শরীয়তের হুকুমের বর্ণনা – নেক আমল বই #12

শরীয়তের হুকুমের বর্ণনা – নেক আমল বই

শরীয়তের হুকুমের বর্ণনা

শরীয়তের হুকুমের বর্ণনা

কুরআন ও হাদীসে যে সকল কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং যে সকল কাজ করতে নিষেধ করেছে তাকে শরীয়তের হুকুম বলে। এটা মোট আট প্রকার। যথাঃ (১) ফরজ (২) ওয়াজিব (৩) সুন্নত (৪) নফল (৫) মুস্তাহাব (৬) হারাম (৭) মাকরুহ এবং (৮) মোবাহ্ বা জায়েজ ।

ফরজের বিবরণ
আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে যে সকল কাজ করার জন্য বান্দার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে ফরজ বলা হয়। ফরজ তরক কারীকে ফাসিক বলা হয়। ফাসিকের জন্য আখেরাতে রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি। ফরজের অস্বীকারকারী কাফের। এ ফরজটা আবার দু’ভাগ বিভক্ত। যথাঃ (১) ফরজে আইন, (২) ফরজে কেফায়াহ্।

ফরজে আইন
যে হুকুম সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য এবং প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে আদায় করতে হয়। অন্যথায় গোনাহগার হবে। হাঃ নামাজ, রোযা হজ্জ জাকাত ইত্যাদি ৷

ফরজে কেফায়াহ
যে হুকুম সমস্ত মানুষের জন্য প্রয়োজ্য কিন্তু তাদের থেকে কিছু লোকে আদায় করে ফেললেই গোনাহ্ হতে পরিত্রান পেয়ে যাবে। আর যদি কেউ আদায় না করে তবে সকলেই সমভাবে গোনাগার হবে। যেমনঃ জানাযায় নামাজ, জেহাদ, তাবলীগ ইত্যাদি ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভুক্ত।

ওয়াজিবের বিবরণ
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে কোন কাজের সুস্পষ্ট হুকুম আসাকে বলে। ফরজের ন্যায় এটাও অবশ্যই পালনীয়। তবে ফরজ ও ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্য হল ফরজকে অস্বীকার করলে কাফের হবে। আর ওয়াজিবকে অস্বীকার করলে কাফের হবে না, বরং ফাসেক হবে। যথা বিতরের নামাজ উভয় ঈদের নামাজ, কুরবানী করা, ফেৎনা প্রদান ইত্যাদি ।

সুন্নতের বিবরণ
যেসব কাজ নবী করীম (স) নিজ থেকে করেছেন এবং সাহাবীগণ ও করেছেন তাকে সুন্নত বলা হয়। সুন্নত দু প্রকার : (১) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ (2) সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্ বা যায়েদাহ্ ।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ
যে কাজ নবী করীম (স) নিয়মিতভাবে করেছেন । কোন কারণ ছাড়া তরক করেননি এবং সাহাবায়ে কেরামদের কেউ তা করার জন্য আদেশ করেছেন সাহাবাগণ ও তা নিয়মিত আদায় করেছেন এবং কোন কারণ ছাড়া তা তরক করেননি গুরুত্বের দিক থেকে এটা ওয়াজিবের সমমানের। কারণ ছাড়া এটা তরক করলে গোনাগার হবে। যথা আযান, ইকামত, ফজরের পূর্বে দু রাকাত সুন্নাত ইত্যাদি।

সুন্নাতে যায়েদাহ
যে সব কাজ নবী করীম (স) ও সাহাবায়ে কেরামগণ করতেন কিন্তু অনিয়মিত ভাবে এবং অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াও তা পরিত্যাগ করতেন তাকে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্ বা যায়েদাহ্ বলে। এগুলো করলে অনেক ছওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু ছেড়ে দিলে কোন গোনাহ্ হবে না। যথাঃ আছরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ ।

মুস্তাহাবের বিবরণ
যে সব কাজ মহানবী (স) ও তাঁর সাহাবাগণ কখন করেছেন কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তা করেননি তাকে মুস্তাহাব বলা হয়। এগুলোতে ছওয়াব আছে, কিন্তু না করলে কোন গোনাহ্ নেই । যথাঃ ঘুমানোর পূর্বে অজু করা কিংবা সর্বদা পবিত্র থাকার নিয়াতে অজু করা ইত্যাদি।

নফলের বিবরণ
নফল মুস্তাহাবের মতই। এগুলো করলে ছওয়াব পাওয় যায়। কিন্তু না করলে কোন গোনাহ্ নেই ।

হারামের বিবরণ
যে সব কাজের ব্যাপারে শরীয়ত সুস্পষ্ট ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে তাকে হারাম বলে। হারাম কাজ করলে ফাসিক ও গোনাহগার হবে। কিন্তু হারামকে অস্বীকার কিংবা হালাল মনে করলে সে কাফির হয়ে যাবে। যথা ঃ চুরি করা, ডাকাতি করা, ছিনতাই করা, শুকরের গোশত খাওয়া, অঙ্গিকার ভেঙ্গে দেয়া মা-বাবার নাফরমান হওয়া, স্বামীর হক নষ্ট করা, নামাজ ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত।

মাকরুহের বিবরণ
কোরআনে করীমের অস্পষ্ট আয়াত দ্বারা যে সব কাজকে নিষেধ করা হয়েছে তাকে মাকরুহ বলে । মাকরূহ আবার দু প্রকার। যথাঃ (১) মাকরুহে তাহরীমী (২) মাকরুহে তানযিহী ।

মাকরুহে তাহরীমী
এটা প্রায় হারামের সমপর্যায়, তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হল৷ মাকরুহের তাহরীমীকে অস্বীকার করলে বা হালাল মনে করলে সে কাফের বা মুরতাদ হবে না, বরং ফাসিক হবে, তবে মাকরুহে তাহরীমী কাজগুলো আদায় করলে গুনাগার হবে ।

মাকরুহে তানযিনী
এর থেকে বেঁচে থাকাটা ভাল ও বাঞ্ছনীয়। তবে হঠাৎ করে ফেললে কোন গোনাহ্ হবে ।

মুবাহের বিবরণ
মুবাহ্ এমন সব কাজকে বলা হয় যেগুলোর ব্যাপারে শরীয়তের কোন বিধিনিষেধ নেই। তা করলেও ছওয়াব নেই আর না করলেও গোনাহ নেই বা কোন বিধি নিষেধ নেই । যথাঃ পানাহার করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা ইত্যাদি তবে এ কাজগুলো যদি ভাল নিয়তে করা হয়। তখন নিয়তের কারণে তাতে ছওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি খারাপ নিয়তে করা হয় তবে গোনাহগার হবে। যথাঃ কেউ যদি পানাহার করে বেশী বেশী ইবাদত করার জন্য তবে এতে তার ছওয়াব হবে।

আর যদি ভাল খাদ্য গ্রহণ করে, চুরি ডাকাতি, দেশ ভ্রমণ করে তাবলীগে ইসলাম করার জন্য তবে তাতে ছওয়াব হবে আর নাচ ছিনতাই কিংবা খেলাধুলা করার জন্য তবে তাতে গোনাহ হবে। তদ্রূপ কেউ যদি গান বা খেলা দেখার জন্য ভ্রমণ করে তবে তাতে গোনাহ হবে।

নামাজ পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় কতিপয় সূরা
সূরা ফাতেহা:
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আর রাহমানির রাহীম, মালিকিইয়াও মিদ্দীন, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস তাঈন, ইহদিনাছ ছিরাতাল মুস্তাকিম। ছিরাত্বাল্লাজীনা আআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম, অয়্যালাদ্ দোয়াল্লীন। আমীন!

অর্থ : সকল প্রশংসা সৃষ্টিজগতের প্রতি পালক আল্লাহর জন্যই । যিনি পরম করুণাময় ও দয়ালু। যিনি প্রতিদান দিবসের মালিক আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল সোজা পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথে যাদেরকে আপনি অসীম নেয়ামত দিয়ে সৌভাগ্য মণ্ডিত করেছেন। আর তাদের পথে নহে যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।

সুরায়ে নাস:
উচ্চারণ : ক্বল আউ’যু বিরাববিন্নার্স, মালির্কনীন্নার্স, ইলাহিন্নার্স। মিনশাররিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস, আল্লাজী ইউ ওয়াস উয়ীসু ফীছুদুনিরন্নাস। মিনাল
জিন্নাতি ওয়ান্নাস ।

অর্থ : (হে নবী) আপনি বলুন যে, আমি মানুষের প্রতিপালক প্রভুর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মানুষের বাদশাহর সাহায্য প্রার্থনা করছি, মানুষের ইবাদতের উপযুক্ত মাবুদের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কু-মন্ত্রনা দানকারি শয়তানের অপকারিতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যে মানুষের হৃদয়ে কু-মন্ত্রনা দেয় জ্বীন জাতি ও মানব জাতি হতে। অর্থাৎ সেই কুমন্ত্রনা দানকারী মানুষ হউক বা জ্বীন হউক আমি তার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

সূরায়ে ফালাক:
উচ্চারণ ঃ ক্বল আউ’যু বিরাববিল ফালাক্ব। মিনশাররিমা খালাক। ওয়ামিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল উক্বাদ্ ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ্ ।

অর্থ : (হে নবী) আপনি বলুন আমি প্রভাতের মালিকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সকল সৃষ্টি জীবের অপকারিতা হতে । আর অন্ধকার রজনীর অপকারিতা হতে যখন তা সমাগত হয় । আর গ্রন্তিতে ফুৎকারিনী নারীদের অপকারিতা হতে এবং হিংসুকের অপকারিতা হতে ।

সূরায়ে ইখলাছ:
উচ্চারণ : ক্বলহুওয়াল্লা-হু আহাদ । আল্লাহুচ্ছামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ূ লাদ ওয়ালাম ইয়াকুল-লাহু- কুফুওয়ান আহাদ ।
অর্থ ঃ (হে নবী) আপনি বলুন তিনি আল্লাহ এক । আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনিও কারো থেকে জন্ম নেননি এবং কেহই তার
সমকক্ষ নহে।

সূরায়ে লাহাব:
উচ্চারণ ঃ তাব্বাত ইয়াদা আবীলাহাবিন ওয়াতাববা, মা-আগনা আনহু মালুহ ওয়ামা-কাসাব, সাইয়াছলা নারান জাতা লাহাবিওঁ ওয়ামারাআতুহু। হাম্মা লাতাল
হাতাব, ফী-জীদিহা হাবলুম মিম্ মাসাদ।

অর্থ : ধ্বংস হউক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হউক সে নিজেই তার ধন সম্পদ তার কাজে আসেনি এবং সে যা উপার্জন করেছে তাও তার কাজে আসেনি। অচিরেই সে এবং তার কাষ্ট বহন কারিণী স্ত্রী শিখা নিক্ষেপ কারিনী উত্তপ্ত অগ্নিতে প্রবশ করবে। আর তার স্ত্রীর গুণ্ডদেশে থাকবে মজবুত ও শক্ত ভাবে পাকানো একটি রজ্জু বা রশি।

সূরায়ে নাছর:
উচ্চারণ : ইযা-জাআ নাছরুল্লাহি ওয়ালফাতহু। ওয়ারাআইতান না-সা ইয়াদখুলূনা ফী-দী-নিল্লা আফওয়াজা। ফাসাবিহ্ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াছতাগ ফিরহু। ইন্নাহু কা-না তাউওয়া-বা।

অর্থ : যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং আপনি লোকজন কে দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হতে দেখেছেন। সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করুন এবং কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন নিশ্চয় তিনি তওবা গ্রহণকারী।

সূরায়ে কাফিরূন:
উচ্চারণ : ক্বলইয়া-আ’ইয়্যহাল কাফিরূনা লা-আ’বুদু-মা-তা’বুদূন। ওয়ালা আনতুম আ-বিবূনা মাআবুদ। ওয়ালা-আনা আ’বিদুম মা-আবাততুম। ওয়ালা-আন্তুম আ-বিদুনা মা-আবুদু। লাকুম দী-নুকুম ওয়ালিয়াদীন।

অর্থ ঃ (হে নবী) আপনি বলুন ওহে কাফের সম্প্রদায়! তোমরা যে, দেবতার উপাসনা করছ আমি তার উপাসক নই এবং আমি যে সত্তার উপাসনা করছি, তোমরাও সে সত্তার উপাসক নও। না আমি তোমাদের উপাসকদের ইবাদত করব, না তোমরা আমার উপাস্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে। তোমরা
তোমাদের প্রতিফল প্রাপ্ত হবে এবং আমরা আমাদের প্রতিফল প্রাপ্ত হব।

