নেক আমল সম্পর্কে হাদিস
Table of Contents
নেক আমল, মহান আল্লাহর পরিচয়
নেক আমল সম্পর্কে হাদিস, তিনি সর্বশক্তিমান, অনন্য মহিমায় অদ্বিতীয় । তিনিই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। নিদ্রা-জরা, মৃত্যু, রোগ-শোক কোন কিছুই তাঁহাকে স্পর্শ করতে পারে না। হায়াত ও মউতের মালিক, রিযিকদাতা, আইন এবং বিধানদাতাও একমাত্র তিনি। আমরা যে কথা বলি অথবা সযত্নে মনের কোণে লুক্কায়িত রাখি, তিনি সে সবই অবগত আছেন। তাঁর ক্ষমতার মোকাবিলা করতে পারে, বাধা দিতে পারে বা প্রতিবাদ করতে পারে এমন শক্তি কারও নেই। যে মহান আল্লাহ তাআলার মাঝে উল্লেখিত সব গুণাবলী বিরাজমান, তিনি ছাড়া আর কেইউ মা’বুদ বা এবাদতের যোগ্য হতে পারে না,
আল্লাহর প্রতি ঈমানের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে, মৌখিক স্বীকৃতি ও আন্তরিক বিশ্বাস। অর্থাৎ, কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) মুখে উচ্চারণ ও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা, মুখে এ কথা স্বীকার করা এবং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা যে, যে মহান সত্তা আল্লাহ নামে পরিচিত, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ (প্রভু) নেই।
ঈমানের দাবী হলো-আর সবাইকে বর্জন করে কেবল তাঁর প্রতিই দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপন কর, তাঁকেই ভালবাস, তাঁকেই ভয় কর, তাঁরই কাছে প্রত্যাশা কর, তাঁর কাছেই কামনা কর সর্বাবস্থায় তাঁরই উপর ভরসা কর, সর্বদা মনে রেখো, একদিন তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তোমাদের ভালো বা মন্দ পরিণতি তাঁর ফয়সালার উপরই নির্ভরশীল।
আসমান ও জমীনে সব কিছুই তাঁর অধীন। তিনি কখনও ঘুমান না । আর ঘুমও তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনের সবকিছু তাঁর ক্ষমতার অধীন। কেউ ইচ্ছা করেও তাঁর ক্ষমতার বাইরে যেতে পারে না। এ সম্পর্কে সূরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে-
ان لقوة لله جميعا –
উচ্চারণ ঃ ইন্নাল কুওয়্যাতা লিল্লাহি জামীয়া ।
অর্থ : নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সকল ক্ষমতার মালিক। (বাকারা ১৪৫ )
আল্লাহ পাক যেহেতু সবকিছুর মালিক, অতএব সকল সৃষ্টি একমাত্র তাঁর হুকুম মত চলবে। তাঁরই আনুগত্য করিবে। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর আদেশের মেনে চলতে বাধ্য যেমন আল্লাহ পাক বলেন ঃ
وقد لسلم من فى السموة والارض طوعا وكرها .
