নেক আমল বই #4 কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস – কিয়ামতের ছোট ছোট ‘আলামতসমূহ

কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস

কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস

কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস
কিয়ামত শব্দের অর্থ মহাপ্রলয়ের দিন। সেদিন একমাত্র মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না । সেদিনের উপর যার বিশ্বাস নেই, সে অমুসলিম, বেঈমান, কাফির। মহান আল্লাহ্ মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পর তাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য একটা সুন্দর বিধি-বিধান দান করেছেন। সে অনুযায়ী মানুষ নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছে কি না, সে ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, শেষ বিচারের দিন তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে।

এরপর শেষ বিচারের দিন মানুষ স্বীয় কাজকর্মের হিসাব নিকাশ দান করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাবে। যারা মহান আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী জগতে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছে সেদিন তারা মহান আল্লাহ্ পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে। অর্থাৎ চিরস্থায়ী সুখময় স্থান অমরপুরী বেহেশত উদ্যানের অধিবাসী হবে। আর যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করেনি, তারা লাঞ্ছনা, অপমান এবং আল্লাহ্র পক্ষ হতে তিরস্কৃত হয়ে দুঃখময় স্থান জাহান্নামে নিপতিত হবে।

আদি মানব হযরত আদম (আঃ) হতে আরম্ভ করে দুনিয়ার সর্বশেষ যে শিশুটি এসেছে, এদের প্রত্যেক প্রাণীকেই সেদিন অর্থাৎ হাশরের মাঠে মহান আল্লাহ্ তা’আলার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পেশ করতে হবে। সেদিন নেক্কার বান্দাদের ডানহাতে ‘আমলনামা থাকবে আর গুনাগার লোকদের বাম হাতে তাদের আমলনামা থাকবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা করেন— “যে ব্যক্তিকে হাশরের দিন তার ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে ‘আমলনামা হাতে পেয়ে সে ব্যক্তি লোকদেরকে বলতে থাকবে, এ দেখ আমার ‘আমলনামা ।

তোমরা এটা পাঠ করে দেখ! দুনিয়ার জীবনে আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমি নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হব। আর সে কথা স্মরণ করেই আমি আমার জীবনকে পরিচালিত করেছি। সে ব্যক্তি ঐ দিন পরম আনন্দে থাকবে । পরিশেষে সে অমরপুরী বেহেশ্ত উদ্যানের অধিবাসী হবে।” অপরদিকে যাদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন—“যে ব্যক্তিকে তার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, আমাকে ‘আমলনামা না দিলে খুবই ভালো হত। জানি না হিসাব-নিকাশে আমার পরিণাম কি দাঁড়াবে !

সেদিন প্রত্যেকেই নতজানু হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। সকলকেই তাদের স্বীয় ‘আমলনামা দেখার জন্য ডাকা হবে। মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে তাদেরকে তখন বলা হবে, দুনিয়ার জীবনে তোমরা যা করেছিলে আজ তার বিনিময় পাবে। এ দেখ আমার হাতে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের কর্মফলসমূহের খতিয়ানের কপি। এ খতিয়ানেই লিপিবদ্ধ করা আছে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের সকল কর্মকাণ্ড । তোমরা যখনই যে কাজ করেছিলে সাথে সাথে তা আমি সম্মানিত ফিরিশতাগণের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করিয়ে রেখেছি।”

পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ সে দিনটিতে মানুষের দুঃখ-কষ্টের কোন অন্ত থাকবে না। সকলেই নিজেদের মুক্তির চিন্তায় পেরেশান থাকবে। আদরের স্ত্রী-পুত্র, কন্যা, ভাই-বোন, মা-বাপ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সেদিন কেউ কারও কোন পরিচয় দেবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা দিয়ে বলেন — “হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। আর ঐদিনকে ভয় কর যেদিন পিতা-পুত্রের কোন উপকারে আসবে না।”

সেদিন মানুষের ‘আমলনামার তারতম্য অনুসারে তাদের মধ্যে ব্যবধান হবে। কেউ সুখ-শান্তিতে থাকবে আবার কেউ অশান্তির চরম শিখরে থাকবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ হয়েছে— “কতকের চেহারা সেদিন হাসি-খুশি থাকবে, আবার কতকের চেহারা থাকবে মলিন ।”

বদকার দোযখী লোকদের থেকে সেদিন বেহেশতের অধিবাসীগণকে আলাদা করে রাখা হবে। সেদিন মানুষের হাত, পা অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা যেসব কাজ-কর্ম সে দুনিয়ায় জীবিত থাকাকালে করেছিল তারাই তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে । এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ আছে— “ঐদিন মুখের জবান ব্যক্তি ইহকালীন জীবনে যেসব কাজকর্ম করেছে।” বন্ধ করে দেয়া হবে এবং হাতসমূহ কথা বলবে এবং পাসমূহ সাক্ষ্য দেবে, সে হঠাৎ করেই কিয়ামত আরম্ভ হবে না। এর পূর্বে কিছু কিছু ছোট-বড় ঘটনা ঘটবে যাতে মানুষ বুঝতে পারবে যে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। হাদীসের আলোকে নিম্নে কিয়ামতের ছোট-বড় কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা করা হল ।

কিয়ামতের ছোট ছোট ‘আলামতসমূহ

কিয়ামতের ছোট ছোট ‘আলামতসমূহ
কিয়ামত সংঘটিত হবার পূর্বে মানুষ যে সকল ছোট ছোট আলামতসমূহ দেখবে তা নিম্নরূপ। যথা : মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে। মিথ্যা, বানোয়াটি কথাকে লোকেরা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করবে। আমানতের খিয়ানত করবে। অর্থাৎ কারও নিকট কোন কিছু আমানত রাখলে সে ব্যক্তি ঐ আমানতের জিনিস ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাবে। পুরুষ লোকেরা মেয়েলোকের বশ্যতা ও আনুগত্যতা করবে। নিজেদের সন্তানরা মাতা-পিতার সাথে নাফরমানি করবে অর্থাৎ সন্তান মাতা-পিতার অবাধ্য হয়ে চলবে। অনুপযুক্ত লোকদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে।

গরিব, অসহায়, অনাথ লোকেরা হঠাৎ ধনী হয়ে যাবে এবং বিরাট বিরাট ঘরবাড়ি নির্মাণ করবে। দুনিয়া লাভ করার জন্যে মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করবে। মানুষের লজ্জা-শরম থাকবে না। মিথ্যা- জুয়াচুরি, অন্যায়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা হবে। সমাজে বিধর্মীদের প্রভাব প্রবলভাবে দেখা দেবে। মানুষ নিজ পিতা-মাতাকে শত্রু ধারণা করে বন্ধু-বান্ধবকে আপন বলে মনে করবে।

পূর্ববর্তী পুণ্যবান লোকদেরকে মানুষ গালিগালায করবে এবং ধর্মীয় শিক্ষা লোপ পাবে। মদ পান, ব্যভিচার এবং ও পশুত্ব আচরণ বৃদ্ধি পাবে। নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা এত কম হবে যে, প্রতি পঞ্চাশ জন মহিলার পরিচালক হবে মাত্র একজন মূর্খতা পুরুষ। এসব ছোট ছোট নিদর্শনসমূহ দেখা যাবে। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে এসব কাজকর্ম হতে তাওবা করে হিদায়াতের তৌফিক দান করুন ।

কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস, কিয়ামতের বড় বড় আলামতসমূহ