সূরায়ে কাওছার:
উচ্চারণ : ইন্না আ’খতাইনা কালকাওছার। ফাছাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার ইন্না শা-নিআকা হুয়াল আবতার ।

অর্থ ঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউছার দান করছি। সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড়ুন ও কুরবানী করুন। নিঃসন্দেহে যে আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী তারই লেজ কাটা। অর্থাৎ আপনার শত্রু নাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে । আর আপনার নাম কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে ।

সূরায়ে মাউন:
উচ্চারণ : আরাআইতাল্লাজী-ইউকাজ্জিবু বিদ্দীন। ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু’উল ইয়াতীম। ওয়ালা-ইয়াহুদ্দু আলা-ত্বোআ’মিল মিসকীন। ফাওয়াইলুল্লিল্ মুছাল্লীনাল্লাযী না হুম আন ছালা-তিহিম সা-হুন। আল্লাযীনা হুম্ ইয়ূরা-উনা ওয়ায়ামনাঊনাল মা-ঊন ।

অর্থ : আপনি কি জানেন না ঐ সকল লোকদের কথা যারা কিয়ামতকে বা বিচার দিবসকে অস্বীকার আর ইয়াতীমকে গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আর মিসকীনকে অন্ন দানে উৎসাহিত করে না। অতএব এ সকল নামাজীর জন্য অতিশয় অনিষ্ট রয়েছে, যারা স্বীয় নামাজে অমনোযোগী থাকে এবং যারা লৌকিকতা বা লোক দেখানর জন্য করে এবং গৃহ কর্মের ব্যবহার উপযোগী সাধারণ সামগ্রী ধার দিতে নিষেধ করে ।

সূরায়ে কোরায়শ:
উচ্চারণ ঃ লিঙ্গ-লা-ফি কোরাইশিন্ ই-লা-ফিহিম রিহলাতাশ ই-লা-ফিহিম রিলাতাশ্ শিতা-ই ওয়াচ্ছাইফ । ফালইয়া’বুদ রাব্বা হা-যাল্বাইতল্ লাজী-আত্‌ আমাহুম মিনজউও ওয়া আ-মানাহুম মিন খাউফ্ ।

অর্থ : কুরাইশদের আসক্তির কারণে তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মকারে সফল করার অতঃপর তারা যেন এ ঘরের প্রতি পালকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত কালীন খাদ্য দান করেছেন। আর দিয়েছেন তাদেরকে ভয় ভীতি হতে নিরাপত্তা।

সূরায়ে ফীল:
উচ্চারণ : আলাম তারা কাইফা ফাআলা রাব্বুকা বি আছহাবিল ফীল । আলামইয়াজ আল কাইদাহুম ফী-দালীলিওঁ ওয়া আরসালা আলাইহিম্ ত্বাইরান আবা’বীল তারমী-হিম বিহিজা’রাতিম মিন্ সিজ্জীল । ফাজাআলাহুম কাআছছিম্‌ মা’কুল।

অর্থ : হে মুহাম্মদ (স) আপনি কি জানেন না আপনার প্রতিপালক হস্তী বাহিনীর সাথে কি আচরণ করেছেন, তাদের হীন ও কূট কৌশলকে কি ব্যর্থ করে দেননি? আর তাদের উপর প্রেরণ করলেন আব্বাবিল পাখি, যারা তাদের উপর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন । অতঃপর আল্লাহ্ তায়লা তাদেরকে ভক্ষিত খোসার ন্যায় করে দিয়েছেন।

সূরায়ে হুমাঝা:
উচ্চারণ : ওয়াইলুললিকুল্লি হুমাঝাতিল লুমাঝাহ্ । আল্লাজী জামাআ মালাঁ ওয়াআদ্দাদাস্। ইয়াহ্সাবু আন্না মালাহু আখলাদাহ্ কাল্লা-লায়ূম বাজান্না ফিলহুতামাহ্ । ওয়াআদরাকা মাল হুতামাহ্। নারুল্লাহিল মু’কাদাতুল্লাতি তাত্তালিউ আ’লাল আফয়িদাহ্ । ইন্নাঁ হা আ’লাইহিম মু’ছাদাহ্ পিআমাদিমঁ মুমাদ্দাদাহ্ ।

অর্থ : প্রত্যেক পশ্চাতে নিন্দাকারীও সম্মুখে দোষারোপ কারীর জন্য আক্ষেপ যারা সম্পদ জমা করেও বার বার গননা করে। সে ধারণা করে যে, তার সম্পদ সর্বদা স্থায়ী থাকবে। কখনও নয় সে হুত্বামাহ্ দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। আপনি কি জানেন হুতামাহ্ কি? আল্লাহর প্রজ্জলিত আগুন, যা তার হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় ইহা তাদের উপর বেঁধে দেয়া হবে বড় বড় খুঁটিতে।

সূরায়ে আছর:
উচ্চারণ : ওয়াল আছরি ইন্নাল ইনসানা লাফী খুসরিন ইল্লাল্লাজিনা আ-মানু ওয়াআ’মিলুছ চোয়ালিহাতি ওয়াতা ওয়াছওবিল হাক্কী, ওয়াতাওয়া ছওবিছ ছবরি।

অর্থ : কালের শপথ, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ, তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে (আল্লাহও তার রাসূলের উপর) এবং সৎকাজ করেছে, আর পরস্পর পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্য ধারণের জন্য উপদেশ দিয়েছে তারা নয় ।

সূরায়ে তাকাসুর:
উচ্চারণ : আলহা-কু মুত্তাকা ছুর হাত্তা ঝুরতুমুল মাক্বাবিরা। কাল্লা সাওফা তা’লামুনা ছুম্মা কাল্লাসাওফা তা’লামুন। কাল্লালাও তা’লামুনা ইলমালইয়া ক্বিন, লাতারা উন্নাল জাহীম। ছুম্মা লাতারা উন্নাহা আইনাল ইয়াক্বীন। ছুম্মাতাসুস আলুন্না ইয়াও মায়িজিন আনিন নাঈম ।

অর্থ : ধন-রত্নের প্রাচুর্য তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা সাক্ষাৎ করবে কবরের। কখন নয়। অচিরেই তোমরা বিশ্বাসের সাথে জানতে পারবে! তোমরা অবশ্য দোযখ দেখতে পাবে তোমরা তা অবশ্যই চাক্ষুস দেখতে পাবে। অতঃপর সেদিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

সূরায়ে কারিআহ:
উচ্চারণ : আলক্বা-রিআ’তু মালক্বারিআহ্ ওযামা আদরাকা-কা মালক্করিআহ্ ইয়াউমা ইয়াকুনন্নাসু কাল ফারাশিল মাবছুছ। ওয়াতাকুনুল জিবালু কাল ইলি মান ফুশ৷ ফাআম্মামান ছাকুলাত মাওয়াঝীনুহু, ফাহুয়া ফীঈশাতির রাদিয়াহ, ওয়াআম্মাঁমান খাফাত মাওয়াঝীনুহু ফাউম্মুহু হা-উয়ীয়াহ্ ওমা-আদরাকা মা-হিয়াহ্
না-রুন হামিয়াহ্।

অর্থ : আঘাত কারী বস্তু! আঘাতকারী বস্তু কি? আঘাতকারী বস্তু সম্পর্কে আপনি জানেন কি? যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায় আর পাহাড় পর্বত হবে ধুলি রঙ্গিন পশমের মত। অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে, আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া দোযখ। আপনি কি জানেন? তা কি? প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ।

সূরায় আ’দিয়াত:
উচ্চারণ : ওয়াল আ’দিয়াতি দবহানঁ ফাল মুরিয়াতি ক্বাদহানঁ ফার মুগীরাতি ছুবহা। ফাআছারনাবিহী নাকআ ফাওয়াসান্ত্বনা বিহী জামআ ইন্নাল ইনঁসানা লি রাব্বিহী লাকানুদ । ওয়া ইন্নাহুঁ আলা জারিকা লাশাহীদ ওয়া ইন্নাঁহু লিহুববিল খাইরি লাশাদীদ, আফালা ইয়া লামু ইজা বু’ছিরা মাফিল ক্বুবূর। ওয়া হুছছিলা মা-ফিচ্ছদুর, ইন্না রাব্বাহুম বিহিম ইয়ামায়িজিল লা খাবীর।

অর্থঃ শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে চলমান অশ্ব সমূহের অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছিন্নক অশ্বসমূহের, অতঃপর প্রভাত কালে আক্রমনকারী অশ্ব সমূহের ও গোধূলী সময়ে ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে অতঃপর যারা শত্রুদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, নিশ্চয় মানুষ তার পালন কর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে অবশ্য এ বিষয়ে অবহিত এবং সে নিশ্চয় ধন-সম্পদের ভালবাসায় মত্ত। সে কি জানেনা? যখন কবরে যা কিছু রয়েছে, তাকে উঠানো হবে, এবং মানুষের হৃদয়ে যা কিছু রয়েছে তা প্রকাশ হয়ে যাবে নিশ্চয় তাদের প্রতি পালক তাদের সম্পর্কে সে সেদিন অবহিত থাকবেন।

সূরায়ে যিলঝাল
اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ بسم الله الر
اذَا زُلْزِلَتِ الأَرْضِ زِلْزَالَهَا وَاَخْرَجَتِ الأَرْضِ أَثْقَالَهَا أَخْبَارَهَا بِأَنَّ رَبَّكَ
وَقَالَ الاِنْسانَ مَالَهَا – يوم
انَّا لِبُرُوا صدر الناس ئذ أوحى لها يومـ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَاهُ وَمَـ أعمالهم فمن يعمل مثْقَالَ يعْمَلْ مثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرايره
উচ্চারণ : ইজাঝুল ঝিলাতিল আরদু ঝিলজালাহা, ওয়া আখরাজাতিল আরদু আছক্কালাহা ওয়া ক্বালাল ইনসানু মালাহি, ইয়াওমায়িজিনঁ তুহাদ্দিছু আখবরাহা- বিআন্না রাব্বানা আউহা-লাহা ইয়াওমায়িজিনঁ ইয়াছ দুরুনঁ নাছু আশততালাল লিয়ুরাউ আ’মালাহুম, ফামাইয়ামাল মিছক্কালা জাররা তিন খায়রাইঁ য়ারাহ্, ওয়ামাইঁয়া’মাল মিছকালা জাররাতিনঁ শাররাইঁয়ারাহ।

অর্থ ঃ যখন পৃথিবী স্বীয় কম্পনে প্রবল ভাবে প্রকম্পিত হবে এবং পৃথিবী তার ধনরত্বকে বের করে দিবে এবং মানুষেরা বলবে যে এর কি হল? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করে দিবে। কেননা তোমার পালনকর্তা সেদিন তাকে আদেশ করবেন সে দিন লোকেরা দলে দলে প্রকাশ পাবে স্বীয় আমল দেখার জন্য। সুতরাং যে অনুপরিমাণ ভাল কাজ করবে সে তা পাবে আর যে সামান্যতম খারাপ কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে ।

সূরায়ে বায়্যিনাহ:
উচ্চারণ : লামইয়াকুনিল্লাজীনা কাফারু মিন আহলিল কিতাবী ওয়াল মুশরিকীনা, মুনফাকীনা হাত্তা তা, তিয়াহুমুল বাইয়িনাহ্ রাছুলুম মিনাল্লাহি ইয়াত লু ছুহাফাম মুত্বাহা হারাহ্ ফীহা কুতুবুন ক্বাইয়িমাহ্ ওয়ামা তাফাররাকা ল্লাজিনা উতুল কিতাবা ইল্লামিমঁ বাদি মা-জা আতহুমুল বাইয়ানাহ্ ওয়ামা উমিরু ইল্লালীয়া বুদুল্লাহা মুখলিছীনা লাহুদ্দীনুল হুনাফাআ ওয়ুক্বিমুছচ্ছালাতা ওয়া য়ুতুয্য্কাতা ওয়াজালিকা দিনুল ক্বাইয়িমাহ, ইন্নাল্লাজীনা কাফারু মিন আহলিল কিতাবি ওয়াল মুশরিকীনা ফী নারি জাহান্নামা খালিদীনা ফীহা। উলাইকা হুম শাররুল বারিয়্যাহ, ইন্নাল্লাজীনা আ-মানু ওয়া আ’মিলুচ্ছালিহা-তি উলাইকাহুম খাইরুল বায়্যিাহ্ জাঝা উহুম ইন্দা রাববিহিম জান্নাতু আদুনিনঁ তাজরী মিনঁ তাহতিহাল আনহার খালিদ্বীনা ফীহা আবাদা । রাযিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদু আনহু। জারিকা লিমান খাশিয়া রাব্বাহ ।

