20 শিক্ষনীয় গল্পের বই – গল্প বই

শিক্ষনীয় গল্পের বই ঘোড়ার সাজা

শিক্ষনীয় গল্পের বই, এক চাষীর ছিল একটা ঘোড়া ও একটা গাধা। সে গাধার পিঠে চাপাত মাল আর নিজে চাপত ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়ার দাম বেশি বলে সে মাল বওয়ার কাজে ঘোড়াকে কষ্ট দিতে চাইত না। একবার চাষী চলেছে হাটে। গাধার পিঠে চালের বস্তা। বোঝাটা সেদিন বেশ বেশিই হয়েছিল। তাই গাধাকে খুবই কষ্ট করে চলতে হচ্ছিল।

চাষী পেছনে ঘোড়ার পিঠে থেকে তাড়া দিচ্ছে মাঝে মাঝে। তাই পিঠের বোঝার চাপে দম আটকে এলেও না চলে উপায় ছিল না গাধার ।
কিন্তু কতক্ষণ আর এভাবে চলা যায়। ক্রমেই গাধার শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগল । পা পড়ছে এলোমেলো ।

গাধা তখন কাতর গলায় ঘোড়াকে ডেকে বলল, ওহে ভাই, আমি আর এত বোঝা নিয়ে চলতে পারছি না। তুমি যদি দয়া করে কিছুটা বোঝা পিঠে নেও তাহলে আমার কষ্ট কমে। নইলে মুখ থুবড়ে পড়ে এখুনি মারা পড়ব।

ঘোড়া গাধার পাশে গলা বাড়িয়ে বলল, আমি কী করে বোঝা বইব, কখনও অভ্যাস নেই। কষ্ট হোক যাই হোক তোমার বোঝা তোমাকেই বইতে হবে। তোমার কষ্ট কমাতে গিয়ে শেষকালে আমি মরি আর কী। যা করার প্রভুই করবে।

গাধা আর কী করে। মুখ বুজে কষ্ট সয়ে হাঁটবার চেষ্টা করতে লাগল । কিন্তু বেশিক্ষণ চলতে পারল না। এক জায়গায় এসে সত্যি সত্যি মুখ থুবরে পড়ে
মারা গেল ।

চাষীকে এবারে বাধ্য হয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামতে হল। তাকে তো হাটে পৌছতে হবে ঠিক সময়ে। সে তখন গাধার পিঠের বস্তাগুলো তুলে তাড়াতাড়ি করে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিল ।

মরা গাধাও পড়ে থাকল না। সেটাকে চাষী ধানের বস্তার ওপরেই জায়গা করে দিল। এভাবে ঘোড়ার পিঠে ধানের বস্তার সঙ্গে মরা গাধার বোঝাও চাপল ।
বোঝার ভারে তার অবস্থা তো কাহিল। সেই অবস্থাতেই চাষী তাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল হাটের দিকে। অনেক কষ্টে পা টেনে চলতে চলতে ঘোড়া তখন দুঃখ করে নিজেকেই নিজে বলতে লাগল,আগে যদি গাধার কথা শুনে তার বোঝা খানিকটা হাল্কা করতাম, তাহলে এখন মরা গাধার সঙ্গে সমস্ত বোঝা আমাকে বইতে হতে না। আমার বুদ্ধিকে ধিক !

শিক্ষামূলক : স্বার্থপর লোক নিজের ভাল কিসে হবে তাও বোঝে না।

শিক্ষনীয় গল্পের বই

more: গল্প বই

শিকারী কুকুর ও গৃহপালিত কুকুর

এক লোকের ছিল দুটি কুকুর। তাদের একটি শিকারী জাতের। তাই তাকে নিয়ে সে প্রায়ই শিকারে যেত। অন্য কুকুরটি বাড়িতেই থাকত। ঘুরে ফিরে মনিবের বাড়ি পাহারা দিত। সে ছিল নিতান্তই গৃহপালিত কুকুর।

শিকারী কুকুর কিন্তু গৃহপালিত কুকুরকে সহ্য করতে পারত না। কারণ সে শুয়ে বসে কাজ না করে দিন কাটায় আর আরামে প্রভুর দেওয়া খাবার খায়। বনে বাদাড়ে ছুটে পরিশ্রমের কাজ তাকে কিছুই করতে হয় না।

একদিন আর মনের জ্বালা সইতে না পেরে সে গৃহপালিত কুকুরকে ডেকে বলল, ওহে, তোমার কি লজ্জা ঘেন্না বলে কিচ্ছু নেই? তোমার ব্যাপার- স্যাপার আমার একদম ভাল লাগছে না ।

গৃহপালিত কুকুর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন ভাই, আমি কি না জেনে কোন দোষ করে ফেলেছি?
রাগে রোঁয়া ফুলিয়ে শিকারী কুকুর বলল, দোষ নয়! বিপদ মাথায় করে বলে রীতিমত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে আমি শিকার করে আনছি, আর ঘরে বসে আলসেমিতে দিন কাটিয়ে তুমি সব সময়ে তাতে ভাগ বসাচ্ছ! এ তো ঠিক কথা নয় ।

শুনে শিকারী কুকুর বলল, তাই বলো, এ তোমার রাগের কারণ। দেখ ভাই, প্রভু যা খেতে দেন, আমি তাই খাই। এতে আমার দোষটা কোথায়? তিনি আমাকে বাড়ি পাহারার কাজে রেখেছেন, আর অন্যের সংগ্রহ করা খাবার খেতেই শিখিয়েছেন। আমিও তাই করছি। এটা দোষ যদি বলতে চাও, তবে সেটা করছেন আমাদের প্রভু। তোমার কথাগুলো আমাকে না শুনিয়ে তাঁর কাছেই পেশ করা উচিত।