কিয়ামতের বড় বড় আলামতসমূহ
কিয়ামতের পূর্বেকার ছোট ছোট আলামতসমূহ পূর্ণতা লাভের পর বড় ‘আলামতসমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে। নিম্নে কয়েকটি বিবরণ উল্লেখ করা হল ।

ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আগমন

ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আগমন
হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আবির্ভাবের মাধ্যমেই কিয়ামতের বড় বড় লক্ষণসমূহ আরম্ভ হবে । ইমাম মাহ্দী (আঃ) চল্লিশ বছর বয়সের সময় পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফরত অবস্থায় আবির্ভূত হবেন। সমগ্র পৃথিবী যখন ইসলামী অনুশাসনের চরম অধঃপতনে পতিত হবে, তখনই মহান আল্লাহ্ পাক নির্যাতিত মুসলিম জাতিকে মুক্তির জন্য ইমাম মাহ্দী (আঃ)কে ইসলামী পথ নির্দেশনা দিয়ে পাঠাবেন। ইমাম মাহ্দী (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশে আবির্ভূত হয়ে নবুওয়াতীর ধারায় ইসলামী খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর বুকে ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন ।

ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর রাজত্বকালের মেয়াদ হবে মাত্র ৯ বছর। দাজ্জাল নামক বেঈমান কাফির এবং তার অনুচরদের সাথে তাঁর বিরাটাকারের যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে দাজ্জালকে দলবলসহ ধ্বংস করার পর মুসলমানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে ইমাম মাহ্দী (আঃ) আল্লাহ্ ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমাবেন ।

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ
দাজ্জাল ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের বংশোদ্ভূত হবে। সিরিয়া এবং ইরাকের মধ্যবর্তী কোন এক স্থান হবে তার জন্মস্থান। দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে। সে হবে অত্যন্ত বিকট চেহারা বিশিষ্ট। তার কাছে থাকবে যাদুমন্ত্রের ভূয়া বেহেশত এবং দোযখ। সে বললে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকবে। কোন লোককে একবার হত্যা করার পর পুনরায় জীবিত করতে পারবে। দাজ্জালের অনুসারী লোকজনরা অসংখ্য ধন-সম্পদের অধিকারী হবে। একমাত্র পবিত্র মক্কা এবং মদীনা শরীফ ছাড়া দাজ্জাল দুনিয়ার সর্বত্রই যাতায়াত করতে সক্ষম হবে।

তার বাহন হবে বিশালাকারের একটি গাধা। সে গাধাটি নদী-নালাসমূহ অনায়াসেই স্বীয় যাদুমন্ত্রের বলে পাড়ি দিতে সক্ষম হবে। তার পায়ে পানি পর্যন্ত স্পর্শ করবে না। এ গাধায় চড়ে সে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবে। অনেক দুর্বল ঈমানের লোকজন দাজ্জালের এহেন অদ্ভুত কাণ্ড দেখে ঈমানহারা হয়ে দাজ্জালের দলভুক্ত হয়ে যাবে।

কিন্তু একমাত্র প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিগণই তার এ সকল কাজের বিরোধিতা করবে। সমগ্র বিশ্ব পরিভ্রমণ শেষে দাজ্জাল তার অনুচরদেরকে নিয়ে পবিত্র মক্কা এবং মদীনা শরীফে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে কিন্তু মহান আল্লাহ্র বিশেষ মেহেরবানীতে এসব পবিত্র স্থানসমূহে সে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। এর পর সে সিরিয়া এবং দামেস্কের দিকে রওয়ানা হবে। কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আঃ) পূর্ব হতেই সেখানে অবস্থান করে মুসলমানদেরকে সাথে করে দাজ্জালের বিরুদ্ধে করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকবেন ।

ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ

ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ
পবিত্র হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় যে, একদিন হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ) মুসলমানদেরকে নিয়ে দামেস্কের মসজিদে ‘আছরের নামাযের প্রস্তুতি নিবেন তখন হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে ঐ মসজিদের মিনারায় এসে অবতরণ করবেন এবং সিঁড়ি লাগানোর জন্য আহ্বান করবেন, সিঁড়ি লাগানো হলে তিনি সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসবেন।

(পরিচয়প্রাপ্ত হয়ে) হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-কে নামাযের ইমামতি এবং যুদ্ধের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে চাইবেন কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) উত্তরে বলবেন, নেতৃত্বের জন্য নয় বরং ইসলামের পরম দুশমন মরদুদ দাজ্জালকে হত্যা করার জন্যই আমি এসেছি। আমাকে কেবলমাত্র পাপিষ্ঠ নরাধম দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য নির্দেশ দিন। পরদিন মরদুদ দাজ্জালের দলের সাথে মুসলমানগণের ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হবে । এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হবে। ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে একটা বল্লম বা নেযা অর্থাৎ সাধারণ অস্ত্র দ্বারা “বাবে লোদ” নামক স্থানে হত্যা করে ফেলবেন এবং দাজ্জালের অন্যান্য সঙ্গী-সাথীগণ মুসলমানদের হাতে দলবলে ধ্বংস হয়ে যাবে ।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম মাহদী (আঃ) দাজ্জালকে ধ্বংস করে অল্পকিছুদিন পরই ইন্তেকাল করবেন। এরপর হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ঈসা (আঃ) এ দুনিয়াতে চল্লিশ বছর খিলাফতের কাজ পরিচালনা করবেন। ঈসা (আঃ)-এর সময়ে ইয়াজুয-মা’জুয নামক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে। ঈসা (আঃ) মুসলমানদেরকে নিয়ে মহান আল্লাহ্র বিশেষ নির্দেশে “তূরে সাইনায়” (সিনাই পাহাড়ে) অবস্থান নিবেন ।

ইয়াজুয-মা’জুযের ফিতনা ও জুলুম শেষ হবার পর সদলবলে মুসলমানদেরকে নিয়ে ঈসা (আঃ) পুনরায় লোকালয়ে ফিরে আসবেন এবং মুসলমানদেরকে নিয়ে সুখ-শান্তিতে স্বর্গরাজ্যের ন্যায় বসবাস করতে থাকবেন। এভাবে দুনিয়াবী জীবনে চল্লিশ বৎসর পূর্ণ হলে মহান আল্লাহ্র হুকুমে তিনিও মৃত্যুবরণ করবেন। ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে পবিত্র মদীনা শরীফে নবী (সাঃ)-এর রওজার পার্শ্বে দাফন করা হবে। (পবিত্র মদীনায় রওজা শরীফের পার্শ্বে এখনও একটি কবরের জায়াগা খালি রয়েছে । হাজী সাহেবানরা হয়ত সে স্থানটি দেখে থাকবেন)।

ইয়াজুয মাজুযের ফিতনা

ইয়াজুয মাজুযের ফিতনা
ইয়াজুয-মাজুয ইয়াফেছ ইবনে নূহ (আঃ)-এর বংশধর। এরা দানবের মত তৎকালীন মানব সমাজে এসে মানুষের উপর অনেক অত্যাচার করত। হযরত জুলকারনাইন বাদশাহ্ দু’টি পাহাড়ের মধ্যস্থলে তাদেরকে ভেতরে রেখে চতুর্দিকে শক্ত প্রাচীর দিয়ে আটকে রেখেছেন।
মহান আল্লাহ্র নির্দেশে যখন তারা দুনিয়াতে আসবে তখন তারা সমগ্র দুনিয়াকে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করবে। তারা সংখ্যায় এত বেশি হবে যে, তাদের সাথে মোকাবিলা করার মত কারও শক্তি থাকবে না।

