মজার গল্প – প্রচন্ড হাসির গল্প ২২ টি

মজার গল্প, এই গল্পগুলো থেকে ছোটদের মনে দয়া, পরোপকার, প্রীতি, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণ বিকশিত হবে। এছাড়া গল্পের শেষে নীতিকথা উল্লেখ করে গল্পপাঠের আনন্দকে খর্ব করা হয়নি। ছোটরা একদিন নিজেই নীতিগুলি আবিস্কার করবে।
সাধারণ কথাবার্তায় ব্যবহার করা হয় এমন মার্জিত শব্দ দিয়ে সহজ-সরল বাক্যে গল্পগুলো লেখা হয়েছে। “শিক্ষণীয় গল্প” গ্রন্থটি পড়ে সকল ছেলে-মেয়েরা বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে বলে আমি আশা করি। মজার গল্প?

Table of Contents

মজার গল্প

মজার গল্প

মজার গল্প? কৃষক আর তার গাধা

এক কৃষকের একটা গাধা ছিল। একদিন কৃষক আর তার ছেলে গাধাটাকে নিয়ে হাটে যাচ্ছিল। পথে একদল ছেলের সঙ্গে তাদের দেখা। ছেলেরা বলল, “লোকটা কী বোকা! নিজেও হাঁটছে আর ছেলেটাকেও হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনায়াসে একজন গাধায় চড়ে যেতে পারে।”
কৃষক তখন তার ছেলেকে গাধায় চড়িয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগল । এমন সময় কয়েকজন বুড়ো লোকের সঙ্গে তাদের দেখা হলো। এক বুড়ো বলল, “ওই ছেলেটাকে দেখ। বুড়ো বাপ হেঁটে যাচ্ছে, আর ছেলে কেমন আরামে গাধায় চড়ে যাচ্ছে।”

বুড়োর কথা শুনে ছেলে লজ্জিত হয়ে গাধা থেকে নেমে পড়ল। তখন কৃষক গাধায় চড়ে বসল আর ছেলে হেঁটে চলল। কিছুদূর যাবার পর কয়েকজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে তাদের দেখা। স্ত্রীলোকেরা বলল, “বুড়োটার কেমন আক্কেল দেখ। ছেলেটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আর নিজে গাধায় চড়ে যাচ্ছে।”
স্ত্রীলোকদের কথা শুনে কৃষক ছেলেকেও গাধায় চড়িয়ে নিল। কৃষক মনে মনে বলল, “এখন আমরা দুজনেই গাধায় চড়ে যাচ্ছি। এখন আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।”

এমন সময় এক পথিকের সঙ্গে তাদের দেখা। পথিক জিজ্ঞাসা করল, “এ গাধাটা কার?” কৃষক বলল, “আমার।” পথিক বলল, “তোমার আচরণ দেখে তা মনে হয় না। এতটুকু একটা প্রাণীর উপর দুজন চড়ে বসেছ। অনেক কষ্ট দিয়েছ বেচারা গাধাটাকে। এখন বরং একেই কাঁধে করে নিয়ে যাও।”

পথিকের কথা শুনে চাষি আর তার ছেলে গাধা থেকে নেমে পড়ল। ছেলে বলল, “এখন আমরা কী করব? এক একজন লোক এক এক রকম কথা বলছে; কার কথা শুনব ?” চাষি বলল, “আমরা দড়ি দিয়ে গাধাটার পাগুলো বাঁধব। তারপর ওর পায়ের ফাঁকে বাঁশ ঢুকিয়ে ওকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাব !”
চাষি আর তার ছেলে গাধাটাকে কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে চলল।

হাটের কাছে নদীর উপর একটা সাঁকো ছিল। চাষি আর তার ছেলে গাধাটাকে নিয়ে যখন সাঁকোর উপর উঠল, তখন সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়েছিল। একটা জীবন্ত গাধাকে এভাবে বয়ে নিয়ে যেতে দেখে লোকেরা হাসাহাসি করল, হাততালি দিল । গাধাটা তখন ভয়ে ছটফট করে পায়ের দড়ি ছিঁড়ে নদীতে পড়ে গেল!