অর্থ : আহলে কিতাব ও মুশরিক থেকে যারা সত্য প্রত্যাখান করে ছিল, তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট আসার পূর্ব পর্যন্ত কুফর হতে কখন প্রত্যাবর্তনকারী ছিল না আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত দূত যিনি তাদেরকে পবিত্র ছহীফা পড়ে ওনাতেন, যাতে লিপিবদ্ধ ছিল সঠিক বিষয়াবলী আর যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছিল তারা স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরেই বিভক্ত হয়ে গেল। অথচ তাদেরকে একনিষ্ঠ হয়ে অনাহার ইবাদত করারই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং জাকাদ প্রদান করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর এটাই তো সরল সঠিক পন্থা, নিশ্চয় কিতাবীদের থেকে যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে।

তারা জাহান্নামের অগ্নিতে থাকবে। আর তথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, আর সৎ কাজ করেছে। তারাই উৎকৃষ্ট সৃষ্টি তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। যার পদতলে নির্ঝরণী প্রবাহিত তথায় তাঁরা সর্বদা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন। আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে।

সূরায়ে কদর:
উচ্চারণ ঃ ইন্না আনঝালনাহু ফী লাইলাতিল ক্বাদরি, ওয়ামা আদরাকা মালাইলাতুল কাদরি। লাইলাতুল ক্বাদরি খাইরুম মিনআলফিশাহর। তানাঝ ঝালুল মালা-য়িকাতু ওয়ার রূহ ফীহা বিইজনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন সালাম, হিয়া হাত্তা মাতলায়িল ফাজরি ।

অর্থ ঃ নিশ্চয় আমি এটা অবতীর্ণ ক্বদর রজনীতে, কন্দর রজনী সম্পর্কে আপনি জানেন কি? কুন্দর রজনী হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ্ অবতীর্ণ হয় তাদের পালন কর্তার নির্দেশ ক্রমে, এটা শান্তি পূর্ণ ও বরকতের সাথে ফজরে উদয় পর্যন্ত থাকে।

সূরায়ে আলাক্ব
শেষ আয়াতটি পড়লেই দয়া করে সেজদা দিয়ে নিন-
উচ্চারণ ঃ ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজী খালাকা, খালাকাল ইনসানা মিন আলাক্ব । ইক্বরা ওয়া রাব্বুকাল আকরামুল্লাজী আল্লামা বিল ক্বালাম, আন্নামাল ইনসানা মা-লাম ইয়ালাম, কাল্লা ইন্নাল ইনঁসানা লায়াতগা আর রাআহুতাগনা ওয়া ইন্নাঁ ইলা রাববি কার রুজআ’ আরা আই তাল্লাডী ইয়ান্‌ হা-আ’বদান ইজা ছাল্লা আ আইতা ইনকানা আলাল হুদা, আউআমারা বিত্তাক্বওয়া। আরাআইতা ইন্‌ কাজ্জাবা ওয়া তাওয়াল্লা, আলাম ইয়া লামঁ বি আন্নাল্লাহা যারা কান্না লাইল্লাম ইয়ানঁতাহি লাণাস ফাআ’মঁ বিন্নাছিয়াহ্ নাছিয়াতিনঁ কাজিবাতিন খত্বিআহ্ ফালঁয়াদউ’ না দিয়াহ্ সানাদ উঝঝাবা নিয়াহ, কাল্লাহা তুত্বিহ ওয়াজুদ ওয়াক্ব তারিব।

অর্থ : পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে তিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। আপনি পাঠ করুন এবং আপনার প্রতিপালক মহাদয়ালু যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে । শিখিয়েছেন যা তারা জানত না সত্যি সত্যি মানুষ সীমা লংঘন করে । এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাব মুক্ত মনে করে, নিশ্চয় আপনার পালন কর্তার দিকেই প্রত্যাবর্তন হবে, আপনি কি তাকে দেখেছেন? যদি সে সৎ পথে থাকে অথবা খোদা ভীতির আদেশ দেয় আপনি কি জানেন না? যে, আল্লাহ্ দেখেন কখনই নয় যদি সে বিরত না হয় তবে আমি মস্তকের সম্মুখের কেশ গুচ্ছ ধরে হেঁচড়াব।

মিথ্যাচারি ও পাপী কেশ গুচ্ছ, অতএব, সে তার সভাসদদের আহ্বান করুক আমি আহ্বান করব, জাহান্নামের প্রহরীদেরকে কখনই নয় । আপনি তার আনুগত্য করবেন না, আপনি সেজদা করুন এবং আমার নৈকট্য অর্জন করুন ।

সূরায়ে জ্বীন:
উচ্চারণ ঃ ওয়াতীনি ওয়াঝ জাইতুনি ওয়াতুরি সিনীনা, ওয়াহাজাল ৰালাদিল আমনি, লাক্বাদ খালাকনাল ইনসানা ফী আহসানি তাক্বউয়ীম, ছুম্মা রাদাদনা-হু আসফালা সাফিলীন। ইল্লাল্লাযিনা আমানু ওয়া আমিলুস ছালিহাতী ফালাহুম আজরুন গায়ক মাননুন ফামায়ু কাজ্জিবুকা বা’দু বিদ্দীন আলাইসাল্লাহু বিআহকামির হাকিমীন ।

অর্থ : শপথ ডুমুর জাইতুনের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের এবং এই নিরাপদ নগরীর আমি সৃষ্ট করেছি মানুষকে সুন্দরতম আকারে। অতঃপর তারে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে। কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেও সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার সুতরাং কি তুমি অবিশ্বাস করছ
কিয়ামতকে? আল্লাহ্ কি শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?

সূরায়ে ইনশিরাহ:
উচ্চারণ : আলাম নাশরাহ লাকাছাদরাক ওয়া ওয়াদ্বানা আ’নঁকা উইঝরাক আল্লাজী আরঁ জ্বাহরাক, ওারাফা’না লাকা জিকরাক, ফাইন্নাঁ মায়াল উসরি য়ূসরান ইন্নামাল উসরি য়ুসরান, ফাইজা ফারাগতা ফানছব ওয়াইলা রাববিকা ফারগাব।

অর্থ : আমি কি আপনার বক্ষ উন্মুক্ত করে দেইনি? আপনার উপর হতে আপনার সে বোঝা লাঘব করে দিয়েছি, যা আপনার পৃষ্ঠকে বক্র করে দিয়েছিল। আপনার স্মরণকে আমি মহিমান্বিত ও উচ্চ করে দিয়েছি সুতরাং নিশ্চয় কষ্টের সাথে সুখ রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে সুখ রয়েছে। কাজেই আপনি যখন অবসর পাবেন তখন আল্লাহর ইবাদতে পরিশ্রম করুন এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করুন।

সূরায়ে দোহা:
উচ্চারণ : ওয়াদ দোহা ওয়াল লাইলি ইজা সাজা-মা-ওয়ার্দদায়াকা রাব্বুকা ওমা ক্বালা। ওয়ালাল আখিরাতু খাইরুল্লাকা মিনাল ঊলা, ওয়ালা সাউফা য়ুতী-কা রাব্বুকা ফাতারদ্বা আলাময়াজিদ কা ইয়াতীমান ফাআ-ওয়া ওয়া জাদাকা দ্বোল্লানঁ ফাহাদা ওয়া ওয়া জাদাকা আ-য়িলান ফা আগ্না ফাআম্মাল ইয়াতীমা ফালা তাক্বহার। ওয়া আম্মাস সায়িলা ফালা তাহার । ওয়াআম্মা বিনি’মাতি রাব্বিকা ফাহাদ্দিছ।

অর্থ : শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর যখন তা গভীর হয়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে ছেড়ে দেননি এবং তিনি আপনার প্রতি বিরূপও নন । অবশ্যই আপনার পরবর্তী অবস্থা পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে শ্রেয় এবং আপনার পালনকর্তা আপনাকে দান করবেন ফলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। তিনি কি স্থাপনাকে ইয়াতিম রূপে পান নি? অতঃপর আশ্রয় দিয়েছেন, তিনি কি আপনাকে সত্যান্বাষী পাননি? ফলে আপনাকে পথের দিশা দিয়েছেন তিনি কি আপনাকে নিঃস্ব অবস্থায় ও অভাবী পাননি? অতঃপর আপনাকে অভাবমুক্ত করেছেন । সুতরাং আপনি ইয়াতিমের প্রতি কঠোর হবেন না। ভিক্ষুককে ধমকে দিবেন না এবং আপনার পালন কর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন ।

নামাজে প্রয়োজনীয় কতিপয় দোয়া
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ার দোয়া
উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাহ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাওঁ ওমাআনা মিনাল মুশরিকীন।
অর্থ : নিশ্চয় আমি দুনিয়ার সব কিছু থেকে পৃথক হয়ে আসমান জমীনের সৃষ্টি কর্তার দিকে একনিষ্ট ভাবে মুখ করলাম এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

রুকুর তাসবীহ
উচ্চারণ : ছুবহানা রাব্বিয়াল আজীম।
অর্থ : আমি মহান প্রভূর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

সেজদার তাসবীহ
উচ্চারণ : সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা।
অর্থ : আমার শ্রেষ্ঠ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ননা করছি।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ারঝুক্বনী ।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।

অথবা কমপক্ষে ২ বার বলবে ‘রব্বিগফিরলী’ (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। [133] অতঃপর ২য় সিজদা করবে ও দো‘আ পড়বে। ‘আয় আল্লাহ ! আমাকে মাফ করে দাও,আমার প্রতি দয়া করো,আমাকে সঠিক পথে চালাও,আমাকে সুস্থ রাখো এবং আমাকে জীবিকা দান করো।’
এভাবে নামাজের দু’রাকাত শেষে তাশাহুদ এবং চার রাকাত শেষে তাশাহুদের সাথে দুরুদ শরিফ ও দুয়া মাছুরা পরতে হয়।

তাশাহহুদ
উচ্চারণ ঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াততাইয়েবাতু আসসলামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্য ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্সালামু আ’লাইনা ওয়ালা ই’বাদিল্লাহিছ ছালেনি । আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্নাঁ মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু ।

অর্থ : সকল সম্মান, ভক্তি, নামাজ, সমস্ত ইবাদত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। হে নবী! আপনার উপর বর্ষিত হউক অসীম শান্তি । আল্লাহর করুণাও তারই বরকত। আমাদের উপরও আল্লাহর সকল নেক সৎ কর্মশীলদের উপর আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কোন মাবুদ নেই, এবং আমি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

দরূদ শরীফ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাঁ ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়াআলা আলি মুহাম্মাদ কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইবরাহিমা ওয়া আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুমঁ মাজীদ।

অর্থ : হে পরওয়ার দেগার আল্লাহ! মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত অবতীর্ণ কর ! যেমনটি তুমি করেছিলে হযরত ইব্রাহীন (আ) ও পরিবার উপর।

দোদায়ে মা-ছুরাহ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী, জুলমানকাছিরাওঁ ওয়ালায়াগফিক জুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ ফিরাতামঁ মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইনকাআন্ডাল গাফুরুর রাহীম।

অর্থ : হে আল্লাহ্ আমি আমার নফসের উপর অতিশয় জুলুম করেছি। তুমি বিনে পাপ মোচনকারী আর কেউ নেই। অতএব, আমায় মাফ করে দাও। আর তোমার পক্ষ হতে আমার প্রতি অনুকম্পা নাযিল কর। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু।

আযান ও ইক্বামতের বিবরণ
আযান আরবী শব্দ। এর অর্থ হল জানিয়ে দেয়া। যেহেতু আযানের মাধ্যমে মানুষকে নামাজের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। এজন্য এভাবে জানিয়ে দেয়াকে আযান বলা হয় । শরীয়তের পরিভাষায় আযান বলা হয়-
উচ্চারণ : হুয়াল এ’লামুবিওয়াক্তি চ্ছালাতি বি আলফাযনি মাখছুচ্ছাতি।
অর্থ : নামাজের সময় নির্দিষ্ট কিছু শব্দ দ্বারা মানুষকে নামাজের খবর জানিয়ে দেয়া ।

আযানের কালেমা সমূহ
(আল্লাহু আকবার) চারবার ।
অর্থ : আল্লাহ মহান ।

(আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) দুবার ।
অর্থ : আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই ।

(আশহাদ আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ) দুবার
অর্থ : আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল বা দূত ।