এ জন্যই হযরত ঈসা (আঃ)-কে তার অনুচর মুসলমানদেরকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার জন্য নির্দেশ দিবেন। ঈসা (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে স্বীয় দলবলসহ গিয়ে আশ্রয় নিবেন। কিছুদিন পর মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ইয়াজু ও মা’জুযের দল ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর ঈসা (আঃ) সদলবলে লোকালয়ে এসে চল্লিশ বছর কাল রাজত্বের মেয়াদ পূর্ণ হলে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে মৃত্যুবরণ করবেন। (দাফন সম্পর্কে পূর্বের আলোচনাটি দেখে নিবেন)।

পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় এবং তাওবাহর দরজা বন্ধ
হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর পুনরায় মানুষ দ্বীন-ধর্ম ছেড়ে দিয়ে গোমরাহীর পথে পা বাড়াবে । ধীরে ধীরে নেক্কার বান্দার সংখ্যা কমে যাবে আর মানুষ অন্যায় এবং পাপাচারের পথকেই ভালোবাসবে। কিছুকাল যাবত এ অবস্থা চলার পর মানুষ দেখতে পাবে সমস্ত আকাশ ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এ ধুঁয়ার প্রকোপে মু’মিন লোকদের একপ্রকার সর্দিজ্বর হয়ে তারা মারা যাবে। আর কাফির সম্প্রদায়েরা বেহুঁশ হয়ে থাকবে। স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুদিন পর আবার দিন-রাত হতে থাকবে।

অতঃপর ঐ বছর কুরবানীর ঈদের পর এমন এক মস্তবড় রাত হবে যা স্বাভাবিক তিন রাতের সমান হবে। সে রাতে মানুষ, জ্বিন, গরু-ছাগল, হাস-মুরগী ইত্যাদি পশুপাখি সকলেই অস্থির হয়ে পড়বে বাইরে যাবার জন্য। কিন্তু এত রাতে বের হবার কোন উপায় থাকবে না। এরপর হঠাৎ করে মানুষ দেখতে পাবে যে, সামান্য আলো নিয়ে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয়েছে। বেশ কিছুদূর উঠে আবার সূর্য অস্ত যাবে। অস্তমিত হবার পর সূর্য আবার স্বাভাবিক নিয়মেই পূর্বদিক হতে উদিত হতে থাকবে। এরপর হতে আর কারও তাওবা কবুল করা হবে না এবং নতুন করেও কোন লোক মুসলমান হতে পারবে না। এতসব আলোচনার উপরও ঈমানের ভিত্তি হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয।

দাব্বাতুল আরদের আত্মপ্রকাশ

দাব্বাতুল আরদের আত্মপ্রকাশ
তাওবার দরজা বন্ধ হবার পর হঠাৎ একদিন একটি প্রাণীর আবির্ভাব হবে, এ প্রাণীটি অদ্ভুত আকৃতি বিশিষ্ট হবে। যেমন এটি লম্বায় হবে ষাট হাত, মাথা ও শিং হবে গরুর মাথা এবং শিং এর মত । ঘাড় হবে উটের মত লম্বা। কান হবে হাতির কানের মত খুব বড়। বুক দেখতে মনে হবে বাঘের বুক, গায়ের রং হবে বিভিন্ন রকমের। লেজ হবে দুম্বার লেজের মত ছোট। আর মুখ হবে মানুষের মুখের মত। সে মানুষের ভাষায় কথা বলবে। বর্তমান সাফা এবং মারওয়া নামক পাহাড়দ্বয় ভূমিকম্পের কারণে ফেটে গেলে এ অদ্ভূত প্রাণীটি সেখান হতে বের হয়ে আসবে।

উক্ত প্রাণীটি হবে অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন । সমগ্র পৃথিবী এ প্রাণীটি ভ্রমণ করবে। ভ্রমণের সময় উক্ত অদ্ভূত প্রাণীটির হাতে হযরত মূসা (আঃ)-এর মো’জিযা সম্বলিত সে লাঠিটি থাকবে এবং হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর হাতের আংটি। উক্ত লাঠি দ্বারা সে মু’মিনদের কপালে একটি দাগ টেনে দিবে আর কাফির বেঈমানদের কপালে একটি দাগ টেনে দিবে, এতে কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। খুব দ্রুততার সাথে এ কাজ সমাধা করার পর উক্ত অদ্ভূত প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যাবে ।

কিয়ামত বা মহাপ্রলয়

কিয়ামত বা মহাপ্রলয়
দাব্বাতুল আরদ্ধ নামক অদ্ভূত প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যাবার কিছুদিন পর হঠাৎ করে দক্ষিণ দিক হতে সমগ্র পৃথিবীতে একটি আরামদায়ক মৃদু বাতাস বইতে থাকবে। এতে বাকি সকল মু’মিনের বগলে একটি অসুখ দেখা দিবে, যার ফলে সকল মু’মিনরাই মারা যাবে। তখন সমগ্র পৃথিবীতে হাবশী কাফিরদের রাজত্ব চলবে। সে কাফির সম্প্রদায়ের লোকেরা এত জালেম এবং মূর্খ হবে যে, তারা পবিত্র কা’বা ঘরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে।

এরপর সমগ্র পৃথিবীতে অভাব অনটন দেখা দিবে। কিন্তু সে সময় বর্তমান সিরিয়া নামক স্থানে সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খুবই সস্তায় পাওয়া যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল মানুষ সিরিয়ার দিকে যাত্রা করবে। এরপর যারা অবশিষ্ট থাকবে তাদেরকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক হতে একটি অগ্নিশিখা এসে ধাওয়া করে সিরিয়ার দিকে নিয়ে যাবে। সেখানে সকলে তিন/চার বছর পর্যন্ত অবস্থান করবে। সকল লোক সিরিয়াতে কাজ করতে থাকবে।

এভাবে একদিন তথা ১০ই মুহাররম শুক্রবার সকলেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকবে, তখন মহান আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। আওয়াজ শুনে সকল লোক আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। শিঙ্গার আওয়াজ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ অবস্থা দেখে মানুষ বেহুঁশ হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে কিন্তু সিঙ্গার আওয়াজ এতই বিকটতর হতে থাকবে যে, মানুষ বেহুঁশ হয়ে এক পর্যায়ে মারা যাবে এবং সকল সৃষ্ট জগৎসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন বা সে সময়ে মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব ছাড়া একটি প্রাণী পর্যন্ত কোথাও থাকবে না । এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা দেয়া হয়েছে – “ঐদিন (তথা কিয়ামতের দিন) মানুষ পতঙ্গের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে আর পাহাড়সমূহ ধূনা তুলার মত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।”

এমতাবস্থায় চল্লিশ বছর কেটে যাবে। পুনরায় মহান আল্লাহ্র হুকুমে ইস্রাফীল (আঃ) দ্বিতীয় বার সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিলে হাশরের মাঠ প্রস্তুত হয়ে যাবে। এভাবে চল্লিশ বছর কেটে যাওয়ার পর পুনরায় ইস্রাফীল (আঃ) তৃতীয় বার সিংগায় ফুঁৎকার দিবেন । এবার মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতি নিয়ে হাশরের মাঠে স্বীয় দুনিয়াবী জীবনের সকল কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ দান করার জন্য সমবেত হবে।

হাশরের মাঠে মানুষ ১২টি কাতারে বিভক্ত হবে

হাশরের মাঠে মানুষ ১২টি কাতারে বিভক্ত হবে
হাশরের ময়দানে বান্দা তার দুনিয়াবী জীবনের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ দেয়ার জন্য নিজেদের কর্মফল অনুযায়ী হাশরের মাঠে উঠতে থাকবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে মহান আল্লাহ্র ঘোষণা হল – “শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হলে মানুষ হাশরের মাঠে দলে দলে বিভক্ত হয়ে উঠবে।”