নীকিতথা : যুক্তি দ্বারা না বুঝে কোনো হুজুগে ঝাঁপিয়ে পড়া ঠিক নয় ।

মজার গল্প? বায়ু আর সূর্য

একদিন বায়ু সূর্যকে বলল, “আমি তোমার চেয়েও শক্তিমান।” সূর্য বলল, “আমিতো তা স্বীকার করি না।
বায়ু বলল, “মেঘ যখন তোমায় ঢেকে ফেলে, তখন আমি এসে সেগুলোকে উড়িয়ে তাড়িয়ে দিই।” সূর্য বলল, “তুমি বলবান বটে, তবে আমার চেয়ে বেশি নও।”

বায়ু রেগে বলল, “একটু পরখ করে দেখবে নাকি কার শক্তি বেশি? ওই দেখ, একটি লোক চাদর গায়ে হেঁটে চলেছে। ওর গা থেকে চাদরখানা তুমি কী খুলে নিতে পার?”

সূর্য বলল, “তুমিই আগে চেষ্টা কর।”
বায়ু গর্ব করে বলল, “আমি পারব। কিন্তু তুমি পারবে না।”
প্রবল বেগে বায়ু বইতে লাগল বাছুর বেগ যত বাড়ে লোকটির তত শীত বোধ হয়। তাই সে চাদরখানা বেশ করে গায়ে জড়িয়ে রাখে। অবশেষে বায়ু কিছুতেই চাদরখানা খুলে নিতে পারল না।

এখন সূর্যের পালা। সূর্য তার তাপ বাড়িয়ে দিল । সূর্যের তাপে লোকটির এত গরম বোধ হলো যে, সে তার গা থেকে চাদরখানা খুলে নিল বাছুর তখন লজ্জার আর সীমা রইল না !

নীতিকথা : কখনও ক্ষমতার বড়াই করা ভাল না, সব ক্ষমতা সব জায়গায় খাটে না ।

মজার গল্প? অধ্যবসায়

এক সময় বোপদেব নামে একজন ছাত্র ছিল। সে গুরুর কাছে লেখাপড়া শিখতে গিয়েছিল। কিন্তু অন্য ছাত্রদের মতো বোপদেব খুব সহজে কিছু বুঝতে পারত না, শিখতে পারত না । এজন্য তার গুরু কখনো কখনো তাকে খুব বকাবকি করতেন। সহপাঠীরাও বোপদেবকে বুদ্ধিহীন, মেধাহীন মনে করত। তাই বোপদেবেরও মনে হয়েছিল তার আর হয়তো লেখাপড়া হবে না ।

একদিন মনের দুঃখে বোপদেব এক পুকুরের ঘাটে গিয়ে বসেছিল। গ্রামের মেয়েরা এই পুকুর থেকে কলসি ভরে পানি নিত। পুকুরঘাটে কয়েকটা পাথরের উপর মেয়েরা কলসি রাখে। বোপদেব লক্ষ করলড় কলসির ঘষায় পাথরগুলোর উপরে গোল গোল খাঁজ হয়ে গেছে। সেই খাঁজেই মেয়েগুলো কলসি রেখেছে। এই দেখে বোপদেব মনে মনে ভাবলড়মাটির কলসির দীর্ঘদিনের ঘষায় ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে, তবে দীর্ঘদিন চেষ্টা করলে আমিও কেন লেখাপড়া শিখতে পারব না?