শিক্ষামূলক : অভিভাবক ও শিক্ষকের দোষেই সন্তান অলস নিষ্কর্মা হয় ।

ষাঁড় ও বুনো ছাগল

একদিন এক সিংহের তাড়া খেয়ে এক ষাড় পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। সেই গুহাতে বিশ্রাম করতে ঢুকেছিল কয়েকটা বুনো ছাগল। ভীত সন্ত্রস্ত ষাঁড়কে দেখতে পেয়ে ছাগলগুলো তাকে শিং-এর গুঁতো মারতে লাগল। সিংহের ভয়ে ষাঁড় মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করতে লাগল।

তাকে চুপচাপ দেখে বুনো ছাগলদের সাহস বেড়ে গেল। তারা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে ষাড়ের গায়ে গুতো মারতে লাগল।

ছাগলের উৎপাতে অসহ্য হয়ে শেষে ষাঁড়, বলল, দেখো হে, তোমরা মনে করো না, তোমাদের ভয়ে ভীত হেয় আমি এ সব বেয়াদবি সহ্য করছি একটা সিংহের তাড়া খেয়ে প্রাণের ভয়ে আমি এখানে এসে লুকিয়েছি আর তোমাদের অত্যাচার সহ্য করছি। সিংহটা চলে যাক, তখন তোমাদের বুঝিয়ে দেব, আমার সঙ্গে তোমাদের তফাত কতটা।

শিক্ষামূলক ঃ বলবানের দ্বারা বিপদগ্রস্ত লোককে অতি দুর্বল ব্যক্তিরাও লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে।

মুক্তোর মূল্য

একদিন খামারে শস্যদানা কুড়িয়ে খাচ্ছিল এক মুরগি। শস্যদানার সঙ্গে একটা মুক্তো পড়ে ছিল । ভুল করে সেটা ঠোঁটে তুলে নিয়েছিল মুরগী। কিন্তু পরক্ষণেই ঠোঁট ঝেড়ে ফেলে দিল ।

মুক্তো বলল, কী হল ভাই, আমাকে তুমি ফেলে দিলে যে বড়! আমার কত দাম তা জান?
মুরগি বলল, ভাই কিছু মনে করো না। শস্যদানা ভেবে ভুল করে তোমাকে তুলে নিয়েছিলাম।

অনেকের কাছেই তুমি মূল্যবান আমি জানি। তাদের কাছে তোমার আদরও খুব। কিন্তু আমি তোমাকে তেমন মনে করি না। কারণ একটা মুক্তাদানার চাইতে ধান, গম বা কলাইয়ের দানা আমার কাছে অনেক বেশি আদরের আর দামী।

শিক্ষামূলক : অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে বোকারাই মহামূল্যবান মনে করে তার জন্য লালায়িত হয়।

দুই বন্ধু ও ভালুক

একদিন দুই বন্ধু বনে ঘুরতে বেরিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে তারা নানা রকম গল্প করছিল। এমন সময় সামনের জঙ্গল থেকে পথের ওপরে উঠে এল বিশাল চেহারার এক ভালুক ৷

আচমকা ভালুক দেখে এক বন্ধু খুবই ভয় পেয়ে গেল। সে গাছে চড়তে জানত। তাই ছুটে গিয়ে ঝটপট এক গাছে চড়ে বসল। সঙ্গের বন্ধুর কী অবস্থা হল, ফিরেও দেখল না ৷

দ্বিতীয় বন্ধু গাছে চড়তে জানত না। সে শুনেছিল ভালুক মরা মানুষ ছোঁয় না। তাই ছুটে পালাতে না পেরে পথের ওপর সটান মড়ার মত দমবন্ধ করে পড়ে রইল ৷

ভালুক এগিয়ে এসে দ্বিতীয় বন্ধুর নাক কান মুখ শুঁকে দেখল । বারবার এমনি করে শুঁকে সে মানুষটাকে মৃত মনে করে নিজের পথে চলে গেল ৷ ভালুক চলে যাবার কিছু পরেই প্রথম বন্ধু গাছ থেকে নেমে এল ।

বন্ধুর কাছে গিয়ে সে বলল, ভাই, ভালুকটা তোমার কানের কাছে মুখ রেখে মনে হল যেন কিছু বলছিল?
দ্বিতীয় বন্ধু উঠে বসে বলল, হ্যাঁ, ভালুক আমার কানে কানে বলে গেল, বিপদের সময় যে বন্ধুকে ফেলে পালায় তার সঙ্গে কখনও মিশবে না।

শিক্ষামূলক ঃ বিপদে বন্ধুর পরিচয় হয়।

উদরের সঙ্গে বিবাদ

একবার শরীরের হাত-পা জিভ মুখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একজোট হয়ে উদরের সঙ্গে বিবাদ শুরু করল। তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে ঠিক করল, উদরের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করবে না ।

হাত বলল, দেখ ভাইসব, আমরাই শুধু দিনরাত পরিশ্রম করে মরছি। আর ব্যাটা উদর, নবাবের মত কেবল বসে বসে খায়। আমরা খাবার জুগিয়ে দেই বলে না তার খাবার জোটে। সে ব্যাটা কুড়ের বাদশা হয়ে মজা লুটবে, আমরা কেন তার জন্য খেটে মরতে যাব?

সকলে শপথ নাও, এখন থেকে উদরের জন্য আর কোনও কাজ করা নয়।
হাতের কথায় সকলেই সায় জানাল। আর পরদিন থেকে তারা নিজের নিজের কাজ বন্ধ করে দিল। পা আর হাঁটাচলা করে না।

হাত মুখে খাবার তুলে দেয় না। উদরকে জব্দ করার জন্য মুখ আর দাঁত ও হাত গুটিয়ে রইল।
এভাবে দিন দুই বেশ কাটল ।

খাবার না পেয়ে শরীর আর সুস্থ থাকে কী করে! শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। সকলেরই নড়াচড়া করার শক্তি কমে
যেতে লাগল ।

অবস্থা দেখে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গদের টনক নড়ল। কারুর গলায় আর রা সরে না । সকলেই বুঝতে পারল, উদরকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেদেরই বিপদ ডেকে