১। দুনিয়ার জমিনে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকেরা বানরের আকৃতিতে উঠবে।
২। দুনিয়ার জমিনে থেকে হারাম বস্তু ভক্ষণকারী লোকেরা শূকরের আকৃতিতে উঠবে।
৩। দুনিয়ার জমিনে অন্যায়ভাবে বিচারকারীগণ অন্ধের আকৃতিতে উঠবে।
৪। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী লোকেরা আগুনে পুড়ে ক্ষত-বিক্ষত দেহাকৃতি নিয়ে উঠবে।

৫। যে সব আলেম লোকদের কথায় এবং কাজে মিল ছিল না তাদের মুখ হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। কারণ তার জিহ্বা লম্বা হয়ে বুক পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে, জিহ্বাকে ছোট করার জন্য জিহ্বা কাটার কারণে রক্ত প্রবাহিত হওয়া অবস্থায় উঠবে।
৬। ইবাদাত-বন্দেগীতে অহংকারী লোকেরা অন্ধ এবং বোবা হয়ে উঠবে।

৭। জিনাকার লোকদের দু’পা মাথার চুলের সাথে কপালের উপর বেঁধে দেয়া হবে, এ অবস্থায় তারা হাশরের মাঠে উঠবে।
৮। মসজিদে বসে যেসব লোক গল্পগুজব করেছে সে সকল লোকেরা মাতাল অবস্থায় উঠবে।
৯। চোগলখোরদের জিহ্বা অনেক দূর লম্বা করে উঠান হবে।

১০। আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্যকারীরা ও নির্দেশ আদায়ের ব্যাপারে অবহেলাকারী লোকেরা মাতালের মত এদিক-সেদিক হেলা-দোলা উঠবে । অবস্থায় উঠবে।
১১। নিন্দুক, দুর্নাম রটনাকারী, চোগলখোর লোকেরা গন্ধকের জামা পরিহিত অবস্থায় উঠবে।
১২। সুদখোর লোকেরা শূকরের আকৃতিতে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট সাহাবাগণ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে বাসনা করলেন । নবী কারীম (সাঃ) উত্তরে বললেন-এটি একটি জটিল প্রশ্ন বটে। তবে আমার উম্মত হাশরের মাঠে ১২টি দলে বিভক্ত হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে হযরত মা’আয (রাঃ) হতে এক হাদীসে বর্ণিত আছে—
১। নিজ পাড়া প্রতিবেশী লোকদেরকে কষ্ট দানকারী ব্যক্তি যদি তাওবা না করে মারা যায়, তাহলে সে লোক হাত-পা বিহীন অবস্থায় উঠবে।

২। নামাযে অলসতাকারী লোক বিনা তওবায় মারা গেলে জানোয়ার এবং শূকরের আকৃতিতে উঠবে।

৩। যারা মালের যাকাত আদায় না করবে তারা সাপ-বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ বিশাল পেট বিশিষ্ট হয়ে উঠবে।

৪। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যারা মিথ্যা বানোয়াটি করবে সে সকল লোকদের মুখ হতে রক্ত এবং আগুন বের হতে থাকবে আর তাদের পেটের নাড়ি-ভুঁড়িসমূহ হাশরের মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকবে।

৫। মহান আল্লাহকে ভয় না করে যে সব লোক চোখের আড়ালে পাপ কাজ করবে তাদের শরীর হতে পচা মৃতদেহ হতেও বেশি দুর্গন্ধ বের হবে।

৬। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী লোকেরা গলা কাটা অবস্থায় উঠবে।

৭। সত্য কথা গোপনকারী লোকদের মুখ হতে পুঁজ পড়তে থাকবে।

৮। জিনাকার লোকদের কপালের চুলের সাথে দু’পা বাঁধা অবস্থায় উঠবে আর তাদের লজ্জাস্থান হতে পুঁজ এবং রক্ত ঝরতে থাকবে।

৯। ইয়াতীমের মাল নষ্টকারী লোকদের মুখ, কান, চোখ বিকৃত রং এবং পেট আগুনে ভর্তি অবস্থায় উঠবে।

১০। পিতা-মাতাকে কষ্ট দানকারী নাফরমান লোকেরা শ্বেত-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত অবস্থায় উঠবে।

১১। মদ-শরাব ইত্যাদি নেশাকারী লোকদের দাঁত হবে ষাঁড়ের শিং এর মত লম্বা আর তাদের ওষ্ঠদ্বয় বুকের উপর ঝুলে থাকবে এবং তাদের জিহ্বা পেট ও উরুর উপর লম্বালম্বীভাবে থাকবে। পেট হতে গলিত ধাতু বের হবে।

১২। পূণ্যবান লোকেরা এমনভাবে কবর হতে উঠে হাশরের মাঠের দিকে যাবে যে, তাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল নূরের মত উজ্জ্বল হবে। সেদিন নেককার লোকেরা বিদ্যুৎ গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে বেহেশ্ত উদ্যানে প্রবেশ করবে। এ সকল নেক্কার লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন যে—“মহান আল্লাহ্ ঐ সকল নেককার বান্দাদের উপর সন্তুষ্ট আর ঐ সকল নেককার বান্দাগণও আল্লাহ্র উপর সন্তুষ্ট। তারা ঐ সকল লোক যারা তাদের স্বীয় প্রভুকে ভয় করেছে।”

অতঃপর সকলের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। এর পর ন্যূনতম ঈমানের অধিকারী লোকও স্বীয় কর্মফল অনুযায়ী শাস্তি ভোগের পর শেষ পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যাদের কোনরূপ ঈমান থাকবে না তারা চীরজীবনের জন্যই দোযখবাসী হবে। হিসাবকার্য শেষ করে সকলকে স্বীয় কৃতকর্ম অনুযায়ী ফলাফল দান করার পর মৃত্যুকে বেহেস্ত-দোযখের মধ্যখানে রেখে পশুর আকৃতি ধারণ করিয়ে জবাই করা হবে। এরপর সকলকে বলা হবে, তোমরা যে যেখানে স্থান পেয়েছ সেখানেই বসবাস করতে থাক। কারণ তোমাদের আর কোনরূপ মৃত্যু হবে না। উল্লিখিত আলোচনাসমূহ দিবালোকের ন্যায় সত্য, এ কথা স্বীকার করা ঈমানের পরিচায়ক। সুতরাং এ ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের জন্যই ফরয।

তাকদীরের উপর বিশ্বাস

তাকদীরের উপর বিশ্বাস
তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মানুষের সকল কর্মের ফলাফল ভালো হউক, খারাপ হউক অর্থাৎ যখন সে যে অবস্থায় থাকে মহান আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী থাকে এবং এ বিধানসমূহ মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নির্ধারিত এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- “মহান আল্লাহ্ পাক এ বিশ্ব ভুবন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্ট জীবের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।”

মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। কারণ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহই সর্বময় শক্তির একচ্ছত্র অধিকারী। তাই তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল ভালো-মন্দ হয়ে থাকে। তিনি যাকে ইচ্ছা কোনকিছুর অধিপতি করেন, আবার যাকে খুশি পথের ভিখারী করে দেন। মহান আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে হিদায়াতের রাস্তা দান করেন আর যাকে ইচ্ছা করেন না কেউই তাকে হিদায়াত করতে পারে না। এসব বিষয়ের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তাদেরকে মৃদু ধমক দিয়ে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মহান আল্লাহ্র নির্ধারিত উপাস্য খোঁজ করা।”

