নেক আমল বই #7 খতমে শিফা পড়ার নিয়ম – খতমে জালালী পড়ার নিয়ম

খতমে শিফা পড়ার নিয়ম, শিফা শব্দের আরবী মূল শব্দ شِفاء যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে খতমে শিফা অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম. কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়?

খতমে শিফা পড়ার নিয়ম

খতমে শিফা পড়ার নিয়ম, বিবিধ খতমের বিবরণ

বিবিধ খতমের বিবরণ
মহান আল্লাহ্ তা’আলা কোন কোন সময় মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক, বিপদ-মুছীবত দিয়ে থাকেন। কেননা মানুষ সুখে থাকলে দেখা যায় সে আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ার মোহে লিপ্ত হয়ে পরকালকে নষ্ট করে ফেলে। সুতরাং এ ধরনের লোকদের আল্লাহভীতি ও পরকালমুখী করার জন্যই এসব বিপদ-মুছীবত হয়ে থাকে। ফলে মানুষ অনেক বেশি পরিমাণে কান্নাকাটি ও রোনাজারি করে আল্লাহভীরু ও পরকালমুখী হয়ে থাকে।

আবার এমনও কিছু কিছু লোক আছে যে, তাদেরকে দুনিয়ার সর্বোচ্চ আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস করার পরও আল্লাহভীতি ও পরকাল বিমুখী করতে পারে না। আল্লাহ্ তা’আলা ঐসব লোকদেরকেও বিপদ-মুছীবত দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন, যেন তারা সুখের কারণে আল্লাহকে ডাকত এখন বিপদের কারণে ধৈর্যধারণ করে কি না? আর যারা এ সব পরীক্ষায় ধৈর্যের সাথে কৃতকার্য হবে তারাই খোদার প্রিয়পাত্র হবে। তাই মহান দয়াময় আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে বিপদ-মুছীবতে ফেলে যেমনি পরীক্ষা করতে চান তেমনি আবার সেসব বিপদ-মুছীবত হতে মুক্তি লাভ করার জন্য বিভিন্ন উপায়ও শিক্ষা দান করেছেন। আর সে শিক্ষাসমূহ হল, বিভিন্ন ধরনের খতম ও দোয়াসমূহ। নিম্নে কতিপয় খতমের নিয়ম বর্ণনা করা হল ।

খতমে তাসমিয়্যাহ

খতমে তাসমিয়্যাহ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থ : পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করলাম ।

নিয়ম ঃ একজনে বা কয়েকজনে মিলে পাক-পবিত্র হয়ে একাগ্রচিত্তে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার এ খতম পাঠ করতে হয়। এ খতমকে খতমে তাসমিয়্যাহ বলে।

ফযীলত ঃ যাবতীয় কঠিন ও কষ্টসাধ্য কাজ সমাধা করার জন্য এ খতম আগুনের মত দ্রুত ফলদায়ক।

খতমে জালালী

খতমে জালালী
(আল্লাহু) মহানআল্লাহর ইসমে যাত
খতমে জালালী পড়ার নিয়ম : কয়েকজন দ্বীনদার পরহেযগার নামাযী লোক একত্রিত হয়ে অত্যন্ত পাক-পবিত্রতার সাথে ছোট ছোট কাগজের টুকরা করে উক্ত কাগজের টুকরাসমূহের প্রত্যেকটিতে (আল্লাহু) লিখবে এরপর আটার খামির বানিয়ে ছোট ছোট করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার গুলি তৈরি করবে এবং প্রত্যেকটি গুলির ভেতর ঐ আল্লাহ্ লেখা কাগজগুলো ঢুকিয়ে বড় বড় মাছওয়ালা পুকুর বা নদীতে ফেলতে থাকবে। কাগজে লিখতে, গুলি বানাতে ও নদীতে ফেলার সময় সকলেই মুখে (আল্লাহ্) নাম উচ্চারণ করতে থাকবে। এ খতম কিন্তু খুব পাক-পবিত্রতার সাথে আদায় করতে হবে এবং আদব রক্ষা করে চলতে হবে নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে ।

ফযীলত : এ খতমে এত দ্রুত ফলাফল লাভ করা যায়, যাকে বলতে গেলে হাতেনাতে পাওয়ার মত বুঝায় ।

খতমে শিফা বা তাহলীল

খতমে শিফা বা তাহলীল
(লাইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।
নিয়ম : একজনেই অত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে রোগীর মাথার পাশে বসে পাঠ করবে। যে পর্যন্ত রোগীর রোগের শান্তি না আসে ।