(হাইয়া আলাছ ছালাহ্) দুবার।
অর্থ : এস নামাজের জন্য ।

(হাইয়া আলাল ফালাহ্) দুবার ।
অর্থ ঃ এস নামাজের জন্য।

(আল্লাহ্ আকবার) দুবার ।
অর্থ : আল্লাহ মহান ।

(লাইলাহা ইল্লাল্লাহ্) একবার ।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই।

তবে ফজরের নামাজে (হাইয়া আলাল ফালাহ্) এর পর।
(আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাউম) দুবার বলতে হবে-
অর্থ : ঘুম হতে নামায অনেক উত্তম।

আযানের প্রতি উত্তর
আযানের জওয়াব দেওয়ার মুস্তাহাব। বিনা কারণে আযানের জওয়াব দান। হতে বিরত থাকা উচিত নয় এবং আযানের জওয়াব হুবহু আযানের মতই তবে
মুয়াজ্জিন যখন (হাইয়া আলাচ্ছালাহ্)
(হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলবে। তখন তার জওয়াব।

(লা-হাউলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্) বলে দিতে হয়, এবং যখন মুয়াজ্জিন সাহেব (আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাম) বলবে তখন (ছাদাক্তা ওয়া বারারতা) অর্থ : তুমি সত্য বলেছ. এবং সৎ কাজ করেছ বলতে হয় ।

ইক্বামত
ইক্কামত আযানের মতই। তবে ইক্বামতের সময় (হাইয়া আলাল ফালাহ্) এর পরে
(কাদকামাতিছছালাহ) বলতে হয়।
অর্থ ঃ নামাজ আরম্ভ হচ্ছে।

ইক্বামতের জওয়াব
ইক্বামতের উত্তরও আযানের উত্তরের মত দিতে হয়। তবে যখন ইকামতে (ক্বাদ কামাতিচ্ছালাহ্) বলা হয় তখন উহার জওয়াবে (আক্বা কামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা)
অর্থ : আল্লাহ তায়ালা সর্বদা নামাযকে কায়েম ও দায়েম রাখুন।

আযানের দোয়া
আযানের শেষে দোয়া পাঠ করা সুন্নত
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ দা’ওয়াতিৰ্ত্তাম্মাহ্। ওয়াচ্ছালাতিল ক্বায়িমাহ্, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদীলাহ্ ওয়াব আছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজী ওয়া আদৃতাহ্, ইন্নাকা লাতুখলিফুল মীয়াদ ।

অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান অনুষ্ঠিতব্য নামাজের তুমিই প্রভৃ মুহাম্মাদ (স) কে দান কর তুমি ওয়াসীলাহ্ ও শ্রেষ্টত্ব, এবং তাঁকে অধিষ্ঠিত কর বেহেশতের প্রশংশিত স্থানে। যার অঙ্গিকার তুমি করেছ। নিশ্চয় তুমি ভঙ্গ করনা অঙ্গিকার।

ফজর নামাজের সময়


সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এ সময়। এ সময়ের যে কোনখানে ফজর নামাজকে আদায় করা যাবে। এরপর আদায় করলে তা আদায়ে কামেল হবে না, বরং আদায়ে নাকেছ বা কাজা আদায় হবে। আমাদের বাংলাদেশের এর সময় হল জানুয়ারী মাসে ৫-১৪ মিনিট হতে ৬-৪১ মিনিট পর্যন্ত, এবং জুন মাসে ৩-৪২ মিঃ হতে ৫-১৪ মিনিট পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময় থাকে, এবং ফজর নামাজ একটু আলোকিত হওয়ার পর আদায় করা মুস্তাহাব !

জোহর নামাজের সময়
ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় সূর্য পশ্চিমাকাশে একটু হেলে যাওয়ার পর জোহরের সময় আরম্ভ হয় এবং প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার ছায়ায়ে আছলী ব্যতীত তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। ছায়ায়ে আছলী বলা হয় ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর থাকে ঐ সময় প্রত্যেক বস্তুর ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকেই ছায়ায়ে আছলী বলা হয়। এ ছায়ায়ে আছলী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । যা নিকটবর্তী উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে জানুয়ারী মাসে ১২-০৩ মিনিট হতে আরম্ভ হয়ে ৩-৩৭ মিনিট পর্যন্ত থাকে এবং জুন মাসে ১১-৫৭ মিনিট হতে ৪-৩৭ মিনিট পর্যন্ত থাকে। জোহরের নামাজ গরমের দিন একটু বিলম্ব করে এবং শীতকালে একটু তাড়াতাড়ি করে আদায় করা মুস্তাহাব।

আছর নামাজের সময়
জোহর নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরম্ভ হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং আছর নামাজ সূর্য হলুদ রং ধারণের পূর্বেই আমার
করা মুস্তাহাব।

মাগরিব নামাজের সময়
সূর্যাস্তের সাথে সাথেই মাগরিবের নামাজের সময় আরম্ভ হয় এবং পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের সময় বাকী থাকে, এবং মাগরিবের নামাজ প্রথম ওয়াক্তে পড়া সুন্নত। আমাদের বাংলাদেশে জানুয়ারী মাসে মাগরিব নামাজের সময় ৫-৩০ মিনিটে আরম্ভ হয়ে ৬-৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকে, এবং জুন মাসে ৬-৪৫ মিনিটে আরম্ভ হয়ে ৮-০৫ মিনিট পর্যন্ত বাকী থাকে ।

ইশার ওয়াক্ত
মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইশার নামাজের সময় আরম্ভ হয় এবং সুবহে সাদিকের পূর্ব পযন্ত মাকরূহের সাথে বাকী থাকে। তবে
রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামাজ পড়া মুস্তাহাব। তবে রাত বারটার ভিতরে এই নামাজ পড়ে নেয়া উচিত।

বিতির নামাজের সময়
এটা ওয়াজিব নামাজ। এর জন্য কোন আলাদা নামাজের ওয়াক্ত নেই বরং ইশার নামাজ আদায় করার পর তার ওয়াক্ত হয় এবং সুবহে সাদিক পর্যন্ত বাকী থাকে। তবে এ নামাজ শেষরাতে পড়া উত্তম। যদি কার শেষরাতে ওঠার অভ্যাস থাকে এবং সে শেষ রাতে ওঠার প্রতি নিশ্চিত হয় তবে তার জন্য বিতির নামাজ শেষ রাতে পড়াই উত্তম। কেননা নবী করীম (স) সর্বদা বিতির নামাজ শেষ রাতে আদায় করতেন ।

নামাজের হারাম মাকরূহ আওক্বাত
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকালে এবং ঠিক দ্বিপ্রহরে যখন সূর্য মাথার উপর থাকে এ তিন সময় নামাজ পড়া হারাম এবং এ সময়গুলোতে তেরাওয়াতে সেজদা ও আদায় করা অবৈধ। সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের দু রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য সকল নামাজ আদায় করা মাকরূহ। আছর নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত অন্য যে কোন নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

জুমা, ঈদ, হজ্জ ইত্যাদির খুতবা আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর অন্য কোন নামাজ আদায় করা মাকরূহ। এমনকি খুৎবার ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেলেও অন্য কোন নামাজ আদায় করা যাবে না। ঈদের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে অন্য কোন নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত সমূহ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মোট সতের রাকাত নামাজ ফরজ। কিন্তু এ সতের যাকাত নামাজ ছাড়া প্রতি ওয়াক্তে আর সুন্নত নামাজ রয়েছে। তার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হল ।

জোহরের নামাজ ১২ রাকাত ।
প্রথমে চার রাকাত সুন্নত এর পর চার রাকাত ফরজ এরপর দুই রাকাত সুন্নত, এবং 2 রাকাত নফল । মোট ১২ রাকাত।

আছরের নামাজ :
আছর নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্, এরপর চার রাকাত ফরজ । মোট আট রাকাত ।

মাগরিবের নামাজ ৭ রাকাত।
প্রথমে তিন রাকাত ফরজ, এরপর দু রাকাত সুন্নত, এবং 2 রাকাত নফল । মোট ৭ রাকাত।

ইশার নামাজ ১৭ রাকাত ।
প্রথমে চার রাকাত সুন্নতে গায়রে, মুয়াক্কাদাহ চার রাকাত, এরপর চার রাকাত ফরজ, এরপর দু রাকাত সুন্নত, অতঃপর, ২ রাকাত নফল, এরপর তিন রাকাত বিতিরের ওয়াজিব, অতঃপর, ২ রাকাত নফল। মোট ১৭ রাকাত ।

নামাজের নিয়ত সমূহ
নিয়ত আরবী শব্দ। এর অর্থ হল ইচ্ছা করা। নামাজের নিয়ত অর্থ হল নামাজের ইচ্ছা করা। নামাজ পড়ার জন্য আমরা শরীর, জামা-কাপড়, ইত্যাদি পবিত্র করে কিবলামুখী হয়ে নফল বা সুন্নত বা ওয়াজিব নামাজ আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হই তাই নিয়ত। আলাদা ভাবে কোন নিয়ত করা ফরজ বা ওয়াজিব নয় এবং নিয়ত বাংলা, ইংরেজী, আরবী, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি বিভিন্ন ভাষায় করা যায়। তবে আরবীতে নিয়ত করা মুস্তাহাব। তাই নিম্নে নামাজের আরবী নিয়তগুলো বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেয়া হল ।

ফজর নামাজের দু রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছারিয়া লিল্লাহি তাআলা । রাকায়াতাই ছালাতিল ফাজরি, সুন্নাত রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতআজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি দু’রাকাত ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করিলাম। পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ করে । আল্লাহু আকবার ।

ফজরের দু রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই ছালাতিল ফাজরি ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতশ শারীফাতি
আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে ফজরের দু রাকাত রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

জোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি জ্জুহরি সুন্নাতু রাসূল্লিাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখি হয়ে জুহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উচাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ রাকআতি ছালাতি জ্জুহরি, ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখি হয়ে জুহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার ।

জোহরের দু’রাকাত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিজ জহরি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি জোহরের পরে দু রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য কিবলামুখি হয়ে নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

জোহরের দুই রাকাত নফল নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতি ছালাতিল নফলে মোহাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার ।

আছরের চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবায়া রাকাআয়াত ছালাতিল আছরি। সুন্নাতু রাসূলিল্লাহিতায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখি হয়ে আছরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

আছরের চার রাকাত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকআতি ছালাতিল আছরি। ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ ফিরিয়ে আছরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করিলাম আল্লাহু আকবার ।

মাগরিবের তিন রাকাত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছারিয়া লিল্লাহি তাআলা ছালাছা রাকাআয়াতাই ছালাতিল মাগরিব, ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল
কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহ্ আকবার ।
অর্থ : আমি পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ করে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের দু’রাকাত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই ছালাতিল মাগরিব, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ করে মাগরিবের দু’রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার ।

মাগরিবের দুই রাকাত নফল নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতি ছালাতিল নফলে মোহাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার ।

ইশার চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকাআতি ছালাতিল ইশায়ি । সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ ফিরিয়ে আমি ইশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

ইশার চার রাকাত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকআতি ছালাতিল ইশায়ি, ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখি হয়ে ইশার চার রাকত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

ইশার দু রাকাত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাক্তাই ছালাতিল ইয়ায়ি, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিরামুখি হয়ে ইশার দু রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম । আল্লাহু আকবার ।

ইশার দুই রাকাত নফল নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতি ছালাতিল নফলে মোহাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অনুবাদ: ইশার দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

বিতির নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, ছালাছা রাকআতি ছালাতিল ভিতরি, ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ করে বিতিরের তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার !

নফল নামাজের নিয়ত


নফল নামাজ সাধারণত দু রাকাত করে পড়াই উত্তম। তবে কেউ ইচ্ছে করলে চার রাকাত এক সাথে পড়তেও পারেন। তাই দু রাকাত বিশিষ্ট নফল নামাজের নিয়ত দেয়া হল ।
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাই ছালাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার । অর্থ : আমি দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার ।

চার রাকাত বিশিষ্ট নফল নামাজে (রাকআত) এর পূর্বে একটি (আরবাআ) শব্দ বাড়িয়ে দিলেই হয়ে যাবে। যথা ঃ
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ রাকাআতি চালাতিন নাফলি-শেষ পর্যন্ত ।

দুখুলুল মাসজিদ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাক আতাই ছালাতি দুখুলিল মাসজিদ। মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফারিত
আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবরামুখি হয়ে দুখুলুল মসজিদ দু রাকাত নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার ।

ক্বাবলাল জুমা নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকআতি ছালাতি ক্বালাল জুমআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবরা মুখী হয়ে জুমআর চার রাকাত কাবলাল সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

জুমার ফরজ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসিকতা আন জিম্মাতি ফরদাজ জুহরি বিআদায়ি রাকআতাই ছালাতিল জুমুয়াতি, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাশি শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলা মুখী হয়ে জুমআর দুই রাকাত কাবলাল সুন্নত নামাজ কার জন্য ফ্রিড করলাম, আল্লাহু আকবার ।

বাদাল জুমার নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকআতি ছালাতি বাদাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিরামুখী হয়ে জুমআর পরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুয়ান উছাওয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা , রাকাতাই ছালাতুল তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থ : আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করিলাম ।
অথবা, ‘ মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করছি।

এশরাক নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই ছালাতিল ইশরাকি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত দুই রাকাত এশরাকের নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম ।

চাশতের নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই চারাতি জোহা সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিতাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত দুই রাকাত চাশত নামাজ আদায় করছি । আল্লাহু আকবার ।

আউয়াবীনের নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল আউয়াবিন সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থঃ আমি কিবরামুখী হয়ে আল্লাহর পবিত্র কা’বা ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে আউয়াবীনের দুই রাকাত নামাজ আদায করার জন্য নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার ।

কাযা নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল ফায়েতাতি ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফারিত আল্লাহু আকবার ।

তারাবীহ্ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার। তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিতে করা আবশ্যক বা বাধ্যতামূলক নয়।

নামাজের রুকন সমূহ
নামাজের রোকন ৭টি-
(১) তাহরীমা বাঁধা।
(২) দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা।
(৩) ক্বেত পড়া।
(৪) রুকু করা।
(৬) সেজদা করা।
(৭) কোন কাজের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।

নামাজের ওয়াজিবের বর্ণনা
নামাজের ওয়াজিব ১৯টি
১। আল্লাহু আকবার বলে নামাজ আরম্ভ করা।
২। সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করা।
৩। সূরায়ে ফাতেহার সাথে সূরা মিলান ।
৪। প্রথমে সূরায়ে ফাতেহা পড়ার পর উহার সাথে সূরা মিলান ।
৫ । নামাজের তরতীব তথা ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ।
৬। রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ।
৭। সেজদার সময় নাক ও কপাল উভয় অঙ্গকে মাটিতে রাখা ।
৮। সেজদার ক্ষেত্রে উভয় পায়ের কোন এক অংশ অন্তত এক তাসবীহ পরিমা মাটিতে রাখা।
৯। উভয় সেজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা।
১০। তা’দীলে আরকান ঠিক রাখা বা রুকু সেজদাগুলো এমন ভাবে আদায় করা যেন, অঙ্গ সমূহ যথাস্থানে স্থির হয়ে যায় ।


১১। প্রথম বৈঠক করা অর্থাৎ দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর বসা ।
১২। উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ।
১৩। প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর কালবিলম্ব না করে দাঁড়িয়ে যাওয়া।
১৪। প্রত্যেক ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত ও ওয়াজিব, নফল, সুন্নত নামাজের প্রত্যেক রাকাতে কেরাত পাঠ করা ।
১৫। ফরজ নামাজের মাগরিব, ইশার প্রথম দুই রাকাতে, জুমার নামাজে, উভয় ঈদের নামাজে তারাবীহ্ ও রমজান মাসের বিতিরের নামাজে ইমামের উচ্চস্বরে কেরাত

পড়া, জোহর, আছর, ও মাগরিবের শেষ রাকাতেও ইশার শেষ দুই রাকাতে ইমামের ক্বেরাত আস্তে পাঠ করা।
১৬। বিতির নামাজে দোয়ায়ে কুন্নত পড়া ৷
১৭। উভয় ঈদের নামাজে ‘ছয়’ তাকবীর বলা ।
১৮। উভয় ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুর জন্য তাকবীর বলা।
১১। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ বলে নামাজ শেষ করা।

নামাজের সুন্নতের বর্ণনা
  • তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় সমস্ত শরীর ও মাথা সোজা রাখা ।
  • তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষদের জন্য কানের লতি পর্যন্ত ও মহিলাদের জন্য কাঁদ পর্যন্ত উভয় হস্ত উত্তোলন করা।
  • তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখা, এবং হাতের তালু ও আঙ্গুল সমূহ কিবলার দিকে রাখা ।
  • তাকবীরে তাহরীমা বলার পর পুরুষের নাভরি নিচে হাত বাধা ও মেয়েদের বুকের উপর হাত বাঁধা। হাত বাঁধার মসনূন তরীকা হল-ডান হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দআরা বাম হাতে কব্জী শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে। বাকি তিন আঙ্গুল বাম হাতের উপর বিছিয়ে দিবে। আর মেয়েরা ডান হাতের আঙ্গুল
    সমূহ বাম হাতের কব্জার উপর বিছিয়ে রাখবে ।
  • ইমামের জন্য তাকবীরে তাহরীমা ও এক রোকন হতে অন্য রোকনে প্রত্যার্তন করার জন্য উচ্চস্বরে তাকবরি বলা ।
  • ছানা পড়া-অর্থাৎ
    উচ্চারণ : ছুবহাকানা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবা রাকাসমূকা ওয়া তায়ারা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
    অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আপনার গুণকীর্তন করছি। পবিত্র ও মহান আপনার নাম । মহিমান্বিত আপনার শান, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।— প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর তায়াউজ পাঠ করা ।
    অর্থ : আমি আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

প্রত্যেক রাকাতে সূরায়ে ফাতেহা ও অন্য সূরা পাঠের পূর্বে তাছমিয়াহ্ পাঠ করা-
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ।
অর্থ : পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।

  • ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ কেরাতে জোরে পড়া হয় তাতে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে এবং আস্তে কেরাত বিশিষ্ট নামাজে শুধু ইমাম এবং একাকী নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি সূরায়ে ফাতেহা শেষ করার সাথে সাথে নিচু স্বরে আমীন বলবে।
  • ছানা, তাআউউয, তাসমিয়াহ ও আমীন আস্তে বলা।

নামাজের সুন্নত কেরাতে অনুসরণ করা। অর্থাৎ ফজর ও জোহর নামাজে তিওয়ালে মুফাসসাল (সূরায়ে হুজুরাত হতে সূরায়ে বুরুজ পর্যন্ত) আসর ও ইশার নামাজে আওয়াতে মুফাসসাল (সূরায়ে ত্বারিক হতে বাইয়েনাহ্ পর্যন্ত) এবং মাগরিব নামাজে কেছারে মুফাসসাল, (সুরায়ে যিলযাল হতে সূরায়ে নাস পর্যন্ত)
এগুলো পাঠ করা।

  • ফজর নামাজের প্রথম রাকাত দ্বিতীয় রাকাতে অপেক্ষা লম্বা করা ।
  • রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা এবং মহিলাদের জন্য হাঁটুর উপর কেবলমাত্র হাত রেখে দেয়া ।
  • দাঁড়ানো অবস্থায় উভয় পায়ের সাথে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা ।
  • রুকুতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা ।
  • রুকুতে পুরুষের জন্য হাঁটুর উপর আঙ্গুল খুলে রাখা, এবং মেয়েদের জন্য আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখা । রুকু অবস্থায় হাঁটু সোজা রাখা ।
  • রুকুতে কোমর, পিঠ ও মাথা সমান রাখা ।
  • রুকু ও সিজদার মধ্যে অন্তত পক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করা।
  • ইমামের জন্য রুকু থেকে উঠার সময়
    (সামিআল্লা হুলিমান হামিদাহ্) এবং মুক্তাদীর জন্য (রাব্বানা লাকাল হামদ্)
    অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সকল প্রশংসা এবং একাকী নামাজ আদায় কারীর উভয়টি পাঠ করা।
    রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাত পার্শ্ব দেশ হতে পৃথক রাখা। আর মেয়েদের মিলিয়ে রাখা ।

*রুকু থেকে উঠে স্থির হয়ে দাঁড়ানো ।

  • সিজদায় যাওয়ার সয় প্রথম হাঁটু, এরপর উভয় হাত, এরপর নাক ও অতঃপর কপাল রাখা, এবং উঠার সময় প্রতমে কপাল এরপর নাক, এরপর হাত, অতঃপর হাঁটু উঠান ।
  • উভয় হাত কর্ণ বরাবর রেখে উভয় হাতে মাঝখানে সিজদা করা। সেজদার সময় পেট উরু হতে এবং হাতের কনুই পার্শ্বদেশ হতে পৃথক রাখা। উভয় হাত মাটিতে বিছিয়ে রাখা এবং মেয়েদের জন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ মিলিয়ে রাখা।
  • উভয় সেজদার মাঝে স্থির হয়ে বসা ।
  • উভয় সেজদার মাঝে বসার সময় এবং প্রথম বৈঠক ও শেষ বেঠকে বাম পা’কে বিছিয়ে বসা এবং ডান পা’কে এমন ভাবে খাড়া রাখা- যেন আঙ্গুলির মাথা কিবলার দিকে তাকে। মহিলাদের উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা।
  • বসা অবস্থায় হাত স্বাভাবিক ভাবে হাঁটুর উপর রাখা ।
  • তাশাহ্হুদ পড়ার সময় যখন লা-ইলাহা বলবে তখন শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা এবং ইল্লাল্লাহু বলার সময় আঙ্গুল নামিয়ে ফেলা ।
  • শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর দরুদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরাহ্ পাঠ করা।
  • প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরানো।
  • সালাম ফিরানোর সময় ইমামের জন্য মুক্তাদী ও ফেরেশতাদের নিয়ত করা, মুক্তাদীর সালাম ফিরানোর সময় অন্য মুক্তাদী যাদের সাথে একত্রে নামাজ
    আদায় করছে ও ফিরিশতা এবং ইমামের নিয়ত করা।
  • ইমামের জন্য উচ্চস্বরে সালাম বলা ।
  • প্রথম সালাম থেকে দ্বিতীয় সালাম তুলনামূলক ভাবে আস্তে বলা।
  • ইমামের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে মুক্তাদীর সালাম ফিরানো।
  • ইমামের উভয় সালাম ফিরানোর পর মাসবুকের দাঁড়ানো ।
  • বিতির নামাজের দোয়ায়ে কুনুত আরম্ভ করার পূর্বে আল্লাহু আকবার বলা।

নামাজ পড়ার নিয়ম
উল্লেখ্য যে নামাজ মোট চার প্রকার (১) নফল, (২) সুন্নত, (৩) ওয়াজিব, (৪) ফরজ।

নফল ও সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রথমে পূত পবিত্র হয়ে নামাজের স্থানে কিবলামুখী হয়ে উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রেখে এ দোয়া পড়তে হবে।
(ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাঁও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন, এবং মনে মনে এ ধারণা করতে হবে যে, আমার সম্মুখে কাবাগৃহ, আল্লাহ আমায় দেখছেন, পেছনে আযরাইল ফেরেশতা, ডানে বেহেশত ও বামে দোযখ। আর আমি পুলসিরাতে দণ্ডায়মান । হতে পারে এ নামাজই আমার শেষ নামাজ। মোটকথা হল খুব বিনয়ের সাথে ও ভয়-ভীতি ও একাগ্রতার সাথে নামাজে দাঁড়াতে হবে ।

এরপর নিয়ত করতে হবে। নিয়তের পর তাকবীরে তাহরীমা বলতে হবে। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষগণ হাত কানের লতি পর্যন্ত এবং মহিলাগণ
স্কন্ধ পর্যন্ত হাত উত্তোলন করবে, তারপর দাঁড়ান অবস্থায় হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবরামুখী করে রাখতে হবে। তাকবীরে তাহরীমা বলার পর বাম হাতে কবজির উপর ডান হাতের তালু রেখে পুরুষেরা নাভী ভরাবর ও মেয়েরা সিনার উপর হাত বাধবে।

এরপর ছানা পড়তে হবে ৷
(সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতা আলা জাদ্দুকা ওয়া রাঅ ইলাহা গাউরুকা।

এরপর তাআউজ পড়তে হবে
(আউযূবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম)।
এরপর তাসমিয়াহ্ পড়তে হবে
(বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম)।