বিধানের উপর যারা বিশ্বাসী নয়, তাদের উচিত তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ বিধানসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের উপর অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালামে ঘোষণা করেন – “যত প্রকার বালা-মুসীবাত তোমাদের উপর এসে থাকে, তা দুনিয়ার কোন অংশে কিংবা তোমাদের নিজেদের উপর হউক তা প্রকাশ পাবার পূর্বেই আমার নিকট লিপিবদ্ধ আছে।” অর্থাৎ কখন, কোথায়, কার উপর কি ধরনের বিপদ বা বালা-মুসীবাত কিভাবে আসবে এ সবকিছু আগে হতেই মহান আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন ।

মানুষ যেহেতু আশরাফুল মাখলুকাত, সুতরাং তারা ভালো-মন্দ বিচার- বিভেদ করার ক্ষমতা রাখে। সে যখন ভালো কাজ করে ভালো ফলাফল পাবে তখন তাকে বুঝতে হবে যে, এটি আমার প্রভুর পক্ষ হতে হয়েছে। আর যখন খারাপ কাজ করে খারাপ ফলাফল পাবে তখনও তাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে, খারাপ কাজের ফলাফল খারাপ হয়েছে, তাও মহান আল্লাহ্ পক্ষ হতেই হয়েছে। আর যদি চেষ্টাতে বিফল হয়ে যায় তাও ধারণা করতে হবে যে, এ

কাজের ফলাফল আমার তাকদীরে নেই। তাই চুপচাপ অলস হয়ে বসে না থেকে বিবেক-বিবেচনা করে ভাল কাজ করার জন্য সবসময় মন-মানসিকতাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বাধ্য করতে হবে। আর খারাপ, অন্যায়, গর্হিত কাজসমূহ হতে বিরত থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। আর তাকদীরের এ সবের উপর ঈমানের পরিচায়ক হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয।

পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস

পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস
মানব জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যু। এ মৃত্যুর হাত থেকে কোন লোকই রক্ষা পাবে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে—“প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।”

দেখা যায় জগতের শুরুতে যারা ছিল তাদের কেউই বেঁচে নেই। আজ যারা জীবিত ভবিষ্যতে তারাও থাকবে না । এমনিভাবে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) প্রথমবারে সিঙ্গায় ফুঁক দিলে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে, দ্বিতীয়বারে ফুঁক দিলে হাশরের মাঠ তৈরি হবে, এরপর তৃতীয়বারে ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে সকল প্রাণীসমূহ কবর হতে উঠে (বিভিন্নভাবে যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে) স্বীয় জীবনের কাজ-কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভু আল্লাহ্ সম্মুখে হাশরের মাঠে জীবিতাবস্থায় উঠতে থাকবে।

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে—“অতঃপর যখন (তৃতীবার) সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন সকলকেই স্বীয় কবরসমূহ হতে (হাশরের মাঠে) তাদের প্রভুর সম্মুখে দলে দলে উপস্থিত হতে হবে।” সেদিনের অবস্থা হবে খুবই ভয়ঙ্কর। সূর্য হবে মাথার উপর অতি নিকটবর্তী, জমিন হবে তামার। সূর্যের তাপে তামার জমিন উত্তপ্ত হয়ে মানুষ স্বীয় কর্মানুপাতে ঘর্মাক্ত হয়ে কারও পায়ের গিরা পর্যন্ত, কারও হাঁটু পর্যন্ত, কারও উরু পর্যন্ত এভাবে বুক, গলা এমনকি কোন কোন লোক ঘামের পানিতে সাঁতরাতে থাকবে।

হাশরের মাঠে উপস্থিতির সময় হতেই মূলত মানুষের সত্যিকারের জীবন আরম্ভ হবে। দুনিয়ার এ জিন্দেগী মুসাফির লোকদের মত সামান্য সময়ের জন্য বিশ্রামের জায়গা মাত্র। এ মুসাফিরখানাতে এসে পরকালীন জীবনের জন্য কিছু পাথেয় তৈরি করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি। এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় কেটে যাওয়ার পর মৃত্যুর মাধ্যমে মুসাফেরী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।


এরপর সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) হতে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে শিশুটির জন্ম হবে সে শিশুটিও ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের তথা হাশরের মাঠে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার জিন্দেগীর সকল কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে—“এ মাটি হতেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুনরায় এ মাটিতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং আবার এ মাটির ভেতর হতেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে।”

সুতরাং বুঝা গেল যে, প্রতিটি প্রাণীকেই জীবন-মৃত্যুর পর হাশরের মাঠে একত্রিত হতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে— “যেদিন তোমাদেরকে মহান আল্লাহ্ তা’আলা একত্রিত করবেন, অবশ্যই সে দিনটির আগমন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।”

কারও অন্তরে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত্যুর পর এ জড়দেহ কোন পশু-পাখি খেয়ে ফেলেছে, সাগরের পানিতে মাছের পেটে চলে গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে বা পোড়ানো হয়ে ছাই-ভস্ম করা হয়েছে। কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে, এসব ক্ষতবিক্ষত বা নিশ্চিহ্ন দেহ আবার কিরূপে একত্রীভূত করা হবে ? এ প্রশ্নের একটি উত্তরই যথেষ্ট যে, যখন কিছুই ছিল না মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীনতা হতে অস্তিত্ব দান করলেন সে অস্তিত্ব যতই বিনষ্ট হউক না কেন তাকে পুনরুত্থান করা মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্ পক্ষে অবশ্যই সম্ভব।

ময়দানে হাশর : মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গার ফুঁকে মানুষ কবর হতে দলে দলে উঠে হাশরের মাঠে জমা হবে। এ হাশরের মাঠের অবস্থান দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী ৫০ হাজার বছরের সমান হবে এবং এ সময়ের মধ্যে হাশর মাঠের বিভীষিকাময় অবস্থার ইঙ্গিত পূর্বে কিছুটা দেয়া হয়েছিল । এ মাঠের জমিন হবে তামার, সূর্য মানুষের মাথার আধা হাত উপরে থেকে স্বীয় বুক দিয়ে তাপ দেবে। মানুষ ক্ষুৎপিপাসার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়বে।

সেদিন মানুষের মাথার মগজ রোদের তাপে গরম হয়ে টগবগ করতে থাকবে। এসব ছাড়াও অসংখ্য কষ্ট হবে যা কোন ভাষা, লেখনী বা কল্পনায়ও আনা সম্ভব নয় । এহেন কঠিন হাশরের মাঠে মাত্র সাত শ্রেণীর লোক মহান আল্লাহ্র আরশের নিচে স্থান পাবে এবং নেককার লোকেরা হাউজে কাউসারের অমীয় সুধা পানে সক্ষম হবে। আর খাদ্য হিসেবে এক টুকরা রুটি পাবে, যেটি খাওয়ার ফলে তাদের আর ক্ষুধা-পিপাসা লাগবে না ।

মুক্তিপ্রাপ্ত সাত শ্রেণীর লোকদের বিবরণ

মুক্তিপ্রাপ্ত সাত শ্রেণীর লোকদের বিবরণ
হাশরের মাঠে যে সকল লোক মুক্তিলাভ করবে তাদের মধ্যে সাত শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এদের পরিচয় দেয়া হল ।

১। ন্যায়পরায়ণ রাজা বাদশাহ : বিচারের সময় যারা কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে সঠিকভাবে বিচার করেছেন এবং জনসাধারণকে এক সমান নজরে দেখেছেন।