ফযীলত : ১। এ খতম পাঠ করার ফযীলতে বিভিন্ন রকম রোগ-ব্যাধি হতে মুক্তিলাভ করা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয় ও সকল প্রকারের উদ্দেশ্য সফল হয় বলে এ খতমকে খতমে শিফাও বলা হয় ।

ফযীলত : ২। অন্য বর্ণনায় আছে, কারও যদি কোন দুঃখ-কষ্ট উপস্থিত হয় কিংবা কোন মুর্দার রূহের উপর বখশীশ করতে ইচ্ছা হয়। তবে উক্ত দোয়াসমূহ

এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করে মহান আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি উদ্দেশ্য করে সফলতার জন্য মুনাজাত করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা উক্ত দোয়া কবুল করবেন। এ কালিমার আরও একটি আশ্চর্য গুণ হল যদি কোন রোগীর নিকট বসে এমন উচ্চ আওয়াজে পাঠ করবে যেন রোগী শুনতে পায়। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় দশ-বিশ হাজার বার এ কালিমা পড়তে না পড়তেই উক্ত অসুস্থ রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। এটি বহু পরীক্ষিত।

ফযীলত : ৩। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত কালেমা শরীফ এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করে কোন মৃত ব্যক্তির রূহে বখশীশ করে দেয়, মহান আল্লাহ্ তা’আলা এ উছিলায় তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বেহেশ্ত দান করবেন।

খতমে খাযেগান

খতমে খাযেগান
নিয়ম : এ খতম পাঠ করার নিয়ম হল কয়েকজন পরহেযগার-মুত্তাকী লোর অত্যন্ত পাক-পবিত্রতার সাথে বসে ৭ বার সূরায়ে ফাতিহা, ১০০ বার কুলহু আল্লাহ, আবার ৭ বার আলহামদু সূরা, ১০০ বার দরূদ শরীফ এবং ১০০ বার
উচ্চারণ : ফাসাহহিল ইয়া ইলাহী কুল্লা ছা’আবিম বেহুরমাতি সাইয়্যিদিল আবরারি সাহহিল বি ফাদ্বলিকা ইয়া ‘আযীযু।

অর্থ : হে আল্লাহ! নেককারগণের নেতার সম্মানার্থে আমার প্রতিটি কঠিন কাজসমূহকে সহজ করে দাও। হে ক্ষমতাবান! তোমার করুণা ও দয়া দ্বারা সহজ করে দাও।
তারপর—
১০০ বার – (ইয়া ক্বাদ্বিয়াল হাজাত)
অর্থ : হে আবশ্যকতা পূরণকারী ।

১০০ বার-এ (ইয়া কাফিয়াল মুহিম্মাত)
অর্থ : হে বড় কাজসমূহ আঞ্জাম দানকারী!

১০০ বার- (ইয়া দাফি আল বালিয়্যাত)
অর্থ : হে বিপদসমূহ ধ্বংসকারী।
১০০ বার (ইয়া মুজীবাদ্দা’ওয়াত)
অর্থ : হে প্ৰাৰ্থনা গ্রহণকারী।
১০০ বার (ইয়া রাফি ‘আদ্দারাজাত)
অর্থ : হে মর্যাদা বৃদ্ধিকারী ।

১০০ বার-
(ইয়া গাউছু আগিছনী ওয়া আমদিদনী)
অর্থ : হে প্রার্থনা কবুলকারী। আমার প্রার্থনা কবুল কর এবং আমাকে সাহায্য কর।

১০০ বার -(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
অর্থ : নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব ।

১০০ বার-
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাহ্ যোয়ালিমীন ।
অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তোমারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের মধ্যে গণ্য।

১০০ বার-
(রাব্বি আন্নী মাগলূবুন ফানতাছির)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি অত্যাচারিত হয়ে তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে সাহায্য কর ।

১০০ বার-
(রাব্বি আন্নি মাচ্ছানিয়াদ্বদ্বুররু ওয়াআনতা আরহামুর রাহিমীন)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি অত্যধিক ক্ষতিগ্রস্ত ও পীড়িত হয়েছি এবং তুমিই দয়ালু ও মেহেরবান ।

১০০ বার-
(ইয়া আরহামার রাহিমীন)
অর্থ : হে দয়াময় ও দয়ালু প্রভু।
প্রকাশ থাকে যে, এসব দোয়াসমূহ যথারীতি পাঠ করে নিম্নলিখিত আয়াতে শিক্ষাসমূহ এবং সালামসমূহ পাঠ করবে।