এরপর সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করতে হবে। সূরায়ে ফাতেহা শেষ করে আমীন বলতে হবে, এরপর তাসমিয়াহ্ পাঠ করে কোন একটি সূরা বা তিন আয়াত সূরায়ে ফাতেহার সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে এবং দাঁড়ান অবস্থায় দৃষ্টি সেজদার জায়গার দিকে রাখতে হবে।
ক্বেরাত শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে, এবং রুকুতে গিয়ে ৩/৪/৭ বার মানে বিজোড় সংখ্যা (সুবহানা রাবিয়াল আজীম) পড়তে হবে।
এরপর ছামি ‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বলে রুকু হতে সোজায় হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং সাথে সাথে ‘রাব্বা না-লাকাল হামদ’ বলতে হবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যেতে হবে।

সেজদায় গিয়ে তিন বা পাঁচ বা সাত বার বিজোড় সংখ্যা (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পাঠ করতে হবে। সেজদায় যেতে প্রথমে হাঁটু অতঃপর হাত, অতঃপর নাক মাথা মাটিতে রাখতে হবে, তারপর উভয় হাতের চালু কানের দু’ পার্শ্বে মাটিতে বিছিয়ে দিতে হবে এরপর আল্লাহু আকবার বলে বসতে হবে। বসার সময় মাটি হতে প্রথমে কপার এরপর নাক এরপর হাত এরপর হাঁটু উঠাতে হবে এবং বসে উভয় সেজদার মাঝে এই দোয়া পড়তে হবে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনী ওয়াহদিনী ওয়া আফিনী ওয়ারঝুক্বনী’ এবং পুরুষগণ বাম পা বিছিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া রেখে বসবে।

আর মহিলাগণ উভয় পা ডান দিকে বের করে নিতম্বের উপর বসবে এবং উত্তর হাত স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে হাঁটুর উপর ছেড়ে দিবে। এরপর আল্লাহু আকবার বলে পুনরায় সেজদায় যাবে। সেজদায় গিয়ে অনুরূপভাবে তাসবীহ পাঠ করতে হবে এরপর আল্লাহ আকবার বলে সোজা দাড়িয়ে যেতে হবে। দাড়ানর অহেতুক কালক্ষেপণ বা মাটিতে হাত দিয়ে ভর করা যাবে না। এভাবে কাজগুলো সমাপ্ত করলে এক রাকাত পূর্ণ হবে। এরপর পুনরায় তাসমিয়াহ পাঠ করে সূরায়ে ফাতেহার সাথে আকেটি সূরা মিলিয়ে রুকুতে যাবে।

পূর্বের পন্থায় রুকু আদায় করে সেজদায় যাবে এবং পূর্বের নিয়ামানুযায়ী সেজদাগুলো আদায় করবে উভয় সেজদার মাঝের জলসার পূর্বে বর্ণিত দোয়া পাঠ করবে এরপর দ্বিতীয় সেজদা করার পর আল্লাহু সেভাবে। প্রথম বৈঠক করবে এবং প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করবে। যদি নামাজ দু রাকাত বিশিষ্ট হয় তবে তাশাহুদের সাথে দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা মিলিয়ে পড়ে নামাজ শেষ করবে।

আর যদি নামাজ চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তবে তাশাহুদ পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবে। তাসমিয়াহসহ সূরায়ে ফাতেহা ও তার সাথে একটি সূরা মিলিয়ে পূর্বের ন্যায় দু রাকাত নামাজ আদায় করবে এরপর শেষ বৈঠক করবে প্রথম বৈঠকের ন্যায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরূদ শরীফ ও তারপর দোয়ায়ে মাছুরাহ্ পড়ে ।

(আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহ্) বলে প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরাবে। অতঃপর ঐ বাক্যটি বলে বাম দিকে সালাম ফিরাবে। এখানেই নামাজের সমাপ্তি হবে এরপর যদি কেউ ইচ্ছে করে তবে মুনাজাত করবে এবং স্বীয় কামনা বাসনা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। তবে মুনাজাত নামাজের কোন অংশ নয় ।

ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম
দু রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ হুবহু নফল ও সুন্নত নামাজের ন্যায় আদায় করতে হয়, এবং দুই রাকাত শেষে তাশাহুদের পর দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরাহ্ পাঠ করে সালাম ফিরাবে। তবে চার বা তিন রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ হলে প্রথম দু রাকাত হুবহু নফল ও সুন্নতের ন্যায় আদায় করতে হবে। এরপর প্রথম বৈঠক করে তাতে শুধুমাত্র তাশাহুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবে, এবং তাহমিয়ার সাথে শুধু সূরায়ে ফাতেহা পড়ে রুকুতে চলে যাবে এবং মনে রাখতে হবে যে, ফরজ নামাজের শেষ দু রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলাতে হয় না এবং পূর্ব বর্ণিত পদ্ধতিতে রুকু সেজদা পূর্ণ করে তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে আখেরী বৈঠক করবে।

আর যদি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় তবে দাঁড়িয়ে যাবে। তাসমিহ্যাহ সহ সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করে চতুর্থ রাকাত পূর্ণ করে শেষ বৈঠক করবে ও পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিতে নামাজ শেষ করবে। তবেই নামাজ পূর্ণ হয়ে যাবে এরপর ইচ্ছা করলে মুনাজাত করতে পারে কিন্তু মুনাজাত করা জরুরী না ! আর উহা ফরজ নামাজের অংশও নয়।

বিতির নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতির নামাজ ওয়াজিব। ইহাও নফল ও সুন্নত নামাজের ন্যায় আদায় করতে হয়। কিন্তু তৃতীয় রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার সাথে একটি সূরা মিলানর পর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে না গিয়ে হাত কান পর্যন্ত উঠাবে। এরপর পুনরায় হাত তাহরীমার ন্যায় বেঁধে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করবে। তা হল-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাঁ নাসসাঈনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া নাতা ওয়াক্কালু আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুক মাইঁয়াফজুরুকা । আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাসাআ। ওয়া নাহ্ফিদু ওয়া নারজু নাহমাতাকা। ওয়া নাখশা-আযাবাকা ইন্নাঁ আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক্ব ।

অর্থ : হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, এবং তোমার উপরই বিশ্বাস স্থাপন করছি। তোমার উপরই ভরসা রাখি। আমরা তোমার ভাল প্রশংসা করি এবং তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আমরা অকৃতজ্ঞ নই যারা তোমার অবাধ্য তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। হে আল্লাহ!

আমরা তোমারই ইবাদত করি। তোমার জন্যই কেবল নামাজ আদায় করি। আর তোমার জন্য কেবল মস্তক অবনত করে সেজদা করি। তোমার আদেশ পালন ও তোমারই আনুগত্য করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি এবং আমরা সর্বদা তোমার রহমতের আশা পোষণ করি। আর তোমার আযাবকে ভয় করি নিশ্চয় তোমার শাস্তি সত্য প্রত্যাখ্যান কারীদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে।

দোয়ায়ে কুনুত শেষ হলে “আল্লাহু আকবার’ বলে রুকুতে যেতে হবে এবং পূর্বে বর্ণিত পন্থায় রুকু সেজদা আদায় করে শেষ বৈঠক করতে হবে এবং তাশাহুদ ও দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরাহ্ পাঠ করার পর ডানে বামে সালাম ফিরালে এখানেই নামাজ শেষ। তবে ইচ্ছে করলে মুনাজাত করতে পারবে।

মুনাজাত
উচ্চারণ ঃ রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তার হামনা লানা কূনান্না মিলাল খাসিরীন।
অর্থ ঃ হে প্রভূ! আমরা আমাদের নফের উপর অত্যাচার করেছি । যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং দয়া না কর । তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতি গ্রস্থ হব ।

উচ্চারণ ঃ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দনইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা- আযাবান্নার ।
অর্থ : হে প্রভূ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর, এবং আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি হতে রক্ষা কর ।

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনা ওয়া বাইনা খাতায়ানা কামা বা আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাককিনা মিনাজ জুনূব কামা ইয়ূনাক্কাছ ছাউবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাস । আল্লাহুম্মাগসিল খাতায়-না বিল মা-ই ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদ ।
অর্থ : হে! আল্লাহ্ আমাদের ও আমাদের গোনাহসমূহের মধ্যে এমন ভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও যেমন পার্থক্য রয়েছে পূর্বে ও পশ্চিমের মধ্যে হে আল্লাহ আমাদেরকে গোনাহ্ হতে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমনি ভাবে সাদা কাপড় হতে ময়লা পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ্! আমাদের গোনাহসমূহকে পানি ও বরফ দ্বারা ঘুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দাও।

উচ্চারণ : রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বিইয়ানী ছগীরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার পিতা-মাতার উপর অনুরূপ দয়া কর যেরূপ তারা আমার শৈশব কালে দয়া মায়া করেছেন ।

তাহিয়্যাতুল অজু নামাজের বিবরণ
তাহিয়্যাতুল অজু বা দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়ার নিয়ম নফল নামাজ পড়ার মতই তবে নিয়্যত এভাবে করতে হবে-
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই ছালাতি তাহিয়্যাতিল অজু, মাতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে তাহিয়্যাতুল অজু দুই রাকাত নামাজ আদায় করার জন্য য়িত বাঁধলাম । আল্লাহু আকবার ।

মুসাফিরের নামাজ
যে ব্যক্তি ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশী কোন দূরত্বে যাওয়ার ইচ্ছে করে, তখন সে স্বীয় এলাকা ত্যাগ করার পর মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ্ তায়ালা মুসাফিরের জন্য চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজকে দু’রাকাত করে দিয়েছেন। যেন তার কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়। কেননা নবী করীম (স) বলেছেন-
অর্থ : সফর হল আযাবের একটি টুকরা। এই সফর মানুষকে তার পানাহার নিদ্রা হতে বিরত রাখে ।
যে ব্যক্তি সফর করে তাকেই মুসাফির বলা হয়। আর মুসাফির ব্যক্তি যদি চামড়ার মুজা পরিধান করে থাকে তবে সে তার উপর তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাছাহ্ করতে পারবে।

মুসাফির রমজানের রোজা ভাঙতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে এর কাজা করতে হবে, এবং মুসাফির ব্যক্তি যদি চার রাকাত নামাজ আদায় করে তবে তার নামাজই বাতিল বলে গণ্য হবে। হ্যা যদি কেউ অনিচ্ছায় বা ভুল ক্রমে চার রাকাত আদায় করে তবে শেষে সেজদায়ে সাহও করলেই তার নামাজ হযে যাবে, দু রাকাত ফরজ আদায় হবে। আর দু রাকাত নফল।

তবে ফরজের সাথে নফলকে একত্রিত করার কারণে গোনাহ্ গার হবে। তবে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজের কছর বা কনসেশন নেই। যদি কোন মুসাফির স্বীয় গন্তব্যে পৌঁছার পর পনের দিনের কম অবস্থানের নিয়ত করে তবে তার উপর তখনও মুসাফিরের হুকুম বলবৎ হবে। অর্থাৎ তারে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজকে দু রাকাত আদায় করতে হবে এবং সে পারবে মুসাফিরের হুকুম তার এরাকায় প্রবেশ করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

ঈদুল ফিতরের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতা’ই ছালাতি ঈদুল ফিতরি মায়া সিত্তি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতা’ই ছালাতি ঈদুল আয্হা মায়া সিত্তে তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু।

ছালাতুত্ তাসবীহ্ নামাজের নিয়ত ও আদায় পদ্ধতি
উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন উছারিয়া লিল্লাহি তায়ালা আবাআ রাকআতি ছালাতিত তাসবীহ সুন্নাত রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল বা বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

তাকবীরের তাহরীমা বাঁধার পর নফল নামাজ আদায় করার ন্যায় সূরায়ে ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ে পনের বার নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে।
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লা-হু আকবার।

এরপর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাবে এবং রুকুর তাসবীহ পড়ার পর দশবার এ দোয়া রুকুতে পাঠ করবে। এরপর রুকু হতে সোজা দাঁড়িয়ে দশবার এ দোয়া পড়বে। এরপর সেজদায় যাবে এবং সেজদার তাসবীহ্ পাঠ করার পর সেজদায় দশবার এ দোয়া পড়বে। এরপর সেজদা হতে উঠে বসে দশবার এ দোয়া পড়বে এ দোয়া পাঠ করবে। সেজদা হতে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে না।

বরং বসে দশবার এরপর দ্বিতীয় সেজদায় যাবে। এবং দ্বিতীয় সেজদায়ও অনুরূপ ভাবে দশবার এ দোয়া পড়ে এরপর দাঁড়াবে। এতে এক রাকাতে মোট ৭৫ বার হবে এভাবেই প্রতি রাকাতে ৭৫ (পাঁচাত্তর বার) এ দোয়া পাঠ করবে। চার রাকাতে মোট ৩০০ (তিনশত) বার এ দোয়া পড়বে এব প্রথম বেঠক ও শেষ বৈঠকে প্রথমে এ দোয়া পাঠ করে এরপর তাশাহ্হুদ পড়বে।