২। ‘ইবাদাতকারী যুবক : অর্থাৎ যে যুবক নিজের কু-প্রবৃত্তির তাড়নায় পরিচালিত না হয়ে বরং আল্লাহ্ প্রেমে পড়ে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে‘ইবাদাত-বন্দেগী করেছে এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্র শাস্তির ভয়ে যার চক্ষু হতে পানি বের হয়েছে।

৩। সৃষ্ট জীবের সাথে ভালোবাসাকারী : দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য লাভের লোভ না করে যদি আল্লাহ্ কোন নেক বান্দাকে ভালোবেসে থাকে ঐ সব লোক ।

৪। সৎ-চরিত্রবান লোক : সুন্দর রূপসী ষোড়শী তরুণীর অসৎ এবং খারাপ উদ্দেশ্যে আহ্বান শুনেও আল্লাহ্র ভয়ে যে ব্যক্তি আত্মসংযম করেছে সেসব লোক ।

৫। একাগ্রচিত্তে আল্লার ইবাদাতকারীগণ : নির্জনে আল্লাহ্কে ডেকেছে এবং আযাবের ভয়ে কান্নাকাটি করেছে ঐ সব লোক ।

৬। গোপনে দানকারী : যে ব্যক্তি গোপনে দান-খয়রাত করেছে এতে কোনরূপ লোক দেখানো উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকি ডান হাতে দান করার সময় বাম হাতও জানে না যে, কি দান করেছে।

৭। মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী : ঐ সকল লোক যারা সদাসর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা’আতে নামায আদায়ে তৎপর থাকত এবং মসজিদের সাথে সবসময় সম্পর্ক রাখত ।

এছাড়াও সে কঠিন হাশরের মাঠে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর হাতে থাকবে সত্যবাদীতার ঝাণ্ডা। দুনিয়ার সকল সত্যবাদীগণ তাঁর ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন আর মুজাহিদ এবং সাধুগণও সে পতাকার নিচে সমবেত হবেন ।

হযরত ওমর (রাঃ)-এর হাতে থাকবে ন্যায়পরায়ণতার ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল ন্যায়পরায়ণ লোকগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন ।
হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল দানশীল ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন ।
হযরত আবু দারদাহ (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দারিদ্র্যতার ঝাণ্ডা । পৃথিবীর সকল দরিদ্র লোকজন তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন ।

হযরত উবাই ইবন কা’আব (রাঃ)-এর হাতে থাকবে কিরাআতের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল কারীগণ তাঁর সে ঝাত্তার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত মা’আয (রাঃ)-এর হাতে থাকবে বিজ্ঞতা বা জ্ঞানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর হবেন। সকল ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত
হযরত বেলাল (রাঃ)-এর হাতে থাকবে আযানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল মুয়াযযিনগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।

হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর হাতে থাকবে শাহাদাতের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল শহীদ এবং নির্দোষভাবে হত্যা হওয়া ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন। সেদিন মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়ে বলবেন – “ কোথায় যালেম সম্প্রদায়েরা! আস দেখি আজ তোমাদের দত্ত কোথায় এবং কিরূপ ছিল এর হিসাব দাও। সেদিন কারও উপর কোনরূপ যুলুম করা হবে না, যার যার কৃতকর্মের ফলাফল যথাযথভাবে তাদেরকে দেয়া হবে।”

উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যাবে যে, আমরা আরশের নিচে স্থান পাব কি না? আর আমরা কোন ঝাণ্ডার নিচে স্থান পাবার উপযুক্ততা অর্জন করেছি! সে ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে আমাদেরকে বাকি জীবনের সম্মুখ পথে অগ্রসর হওয়া উচিত, নতুবা এসব কারণে কর্মফল ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক সোজা পথে পরিচালিত করে তার করুণা এবং কৃপা দান করুন ।

মীযান বা পাল্লা

মীযান বা পাল্লা
হাশরের মাঠে মানুষের ‘আমলের অর্থাৎ কর্মফলের পরিমাপের জন্য মীযান বা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। এ দাঁড়িপাল্লাতে মানুষের ‘আমলের নেকী-বদীসমূহ ওজন করা হবে। এতে কারও প্রতি কোনরূপ পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। এ মীযান বা পাল্লা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন কারীমে ঘোষণা করেন—“অতঃপর যার নেকীর ওজন ভারী হবে সে ব্যক্তি পরম রমনীয় হাবিয়াহ নামক দোযখে ।”

স্থানে অবস্থান করবে এবং যার নেকীর ওজন হাল্কা হবে সে ব্যক্তির অবস্থান হবে মহাপবিত্র কোরআন মজীদের এ আলোচনা হতে এ কথাই বুয়া যায় যে, যার নেকী বেশি তার নেকীর পাল্লা ভারী হবে, আর যার বদীর পাল্লা ভারী হবে তার জন্য রয়েছে ভীষণ কষ্টকর স্থান দোযখ। আর যাদের নেকী ও বদীর পাল্লা উভয়ই সমান হবে, তাদেরকে বেহেশত এবং দোযখের মধ্যবর্তী “আরাফ” নামক স্থানে রাখা হবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইচ্ছা করলে দোষী ব্যক্তির নেকীর পাল্লা ভারী করে তাকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন।

এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি ,জনৈক ব্যক্তি ছিল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। সে ব্যক্তি ৯৯ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করেছিল। সে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তখনকার দিনে একজন মাওলানা সাহেবের নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে ফতোয়া চাইল। উত্তরে মাওলানা সাহেব বললেন যে, জাহান্নামী।” এ কথা শুনা মাত্র ঐ দুষ্ট লোকটি বলল, তোমাকে হত্যা “তুমি করেই তাহলে সংখ্যা ১০০ পূর্ণ করে নেই। একথা বলে সে মাওলানা সাহেবকেও হত্যা করল। এরপর দুষ্ট লোকটি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করল এবং পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ রওয়ানা হল । পথিমধ্যে লোকটির মৃত্যু হল ।

মৃত্যুর পর দু’দল ফিরিতার মধ্যে তর্ক বেঁধে গেল। তর্কের কোন মীমাংসা করতে না পেরে তারা দু’দলই মহান আল্লাহ্র নিকট মীমাংসার জন্য প্রার্থী হল । মহান আল্লাহ্ তাদেরকে বললেন, মৃত লোকটির পথকে দু’ভাগ করে মেপে দেখা যাক, অবস্থা কি হয়? এরপর তার দু’দিকের পথ মাপ দেয়ার পর দেখা গেল যে, মক্কা শরীফের দিকের রাস্তায় সে আধা হাত পরিমাণ বেশি অগ্রসর হয়েছে। তখন মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা দিলেন যে, লোকটি বেহেশ্তী। তখন তাকে বেহেশতের ফিরিশ্তারা নিয়ে গেল। দয়াময় আল্লাহ্ তা’আলা এভাবেই নেকীর পাল্লাকে ভারী করে থাকেন ।

পুলসিরাত

পুলসিরাত
কঠিন হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর মহান আল্লাহ্ তা’আলা সকল লোকদেরকে স্বীয় নবীগণের সাথে পুলসিরাত পাড়ি দিতে নির্দেশ দেবেন। পুলসিরাত অর্থাৎ পুল, তবে এটি দুনিয়ার কোন পুলের মত সাধারণ পুল নয় । এটি হবে চুলের চেয়েও চিকন আর তলোয়ারের চেয়েও ধারাল। এ পুলটির নমুনা হল দশ হাজার বছর নিচের দিকে যেতে হবে দশ হাজার বছর সোজা যেতে হবে, আবার দশ হাজার বছর উপরের দিকে উঠতে হবে। এর দৈর্ঘ্য মোট ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা হবে। এ পুল হাশরের মাঠ হতে আরম্ভ হয়ে বেহেশতের মাঠ পর্যন্ত হবে।