এনেছে। উদর ছাড়া তারা অচল। সুস্থ ও সক্ষম থাকতে হলে উদরের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকতে হবে।
সেদিন থেকে তারা বিবাদ মিটিয়ে নিল।

শিক্ষামূলক ঃ পরস্পরের সাহায্য ছাড়া কেউই কেবল নিজের পরিশ্রমে বেঁচে থাকতে পারে না।

ব্যাধ ও ডাহুকপাখি

এক ব্যাধ জলার ধারে ফাঁদ পেতে রেখেছিল। সেই ফাঁদে আটকা পড়ল একটা ডাহুক পাখি। ব্যাধ তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ডাহুককে ধরতে গেল ।

প্রাণের ভয়ে ডাহুক ব্যাধকে বলল, ভাই, তুমি আমাকে মেরো না। ছেড়ে দিলে আমাকে দিয়ে তোমার অনেক উপকার হবে ।

ব্যাধ বলল, তুমি আবার আমার কী উপকার করবে? ডাহুক বলল, আমি অণ্য ডাহুকদের ভুলিয়ে তোমার ফাঁদে এনে ফেলব। তাহলে প্রতিদিনই তুমি অনেক পাখি পাবে।

ব্যাধ হেসে বলল, না পাখি, তোমাকে ছাড়ব না। নিজের ভালর জন্য তুমি তোমার জাতভাইদের ক্ষতি করার মতলব করছ্‌মেন যার স্বভাব তাকে আমি বিশ্বাস করে ছেড়ে দিতে পারি না ৷

শিক্ষামূলক ঃ নিজের সুখ সুবিধার জন্য যারা স্বজাতির ক্ষতি করতে চায় তারা বিশ্বাসের অযোগ্য।

চোর ও কুকুর

একবার এক চোর চুরি করার জন্য মাঝরাতে এক গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকেছিল । সেই গৃহস্থের ছিল একটা পোষা কুকুর। রাত জেগে সে তার প্রভুর বাড়ি পাহারা দিত।

চোর ঝোলায় করে কিছু রুটি এনেছিল। কুকুরটাকে দেখে সে রুটিগুলো তার সামনে ছড়িয়ে দিল। তখন কুকুর হেসে উঠে চোরকে বলল, এবারে আমার সন্দেহ ঘুচল।

তুমি যে একজন চোর আমি বুঝতে পারলাম। রুটি দিয়ে আমাকে ভুলিয়ে তুমি আমার প্রভুর সর্বনাশ করতে চাইছ। যদি বাঁচতে চাও, এখনি এখান থেকে পালাও ।

শিক্ষামূলক : বুদ্ধিমান লোক কারোর কাজ দেখেই তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে ।

কুকুর ও মাংসখণ্ড

একদিন এক কুকুর বড়সড় একটা মাংসখণ্ড কুড়িয়ে পেয়েছিল। সেটা মুখে পুরে সে সাঁকোর ওপর দিয়ে খাল পার হতে লাগল। চলতে চলতে কুকুরটা
নিচে খালের পানিতে তার ছায়া দেখতে পেল।

ছায়াটা যে তার নিজের তা সে বুঝতে পারল না। সে ভাবল অন্য একটা কুকুর পানির ভেতর দিয়ে মাংসের টুকরো মুখে নিয়ে যাচ্ছে।

এই ভেবে সে মাংসটা কেড়ে নেবার মতলবে ছায়া-কুকুরকে ভয় দেখাবার জন্য ঘেউ ঘেউ শব্দে ডেকে উঠল। যেমনি না মুখ খোলা তার মুখের মাংস টুপুস করে পড়ে তলিয়ে গেল খালের পানিতে ।

শিক্ষামূলক ঃ পরের দ্রব্যে লোভ করলে নিজেরই ক্ষতি হয়।

পথিক ও কুঠার

একদিন দুই পথিক বনের মধ্য দিয়ে চলেছে। যেতে যেতে একজন পথে একটা কুঠার কুড়িয়ে পেল। সেটা সে সঙ্গীকে দেখিয়ে বলল, দেখ, আমি কী সুন্দর একটা কুঠার পেলাম। দ্বিতীয় পথিক বলল, আমি পেয়েছি বলছ কেন, বল আমরা পেয়েছি।

দুজনে একসঙ্গে চলেছি, পথে কিছু পাওয়া গেলে সেটা দুজনেরই হওয়া উচিত ।

যে পথিক কুঠার পেয়েছিল সে বলল, তা হয় না ভাই। আমি কুড়িয়ে পেয়েছি, তাই কুঠারের মালিক একা আমিই। তোমাকে এর অংশ দেব কেন?
অন্য পথিক বলল, বেশ কথা। তুমি না দিলে আমি আর কী করতে পারি! কুঠার তুমিই নাও ।

এদিকে যাদের কুঠার হারিয়েছিল, তারা খুঁজতে খুঁজতে সেই সময় সেখানে উপস্থিত হল।
পথিকের হাতে কুঠার দেখতে পেয়ে তারা তাকেই জাপটে ধরল। বলল, ব্যাটা চোর, চল তোকে কুঠার চুরির মজা দেখাচ্ছি।

তখন সেই পথিক তার সঙ্গীকে ডেকে বলল, ভাই, এবার তো আমরা মরলাম।

দ্বিতীয় পথিক হেসে বলল, সে কী কথা! আমরা মরলাম বলছ কেন, বল আমি মারা পড়লাম। লাভের অংশ তো দিতে চাওনি, এখন কেন যেচে বিপদের অংশ দিতে চাইছ?