উচ্চারণ ঃ ওয়া ক্বাদ আস্লামা মান ফিসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ধি ত্বাওআন ওয়া কারহা ।
অর্থ : আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সবই আল্লাহর নিকট আত্মসম্পর্ন করেছে। (আলে ইমরান -৮৩)
یا قوم اعبد والله ما لكم من اله غيره –
অর্থ : হে আমার জাতি, তোমরা একমাত্র আল্লারই ইবাদত (দাসত্ব) কর । তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ (মাবুদ) নাই ।
এই বিশাল পৃথিবী, চন্দ্র সূর্য, নক্ষত্র, গ্রহ উপগ্রহ বৃক্ষ লতা, মানব দানব, পশু-পাখি, সাগর পাহাড় সবকিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই আল্লাহ তায়ালা । তিনি সর্বশক্তিমান, অনন্ত মহিমায় অদ্বিতীয়।
তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালন কারী। খাওয়া পরা, রোগ-শোক, মৃত্যু কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করিতে পারে না। হায়াত ও মউতের মালিক তিনিই। রিযিকদাতা, আইন এবং বিধানদাতাও একমাত্র তিনি । আমাদের মনে কোণে যে কথা লুক্কায়িত থাকে তিনি সবই জানেন। আর তাঁর ক্ষমতায় বাধা দিতে বা প্রতিবাদ করিতে পারে এমন শক্তিধর আর কেহ নেই। মহান আল্লাহ তা’আলার মাঝে এইসব অসীম গুণাবলী বিদ্যমান এবং তিনি ছাড়া আর কেহই ইলাহা বা এবাদতের যোগ্য নাই ।
এই বিশাল পৃথিবী, চন্দ্র সূর্য, নক্ষত্র, গ্রহ উপগ্রহ বৃক্ষ লতা, মানব দানব, পশু-পাখি, সাগর পাহাড় সবকিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই আল্লাহ তায়ালা । তিনি সর্বশক্তিমান, অনন্ত মহিমায় অদ্বিতীয়। তিনিই সব কিছুর রক্ষাকর্তা ও পালন কারী। খাওয়া পরা, রোগ-শোক, মৃত্যু কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করিতে পারে না। হায়াত ও মউতের মালিক তিনিই। রিযিকদাতা, আইন এবং বিধানদাতাও একমাত্র তিনি । আমাদের মনে কোণে যে কথা লুকায়িত থাকে তিনি সবই জানেন। আর তাঁর ক্ষমতায় বাধা দিতে বা প্রতিবাদ করিতে পারে এমন শক্তিধর আর কেহ নেই। মহান আল্লাহ তা’আলার মাঝে এইসব অসীম গুণাবলী বিদ্যমান এবং তিনি ছাড়া আর কেহই ইলাহা বা এবাদতের যোগ্য নাই।
নেক আমল, আল আসমাউল হুসনা
মহান আল্লাহ্ তা’আলার নাম এবং ফযীলত প্রসঙ্গে কথা সুন্দর এই পুথিবী, চন্দ্র-সূর্য, আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, পাহাড়-পর্বত, গ্রহরাজি, সমুদ্র বনভূমি কিংবা অথবা মানুষ, জীব-জন্তু, গাছ-পালা, প্রাণী আর আমাদের চিন্তা শক্তিরও বেশি দৃশ্য-অদৃশ্যমান এই সব কিছুই একজনের সৃষ্টি। আল্লাহ্ তা’আলা মহাশক্তির অধিকারী। তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নাই । এই আসমান জমীনে ক্ষমতা যা আছে সবই তাঁর আর সকল প্রশংসার প্রাপ্য একমাত্র তিনিই। আল্লাহ্ তা’আলা সূরা আল-বাকারার ২৫৫নং আয়াতে তাঁর পরিচয় দিয়াছেন ।