বোপদেব গুরুর কাছে গিয়ে তার মনের কথা সব বলল, শুনে গুরু খুব খুশি হয়ে বললেন, “অধ্যবসায় থাকলে তুমিও নিশ্চয় বিদ্যালাভ করতে পারবে।”
পরবর্তীতে বিদ্যালাভ করে বোপদেব একজন বিখ্যাত পণ্ডিত হয়েছিলেন। তাঁর লেখা ‘মুগ্ধবোধ’ নামক সংস্কৃত ব্যাকরণের বই আজও ছাত্রেরা পড়ে থাকে।

নীতিকথা : মানুষ তার চেষ্টা ও অধ্যবসায় দ্বারা সকল অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে।

মজার গল্প? কৃষক আর জমিদার

একদিন এক কৃষক তার গাধার পিঠে ধান বোঝাই অনেকগুলো ভারী থলে চাপিয়ে দূরের হাটে বেচতে যাচ্ছিল ।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে একটা বনের কাছে গিয়ে গাধার পিঠ থেকে একটা থলে মাটিতে পড়ে গেল। থলেটা এত ভারী ছিল যে রোগাটে কৃষক সেটাকে গাধার পিঠে তুলতে পারছিল না ।

কৃষক ভাবছিল কী করা যায়! এমন সময় সে দেখতে পেল ঘোড়ায় চড়ে কে একজন তারদিকে দিকেই আসছেন। একটু কাছে আসতেই সে দেখলড়ইনি এ গাঁয়ের জমিদার। এমন মানী লোককে সে কী করে ভারী থলেটা গাধার পিঠে তুলে দিতে বলবে? তবে কৃষকের বিপদ দেখে জমিদার নিজেই এগিয়ে এসে বললেন, “বুঝেছি তুমি একা তুলতে পারছ না; এসো আমরা দুজনে একসাথে হাত লাগাই।” এই বলে দুজনে দুদিকে ধরে সহজেই থলেটাকে গাধার পিঠে তুলে ফেললেন।

কৃষক তখন মাথা নিচু করে বলল, “হুজুর, কী করে যে আপনার এই সহায়তার ঋণ শোধ করব, তা আমার জানা নেই ৷ ”
জমিদার হেসে বললেন, “পথেঘাটে কারও বিপদ দেখলে তুমিও আমার মতো তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিও! তাহলেই ঋণ শোধ হয়ে যাবে।”

নীতিকথা : যেহেতু আমরা মানুষ, সেহেতু প্রত্যেকটি মানুষকেই ভালোবাসতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষই প্রত্যেকটি মানুষের বিপদে-আপদে সহায়তা করতে হবে।

মজার গল্প? নিজেই পারবে

একজন লোক একটা গরুর গাড়ি চালাত । অর্থাৎ লোকটি ছিল গাড়োয়ান । একদিন সে দূরের এক গাঁ থেকে ভারী বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। পথটা একদমই ভালো ছিল না; এক এক জায়গায় খুব কাদা জমেছিল। কিছুদূর এসেই তার গাড়ির একটা চাকা সেই আঠালো কাদায় আটকে গেল। গরু দুটি অনেক টানাটানি করেও চাকাটাকে কিছুতেই টেনে তুলতে পারল না। তাই গাড়িও আর চলল না । লোকটি তখন গাড়ি থেকে নেমে এলো। চারদিকে তাকিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারে এমন কাউকে সে কাউকে দেখতে পেল না। তাই সে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, “হে আল্লাহ, গাড়ির চাকাটা তুলে দাও । হে আল্লাহ দয়া কর ।”

এমন সময় কোথা থেকে একজন লোক এলেন। তিনি বললেন, “ওহে গাড়োয়ান, অপরকে ডাকার আগে নিজে পার কিনা দেখে নাও। ঢাকাটার পিছনে গিয়ে কাঁধ লাগাও । এবার জোরে ঠেলে দাওড় আরও জোরে। ওই দেখ, ঢাকাটা কেমন উঠে এল!”