শিক্ষামূলক ঃ দুষ্টলোক বিপদে পড়লে নির্দোষকেও বিপন্ন করে ফেলে ।

চাষী ও তার গাধা

এক চাষী তার গাধাকে মাঠে চরাতে নিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সে দেখল, দূরে ঘোড়ায় চড়ে ধুলো উড়িয়ে ডাকাতের দল গ্রামের দিকে আসছে।
ভয় পেয়ে সে তখনি গ্রামের দিকে ছুটবার জন্য তৈরি হল। গাধাকে ডেকে বলল, শিগগির দৌড়ে চল, ডাকাতের দল আসছে।

পালিয়ে না গেলে ওরা আমাদের ধরে নিয়ে যাবে। চাষীর চেঁচামেচি শুনেও গাধা ব্যস্ত হল না। যেমন চলছিল সে তেমনই চলতে লাগল ।

চাষী ব্যস্ত হয়ে গাধাকে ছুটবার জন্য বারবার তাড়া দিতে লাগল। গাধা তখন বলল, প্রভু, আপনার কি মনে হয় ডাকাতদের হাতে পড়লে তারা আমাকে দিয়ে বোঝা বওয়াবে?

চাষী বলল, বওয়াবে বই কি, সব লুটের মাল তুলে দেবে পিঠে। গাধা হেসে বলল, তবে আর আমি ও নিয়ে চিন্তা করছি না প্রভু।

ডাকাতের হাতেও যখন কাজ একই করতে হবে, আমার লাভ ক্ষতি দু-ই সমান ।

শিক্ষামূলক ঃ প্রভু বদল হলেও দরিদ্র ভৃত্যের ভাগ্য অপরিবর্তিতই থেকে যায় ।

ঈগল পাখি ও দাঁড়কাক

একদিন এক মেষপালক তার ভেড়াগুলোকে ছেড়ে দিয়ে গাছতলায় বসে বিশ্রাম করছিল। এমন সময় এক ঈগলপাখি উড়ে এসে ছোঁ মেরে একটা বাচ্চা ভেড়া তুলে নিয়ে গেল। এক দাঁড়কাক বসেছিল গাছের ডালে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে সে খাবার জোটাতে পারেনি।

এখন ঈগলের কাণ্ড দেখে সে ভাবল, আমিই বা কম কিসে? ইচ্ছা করলে আমিও তো ঈগলের মত একটা ভেড়া তুলে আনতে পারি। এই ভেবে উড়ে গিয়ে সে একটা ভেড়াকে ছোঁ মেরে তুলতে গেল।

কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার নখ গেল ভেড়ার লোমের জটে আটকে। অনেক চেষ্টা করেও পা আর ছাড়াতে পারল না। শেষে ভয়ে কা- কা রব তুলে তার জাতভাইদের ডাকতে লাগল ।

কাকের ডাক শুনে মেষপালক তাকিয়ে দেখে, ভেড়ার লোমে কাকটা আটকে পড়েছে। সে দৌড়ে গিয়ে কাকটাকে আগে ছাড়ল। তারপর তার ডানাদুটো ভেঙ্গে গাছতলায় মাটিতে ফেলে রাখল । ডানাভাঙ্গা দাঁড়কাক সেখানেই পড়ে রইল।

পাটে গেলে মেষপালক কাকটাকে হাতে ঝুলিয়ে তার মেষের পাল নিয়ে বাড়ি ফিরে এল।
কোথায় পেলে?

মেষপালকের ছেলেমেয়েরা তাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা, এ অদ্ভুত পাখিটা মেষপালক হাসতে হাসতে বলল, বাছারা, এটা একটা ডানা-ভাঙ্গা দাঁড়কাক। ও নিজেকে ঈগলপাখি ভেবে ভেড়ার ছানা ছোঁ মারতে এসে ধরা পড়েছে।

শিক্ষামূলকঃ নিজের ক্ষমতা না বুঝে অন্যের অনুকরণ করতে গেলে বিপদে পড়তে হয় ।

পিঁপড়ে ও ঘাসফড়িং

এক পিঁপড়ে সারা শরৎকালটা কঠোর পরিশ্রম করে খাদ্য সঞ্চয় করেছিল। কারণ শীতকালে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। শীতকাল এলে পিঁপড়ে কিছু বাদ্য গর্ভের বাইরে রোদে শুকোতে দিল। সেই সময় এক ঘাসফড়িং সেখানে উপস্থিত হল।

সে বেচারা অনেকদিন খেতে পায়নি। তাই শরীর শুকিয়ে গেছে। ভাল করে চলতেও পারছিল না । পিঁপড়ে ঘাসফড়িংকে দেখে জিজ্ঞেস করল, কী খবর ভাই ঘাসফড়িং ! তোমাকে বড় কাহিল দেখছি যে?

অতি কষ্টে দম টেনে ঘাসফড়িং ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, ভাই, অনেকদিন খেতে না পেয়ে আমার এ অবস্থা। তুমি তো দেখছি অনেক খাদ্য সঞ্চয় করেছ। তোমার সঞ্চয় থেকে কিছু দিলে আমি খেয়ে বাঁচতে পারি। নইলে না খেয়েই মরতে হবে আমাকে ।

পিপড়ে বলল, শরৎকালটা বুঝি আলসেমি করে কাটিয়েছ? করলে খাদ্যের অভাব তো হবার কথা নয়। ঘাসফড়িং বলল, না ভাই, আলসেমি করে সময় কাটাইনি মোটেই। শরৎকালটা আমি দিনরাত গান করেছি, আনন্দ করেছি। শুনে হেসে ঘাসফড়িং বলল, তাহলে আর কী!

