতুন ধর্ম প্রচার হতে বিরতরাখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাল।
পরদিন আবু তালিব প্রিয় নবীকে (সঃ) একান্ত সঙ্গপনে, নিরাপায় নিভৃতে নিয়ে কুরাইশদের হীন প্রস্তাব জানালেন। নবী করীম (সঃ) প্রতি উত্তরে বললেন, ওহে আমার প্রাণ প্রিয় চাচাজান। তারা যদি আমার এক হাতে চন্দ্র আর অন্য হাতে সূর্য এনে দেয়। আর এর বিনিময়ে তারা আমার দ্বীন প্রচার করতে বারণ করে, তবুও আমি আমার এ দাওয়াত হতে বিরত হব না।
আবু তালিব যখন নবী করীম (সঃ) এ দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পারলেন, তখন বললেন, ওহে আমার ভাতীজা! তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। আমি সর্বদা তোমার সহযোগীতায় ব্যাপৃত থাকব। আমার জীবদ্দশায় আরব ভূ-খন্ডের কেউ তোমার পথের কণ্টক হতে পারবে না। তাইতো আবু তালিব মৃত্যু পর্যন্ত মহানবীর সাহায্য করে গেছেন। সুখে-দুঃখের সর্বাবস্থায় তিনি মহানবী (সঃ)-এর সাথে ছিলেন।
নেক আমল সম্পর্কে হাদিস – কুরাইশদের দূরভিসন্ধি ও বিপরীত ফল
আবু তালিব রাসূল (সঃ)-এর ছায়া হয়ে গেলেন। কুরাইশদের দুশ্চিন্তা আরও প্রকট হল। এদিকে হজ্জ মওসুম ঘনিয়ে আসছে। তাদের নিদ্রা হারাম হয়ে গেল। তারা ফন্দি আঁটল হজ্জ মওসুমে কাউকে নবী করীম (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে দিবে না। কারণ নবী করীম (সঃ)-এর মায়াবী কথায় তারা নিজেরাই আটকে যায়। আর বাইরের লোক আসলেতো তারা তার বন্ধু হয়ে যাবে এবং তার ধর্ম গ্রহণ করে ফেলবে। তাই তারা মক্কার প্রবেশ দ্বারসমূহে লোক বসিয়ে দিল।
তারা ঘোষণা করতে লাগল, আগন্তুক ব্যক্তিবর্গ সাবধান! মক্কায় রয়েছে এক যাদুকরের অবস্থান। তোমরা তার সাক্ষাৎ হতে বেঁচে থাক। সে পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেয়। আল্লাহর কুদরতে তাদের এই হীন ষড়যন্ত্র রাসূল (সঃ)-এর জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল। ফলে হজ্জে আগন্তুকগণ ছাড়াও সে পথের পথিকদেরও ঐ লোকটিকে দেখার প্রবল আগ্রহ জন্মে গেল এবং দলে দলে মহানবী (সঃ)-এর দরবারে আগমন করল এবং হুজুর (সা)-এর আচার-ব্যবহারে অভিভূত হয়ে পড়ল। অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিল এবং মক্কা নগরীর বাইরেও ইসলামের বাণী প্রচার হতে লাগল।
Read More: নেক আমল বই