নীতিকথা : বিপদে বিচলিত না হয়ে মেধা খাটিয়ে বিপদ মোকাবিলার উপায় বের করতে হবে।

মজার গল্প? ইঁদুর আর বিড়াল

একটা বাড়িতে অনেক ইঁদুর বসবাস করত। ইঁদুরেরা বাড়ির লোকদের খুব উৎপাত করত । তাদের খাবারগুলো খেয়ে নিত, জামাকাপড় আর বইখাতা কেটে দিত। তাই বাড়ির লোকেরা ইঁদুরের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে একটা বিড়াল পুষল । বিড়ালটাও প্রতিদিন পাঁচ-সাতটা করে ইঁদুর ধরে মেরে মেরে আরাম করে খেতে লাগল। ইঁদুরেরা পড়ল মহাবিপদে।

ইঁদুররা উপায় না পেয়ে এক রাতে গোপন সভা করল। বিড়ালটির হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পেতে সবাই মরিয়া হয়ে উঠল। সভায় বুড়ো ইঁদুরেরাও কেউ কোনো উপায় বলতে পারল না। অবশেষে একটা নেংটি ইঁদুর বলল, “বিড়ালটার গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হোক। তাহলে বিড়াল যেদিকেই যাবে ঘণ্টা বেজে উঠবে। তখন আমরা ঘন্টার শব্দ শুনে সবাই সাবধান হয়ে যাব” ।

ইঁদুরেরা খুশি হয়ে বলল, “তবে তা-ই করা হোক।”
একটা বুড়ো ইঁদুর দাঁড়িয়ে উঠে বলল, “আমি জানতে চাই-কে কে যাবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে।”

বুড়ো ইঁদুরের কথায় কেউ সাড়া দিল না ।

নীতিকথা : কোনো কাজ বলা সহজ, করা কঠিন ৷

মজার গল্প? বাবুই পাখি আর বাঁদর

বাবুই পাখি তৃণ আর লতা দিয়ে গাছের ডালে সুন্দর বাসা তৈরি করতে পারে। এক সময় নর্মদা নদীর তীরে একটা শিমুল গাছে বাবুই পাখিরা কতকগুলো বাসা তৈরি করেছিল।

শীত আর গ্রীষ্ম-দুটি ঋতু বেশ ভালোই কাটল। বর্ষার আগে বাবুই পাখিরা নিজেদের বাসায় কিছু খাবার সংগ্রহ করে রাখল । এমন সময় বর্ষা এলো। একদিন অনেকক্ষণ ধরে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল । বাবুই পাখিরা ছানাপোনা নিয়ে নিশ্চিন্তে নিজেদের বাসায় বসেছিল। এমন সময় কিচিরমিচির শব্দ শুনে তারা তাকিয়ে দেখল শিমুল গাছটার নিচে একদল বাঁদর বৃষ্টিতে ভিজছে আর শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে।

বাবুই পাখিরা বাঁদরদের ডেকে বলল,“দেখ, আমাদের হাত নেই । শুধু ঠোঁট দিয়ে বাসা তৈরি করে আমরা কেমন আরামে আছি। তোমরা হাত-পাওয়ালা প্রাণীরা বাসা তৈরি না করে পানিতে ভিজে কষ্ট পাচ্ছ।”
নির্বোধ বাঁদরেরা আরো রেগে গেল। তারপর বৃষ্টি থেমে গেলে ওরা শিমুল গাছে চড়ে বাবুই পাখিদের বাসাগুলো ছিঁড়ে দিয়ে গেল।

নীতিকথা : অপরের কর্মকুশলতা দেখে নিজের অপারগতাকে স্বীকার করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ ৷

মজার গল্প? ডোবার ব্যাঙ

একটা ডোবায় বাস করত দুটি ব্যাঙ । তারা শুনেছিল-সাগর নাকি তাদের ডোবার
চেয়েও বড়! সাগরের নাকি এপার-ওপার দেখা যায় না!
একদিন ডোবার সেই ব্যাঙ দুটি চলল সাগর দেখতে । খুব সকালে, রোদ উঠবার আগে, তারা রওনা হলো । থপ থপ করে তারা চলতে লাগল । তখন রোদ উঠল তারপর রোদ আরও কড়া হলো। গরমে ব্যাঙ দুটির গা থেকে ঘাম বের হতে
লাগল ।