৬টি আয়াতে শিফা

(ওয়া ইয়াশফি ছুদূরা ক্বাওমিম মু’মিনীন)

(ওয়া শিফাউঁল্লিমা ফিচ্ছুদূরি)

উচ্চারণ : ওয়াইয়াখরুজু মিমবুত্বনিহা শারাবুম মুখতালিফুন আলওয়ানুহু ফীহি শিফাউন্‌ লিন্নাছি।

উচ্চারণ : ওয়ানুনাযিলু মিনাল কুরআনি মা হুয়া শিফাউওঁ ওয়া রাহ্মাতুল্লিল

(ওয়াইযা মারিদ্বতু ফাহুয়া ইয়াশফীনা)

(ক্কুলহুয়া লিল্লাযীনা আমানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।)

৬টি আয়াতে সালাম

(সালামুন ক্বাওলাম মির রাব্বিররাহীম)
(সালামুন আলা ইলইয়াসীন)
(সালামুন আলা নূহিন ফিল’আলামীন)
(সালামুন আলাইকুম জ্বিবতুম ফাদখুলূহা খালিদীন)
(সালামুন আলা মুসা ওয়া হারুন)
(সালামুন হিয়া হাত্বা মাত্বলা’য়িল ফাজরি)

১০০ বার যে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করে নিজের উদ্দেশ্য সফল হবার নিমিত্তে দোয়া-মুনাজাতের জন্য হাত উঠিয়ে প্রথমে সমস্ত নবীগণ, ‘আশারায়ে মুবাশশেরাগণ, আউলিয়াগণের রূহ মুবারকে ছাওয়াব রেছানী করে বলবে, হে আল্লাহ্! তাদের রূহানী ফয়েজের বরকতে আমার দোয়া কবুল কর ।

ফযীলত : এ খতমের দ্বারা কোন চাকরি, কার্যসিদ্ধি বা উদ্দেশ্য সফল করতে আশাতীতভাবে ফল লাভ করা যায় ।

খতমে ইউনুস

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাহ্ যোয়ালিমীনা ।
অর্থ : হে আল্লাহ্! আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীগণের মধ্যে গণ্য ।
নিয়ম : উক্ত দোয়াটি এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে খতমে ইউনুস বা বড় খতম বলা হয় ৷

আল্লাহ্ পাক কোন এক সময় হযরত ইউনুস (আঃ)-এর উপর অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণে মাছে তাঁকে খেয়ে ফেলেছিল। ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন মাছের পেটে থেকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে একান্ত আগ্রহের সাথে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করার ফলে মহান আল্লাহ্ তা’আলা নবী ইউনুস (আঃ)-কে মুক্ত করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা করেন –

(ওয়া কাযালিকা নুনজিলমু’মিনীন।)
অর্থ : এবং আমি এভাবেই ঈমানদারগণকে বিপদ হতে উদ্ধার করব।

নিয়ম ঃ উক্ত দোয়া প্রতি একশত বার পর্যন্ত পড়া শেষ হলে নিম্নের দোয়াটি একবার পাঠ করবে।

উচ্চারণ ঃ ফাসতাজাবনা লাহু ওয়ানাজ্জাইনাহু মিনাল গাম্নি ওয়াকাযালিকা নুনজিল মু’মিনীনা।

অর্থ ঃ অতঃপর আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছি এবং আমি তাঁকে ঘোর বিপদ হতে উদ্ধার করেছি, আর আমি বিপদগ্রস্ত ঈমানদার বান্দাদেরকেও রক্ষা করে থাকি ।
ফযীলত : বুযুর্গ লোকগণ বলেছেন, যদি কোন লোক বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা বিপদের আশংকা থাকে এবং তাড়াতাড়ি উদ্ধার পেতে চায়, তবে মহান আল্লাহর সে ওয়াদার উপর ভরসা রেখে উক্ত দোয়াটি খালেছ নিয়্যতে পাক-পবিত্র অবস্থায় হতে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করবে। মহান আল্লাহ্ তাদেরকে ঘোর বিপদ ইন্‌শাআল্লাহ্ উদ্ধার করবেন ।

ফযীলত : পবিত্র হাদীস গ্রন্থে নবী আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেন- মহান আল্লাহ্ তা’আলার আসমায়ে হুসনা (গুণবাচক সুন্দর নামসমূহ) ৯৯টি । এগুলো দ্বারা দোয়া প্রার্থনা করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ দান করে উল্লেখ করেন—