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সবকিছুর ধারক, বাহক এবং তিনি চিরঞ্জীব। তাঁকে তন্দ্রা কখনও স্পর্শ করিতে পারে না । আসমান এবং জমিনে যা রয়েছে সব কিছুই তাঁর আয়ত্ত্বে । তাঁর অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করবে এমন কে আছে? দৃষ্টির অগ্রভাগে অথবা পিছনে যা কিছু আছে সব বিষয়ে তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞান সীমা হতে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করিতে পারে না, যা তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন। সকল আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে তাঁর সিংহাসন। তাঁর জন্য কখনও কঠিন নহে এইগুলো ধারণ করা। তিনিই সর্বাপেক্ষা এবং সর্বোচ্চ মহান ।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁরই গুণ-কীর্তন করার জন্য। তাঁর আদেশ-নিষেধ মানিয়া চলা এবং সমাজে প্রচার করা। এই কারণেই তিনি তাঁর নিজের বাণীর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ আল কোরআন আমাদেরকে দিয়েছেন। আর এই আল কোরআনের মাঝে আল্লাহ্র বহু পবিত্র নাম উল্লেখ করা আছে।
আল্লাহ্ তা’আলার এই নামসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত –
(১) আল্লাহর সত্ত্বা বা জাতবাচক নাম,
(২) আল্লাহর গুণবাচক নাম ।
(১) আল্লাহর সত্ত্বা বা জাত বাচক নাম : ‘জাত’ শব্দের অর্থ হল প্রকৃত, সত্ত্বা, অস্তিত্ব। আল্লাহ্ তা’আলার জাত বলিতে আল্লাহ্র সত্ত্বাকে বুঝায় । আল্লাহ্ তা’আলার সত্ত্বা প্রকাশ পায় যেই নামে, অন্য কোন অর্থই প্রকাশ পায় না, আল্লাহ ব্যতীত অন্য আর কাহারো সম্পর্কে সেই সকল নাম প্রযোজ্য নহে, তাই আল্লাহর ‘জাত’ বা সত্ত্বাবাচক নাম ।
(২) আল্লাহ্ তা’আলার গুণবাচক নাম ঃ যেই সকল নামে আল্লাহ্ তা’আলার গুণ বা ক্ষমতা ইত্যাদি প্রকাশ পায়, এটাই হলো গুণবাচক নাম। মহান আল্লাহ্ তা’আলার এই গুণবাচক নামের সহিত সামঞ্জস্যশীল নাম অপর মাখলুকাতেরও থাকিতে পারে অথবা প্রযোজ্য হইতে পারে ।
আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, মালিক রিযিকদাতা, বিধানদাতা, এক কথায় তিনি সমগ্র আসমান জমিনের মালিক ও পরিচালক এবং তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন কিছুই সংঘঠিত হয় না। তাঁহার কোন অংশীদার নেই, তিনি কাউকে জন্ম দেনও নাই সে কারও হতে জন্ম নেনও নাই। তাঁহার সমান কেউ নাই । তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আল্লাহ বুঝাতে শুধু মহান আল্লাহ্ তা’আলাকে বুঝায় তাই সত্য।
আল্লাহ বুঝাতে আমরা এক অদ্বিতীয় সত্ত্বাকে বুঝি। যাহাকে দেখা যায় না কিন্তু বিপদে ডাকিলে তিনি সাড়া দেন। ঘোর বিপদে যখন দুনিয়ার কেউই সাহায্য-সহযোগীতা করিবার ক্ষমতা রাখে না, তখন তিনিই এই বিপদের সময় এগিয়ে আসেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করেন । আল্লাহ পাকের গুণ বলে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে তাঁর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে।
আসমান ও জমীনে সব কিছুই তাঁহার আয়ত্বে । কেউ ইচ্ছা করিলেও তাঁহার অধীনের বাহিরে যাইতে পারে না। এ সম্পর্কে সূরা বাকারায় ১৪৫ নং আয়াতে
বর্ণিত হয়েছে-
لن لقوة لله جميعا –
আরবি উচ্চারণ : ইন্নাল কুওয়্যাতা লিল্লাহি জামীয়া ।
অর্থ : নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সকল ক্ষমতার মালিক ।
যেহেতু আল্লাহ পাক সবকিছুর মালিক, অতএব সকল সৃষ্টি একমাত্র তাঁর হুকুম মত চলিবে। তাঁরই আনুগত্য করিবে । ইচ্ছায় হউক আর অনিচ্ছায় হউক আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ মেনে চলতে বাধ্য। যেমন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন
বলেন :
وقر لسلم من فى السمو والارض طوعا وكرها .