বড় ব্যাঙটি তখন ছোট ব্যাঙকে বলল, “অনেক পথ হেঁটেছি। আমার তো মনে হয় আমরা সাগরের খুব কাছে পৌঁছে গেছি।” ছোট ব্যাঙটা বলল, “কই দাদা, সাগর তো দেখছি না!” বড় ব্যাঙ বলল, “উঁচুতে উঠে দেখতে হবে। তুই আমার পিঠে উঠে দাঁড়া, ঠিক দেখতে পাবি।”

ছোট ব্যাঙটা তখন বড় ব্যাঙটার পিঠে উঠে দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। ব্যাঙদের চোখ থাকে মাথার উপরে। তাই ব্যাঙ যদি দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায় তবে সামনের কিছুই দেখতে পায় না; তার চোখে পড়ে পিছনের জিনিস। দাদার পিঠে দাঁড়িয়ে ছোট ব্যাঙ তাই দেখতে পেল পিছনে ফেলে আসা তাদেরই ডোবাটি।

সে বলল, “দাদা, সাগর তো দেখছি ঠিক আমাদের ডোবাটার মতো- একটুও বড় নয়!” বড় ব্যাঙ বলল, “আমি আগেই জানতাম । আমাদের ডোবাটার চেয়ে বড় জলাশয় পৃথিবীতে আর নেই! চল, ডোবায় ফিরে চল।”

নীতিকথা : যেকোনো কিছুতেই অন্ধ বিশ্বাস করা ঠিক নয়। তাতে সত্যটা উপলব্ধি করা যায় না ।

মজার গল্প? কাঠুরে আর সিংহ

এক গাঁয়ে এক কাঠুরে বাস করত। সে বড় গরিব ছিল । বন থেকে কাঠ কেটে আনত । কাঠ বেচে যা পয়সা পেত তাই দিয়ে সংসার চালাত ।
নদীর ধারে বনে একটা বড় পলাশ গাছ ছিল । এক সিংহ মাঝে মাঝে ওই গাছের
তলায় এসে বসত ।

একদিন সিংহ গাছের তলায় বসেছে, এমন সময় ভীষণ ঝড় উঠল । ঝড়ে পলাশ গাছের একটা ডাল ভেঙে সোজা সিংহের ঘাড়ে এসে পড়ল । সিংহ তাতে পলাশ গছের ওপর বেজায় চটল । পলাশ গাছকে কী শাস্তি দেওয়া যায় মনে মনে তার উপায় ভাবতে লাগল ৷
ঠিক ওই সময়ে কাঠুরে বনে ঢুকল । কাঠুরেকে দেখে সিংহের মাথায় একটা ফন্দি এল। সে কাঠুরের কাছে গিয়ে বলল, হ্যাঁ ভাই কাঠুরে, তোমার কি ভালো কাঠ চাই?

কাঠুরে বলল, তা চাই বই-কি।
সিংহ তখন বলল, তুমি এই পলাশ গাছটা কাটো। এর কাঠ ভালো।
কাঠুরে অমনি পলাশ গাছটা কাটতে কুড়ুল তুলল আর সিংহ হাসতে হাসতে চলে গেল। পলাশ গাছ ভাবল, আমি সিংহের কোনো ক্ষতি করিনি। ঝড়ে ডাল ভেঙে তার ঘাড়ে পড়েছে। অথচ সে আমায় বিনাশ করতে চাইছে, এর প্রতিশোধ আমি নেব। কাঠুরেকে ডেকে সে বলল, ওহে, তুমি আমাকে কাটছ কেন?
সিংহ বলেছে তোমার কাঠ ভালো, তাই কাটছি, জবাব দিল কাঠুরে।

পলাশ গাছ বলল, ঠিক বলেছে সিংহ। তবে আমিও তোমাকে একটা কথা জানাই। সিংহকে মেরে তার চর্বি দিয়ে মাজলে ধারালো হবে তোমার কুড়ুল কিন্ত সিংহ তো চলে গেল, তাকে মারব কেমন করে? মাথা চুলকে বলল কাঠুরে। পলাশ গাছ ডালপালা নেড়ে বলল, সিংহ বেশিদূর যায়নি। ওই তো দেখতে পাচ্ছি আমি। জোরে দৌড়ে গিয়ে তাকে ধর আর কুডুলের ঘা দিয়ে মেরে ফেল । কাঠুরে সেইমতো জোড়ে গিয়ে কুড়ুলের এক কোপে সিংহকে মেরে ফেলল ।