(ওয়ালিল্লাহিল আসমাউল হুসনা ফাদ উহু বিহা)
অর্থ : আল্লাহ্ তা’আলার সবগুলো নামই সুন্দর, অতএব তোমরা এসব নামের দ্বারাই তাঁকে ডাক ।
সুতরাং যে ব্যক্তি এসব নামসমূহ মুখস্থ করে ওযীফার মত করে পড়তে থাকবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।

ইসমে আযম

ইসমে আযম অর্থ অধিক বড় সম্মানিত নাম । মহান আল্লাহ্ পাকের অসংখ্য অগণিত নাম রয়েছে। এ সবের মধ্যে যিনি যে দোয়ার মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য ও সফলতা লাভ করেছেন তিনি সে দোয়া-কালামটিকেই “ইসমে আযম” বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং দোয়া কবুল হওয়া সম্পর্কে কদরের রাত এবং জুম্মার দিনের কবুলীয়তের যেরূপ নির্দিষ্ট কোন সময় দেয়া হয়নি, অনুরূপভাবে ইসমে “আযমকেও এরূপ নির্দিষ্ট করা হয়নি এ জন্য যে, যাতে করে দোয়াকারী ব্যক্তি নিজের সকল প্রয়োজনের খাতিরে উক্ত নামের সন্ধানে মহান আল্লাহর কালাম অধিক পরিমাণে পাঠ করে দোয়া করে এবং এরূপ বেশি পাঠ করার ফলে বেশি পরিমাণ প্রশংসা করার সৌভাগ্য অর্জন করে। যেহেতু সবচেয়ে বড় ইবাদাত হল বেশি পরিমাণে আল্লাহর প্রশংসা করা। তবে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতে কয়েকটি ইসমে আযম নিম্নে উল্লেখ করা হল।

পবিত্র হাদীসে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তা’আলার ইসমে আজম হল-
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনা যোয়ালিমীন।

ফযীলত : উল্লিখিত দোয়া পাঠ করার সাথে যে প্রার্থনা করা হয় মহান আল্লাহ্ তা’আলা সে দোয়া কবুল করেন। আর এ দোয়া পাঠের সাথে মহান আল্লাহর নিকট যা কিছু চাওয়া হয় দয়াময় আল্লাহ্ তা দান করেন ।

অন্য এক হাদীসে উল্লেখ্য আছে, আল্লাহ্ তা’আলার ইসমে আযম হল —
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নী আশহাদু আন্নাকা আন্তাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুচ্ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদুন ।

ফযীলত : এ আয়াতের মধ্যেই মহান দয়াময় আল্লাহ্র ইসমে আযম রয়েছে। এ আয়াত পাঠ করে দায়াময় প্রভুর নিকট যা প্রার্থনা করা হবে নিশ্চয়ই দয়াময় আল্লাহ তা দান করবেন এবং যে কোন প্রকারের দোয়া করা হয় তা আল্লাহ্ কবুল করেন ।

অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে, নিম্নলিখিত আয়াতে কারীমাতেই ইসমে আযম রয়েছে-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকাল হান্নানুল মান্নানু, বাদী উচ্ছামাওয়াতে ওয়াল আরদ্বি ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম ।

ফযীলত : মহান আল্লাহ্ তা’আলার সবচেয়ে বড় নাম, এ নাম দ্বারা যখনই কোন দোয়া করা হয় মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই সে দোয়া কবুল করেন, আর আল্লাহ্র নিকট যা কিছু চাওয়া হয় তাই তিনি দান করেন ।

অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে, নিম্নলিখিত আয়াত দু’টির মধ্যেই ইসমে আযম রয়েছে-
উচ্চারণ : ওয়া ইলাহুকুম ইলাহুওঁ ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহীমু। আলিফ-লাম-মীম আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম- (আল্লাহ্ ভালো জানেন) ।

দরূদ পাঠের ফযীলত

পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে –“যে মজলিসের মধ্যে লোক একত্রিত হল অথচ উক্ত মজলিসে না আল্লাহ্পাকের যিকির করল, আর না নবী কারীম (সাঃ)-এর ওপর দরূদ ও সালাম পাঠাল, তবে তাদের এ মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য (যিকির ও দরূদ না পড়ার কারণে) আক্ষেপ ও অনুতাপের কারণ হবে। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

দরূদে ইব্রাহীম

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন। কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইব্ররাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদুন। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদুন ।