এ পুলের নিম্নভাগে দোযখসমূহ অবস্থিত। পুলসিরাত পার হবার সময় নেক্কার লোকদের জন্য আগে-পিছে আলো থাকবে আর ঐ পুলটি তাদের নিকট অত্যন্ত প্রশস্ত বলে মনে হবে। নির্বিঘ্নে নেক্কার লোকগণ এ পুল পার হবেন। তাদের কেউ বিজলীর ন্যায়, কেউ বাতাসের ন্যায়, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহণকারীর ন্যায়, কেউ দৌড়ে, কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। অপরদিকে গুনাহ্গার লোকেরা এ পুল পার হবার সময় ঘোর অমাবশ্যার ন্যায় মনে করবে এবং কোন মতেই তারা এ পুল পার হতে পারবে না। এ পুল পার হতে গিয়ে তারা হাত-পা কেটে দোযখে পতিত হবে।

হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর সকল মানব-দানবকেই এ পুলসিরাত পাড়ি দিতে হবে। সুতরাং সকলকেই এ দুনিয়ার জীবনেই পরকালের জীবনের এসব অলোচনা শুনে সতর্ক হয়ে নেক্কাজ করে নিজের জীবনকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী গঠন করে উল্লিখিত ঘাঁটিসমূহে নির্বিঘ্নে পাড়ি দেয়ার সম্বল তৈরি করা প্রয়োজন । মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

মৃত্যু বা তিরোধান

মৃত্যু বা তিরোধান
জীব বলতেই বুঝা যায় যে, তা মরণশীল, চাই সে আশ্রাফুল মাখলুকাত মানুষ হোক বা গরু বাছুর বা অন্য কোন প্রাণীই হোক না কেন তাকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই তো আল্লাহ্ পাক বলেন-

(কুল্লু নাফসিন্ জায়িকাতুল মাউত) অর্থ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেন।
উচ্চারণ : আইনামা তাকূনূ ইয়ূদরিক কুমুল মাউতু, ওয়া লাউ কুনতুম ফী বুরুজীম মুশাইয়াদাহ্ ।

অর্থ : তোমরা যেখানেই অবস্থান কর না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে গ্রাস করবেই যদিও তোমরা সুরক্ষিত দূর্গে অবস্থান কর। হযরত আদম (আ) হতে অদ্যবধি যত লোক দুনিয়াতে আগমন করেছে তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে। যারা বর্তমান বিদ্যমান আছে তারাও একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে। যারা ভবিষ্যতে আসবে তারাও হযরত আযরাইল (আ)-এর হাত থেকে মুক্তি পাবে না। ধনী হোক গরীব হোক সকলকেই মৃত্যুর তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।

বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে অনেক কিছুই আবিষ্কার হয়েছে কিন্তু মৃত্যু হতে বাঁচার কোন পদ্ধতি কেউ বের করতে পারেনি আর পারবেও না। কথায় বলে “শেষ ভাল যার সব ভাল তার” তাই যে ব্যক্তি জীবন সায়াহ্নে ঈমানের সাথে ইহধাম ত্যাগ করতে পারবে, তার জীবন হবে মঙ্গলময় ও কল্যাণকর খোদাভীরু ব্যক্তিদের সাধারণত মৃত্যু কালে ঈমান নসীব হয়ে থাকে । আর রদকারদের সাধারণত ঈমান নসীব হয় না। তবে মৃত্যুর পূর্বে যদি তার ওতবা করেন তবে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। কেউ বলতে পারবে না তার মৃত্যু কখন এসে যাবে। তাই সর্বদাই মৃত্যুকে স্মরণ রাখা উচিত। আর মৃত্যুর কথা সর্বদা মনে থাকলে মানুষ কখন অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে পারে না। এ কারণেই তো প্রিয় নবী (স) ইরশাদ করেছেন-

আকছিরু জিরকা হা-জিমিল লাজ্জাত আল-মাউতু ।
অর্থ : সকল স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর। আর যে ব্যক্তি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করে তাকে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয় (১) মৃত্যুর পূর্বে তার তওবা নসীব হয়। (২) সে ব্যক্তি অল্প সম্পদেই তুষ্ট থাকে (৩) তাকে ইবাদত বন্দেগীতে আকৃষ্ট করে বা তার ইবাদত বন্দেগীতে সময় কাটাতে ভাল লাগে ।

আল্লাহভীরু লোকের মৃত্যু

আল্লাহভীরু লোকের মৃত্যু
যখন কোন নেককার বান্দার পৃথিবীর আয়ূকাল শেষ হয়ে যায় তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে ব্যক্তির নাম মালাকুল মউত বা মৃত্যু ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাদের সর্দারের কাছে গিয়ে বলেন আমার অমুক বান্দা আমার পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে তাকে দুনিয়ার কষ্ট ক্লেশ হতে আমার কাছে নিয়ে এস ।
আদেশ শ্রবণ মাত্র মালাকুল মউত পাঁচশত ফেরেশতার এক বহর সহ জান্নাতী কফিন ও সুগন্ধি যুক্ত ফুলের তোড়া নিয়ে সে ব্যক্তি শিয়রে উপস্থিত হন।

তার চোখের সম্মুখে বেহেশতের শান্তি তুলে ধরেন। বেহেশ্ত দেখা মাত্র ঐ ব্যক্তির জান তথায় যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। আর মালাকুল মউত অত্যন্ত আসানীর সাথে তার দেহ হতে জান কে আলাদা করে ফেলেন। মনে হয় যেন সে মায়ের বুকের দুগ্ধ পান করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফেরেশতাগণ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে আকাশে নিয়ে যান। তার ওফাতে পৃথিবীর ঐ সকল স্থান কাঁদতে থাকে যেখানে সে ইবাদত করেছিল ।

রুহ আল্লাহর দরবারে গিয়ে সিজদাবনত হয় এবং সাথে সাথেই আল্লাহ্ তার ঠিকানা জান্নাত নির্ধারণ করে তাঁকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেন।

আল্লাহদ্রোহী লোকের মৃত্যু

আল্লাহদ্রোহী লোকের মৃত্যু
যখন কোন খোদাদ্রোহী লোকের দুনিয়ার আয়ূকাল শেষ হয়ে আসে তখন আল্লাহ্ তায়ালা মালাকুল মউতকে ডেকে বলেন, আমার ঐ দুশমনকে জিঞ্জিরা বন্ধ করে নিয়ে আস। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই হুকুম তামীলের জন্য মালাকুল মউত ভয়ংকর রূপ ধারণ কারী পাঁচশত ফেরেশতাসহ ঐ বদকারের সম্মুখের এসে উপস্থিত হবেন। যাদের রূপ দেখলে এমনিতেই মানুষের হৃদয় শুকিয়ে যায়।

আর তাদের হাতে থাকে জাহান্নামের অগ্নি দ্বারা নির্মিত বিরাট কন্টক যুক্ত লৌহ দণ্ড তারা তা দ্বারা ঐ বদকারকে সজোরে আঘাত করবে। আর এ আঘাতের কারণে সে বারবার জ্ঞান হারা হয়ে পড়বেন। এমনিভাবে রুহকে একবার পায়ের গোড়ালীতে আটক করে ভয়ানক শাস্তি দেয়া হবে। আর এ রুহ কবজের সময় তার এত কষ্ট হবে যেমনটি হয় জবেহ্ না করে ছাগল হতে চামড়া ছাড়ান হলে-আমরা আল্লাহর কাছে এ ভয়ানক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তোমার নিরাপদ আশ্রয় দান কর । আমীন!