মজার গল্প? সিংহ এবং বেড়াল

অর্বুদ পাহাড়ের গুহায় থাকত মহাবিক্রম নামে এক সিংহ। সেখানেই একটা
গর্তে থাকত একটা ছোট্ট ইঁদুর ।
গর্র্র্-গফ! গর্র্র্-গফ!
যখনই নাক ডাকিয়ে ঘুমোত সিংহ, তখনই গর্ত থেকে বেরিয়ে তার কেশরে হুটোপাটি করত সেই ছোট্ট ইঁদুর। সিংহমশাই ল্যাজ ঝাপটালেই তুড়ুক তুড়ুক
করে ঢুকে পড়ত গর্তে

“একদিন তোকে ধরি, তারপর দেখাচ্ছি মজা!”— রেগে গর্জন করত মহাবিক্রম
কিন্তু মুশকিল হলো, ইঁদুর এতই পুঁচকে যে তাকে ধরারও তো কোনো উপায় বের করতে পারত না সে ।
শেষমেষ সে ভাবল, একটা বেড়াল পোষার কথা ।
সেইজন্য একদিন সে পাহাড় থেকে নেমে ধরে নিয়ে এল একটা বেড়াল ।

“তোমায় কিন্তু নিয়ে এসেছি আমার ইঁদুর ধরার জন্য”-
মহাবিক্রম সোজাসুজি বলেই দিল বেড়ালটাকে।
আর তারপরই ভালো ভালো সব খাবার আনতে লাগল ওই বেড়ালের জন্য- মাছ, দুধ রকমারি সব মাংস আরও কত কী!
বেড়ালের তো পোয়াবারো। মনের আনন্দে খেতে লাগল সে মহাভোজ।
সেই রাত্তিরে, যেই না ইঁদুর গর্তের বাইরে এসেছে, অমনি খাপ করে বেড়ালটা টুটি টিপে ধরল তার।
ইঁদুর মরতে সিংহ তো মহাখুশি।

ইঁদুরই যখন মরে গেছে, আর তো বেড়ালকে তোয়াজ করার দরকার নেই।
ব্যস্ সিংহ ভুলেই গেল তার কথা। ভালো-মন্দ দূরের কথা, খাবারই জোটে না এখন বেড়ালের।
না খেতে খেতে বেচারি বেড়াল একদিন মরেই গেল।

নীতিকথা : কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি।

মজার গল্প? অল্পবুদ্ধি সারস পাখি

ঐরাবতী নদীর ধারে এক বিশাল ডুমুর গাছ। সেখানেই বাসা বেঁধে থাকত এক সারস দম্পতি।
সেই গাছেরই অন্য একটা ফোকরে থাকত সাপ । প্রত্যেকবারই তো কী, ডিম পাড়ার পর যেই বাচ্চা ফুটে বেরোত, পাখির বাসায় ঢুকে সাপ সবগুলোকে সাবার করত।

একদিন ওই নদীর ধারেরই এক বাসিন্দা, সারস-বউ বলল, ‘বজ্জাত সাপটাকে জব্দ করার জন্য তুমি কিছু একটা করো।”
“আমি কী আর করব বলো!” বলল সারস-বউ।
“আমি হলে বাপু একটা ফন্দি করতাম। কিছু মাছ ধরে, বেজির গর্ত থেকে একেবারে সাপের ফোকর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতাম। মাছ খেতে খেতে বেজি সাপের ফোকর পর্যন্ত আসতই ।

আর সাপের সঙ্গে বেজির কীরকম দোস্তি তো জানই!!” সারস-বউ ভাবল, বাঃ, মতলবখানা তো দারুণ!
পরের দিনই কাজে লেগে গেল সারস-বউ, যেমনটি ও বলেছিল ঠিক তেমনই।