আরবি উচ্চারণ ঃ ওয়াক্বাদ আস্লামা মান ফিসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ধি ত্বাওআও ওয়াকারহা ।
বাংলা অর্থ ঃ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় সবই আল্লাহর নিকট আত্মসম্পর্ন করেছে। (আলে ইমরান -৮৩)
يا قوم اعبد والله ما لكم من اله غيره –
উচ্চারণ : ইয়া কাওমিইবুদুল্লাহা মালাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহ্ ।
অর্থ : হে আমার জাতি, তোমরা একমাত্র আল্লারই ইবাদত (দাসত্ব) কর । তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ (মাবুদ) নাই ।
নেক আমল, ইসলামের পরিচয়
আল্লাহ্ তা’আলার নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম । তাই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন ইসলাম সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে জলদগম্ভীর স্বরে বলেন-
উচ্চারণ : ইন্নাদ্ দ্বীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম ।
অর্থাৎ-“মহান করুণার আধার আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর নিকট মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” কেননা কেবল ইসলামই দিতে পারে সঠিক পথের সন্ধান, যে পথে চললে আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আরবী ইসলাম শব্দটি “সালমুন” ধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ হল শান্তি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। অভিধানবেত্তাগণ ইসলাম শব্দের অভিধানগত অর্থ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন, ইসলাম শব্দের অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা ও মুসলমান হওয়া ।
পারিভাষিক অর্থ-সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করা এবং মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান করা ও তদনুযায়ী জীবন গঠন করা। একথা বাস্তব সত্য যে, ইসলামের প্রতিটি নিয়ম-নীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে জীবনের কোন পদেই বাধা আসবে না, বরং ইহকাল ও পরকালে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করা যাবে। কেননা, ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে জীবন পরিচালনা করবে তা ইসলামে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথম নবী ও মানব সত্যের দিশারী হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যুগে যুগে, দেশে দেশে এ মহাপবিত্র ইসলাম তথা তার মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং সবশেষে বিশ্ব মানবজাতির হেদায়াতের জন্য তথা তাঁর মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠার সার্বিক দায়িত্বসহ নিখিল বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবী-রাসূল ইসলাম ধর্মের অমীয় বাণীসমূহ সারা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে গিয়ে বহু বাধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও পবিত্র ইসলামের প্রচারকার্য চালিয়ে গিয়েছেন ।
নেক আমল, আল কোরআন
মহান আল্লাহ্ তা’আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জীবনের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়সমূহ রাসূলগণের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের দ্বারা মানুষদেরকে শিক্ষাদান করেছেন। এ নির্দেশানুসারে যারা পরিচালিত হয়েছেন তাঁরা অবশ্যই জাগতিক জীবনে উন্নতি এবং পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হয়েছেন । আর যারা এর অবাধ্যতা করেছে তারা হয়েছে পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত ও চির জাহান্নামী। আসমানী কিতাব মতান্তরে অনেকই আছে, তন্মধ্যে চারখানা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এ চারখানা এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী মহাপবিত্র “ফুরক্কান” যা মহাপবিত্র কোরআন হিসেবে আমাদের নিকট পরিচিত। এ মহাপবিত্র কোরআনের সত্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক অগণিত প্রমাণ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ।
পবিত্র কোরআনের প্রথমেই ঘোষণা হয়েছে—“এটি এমন একটি কিতাব (যা আল্লাহ্র পক্ষ হতে এসেছে) এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি খোদাভীরুগণের জন্য পথ নির্দেশক।”
খোদাভীরু মুসলমানগণ এ পবিত্র কোরআনের নির্দেশানুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনায় ব্রতী হতে লাগলেন। তাদের সঙ্গী-সাথী অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনেরা তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ শুরু করল যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বানানো কথাসাহিত্য মাত্র এটি কোন মতেই আল্লাহর কালাম হতে পারে না। অমুসলিমদের এসব কটূক্তির জবাবে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআন হাকীমে ঘোষণা করলেন “আর যদি আমার নির্বাচিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ মহাপবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনের উপর সন্দেহ করে থাক, তাহলে তোমরা এ সূরার অনুরূপ একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো। আর এজন্য আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের ভ্রান্ত উপাস্যদেরকে তোমাদের সাহায্য করার জন্য ডাক, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।”