কাজকর্ম শরৎকালটা যখন গান করে কাটিয়েছ, শীতকালটাও নেচে নেচে আনন্দ করে কাটিয়ে দাও। খাবারের আর দরকার হবে না ।

শিক্ষামূলক : অসময়ের কথা ভেবে যারা সঞ্চয় করে তাদের দুঃখ পেতে হয় না।

চাষী ও সাপ

একবার শীতকালে শীত খুব জাঁকিয়ে পড়ল। হাড়-কাঁপানো ঠাণ্ডায় মানুষ, পশু-পাখি সকলেই জব্দ । সেই সময় এক চাষী দেখেতে পেল পথের ওপরে কুঁকড়ে-মুকড়ে পড়ে আছে একটা সাপ ।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় প্রাণীটার শরীর জমে যাবার মত অবস্থা হয়েছে ।
এভাবে একটা প্রাণীকে কষ্ট পেতে দেখে চাষীর খুব দয়া হল । সে সাপটাকে তুলে নিজের বুকের কাছে চেপে ধরে চলতে লাগল ।

চাষীর বুকের উত্তাপ পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সাপটা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠল। সে নড়াচড়া করার শক্তি ফিরে পেল ।

সাপ হল বিষাক্ত প্রাণী। ছোবল মেরে বিষ ঢালাই তার স্বভাব। তাই নড়াচড়ার শক্তি ফিরে পাবার সঙ্গে সঙ্গেই সে চাষীর বুকে ছোবল বসাল। আর বিষের জ্বালায় ছটফট করতে করতে অল্প সময়ের মধ্যে চাষী মারা গেল ।

শিক্ষামূলক ঃ দুর্জনকে প্রশ্রয় দিলে তাদের হাতেই সর্বনাশ হয়।

শেয়াল ও সারস পাখি

এক ছিল দুষ্ট শেয়াল । সুযোগ পেলেই সে অন্যদের নাকাল করত। একদিন তার পরিচিত এক সারস পাখিকে ডেকে সে বলল ভাই, আমার বাড়িতে কাল দুপুরে তোমার নেমতন্ন। সামান্য আয়োজন করেছি, অবশ্যই আসবে কিন্তু ।

সারস বলল, সে তো খুব ভাল কথা ভাই। আমি যাব তাহলে। কি পরদিন ঠিক সময়েই সারস শেয়ালের বাড়িতে হাজির হল ।
শেয়াল মজা করার জন্য সব ব্যবস্থাই করে রেখেছিল। তাই সারসকে আদর করে ডেকে বসাল। তারপর একটা বড় থালায় ঝোল ঢেলে নিয়ে সারসকে

বলল, এসো ভাই, খেতে বসা যাক। সারস এগিয়ে এলে বটে, তার ঝোল খাওয়া আর হল না। তার হল সরু লম্বা ঠোঁট। সেই ঠোঁট দিয়ে থালা থেকে ঝোল তুলে খাওয়া সম্ভব নয়। পেটে খিদে নিয়ে সে কেবল ঠোঁট দিয়ে থালার ঝোল নাড়তে লাগল এদিকে শেয়াল থালার পাশে বসে দিব্যি জিব দিয়ে চেটে ঝোল খেয়ে চলল ।

আর সারসের অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল অনেকটা ঝোল খাওয়া হয়ে গেলে শেয়াল মুখ তুলে বলল, সেকী ভাই, তুমি যে কিছুই খাচ্ছ না। রান্না বুঝি পছন্দ হয়নি।

শেয়ালের মতলব বুঝতে আর সারসের বাকি রইল না। তাকে বোকা বানানোই শেয়ালের উদ্দেশ্য। সে তখন বলল, না না ভাই, রান্না খুবই ভাল হয়েছে। তবে কী না ভাল জিনিস কমই খেতে হয়। তুমি খাও ভাই ।

খাওয়া দাওয়া চুকলে বাড়ি ফেরার পথে সারস বলল, ভাই শেয়াল, তুমি আজ খুব ভাল খাওয়ালে। কাল কিন্তু আমার ওখানে গিয়ে তোমাকে খাওয়া- দাওয়া করতে হবে।

শেয়াল বলল, মন্দ কী, যাব’খন ।
পরদিন দুপুরে শেয়াল সারসের বাড়িতে উপস্থিত হল ।

সারস শেয়ালকে জব্দ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছিল। সে একটা সরু-গলা কুড়োর মত পাত্রে মাংসের টুকরো রেখে শেয়ালকে খেতে দিল । পরে নিজেও এক কুঁজো মাংস নিয়ে খেতে বসল। বলল, এসো ভাই, খাওয়া শুরু করা যাক ।

এই বলে সে তার সরু ঠোঁট পাত্রের মুখ ঢুকিয়ে দিব্যি মাংস তুলে খেতে লাগল আর মিটিমিটি শেয়ালের অবস্থা দেখতে লাগল ।
শেয়াল তো কুঁজোর মধ্যে মুখ ঢোকাতে পারল না। খিদের জ্বালায় সে কেবল জিভ দিয়ে পাত্রের গা চাটতে লাগল ।

খাওয়া শেষ করে সারস শেয়ালকে বলল, ভাই কেমন খেলে? পেট ভরে খেয়েছ তো?
শেয়াল কী আর বলে। কোন রকমে দু-চার কথা বলে সারসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হল ।

শিক্ষামূলক ঃ অন্যের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করবে, তুমিও তেমন ব্যবহারই পাবে ।

খরগোস ও কচ্ছপ

বনের পথ ধরে চলেছিল এক কচ্ছপ। পথের পাশে ঝোড়ের ভেতরে ছিল এক খরগোশ। কচ্ছপের হাঁটার ধরন দেখে সে আর হাসি চাপতে পারল না। হাসতে হাসতে সে কচ্ছপের সামনে এসে দাঁড়াল।

খরগোশকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল কচ্ছপ। জিজ্ঞেস করল, কী ভাই, খুব যে হাসছ? ব্যাপার কি?
শুনে খরগোশের হাসি আরও বেড়ে গেল। বলল, না হেসে আর করি কি বল? তোমার যা হাঁটার ঢং।

অবাক হয়ে কচ্ছপ বলল, হাঁটার দোষ কী দেখলে? আমি তো চিরকাল এভাবেই হাঁটি ভায়া। ভাত কি কম খরগোশ বলল, তাই তো দেখছি। কিন্তু এমনভাবে গুটগুট করে চলে তোমার জীবন চলছে কী করে তাই ভাবছি।

আমি দেখছ না কেমন বাতাসের বেগে ছুটে চলি-ঝটপট সব কাজ হয়ে যায় আমার। শা কচ্ছপ বলল, খরগোশ ভায়ার বড়ই দেমাক দেখছি। আমার সঙ্গে দৌড়ের একটা লড়াই হয়ে থাক তাহলে !