বেকী তা জাতিই মাছ থেকে থেতে চলে এল সাগের ফোকরে। আর সেখানে খেয়ে হোল। তারপর যেই না সে ঘাড় ঘুরিয়েছে বাসায় ফিরবে
জামা। বেশি খুশি হয়ে ভাবল।
পাখির ছানাও তার ভারি পছন্দ। কাজেই তরতর করে উঠে গেল ওপরে। আর সেওঁলোকেও শেষ করল সে।
সাপটাকে জব্দ করতে গিয়েছিল সারস-বউ, কিন্তু বাচ্চাগুলোরও যে প্রাণ যাবে সেই সঙ্গে, সেটা কি আর ভাবতে পেরেছিল।

নীতিকথা : সব ভালো তার, শেষ ভালো যাৱ ৷

মজার গল্প? কাক আর তিতির পাখি

পাখিদের রাজা গরুড় থাকে সমুদ্রের ধারে। বছরে একটা দিন সমস্ত পাখি আসতে
সেখানে রাজার সঙ্গে দেখা করতে।
একবার হলো কী, চটপটে কাক, নিটপিটে তিতির পাখিকে বলল, “চলো না, দুজন একসঙ্গে যাই। এতটা রাস্তা যাওয়া-কখন কাকে কার কাজে লাগে বলা যায় না!” তিতির বলল, “তা বেশ তো। একা একা যেতে তো আমারও ভালো লাগে না। তাই কাক আর তিতির সেবার বেরোল একসঙ্গে । কিন্তু কাক তো মহা চোর । উড়ে যেতে যেতে যা দেখে তাই সে চুরি করতে করতে যায়।

কখনো ভাঁড় থেকে দই নিয়ে হুশ্ করে উড়ে পালাল সে।
আবার কখনো ঝুপ করে মিষ্টির দোকান থেকে একটা গরম জিলিপি তুলে নিল । তার পরে কিন্তু কাক একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলল ।
একটি রাখাল ছেলে সবে তার দইয়ের ভাঁড় নামিয়ে রেখেছে মাটিতে- অমনি কাক গিয়ে ছোঁ মারল তাতে!
সঙ্গে সঙ্গে একটা পাথর কুড়িয়ে রাখাল ছেলে ছুড়ে মারল কাককে ।

ছটপট ঝটপট করে ডানা ঝাপটে কাক তো পগার পার ।
কিন্তু তিতির-
পাথর গিয়ে লাগল ওই তিতিরের গায়ে, আর বেচারি তিতির প্রাণ হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল সেখানে।

নীতিকথা : সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ ।

মজার গল্প? গাধার গায়ে বাঘের চামড়া

সে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। হস্তিনাপুর নগরে থাকত এক রজক। তার ছিল একটি গাধা কাপড়ের পেল্লাই সব গাঁটরি নিয়ে গাধা যেত নদীতে, আবার কাচা হলে তা বয়েও আনত। অথচ রজক তাকে পেটপুরে খেতেও দিত না । ক্রমে সে এত দুর্বল হয়ে গেল যে, মুট বওয়ার ক্ষমতা আর তার রইল না। রজকের মাথায় একটা মতলব খেলে গেল। গাধার শরীরটা সে ঢেকে দিল একটা বাঘের চামড়া দিয়ে। বলল, “এবার মাঠে গিয়ে যা খুশি তাই খা। চাষারা ভাববে তুই বাঘ, কেউ কিচ্ছু করবে না।”

তারপর থেকে প্রত্যেক দিন সন্ধেবেলা ওইভাবে মাঠে যেতে লাগল গাধা। চাষিরা যেই দেখে একটা বাঘ আসছে, অমনি সব বাড়িমুখো ছুট লাগায় ৷