একটি কথা
মৃত্যুর সময় নেককার বান্দাদের শান্তি আর বদকারদের ভয়ানক শাস্তি জাগ্ৰত মানুষেরা অনুভব করতে পারবে না। যেমনিভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তির স্বপ্ন জাগ্রত
ব্যক্তিগণ আঁচ করতে পারে না ।

মৃত্যু শয্যায় যা করণীয়
যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয় তখন তার কাছের ব্যক্তিদের উচিত তার পাশে বসে সূরায়ে ইয়াসীন তেলাওয়াত করা এবং উচ্চস্বরে কালেমা পড়া যাতে করে সে তা শুনে নিজে নিজে কালেমা পড়ে নেয় তবে পড়ার জন্য তলকীন যাবে না। কেননা যদি সে না বুঝে অস্বীকার করে ফেললে তবে তো বেঈমান হয়ে ইহধাম ত্যাগ করতে হবে। কাজেই পড়ার জন্য তলকীন না দিয়ে তার পাশে বসে উচ্চস্বরে কালেমা পাঠ করতে হবে। আর সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলে যদি তার শাস্তি হতে থাকে তবে উহাতে সূরায়ে ইয়াসিনের তোলাওয়াত কারণে শাস্তি কিছুটা হ্রাস করা হয় ।

প্রাণ বের হয়ে গেলে সর্ব প্রথম তার চোখগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। মুখ যেন হা করে না থাকে সে জন্য মাথা হতে চিবুকের সাথে একটি কাপড় পেঁচিয়ে বেঁধে দিতে হবে। হাত ও পা সোজা করে দিতে হবে। পায়ের পাতাদ্বয়ের মাঝে

যেন ফাঁকা না থাকে সেজন্য উভয় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিকে একসাথে কিছু দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। সমস্ত শরীর একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে দিবে ।

মৃত ব্যক্তির গোসল

মৃত ব্যক্তির গোসল
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরজে কেফায়া এবং পুরুষের গোসল পুরুষে আর মেয়েদের গোসল মেয়েরা দিবে এবং গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কাছের আত্মীয়রাই উত্তম। যদি তাদের মধ্যে গোসল দেয়ার মত কেউ না থাকে তবে যে কোন একজন দ্বীনদার ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির গোসল দিবে।

গোসল দেয়ার পদ্ধতি
প্রথমত মৃত ব্যক্তিকে একটি কাঠের খাটি বা অন্য কোন উঁচু বস্তুর উপর রাখবে। এরপর তার চতুর্দিকে কাপড় বা অন্য কিছু দ্বারা ঘিরে ফেলবে, যাতে করে ভিতরে কি হচ্ছে তা অন্য কেউ বুঝতে না পারে। যদি গোসলখানায় গোসল দেয়া হয় তবে অতিরিক্ত পর্দা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর ঐ পর্দার অন্তরালে গোসলদাতা ও সাহায্যকারী এ দু’জন ব্যতীত আর কেউ থাকবে না খাটের চারিদিকে আগর বাতি জালিয়ে দেয়া ভাল ।

ব্যক্তির সকল কাপড়-চোপড় তার শরীর থেকে খুলে ফেলতে হবে। নাভী হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অন্য একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এরপর মৃত অতঃপর হাতে কাপড় পেঁচিয়ে ঢিলা ও পানি দিয়ে মৃত্যের ইস্তেঞ্জা করিয়ে দিতে হবে। এ সময় ভুল ক্রমেও সতরের দিকে তাকান যাবে না। বস্ত্রহীন হাতে লজ্জাস্থান স্পর্শও করা যাবে না। এরপর মৃত ব্যক্তিকে অজু করিয়ে দিবে তবে নাকে ও মুখে পানি প্রবেশ করাবে না, ভিজা কাপড় দ্বারা মুখের ভিতর ও নাক মুছে পরিষ্কার করে দিবে, ওযু করানোর সময় প্রথমে মুখমণ্ডল এরপর ডান হাত ও পরে বাম হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। অতঃপর মাথা মাছেহ্ করাতে হবে। এরপর আগে ডান পা ও পরে বাম পা ধোয়াতে হবে।

এরপর বড়ই পাতা দিয়ে গরম করা পানি নিয়ে গোসল করাতে হবে। বড়ই পাতা না থাকলে অন্য কোন ঔষধ বা শুধু গরম পানি দিয়েই গোসল করাবে। গোসলের পূর্বে নাকে ও কানে কিছু তুলা দিয়ে আটকে দিতে হবে যাতে করে পানি ঢুকতে না পারে। (যদি কার ঋতুবর্তী বা নিফাস বা ফরজ গোসল থাকাকালীন মৃত্যু হয় তবে তার নাকে ও মুখে পানি পৌছাতে হবে) এরপর মাথার চুল ও দাড়ি সাবান দ্বারা ভালভাবে ধৌত করাতে হবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে বাম কাতে শুইয়ে দিয়ে ডান পার্শ্বে তিনবার বা পাঁচবার পানি ঢেলে লভাবে ধৌত করতে হবে।

এরপর ডান কাতে শুইয়ে দিয়ে পূর্বের ন্যায় বাম পার্শ্বে পানি ঢেলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নিজের সাথে বা অন্য কোন কিছুর সাথে সামান্য হেলান দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ভিতর কোন কিছু থাকলে তা যেন বের হয়ে যায় যদি কিছু বের হয় তবে তা ধুয়ে ফেলবে। এতে করে নতুন অযু করানোর প্রয়োজন হবে না। এভাবেই গোসলের কাজ সমাধা হয়ে যাবে।

গোসলের পর শুকনো কাপড়ের মাধ্যমে সমস্ত শরীর ভালভাবে মুছে ফেলতে হবে। এরপর মৃত ব্যক্তির মাথা, কপাল, দাড়ি, নাক উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু ও পায়ের তালুতে আতর বা কর্পূর লাগিয়ে দিতে হবে।

একটি জ্ঞাতব্য
যদি কোন অঙ্গ যথা হাত, পা, মাথা, ইত্যাদি পাওয়া যায় তবে গোসল ছাড়াই তা দাফন করে দিবে। তদ্রুপ যদি মাথা বিহীন শরীরের অর্ধেক বা তার চেয়ে কম পাওয়া যায় তবে তাও বিনা গোসলে দাফন করতে হবে। আর যদি মাথাসহ অর্ধেক বা মাথা ছাড়া অর্ধেকের কম পাওয়া যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করতে হবে এবং তার জানাজার নামাজও পড়া হবে।

যদি কোন মৃত্যের পরিচয় পাওয়া না যায় যে, সে মুসলমান না কাফের এবং তার শরীরে যদি এর কোন চিহ্নও না পাওয়া যায় তখন তাকে যদি দারুল ইসলাম বা ইসলামী এলাকায় পাওয়া যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করে তার জানাজার নামাজও আদায় করতে হবে। আর যদি তাকে দারুল কুফুর বা কাফেরদের এলাকায় পাওয়া যায় এবং সে মুসলমান না কাফের তা যদি সনাক্ত করা না যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করতে হবে না এবং তার জানাজার নামাজও পড়া হবে না।

Read More: নেক আমল বই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top