কচ্ছপের কথা শুনে খরগোশ কিন্তু হাসল না। গম্ভীর স্বরে বলল, তোমার সাহস তো কম নয় হে, আমার সঙ্গে দৌড়ের পালণ্ঢা দিতে চাইছ?
কচ্ছপ বলল, অত কথায় কাজ কি? এস যাচাই হয়ে যাক ।

দুজনে মিলে তখন ঠিক করে নিল জঙ্গলের পথের শেষ প্রান্তে একটা বুড়ো বটগাছ হবে তাদের দৌড়ের শেষ সীমানা। একসঙ্গে দৌড় আরম্ভ করে যে আগে সেখানে পৌঁছতে পারবে সেই জিতবে।

কথাবার্তা পাকা করে কচ্ছপ আর খরগোশ মিলে শুরু করল দৌড় ।
কিন্তু কচ্ছপ এণ্ডবে কী চোখের পলকে খরগোশ তাকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেল ।

এক দৌড়ে অনেকটা পথ গিয়ে খরগোশ একবার থামল। পেছন ফিরে কচ্ছপকে কোথাও দেখতে পেল না। সে ভাবল, কচ্ছপের এ পর্যন্ত পৌঁছতে এখনও অনেক দেরি। এ সুযোগে গাছের ছায়ায় একটু বিশ্রাম করে নেওয়া যাক। পরে আর এক ছুটে বুড়ো বটতলায় পৌঁছে যেতে কতক্ষণ ।

এ ভেবে সে পথের পাশের গাছতলায় বসল বিশ্রাম করতে। আর কিছুক্ষণ পরেই পড়ল ঘুমিয়ে।
এদিকে কচ্ছপ তো গুটিগুটি পায়ে এগুচ্ছে। খরগোশকে তার আগে দৌড়ে যেতে দেখেও সে একটুও দমন না। একইভাবে চলতে লাগল ।

হাঁটতে হাঁটতে একসময় সে খরগোশ যেখানে ঘুমিয়ে পড়েছিল, সে জায়গা পার হয়ে চলে এল । খরগোশ কিছুই টের পেল না ।

এদিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যেতে খরগোশ তো ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াল। সামনে পেছনে তাকিয়ে কচ্ছপকে কোথাও দেখতে পেল না। ভাবল, সে নিশ্চয় এখনও পেছনেই পড়ে আছে। ভালই হল, এবারে এক ছুটে সে বুড়ো বটতলায় পৌঁছে আর একটা ঘুম দিতে পারবে।

এ ভেবে সে ছুটতে শুরু করল। কিন্তু পথের বাঁক ঘুরতেই তার ভুলটা ভাঙ্গল । নিশানা গাছটা সেখান থেকে চোখে পড়ে। সে দেখতে পেল, কচ্ছপ তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ছুটে গিয়ে তাকে আর নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। তবুও পড়িমরি করে সে ছুটতে লাগল ।

খরগোশ বুড়ো বটতলায় পৌছবার অনেক আগেই কচ্ছপ সেখানে পৌঁছে গেল। খরগোশ সেখানে পৌঁছলে সে ডেকে বলল, কী হল ভায়া, দৌড়ের পালণ্ঢায় তাহলে আমারই জিৎ হল বল ।

লজ্জায় খরগোশ মুখ নিচু করে রইল। তার মুখে আর কথা সরে না ৷

শিক্ষামূলক ঃ ধীরভাবে লেগে থাকলে কাজে অবশ্যই সফল হওয়া যায়।

সারসী ও কৃষক

এক সারসী খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছিল এক ধানক্ষেতে। সেখানে সে তার ছোট্ট ছানাদের রেখে প্রতিদিন সকালে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে যেত। ফিরে আসত সন্ধ্যায়। বাচ্চারা কবে বড় হয়ে নিজেরাই খাবার খুঁজতে বেরুবে, সেই আশাতেই সে দিন গুণছিল ।

ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন পরেই কৃষকের লোকজন পাকা ধান কাটতে শুরু করবে। তার আগেই বাচ্চারা লায়েক হয়ে না উঠলে বড় বিপদ ।

প্রতিদিন বাইরে যাবার আগে সারসী তার বাচ্চাদের বলে যায়, শোন বাছারা লোকজন ক্ষেতে এলে তারা কী বলা-কওয়া করে মন দিয়ে শুনবে। ফিরে এলে আমাকে সব কথা বলবে ।

একদিন সারসী বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। খানিক পরেই ক্ষেতের মালিক এল ধানের অবস্থা দেখতে। সঙ্গে তার এক বন্ধু ।
ক্ষেতের চারপাশটা ঘুরে দেখে বন্ধুটি চাষীকে বলল, ধান তো দেখছি কাটার মত হয়েছে। এবারে লোকজন জোগাড় কর।

চাষী বলল, হ্যাঁ পাড়ার কাউকে বলতে হবে যাতে ধানগুলো কেটে বাড়িতে তুলে দেয় ।
তারপর দুই বন্ধুতে বাড়ির দিকে চলে গেল ।

সন্ধ্যাবেলা সারসী ফিরে এলে বাচ্চারা সব কথা তাকে জানিয়ে বলল, মা, তুমি শিগগির আমাদের এখান থেকে নিয়ে চল। ধান কাটতে এসে লোকজন আমাদের দেখতে পেলে মেরে ফেলবে।

বাচ্চাদের অভয় দিয়ে সারসী বলল, ভয়ের কিছু নেই বাছা। এখুনি ধান কাটা হচ্ছে না। দেখছ না চাষী তার প্রতিবেশীদের ওপর ভরসা করে আছে।
দিন দুয়েক পরে চাষী ছেলেকে সঙ্গে করে ধান ক্ষেতে এল। ক্ষেতের অবস্থা দেখে ছেলেকে বলল, দেখ অবস্থা।