অর্থ ঃ হায় আল্লাহ্! আপনি আমাদের সরদার মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে বর্ষণ করেছেন ইব্রাহীম (আ) ও ইব্রাহীম (আ) এর পরিজনের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত । হে আল্লাহ্! আপনি বরকত নাযিল করুন, আমাদের সরদার মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিজনের প্রতি – যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিজনের প্রতি, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত । (বুখারী শরীফ)

ফযীলত : হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“জুম্মার দিন আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরূদ ও সালাম পাঠাও। কেননা জুম্মার দিন তোমাদের দরূদ ও সালাম আমার নিকট বিশেষভাবে পেশ করা হয়।”

অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন— কিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠকারী হবে ।

অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, প্রকৃত কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হল অথচ সে আমার ওপর দরূদ পাঠালো না । নবী (সাঃ) আরও ইরশাদ করেন—ঐ ব্যক্তি অপমানিত ও অপদস্ত হউক যার সামনে আমার আলোচনা করা হল, অথচ সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করল না ।

ও অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন—যার সম্মুখে আমার আলোচনা হবে তার উচিত সে যেন আমার উপর দরূদ পাঠায় । কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠাবে তার উপর মহান আল্লাহ্ পাক দশটি রহমত নাযিল করবেন।”

শায়খ আবু সুলায়মান দারানী (রহঃ) বলেন, যখন তোমরা মহান আল্লাহ্ তা’আলার নিকট নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য দোয়া করবে তখন দোয়ার আগে নবী (সাঃ)-এর ওপর দরূদ ও সালাম পাঠাও। এর পর যত ইচ্ছা দোয়া এবং পরিশেষে দরূদ পাঠাও। কারণ মহান প্রভু নিজ ওয়াদা অনুযায়ী নিজ অনুগ্রহে এ দরূদ শরীফ অবশ্যই কবুল করবেন এবং আল্লাহ পাকের দয়া ও করুণার পক্ষে এটি বড়ই অসম্ভব যে, তিনি এর মাঝখানের দোয়াকে কবুল করবেন না।

হযরত আলী (রাঃ) বলেন—“প্রত্যেক দোয়া আল্লাহ পাকের দরবারেপৌঁছতে ঐ সময় পর্যন্ত দেরি হয়, যতক্ষণ দোয়াকারী নবী কারীম (সাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ না করে।”

দরূদে তুনাজ্জীনা

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ছালাতান তুনাজ্জীনা বিহা মিন জামী’য়িল আহওয়ালি ওয়াল আফাতি ওয়াতাক্বদ্বীলানা বিহা জামী’য়িল হাজাতে ওয়াতুত্বাহিরুনা বিহা মিন জামী য়িচ্ছাইয়্যিয়াত, ওয়া তারফাউনা বিহা ‘ইনদাকা আ’লাদ্দারাজাতি, ওয়াতুবাল্লিগুনা বিহা আক্বছাল গায়াতি । মিন জামী’য়িল খায়রাতি ফিলহায়াতি ওয়া বা’দাল মামাতি ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীরুন। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের মহান নেতা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ও তাঁর বংশধরগণের উপর নানাভাবে রহমত নাযিল কর এবং এ দরূদের উসিলায় আমাদেরকে সকল বিপদাপদ হতে মুক্তি দাও এবং আমাদের সকল ইচ্ছা পূর্ণ কর, সকল পাপ কাজ হতে আমাদেরকে পবিত্র রাখ এবং আমাদেরকে তোমার কাছে সম্মানের উচ্চাসনে স্থান দাও এবং আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সকল প্রকার মঙ্গলের শেষ সীমায় পৌঁছে দাও, অবশ্যই তুমি সর্বশক্তিমান এবং সর্বোচ্চ দয়াবান, তোমার নিজ দয়ায় আমাদের বাসনাসমূহ পূর্ণ কর ।

ফযীলত : যে কোন কঠিন বিপদ-আপদ হতে মুক্তির জন্য এ দরূদ শরীফ পাঠ করা হয় বলে একে “দরূদে তুনাজ্জীনা” বা মুক্তির দরূদ বলে। এটি মুনাজাত এবং দরূদ উভয় প্রকারে পাঠ করা যায়। এটি কঠিন মামলা-মোকদ্দমা হতে মুক্তির জন্যও পাঠ করলে অসংখ্য ফল লাভ করা যায়। এ দরূদ পাঠ করলে চাকুরি হারাবার ভয় থাকে না ।

Read More: নেক আমল বই

Scroll to Top