আল্লাহ্র সৃষ্টজীব মানুষের পক্ষে কোনভাবেই পবিত্র কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা একটি সূরা তৈরি করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন – “তোমরা কোন মতেই কোরআনের অনুরূপ একটি আয়াত কিংবা সূরা তৈরি করতে পারবে না।”
তদানীন্তন আরব দেশের একজন বিখ্যাত অমুসলিম কবি কোরআন শরীফের আয়াত ও সূরার অনুরূপ বাক্য-বিন্যাসের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা সাধনা করে ব্যর্থ হয়ে পবিত্র কোরআনের যথার্থতা এবং সত্যতা স্বীকার করে বলেছিলেন—এ কোরআন মজিদ কোন মানুষের বানানো কালাম নয়। কারণ এ কোরআন যদি কোন মানুষ কর্তৃক বানানো কালাম হত, তাহলে কোরআনের অনুরূপ আয়াত কিংবা সূরা বানানো মানুষের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব হত। এটি যেহেতু এক আল্লাহ্র প্রেরিত বাণী সেহেতু এতে হস্তক্ষেপ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় ।
নেক আমল, পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত
পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃতি আলোচিত হল ।
- হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে দশটি নেকী পাবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। সুতরাং এ তিনটি অক্ষর পাঠ করলে ত্রিশটি নেকী
পাওয়া যাবে।” - হযরত ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ আছে- “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে।” (বুখারী শরীফ)
- হযরত আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন – “রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তোমরা ঐ জিনিস হতে অনেক মূল্যবান আর কোন জিনিস পাবে না, যা স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র জবান হতে বের হয়েছে। তথা আল-কোরআন।”
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন যে – পবিত্র কোরআনের মর্যাদায় অনেক লোক মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে, আর কোরআন শরীফের অমর্যাদার কারণে অধিকাংশ লোক নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। (মুসলিম শরীফ)
- পবিত্র হাদীস শরীফে আরও উল্লেখ আছে—“যে ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআন মজিদ পাঠ করে এবং তদানুযায়ী আমল করে, কিয়ামাতের দিন (পুরস্কার স্বরূপ) তার মাতা-পিতাকে সূর্যের আলো অপেক্ষাও জ্যোতির্ময় টুপি পরিধান করান হবে।”
- যারা কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে জানে না তাদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে – “যার অন্তরে কোরআনের কোন অংশ নেই, সে ব্যক্তি বিরান (জন-মানবহীন) ঘরের মত।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করেনি বা কোরআন পড়তে জানে না সে অনুপযুক্ত লোক। সুতরাং তার জীবনের কোন মূল্য নেই।
- তিরমীযি শরীফের হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে উদ্ধৃত এক হাদীসে বর্ণিত আছে—নফল ইবাদাতসমূহের মধ্যে মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াতের ছাওয়াব অনেক বেশি। সুতরাং তোমরা সর্বদা পবিত্র কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করবে। কেননা হাশরের মাঠে পবিত্র কোরআন মজিদ তার পাঠকের জন্য (মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট) সুপারিশ করবে ।
অন্য এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—মানুষের মৃত্যুর পর যখন তাকে কবরে দাফন করা হবে তখন মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন করার সময়ে মৃতের পক্ষ হতে একজন যুবক বলবে ইনি আমার বন্ধু! আমি তাঁকে একাকী ভাবে ছেড়ে যেতে পারি না। কেননা দুনিয়াতে থাকাকালীন সময়ে এ ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করেছিল আর এখন আমিই তার ঐ পবিত্র কোরআন। সুতরাং আপনাদের প্রশ্ন আপনারা করতে পারেন, আনি কিন্তু আমার এ বন্ধুকে বেহেশতে না পৌঁছায়ে তাঁর নিকট হতে বিদায় নিতে পারব না।
এরপর মৃতব্যক্তির নিকট আত্মপরিচয় দিয়ে বলবে, আমি আপনার দুনিয়াতে পাঠকারী ঐ কোরআন যা আপনি কখনও উচ্চৈঃস্বরে কখনও নিম্নস্বরে পাঠ করতেন। এখন আপনি নিশ্চিস্ত থাকুন, মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের জন্য আপনার কোন ভয় নেই। এরপর ফিরিশতাদের প্রশ্নের পর তাঁকে বেহেশূতের পোশাক ও বিছানা দান করা হবে। যাঁর সাথে দুনিয়ার কোন কিছুর তুলনা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। (হাকেম) মহান করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের সকলকেই কোরআন মজিদ পাঠ করে সকল নি’আমাতসমূহ অর্জন করার তৌফিক দান করুন।
উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল, কোরআন মজীদ পাঠ করলে আল্লাহ এবং রাসূলের প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। যে কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়, যে কোরআন শিক্ষা এবং ‘আমলের ফলে মাতা-পিতাকে নূরের টুপি দান করা হবে, কবর, হাশর ও মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করে ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভের বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। সাধ্য থাকতে কখনও সে কোরআন পাঠে অবহেলা করা সমীচীন নয়। তাই সকলেরই উচিত হাতে সময় থাকতে এখনও কোরআন মজিদ সহীহ-শুদ্ধভাবে পাঠের অভ্যাস করে নিজের জীবনকে সুন্দর-সুশৃংখলভাবে সাজানোর চেষ্টা করা।
Pingback: আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্র নামসমূহের আমল