এত করে বলে এলাম, তবু কেউ ধানটা কাটতে এল না।
ছেলে বলল, বাবা, ধান তো দেখছি সবই পেকে গেছে। আর দেরি করলে সব ধান পাখিতে খেয়ে যাবে ।

চাষী বলল, বাড়ি গিয়েই তোমার কাকাদের বলবে, কালই যেন তারা ধান কাটতে শুরু করে।
সেদিনও সারসী ফিরে এলে বাচ্চারা তাকে সব কথা জানাল । শেষে বলল, মা, তুমি আর আমাদের ওভাবে ফেলে রেখে যেয়ো না। তাহলে কাল ফিরে এসে আমাদের আর দেখতে পাবে না ।

বাচ্চাদের কথায় হেসে উঠে সারসী বলল, বাছারা ভয় পাবার মত এখনও কিছু হয়নি। চাষী তার ভাইদের ভরসায় রয়েছে। নিজেদের ধান আগে না কেটে তারা এখানে আসবে না। কাল চাষী এসে কী বলে মন দিয়ে শুনবে । পরদিন সকাল হতেই সারসী খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে গেল। আর কিছু পরেই চাষী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হল ।

ক্ষেতে কোন লোক দেখতে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চাষী ছেলেকে বলল, আজও দেখছি কেউ এল না। আর তো কারুর ওপর ভরসা করে পাকা ধানগুলো ফেলে রাখা যায় না। তুমি একটা কাজ করো, বাড়ি গিয়ে কজন লোক ঠিক কি করো তাদের নিয়ে কাল থেকে নিজেরাই ধান কাটতে শুরু করব।

সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে সারসী সব কথা বাচ্চাদের কাছে শুনতে পেল। এবারে সে বলল, বাছারা, এবারে সত্যিই আমাদের এ ক্ষেত ছেড়ে যাবার সময় হয়েছে। অন্যের ভরসা ছেড়ে চাষী এবার নিজেই নিজের কাজ করবে বলে ঠিক করেছে।

এবার আর দেরি হবে না। কাল সকালে ওরা আসার আগেই আমরা এখান থেকে বেরিয়ে পড়ব।

শিক্ষামূলক ঃ নিজের কাজ নিজে করতে পারলে অনেক বিপদ এড়ানো যায় ।

লেজ-কাটা শেয়াল

একবার এক শেয়াল পড়েছিল শিকারীর ফাঁদে। অনেক কায়দা-কসরৎ করে বেচারা কোন মতে নিজেকে মুক্ত করল। কিন্তু পালাবার সময় তার লেজটা পড়ল কাটা। লেজ হারিয়ে শেয়াল খুবই লজ্জায় পড়ে গেল। জাতভাইদের সামনে বেরুতে পারে না। আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে চলাফেরা করে ৷

কিন্তু কদিন আর এভাবে থাকা যায়! শেষে অনেক ভেবেচিন্তে সে একটা মতলব বের করল। ঠিক করল, কৌশল করে অন্য শেয়ালদেরও লেজ কাটাতে হবে। তাহলে বুক ফুলিয়ে সবার সঙ্গে চলাফেরা করতে কোন লজ্জা থাকবে না ।

এরপর একদিন সে তার জাতভাইদের ডেরায় গিয়ে বলল, ভাইসব, তোমরা সকলে এস, একটা জরুরী বিষয় তোমাদের জানাতে এলাম ।

এ কথায় তখনই সব শেয়াল সেখানে জড়ো হল। তারা বলল, তোমার চেহারা এমন পাল্টে গেল কী করে?
লেজ-কাটা শেয়াল বলল, সে-কথাই তো বলতে এলাম। ভাইসব, অনেক ভেবেচিন্তে আমি আমার লেজটা কেটে বাদ দিয়েছি।

আমার এখন চলতে ফিরতে অনেক সুবিধা হয়েছে। শরীর কত হাল্কা! দেখো আমি যে আনন্দ পাচ্ছি, আমার ইচ্ছা তোমরাও সেই আনন্দ সুবিধা ভোগ কর ৷

খানিক থেমে সে আবার বলতে লাগল, তোমরা ভেবে দেখ, লেজটা আমাদের শরীরে একটা বোঝা ছাড়া কিছু না। শরীরের এ বাড়তি অংশটার জন্য আমাদের এতত সুন্দর চেহারাও কত কুৎসিত দেখায়। এমন একটা বিচ্ছিরি জিনিস আমরা বোকার মত বয়ে বেড়াচ্ছি।

আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, তোমাদের চেয়ে আমাকে কত ছিমছাম দেখাচ্ছে। খরগোশের পেছনে ধাওয়া করে কাঁটা ঝোপে ঢোকার উপায় ছিল না । এখন কাঁটালতা আমার লেজ আঁকড়ে ধরে না। তাই আমি বলি, বন্ধুগণ তোমরা সকলেই আমার মত সুখী হও, আরামে থাক-শরীর থেকে লেজটাকে ছেঁটে বাদ দাও।

আজ থেকেই লেজহীন হওয়ার শপথ নাও । লেজ-কাটা শেয়ালের বক্তৃতা শুনে শেয়ালের দল চঞ্চল হয়ে উঠল। কী করবে বুঝতে না পেরে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল ।

সেই সময় এক বুড়ো শেয়াল দাঁড়িয়ে উঠে বলল, শোনো ভাইসব, এ লেজ- কাটা শেয়াল যেচে আমাদের উপদেশ দিচ্ছে যাতে আমরাও তার মত লেজ কেটে বাদ দিই।

তোমরা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কেন সে আমাদের এতদিনের সঙ্গী লেজটাকে বাদ দিতে বলছে।
দ্যাখো, এ শেয়াল নিশ্চয়ই কোন খারাপ কাজ করতে গিয়ে নিজের লেজটি খুইয়েছে। লজ্জায় সে তাই আমাদের সঙ্গে মিশতে পারছে না।