ইস্তিখারার নামাজ
যদি কেউ কোন দ্বিধা-দ্বন্দে উপনীত হয় তখন তারজন্য উচিৎ হল দু রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর পক্ষ হতে এর ভাল মন্দের ফায়সালা চাওয়া। আর এ নামাজকে ইস্তিখারার নামাজ বলা হয় ।
এ নামাজের নিয়ম হল ইশার নামাজ পড়ার অযূ করে খুব মনোযোগের সাথে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিম্নোক্ত দোয়াটি অন্তত তিনবার পড়বে। এরপর শুয়ে যাবে। দোয়াটি হল-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বিইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আস আলুকা মিন ফদলিকাল আজীম ফাইন্নাকা তাকাদিরু ওয়ালা আকদিরু ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আলামুল গুযুব। আল্লাহুম্মা ইনঁকুন্তা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা খাইরুল লী ফীদ্বীনি ওয়া মায়াশী ওয়া আকিবাতি আমরী ফাকদিরুহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী ছুম্মা বারিকলী ফীহি। ওয়া ইনকুনতা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা শাররুললী ফীদ্বীনি ওয়া মায়াশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী ফাছরিফহু আন্নী ওয়াছ রিফনী আনহু। ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইছু কা-না ছুম্মার দিনী বিহ্।

যখন (হা-যাল আমরা) পড়বে তখন স্বীয় উদ্দেশ্য কে ভাল ভাবে মনে স্মরণ করতে হবে এরপর পবিত্র বিছানায় কিবলার দিক মুখ করে শুয়ে পড়বে।
একদিনে কাজ না হলে একাদিকবার এভাবে আমল চালিয়ে যেতে হবে । হযরত উমর (রা) একাধারে এক মাস পর্যন্ত ইস্তেখারাহ্ করেছেন।

ইস্তিস্কার নামাজ
যখন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মানুষের কষ্ট বাড়তে থাকে তখন আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দরখাস্ত ও দোয়া করা সুন্নত। একেই শরীয়তের পরিভাষায় ইস্তিস্কার বা পানি প্রার্থনা বলা হয় ।

ইস্তিস্কা শুধু এস্তেগাফার কিংবা শুধু দোয়ার মাধ্যমেও করা যায় কাছে একাকী নামাজ আদায় করার মাধ্যমে কিংবা জামাতে নামাজ আদায় করার মাধ্যমেও করা যায়। জামাতের সাথে ইস্তিস্কা নামাজের মাসনূন তরীকা হল যে, ছোট-বড়, আবাল-বৃদ্ধ বণিতা তথা এলাকার সকল মুসলমান (গরু-বাছুরসহ) পায়ে হেঁটে সাধারণ বেশে অত্যন্ত কাকুতি মিনতির সাথে ময়দানে আসবে। আর প্রত্যেকেই স্বীয় কৃত কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে ও মাফ চাইবে । খাঁটি মনে তওবা করতে হবে।

কার হক নষ্ট করে থাকলে তবে তাকে ফেরত দিতে হবে কোন অমুসলিমকে সাথে আনা যাবে না। অতঃপর সকলের মধ্যে হতে যিনি সবচেয়ে বেশী খোদাভীরু তাকে ইমাম বানিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। এ নামাজে আযান ও ইমামত নেই। তবে কেরামত উচ্চস্বরে পড়তে হবে নামাজের পর ইমাম ঈদের নামাজের ন্যায় দুটি খুৎবা দিবে এবং ইমাম কেবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে বৃষ্টির জন্য দরবারে ইলাহীতে প্রার্থনা করবে, মুনাজাতের সময় উভয় হাতের তালু মাটির দিকে থাকবে, শরীরে চাদর থাকলে তা উল্টিয়ে দিবে। ইমামের সাথে মুক্তাদীগণ দোয়া করবে। পরপর তিনদিন এরূপ করবে আর এ তিনদিন রোযা মুস্তাহাব। যদিও তিন দিন এরূপ করার পূর্বেই বৃষ্টি হয় তবুও তিনদিন এ পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম ।

ইস্তিস্কা নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল ইতিষ্কা মুতাওয়াজজিহান ইলা-জিহাতিল কাবা শিত শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

তওবার নামাজ

যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন গোনাহ্ কার থেকে হয়ে যায়, তবে তার উচিৎ সাথে সাথেই অজু করে খুবই কাকুতি মিনতির সাথে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করা, ঐ কাজ ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় অঙ্গিকার করা এবং স্বীয় কৃত কর্মের জন্য দরবারে ইলাহীতে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এরূপ তওবা করলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। এর নিয়ত এরুপ-

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উচ্ছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিত্তাবিহ্ মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।

হাযতের নামাজ
যদি কেউ কোন অভাবে পড়ে বা বিপদগ্রস্থ হয় বা কার মনে কোন আকাঙ্খা থাকে তখন সে সর্বপ্রথম আল্লাহর দিকে মনানিবেশ করবে। কাজ সত্যের ভিতর থাকলে তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহর কাছে দয়া প্রত্যাশী হবে। এরপর ভাল ভাবে অজু করে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে এবং স্বীয় গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। এরপর আল্লাহর হামদ ও ছানা এবং নবী করীম (স)-এর উপর দরূদ পাঠাবে। তারপর কায়মনোবাক্যে কয়েক বার এই দোয়াটি পাঠ করবে।

উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমূল কারীম, সুবহা-নাল্লাহি রববির আরশিল আজীম, আলহামদু লিল্লাহি রাববিল আলামীন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক। ওয়া আযাইমা মাগ-ফিরাতিক। ওয়াল গানীমাতা মিন কুল্লি বিররিন ওয়াল ইছমাতা মিন কুল্লি ইছমিন। তাদা’লী জামঁবান ইল্লা গাফারতাহু । ওয়ালা হাম্মান ইল্লা-ফাররাজ হাহু। ওয়ালা-দাইনান ইল্লা কাদাইতাহু ওয়ালা হাজাতামঁ মিন হাওয়ারিজিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ্ হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমীন ।

এ নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল হাজাহ্ । মুতা ওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু

নামাজে শুকুর
কোন কল্যাণ বা সু-সংবাদ লাভের পর দু রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা সুন্নত । ইহার পদ্ধতি নফল নামাজ পড়ার মতই। নিয়ত এরূপ-
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিশ শুকর। মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

সালাতুল কুসূফ
কুসূফ শব্দের অর্থ হল সূর্য গ্রহণ । সূর্য গ্রহণ হলে যেই নফল নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুল কুসূফ বলে। এ সময় দু রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নত। তবে এতে কেরাত আস্তে পড়তে হয়। যদি জামাত করা সম্ভব না হয় একাকী নামাজ আদায় করবে। নামাজ শেষে সূর্য গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত জিকিরে লিও থাকবে। মেয়েরা ঘরে বসে এ নামাজ আদায় করতে পারবে। নিয়ত এরূপ-

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল কুসূফি। মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

সালাতুল খুসূফ
অর্থ চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণের সময় যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুল খুসূফ বলে। তা নফল নামাজের মতই আদায় করতে হয় তবে এ নামাজ একাকী পড়তে হয়। মেয়েরা ঘরে বসে এ নামাজ আদায় করবে। নামাজের শেষে চন্দ্ৰগ্ৰণ শেষ হওয়া পর্যন্ত দোয়া দরূদে মশগুল থাকবে।
নিয়ত এভাবে করতে হয়-
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল খুসূফ, মুতা ওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

মিরাজ রজনীর নামাজ
রজব মাসের ২৭ (সাতাইশ) তারিখে প্রিয় নবী (স) মিরাজে গমন করে ছিলেন। তাই এ পবিত্র রজনীতে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা খুবই পূণ্যের কাজ। নিয়ত এভাবে করতে হবে।
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল মিরাজ, মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

শবে বরাত
শাবান মাসে পনের তারিখের রাতে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয়, এটাও নফল নামাজের মতই আদায় করতে হয়। মনে রাখতে হবে আরবী মাসে রাত
আগে যায় এবং দিন পরে আসে। নিয়ত এরূপ হবে-

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতিল বরা-আত, মুতা ওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

তারাবীহ্ নামাজের বিবরণ
রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে ইশার নামাজের পর জামাতের সাথে বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়া হয় তাকে তারাবীহ এর নামাজ বলা হয়। এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কেউ না পড়লে তাকে এজন্য গোণাহগার হতে হয়। এ নামাজের নিয়ত পূর্বে বর্ণিত হয়েছে ।

তারাবির নামাযের দোয়া
বিশ্রামের সময় চুপ করে বসে থাকা কিংবা পৃথক ভাবে নফল নামাজ পড়া বা জিকির-আজকার করা, তাসবিহ্ তাহলীল পাঠ করা বা দরূদ শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা যেতে পারে, তবে নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করা ভাল ।

উচ্চারণ : সুবহানা জিল মুলকি, ওয়াল মালাকূতি, সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল ক্কদরাতি ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল জাবারূতি, সুবাহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাহিজী লাইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামূতু আবাদান আবাদা । সুববূহন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা য়িকাতি ওয়ার রূহ।
কেউ যদি মসজিদে এসে দেখে যে, ইশার নামাজ শেষ হয়ে তারাবহি আরম্ভ হয়ে গেছে, তখন সে একাকী ইশার নামাজ আদায় করে তারাবীহতে শরীক হবে। জামাতের সাথে তারাবীহ্ ও বিতির নামাজ আদায় করে প্রথমে যে কয় রাকাত তারাবীহ ছুটে গেছে তা আদায় করবে।

খতমে তারাবীহকে রজমানের ২৭ তারিখে শেষ করতে হবে। এটা জরুরী মনে করা ঠিক নয়। বরং রমযানের যে কোন তারিখেই খতম শেষ করতে পারে। এতে ছাওয়াবের কোন কমবেশী হবে না ।

তারাবীহ্ নামাজের মুনাজাত
উচ্চারণ : আল্লাহুমা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাঁতা ওয়া নাউযূ বিকা মিনান্নার। ইয়া খালিকাল জান্নাঁতি ওয়ান্নার । বিরাহ্ মাতিকা ইয়া আজীজু ইয়া গাফ্ফারু ইয়া কারীমু ইয়া সাত্তারু ইয়া রাহীমু, ইয়া জব্বারু, ইয়া খালিকু ইয়া বা-রু । আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার, ইয়া মুজীরু ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজীর । বিরাহমাতিকা ইয়া আর আর হামার রাহিমীন।

রোজার বিবরণ
রোযার শাব্দিক অর্থ হসলাম বা বিরত থাকা, শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও স্ত্রী-সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকেই রোযা
বলা হয়। রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে একটি, নামাজের পরই রোযার অবস্থান। রোযার মাধ্যমে দুখী ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের দুঃখ কষ্ট কিছুটা হলেও অনুভূত হয়, রোযা মানুষকে ধৈর্য ও আত্মসংযমের শিক্ষা প্রদান করে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য পবিত্র রমযান মাসের রোযা ফরজ করে দিয়েছেন, কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-

উচ্চারণ : ইয়া আইয়ুহাল্লাহিনা আমানু কুবিতা আলাইকুমুছ ছিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাহিনা মিনঁ কাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন ।
অর্থ : হে, মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা আত্ম সংযমী হতে পার ।

অন্যত্র আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন-
উচ্চারণ : ফার্মান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফালয়াছুমহু।
অর্থ : তোমাদের কেউ যদি রমযানকে পায় সে যেন রোযা রাখে। কাজেই বুঝা গেল রমযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে রোযা রাখা প্রত্যের
মুসলমানের উপর ফরজ।

রমযান মাসে শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
উচ্চারণ : শাহরু রামাদানাল্লাজী উনজিলা ফীহিল কুরআনু হুদাল লিন্নাস, ওয়া বাইয়িন্নাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান ।
অর্থ ঃ রমযান মাস! যাতে মানব জাতির পথ নির্দেশ ও হিদায়াত বিষয়ক সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যা সত্যকে মিথ্যা হতে পৃথক
করে ।

হাদীছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
উচ্চারণ : ক্বালা রাসূলুল্লাহি (স) মানঁ চামা রামাদানা মিন আউয়ালিহি ইলা আখিরিহি, খারাজা মিন জুনুবিহী কাইয়ামিন ওয়ালাদাতহু উম্মুহু ।
অর্থ : নবী করিম (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখল তার থেকে গোনাহ্ গুলো অনুরূপ ভাবে ঝরে যায় যেন সে সদ্য প্রসুত ভূমিষ্ট শিশু। অর্থাৎ নবজাতক শিশুর যেমন কোন গোনাহ্ থাকেনা তদ্রূপ পবিত্র রমযানে সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিরও কোন গোনাহ থাকে না । বরং আল্লাহ পাক তার পাপ সূহ মোচন করে দেন । অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

উচ্চারণ ঃ লিকুল্লি শাইয়িন যাকাতুন, ওয়া জাতাতুল জাসাদি আছ ছাইমু।
অর্থ : প্রত্যেক বস্তুরই যাকাত আছে, আর মানুষের শরীরের যাকাত হল রোযা।

অপর এক হাদীসে কুদ্ছিতে বর্ণিত আছে :
উচ্চারণ ঃ আচ্ছাওমুলী ওয়া আনা আজযিবিহী ।
অর্থ : আল্লাহ্ তায়ালা বলেন যে বান্দা কেবল আমার জন্যই রোযা রাখে, আর রোযার প্রতি দান আমি নিজেই দিব । এ হাদীসের ভাবার্থ হল, প্রত্যেকটি ইবাদতের জন্য একটি পরিমাণ নির্ধারিত আছে, কিন্তু রোযার ক্ষেত্রে এটা নেই বরং রোযার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে মহাপুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন। যার পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না।

অপর এক হাদীসে নবী করীম (স) এরশাদ করেন,
উচ্চারণ : আচ্ছাওমু নিছফুছছবর ওয়াছ ছবরু নিছফুল ঈমান।
অর্থ : রোযা হল ধৈর্য্য বা ছবরের অর্ধেক আর ছবর হল ঈমানের অর্ধেক।

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে ।
উচ্চারণ : আন আবী হুরায়রাহ্ (রা) ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি (স) উত্বিয়াত উম্মাতী খমসু খিছালিন ফী রামদানা। লাম তু’তাহুন্না উম্মাতুন কালাহুম খুলুফু ফামিছ ছায়িমি, আত্মাবুইনদাল্লাহি মিন রীহিল মিসকি। ওয়া ইয়াস্তাগ ফিরু লাহুমুল হীতানু হাত্তা ইউফতিরূ। ওরা ইউঝায়ুনুল্লাহু আঝঝা ওয়া জাল্লা কুল্লা ইয়াউমিন জান্নাতাহু ছুম্মা ইয়াকুলু ইউশিকু ইবাদিয়াছ ছালেহুনা আঁইয়ুলকূ আন হুযুল মু’নাতু ওয়াসীরু ইলাইকা ওয়া তুছাফফাদু ফীহি মারাদাতুশ শারাতীন, ফালা ইয়াখলুছু ফীহি ইলামা কানু ইয়াখলিছুনা ইলাইহি ফী গাইরিহি ওয়াইয়ুগফারু লাহুম ফী আখিরিহি লায়লিহী ক্বীলা ইয়া রাসূলাল্লাহু! আহিয়া রাইলাতুল ক্বাদর ক্বালা লা ওয়ালাকিন্নাল আ-মিরা ইন্নাঁমা ইয়ু ওয়াফফা আজরুদ্ ইজা কাদা আমানাহু ।

অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন, পবিত্র রজজান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে। ইতিপূর্বে অন্যকোন উম্মতকে প্রদান করা হয়নি-প্রথম ঃ রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভী অপেক্ষা বেশী প্রিয়।
দ্বিতীয়ঃ সমুদ্রের মাছগুলো রোজাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত দোয়া করে করতে থাকে। তৃতীয়ঃ বেহেশতকে প্রতিদিন তাঁদের জন্য সুসজ্জিত করা হয়। আর আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- আমার বান্দাগণ দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট পরিত্যাগ করে অসিসত্ত্বরই তোমার কাছে আগমন করছে।

চতুর্থ ঃ রমজানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। যাতে করে সে রজমানে এমন সকল কাজ করতে পারেনা যা অন্য মাসে করতে পারে।
পঞ্চমতঃ রমজানের শেষ রাতে রোযাদারের গোনাহ্ মাফ হয়ে যায়। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! এ ক্ষমা কি শবে কদরে হয়ে থাকে? প্রিয় নবী (স) বলেন, না বরং নিয়ম হল মজদূর কাজ করার পরই তার মজুরী পেয়ে থাকে।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে- একদা হযরত মূসা (আ) আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন যে, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কোন মাসকে বেশী ফযীলতের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে? আল্লাহ পাক বললেন, রমযান মাসকে বেশী মর্যাদা দান করা হয়েছে। তখন মুসা (আ) বললেন, এর ফযীলত কেমন হবে? জবাবে আল্লাহ্ তায়ালা বললেন, তোমাদের সাধারণের তুলনায় আমার মর্যাদা যেরূপ তদ্রুপ অন্যান্য মাসের তুলনায় রমযানের মর্যাদা ।

রোযার প্রকারভেদ
রোযা মোট চার প্রকার (১) ফরজ (২) ওয়াজিব (৩) নফল (৪) হারাম ।
ফরজ রোজা : এটা হল রমযান মাসের রোযা ও কাযা কাফফারার রোযা।
ওয়াজিব রোজা : এটা হল মান্নতের রোযা ৷
নফল রোযা : মহরম চাঁদের দশম দিন। তবে এর সাথে পূর্বে বা পরে একদিন মিলিয়ে দু’টি রোযা রাখা উত্তম, কেননা একটি রোযা রাখলে ইয়াহুদীদের সাথে সামজস্য হয়ে যায়। হজ্বের দিন রোজা রাখা, শাওয়ালের চাঁদে ৬টি রোযা রাখা প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা ইত্যাদি নফল ।
হারাম : উভয় ঈদের ও আইনয়ামের তাশরীফের দিনগুলোতে রোযা রাখা হারাম।

রোযার নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদামঁ মিনঁ শাহরি রামাদানাল মুবারাকি ফার দান লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস সামীউল আলীম ।
অর্থ : হে প্রভু! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসের ফরজ রোযা রাখার নিয়ত করলাম। সুতরাং তুমি, আমার পক্ষ হতে তা কবুল কর নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রেষ্ট শ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ ।

ইফতারের নিয়ত
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু ।
অর্থ : হে আল্লাহ্! তোমার জন্যই আমি রোযা রেখেছি এবং তোমার প্রদত্ত জীবিকা দ্বারাই রোজা ভঙ্গ করছি।

ইফতার করানোর ফযীলত
রোজা রাখা যেমন ছওয়াবের কাজ তদ্রুপ, রোযা খোলা বা ইফতার করাও অত্যন্ত পূণ্যের কাজ, এবং অপরকে ইফতার করানও বহু ছওয়াবের কাজ । বর্ণিত আছে যদি কোন ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করায় তবে সে রোযাদারের সমান পরিমাণ ছওয়াব পাবে, এবং এতে রোযাদারের ছাওয়াব হতে সামান্য কিছুও কম করা হবে না।

অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে-
উচ্চারণ : মানঁ ফাত্তারা ফিহি ছায়িমান, কানা মাগফিরাতান লিজুনবিহী ওয়া ইতক্বিরাকাবাতিহী মিনান্নার ।
অর্থ : যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করায় তবে সে ইফতার করান তার গোনাহ্ মোচন ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ হবে।

অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে-
উচ্চারণ : মানঁ ফাত্তারা ছায়িমান আলা তামারাতিন আও শারবাতিম মিম মা-ইন আওমাজক্বাতি লাবানিন, কানা লাহু মাগফিরাতান ওয়াহুয়া শাহুরুন আওয়ালুহু রহমাতুন, ওয়া উসাতুহু মাগরিফাতুন ওয়া আখিরুহু ইকুম মিনান্নার।
অর্থ : যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে একটি খেজুর কিংবা এক গ্লাস পানি, কিংবা কিছু শরবত দ্বারা ইফতার করায় তবে এ ইফতার তার পাপ মোচনের কারণ হবে। এটা তো এমন একটি মাস যার প্রথমাংশ হল রহমতের, দ্বিতীয়াংশ বা মধ্যমাংশ হল ক্ষমা বা পাপ মোচনের এবং শেষাংশ হল জাহান্নাম হতে
মুক্তির ।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর
কদর শব্দের অর্থ মহত্ম ও সম্মান। রমযানের কোন এক রাতের মহত্ত্ব ও সম্মানের কারণে একে শবে কদর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু ওয়াররাক (র) বলেন, এ রজনীকে কদর রজনী বলে নামকরণ করার কারণ হল আমল না করার কারণে এর পূর্বে যার কোন সম্মান ও মূল্য থাকে না। সে এরাত্রিতে তওবা এস্তেগফার ও ইবাদাতের মাধ্যমে সম্মানিত হয়ে যায় ।

কদরের আরেক অর্থ তকদীর ও আদেশ হয়ে থাকে। এ রজনীতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধি লিপি, ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স মৃত্যু, রিযিক ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয় এমনকি এ বছরকে হজ্জ করবে তাও লিখে দেয়া হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর উক্তি অনুযায়ী চারজন ফেরেশতাকে এসব কাজে সোপর্দ করা হয়। তারা হলেন, ইসরাফীল, মীকাইল আযরাইল ও জিব্রীল (আ)।

শবে কদর কোন রাত্রি
সেই মহিমান্বিত রজনী কোনটি যাতে ইবাদত করলে হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম । এসম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হাদীস-
উচ্চারণ : আন আয়েশাতা (রা) ক্বালাত, ক্বালা রাসূলুল্লাহি (স) তাহারু লাইলাতাল ক্বাদরি ফিল উইতরি মিনাল আশরিল আওয়াখিরি মিন রামাদা-না । (বুখারী)

অর্থঃ হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন-নবী করীম (স) বলেছেন-তোমরা কদর রজনীকে রমজানের শেষ দশকে খোঁজ কর । এ হাদীসের আলোকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, রমজানের একুশ তারিখ হতে ঊনত্রিশ তারিখ পর্যন্ত যে কোন এক রাত্রে শবে কদর হয়ে থাকে। তবে একে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি বরং একে গোপন রাখা হয়েছে। যেন মানুষ তাকে খুবই ভালভাবে তালাশ করে। তাই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কেবল মাত্র ২৭শে রমযানের রাতে ইবাদত না করে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯শে রমযান বেশী বেশী তওবা ইস্তেগ ফার ও অন্যান্য ইবাদত করা উচিত। তাতে আশা করা যায় অবশ্যই কদর রজনী পাওয়া যাবে ।

শবে কদরের ফযীলত
হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, প্রিয় নবী (স) বলেছেন, শবে কদর আমার উম্মতকেই দেয়া হয়েছে। অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। কারণ পূর্বের উম্মতগণ বেশি আয়ূ পাওয়ার কারণে বেশি বেশি ইবাদত করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী কম আয়ু পাওয়ার কারণে তা হতে বঞ্চিত হবে। তাই মহানবী (স) মনক্ষুণ্ণ হলেন তখন আল্লাহ্ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর (স) জন্য এ বরকতময় নজনী দান করলেন। যে রজনীতে ইবাদত করলে আটশত তেত্রিশ বছর চার মাসেরও বেশী সময় ইবাদত করার ছাওয়াব তার আমল নামায় লিপি বদ্ধ করা হবে।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে-
উচ্চারণ : আন আবী হুরায়রাতা (রা) ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মান ক্বামা লাইলাতাল ক্বাদরি ঈমানান ওয়া ইহ্ তিসাবান গুফিরালাহু মা তাকাদ্দামা মিন জামবিহি ।

অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (স) বলেছেন যে ব্যক্তি কদর রজনীতে আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে পুণ্যের আশায় ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে তার পূর্বে কৃত সমস্ত পাপ সমূহকে মোচন করে দেয়া হয় ।
হযরত আনাস (র) হতে বর্ণিত তিনি বলেন-হুজুর (স) ইরশাদ করেন যে, তোমরা এমন মাস প্রাপ্ত হয়েছ, যাতে এমন একটি রজনী রয়েছে যা হাজার মাস হতেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ পূণ্যময়ী রজনীতে বঞ্চিত রইল সে যেন সকল মঙ্গল হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আল্লাহ্ আমাদেরকে এ রাতের হক আদায় করার তাওফীক দান করুন-আমীন!

Read More: নেক আমল বই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top