এখন তার কথা মত আমরাও যদি লেজ কেটে বাদ দিই, তাহলে তাকে আর কেউ লেজ-কাটা শেয়াল বলবে না। সে বুক ফুলিয়ে চলতে পারবে।
এ দুষ্টু শেয়াল নিজের সুবিধার জন্য আমাদের শেয়াল জাতির ক্ষতি করতে চাইছে। তাই বলি বন্ধুগণ, সাবধান, কথায় ভুলে কেউ যেন লেজে কেটে বাদ দিও না ।

শিক্ষামূলক ঃ স্বার্থপর লোক নিজের ভালর জন্য অন্যের ক্ষতি করতেও পিছ-পা হয় না ।

বেজি, সাপ ও ইঁদুরের দল

এক বাড়িতে অনেক ইঁদুর আস্তানা গেড়ে ছিল। ইঁদুরের লোভে সেই বাড়িতে একদিন এসে জুটল এক সাপ আর এক বেজি ।
বেজি সাপে জাতশত্রুতা। প্রথম দু চারদিন ইঁদুর নিয়ে ব্যস্ত থেকে নিজেদের শত্রুতার কথা তারা ভুলে ছিল।

কিন্তু একদিন বেজি ইঁদুরদের ছেড়ে সাপকেই আক্রমণ করে বসল ।
সাপ বেজির লড়াই-কেউ কারুর চাইতে কম যায় না। অনেকক্ষণ ধরে চলল সেই যুদ্ধ । ক্ষতবিক্ষত হয়েও তাদের দমবার নাম নেই ।

এদিকে দুইশত্রুকে নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে দেখে ইঁদুরের দল গর্ত থেকে বেরিয়ে আনন্দে নাচানাচি জুড়ে দিল ইঁদুরদের উলণ্ঢাস দেখে সাপ আর বেজির হুঁশ হল। লড়াই বন্ধ করে সাপ বেজিকে বলল, দেখ দেখ, আমাদের মারামারি করে মরতে দেখে ইঁদুরেরা কেমন আনন্দ করছে!

বেজি বলল, তাই তো হে। আমরা যে-কেউ একজন মরলেই তো ওদের একজন শত্রু কমবে। কেন আমরা বোকার মত যুদ্ধ করছি?
সাপ বলল, আমিও তো সেই কথাই বলছি। বন্ধ কর এসব লড়াই। এস মিলেমিশে ইঁদুর ধরবার চেষ্টা করি।

তখন শত্রুতা ভুলে ইঁদুর আর বেজি আবার একজোট হয়ে গেল। তারা দুজন দুদিক থেকে ইঁদুরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

শিক্ষামূলক ঃ স্বার্থের প্রয়োজনে পরস্পর শত্রুর মধ্যেও মিত্রতা হয়ে থাকে ।

বৃদ্ধ ও তার ছেলেরা

এক বৃদ্ধের ছিল চার ছেলে। ছেলেদের নিয়ে বৃদ্ধের মনে শান্তি ছিল না। কারণ তারা প্রায়ই নানা কারণে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করত
তারা যখন ঝগড়া-বিবাদ করত, তখন পাড়া-পড়শীরামজা পেত আর হাসত।

এদিকে বৃদ্ধের দিনও ফুরিয়ে আসছিল। তার মৃত্যুর পরে ছেলেরা যে মিলেমিশে থাকতে পারবে না তা সে ভালই বুঝতে পারছিল। তাই চিন্তায় চিন্তায় তার দিন কাটছিল।

শেষে ছেলেদের মঙ্গলের কথা ভেবে বৃদ্ধ একটা বুদ্ধি ঠিক করল। একদিন সে সব ছেলেকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল। সকলে উপস্থিত হলে সে এক ছেলেকে কিছু কঞ্চি আনতে বলল ।

আঁটি বাঁধা হলে বৃদ্ধছেলেদের বলল, তোমরা চেষ্টা করে দেখো তরে আঁটিটা ভাঙ্গতে পার কিনা ছেলেরা একে একে সকলেই আঁটিটা ভাঙ্গবার চেষ্টা করল। কিন্তু এক আঁটি কঞ্চি ভাঙ্গা কারোর পক্ষেই সম্ভব হল না ।

বৃদ্ধ তখন তার বড় ছেলেকে বলল, দেখি তুমি এবারে আঁটিটা খুলেফেল । আর একটি একটি করে কঞ্চি বার করে ভেঙ্গে ফেল।
বাপের কথামতো বাড় ছেলেটি আঁটিটা খুলে ফেল। তারপর হাতের চাপ দিয়ে দেখতে দেখতে পটাপট সব কটি কঞ্চিই ভেঙ্গে ফেলল।

ছেলেরা বাবার উদ্দেশ্য কিছুই বুঝতে পারছিল না। কেবল তার আদেশ মতো কাজ করে গেছে। এবার বড় ছেলেটি জানতে চাইল, বাবা, কঞ্চিগুলো অমন করে ভাঙ্গালে কেন?

বৃদ্ধ হেসে বলল, আমি কঞ্চিগুলো দিয়ে তোমাদের বোঝাতে চেয়েছি, তোমরা প্রত্যেক ভাই। মিলেমিশে থাকবে। নিজেদের মধ্যে একতা রেখে চলতে না পারলে দুঃখের শেষ থাকবে না। তখন তোমাদের অবস্থা হবে খোলা আঁটির কঞ্চিরমতো। বিপদ-আপদে নাজেহাল হবে। তেমাদের দুরবস্থা দেখে শত্রুরা আড়ালে হাসবে।

দেখো, একসঙ্গে আঁটিবাঁধা কঞ্চিগুলোকে চেষ্টা করেও তোমরা ভাঙ্গতে পারলে না। তোমরা যদি এমনি মিলেমিশে থাক, তাহলে কেউ তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। শত্রুরা ভয়ে দূরে সরে থাকবে। এমন থেকে আমার এই কথাটা মনে রেখো ।

বৃদ্ধর ছেলেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সেই দিনই শপথকরল, বাবার উপদেশ মতোই তারা চলবে।

শিক্ষামূলক ঃ একতাই মহাবল ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top