শেষকালে বিরক্ত হয়ে একটা চাষি বলল, “বড় জ্বালাচ্ছে তো বাঘটা! একটা উপায় কিছু করতেই হবে।”
সে করল কী, বিরাট এক চট মুড়ি দিয়ে পাশের লম্বা লম্বা ঘাসের ঝোপে লুকিয়ে রইল। গাধাটা এসে যখন ওই চট-চাপা-দেওয়া চাষিকে দেখল, সে ভাবল ওটা বুঝি আর-একটা গাধা! তাই মনের আনন্দে চিৎকার করে তার দিকে ধেয়ে গেল ।

ঘ্যাকু-ঘ্যাকু-ঘ্যাকু-
“আরে! এটা তো দেখছি একটা গাধা!” প্রথমটা হতচকিয়ে গিয়েছিল চাষি। কিন্তু তারপরই রাগের চোটে শুরু করল মার। মারতে মারতে মেরেই ফেলল সে গাধাটাকে ৷

” নীতিকথা : ভয় করলেই ভয়, নইলে কিছু নয় ৷

মজার গল্প? বেড়াল আর শকুনের গল্প

গঙ্গানদীর তীরে বিরাট এক ডুমুর গাছে থাকত একটা অন্ধ শকুন, নাম তার জরদ্‌গব ।
কাছেপিঠে যত পাখি ছিল, তারাই জরদ্‌বকে খাবার জোগাত । আর তার বদলে
জরদ্‌গব তাদের সব বাচ্চাকাচ্চাকে পাহারা দিত ।

একদিন সেখানে এক বেড়াল এসে হাজির। শকুনটা কানা দেখে সে একগাল হেসে গলায় মধু মাখিয়ে বলল, “হুজুর, আমি সামান্য এক বেড়াল। একটা থাকবার জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছি। হুজুরের আপত্তি না হলে আমি কি এই গাছে থাকতে পারি?”
“কক্ষনো না। এখানে অনেক পাখির বাচ্চা আছে, সব তুমি শেষ করবে,” বলল শকুন।

“কী বলছেন হুজুর!” ধূর্ত বেড়াল বলল, “আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছি, জীবনে কোনো জ্যান্ত প্রাণী খাব না!”
বেড়ালের কথা শুনে মহাখুশি জরদ্‌গব বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, এখানে থাকতে পার তুমি।”
কিন্তু বেড়াল তো বেড়ালই, তার স্বভাব যাবে কোথায়! কিছুদিনের মধ্যেই সে পাখিদের ছানাপোনা খেতে আরম্ভ করল ।

ছানাদের বাবা-মায়েরা তো গেল বেজায় রেগে। তারা বলল, “দেখতেই হবে এই কাজ করছে কে!”
কথাটা শুনতে পেল বেড়াল । আর সে থাকে গাছে! গাছ থেকে লাফিয়ে পড়েই সে তো সেখান থেকে হাওয়া ।
এদিকে পাখিরা খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে ছানাপোনার হাড়গোড় সব ছড়িয়ে আছে জরদ্‌গবের বাসায়। তখন রাগে অগ্নিমশা হয়ে তারা মেরে ফেলল
জরদ্‌গবকে।

নীতিকথা : দুর্জনকে পরিহার, খুরে খুরে নমস্কার ।

মজার গল্প? দুটি বোকা বিড়াল

একবার দুটি বিড়াল একখানা রুটি চুরি করেছিল । তারা রুটিখানাকে দুভাগ করে নিল । কিন্তু তাদের মনে হলো দুটি ভাগ সমান হয়নি। এই নিয়ে দুজনে খুব তর্ক শুরু হলো। এ বলে-তোর ভাগটা বড়; ও বলে-তোর ভাগটা বড়। তর্ক আর ঝগড়া করেও তারা কিছুই মীমাংসা করতে পারল না।
অবশেষে তারা একটা বাঁদরের কাছে গিয়ে বলল, “দেখ তো ভাই, আমাদের রুটির ভাগ সমান হয়েছে কি না।”

বাঁদর দুহাতে দুটুকরো রুটি নিয়ে ওজন পরখ করতে লাগল । তারপর বলল, “ডান হাতেরটাই ভারী।” এই বলে সে ডান হাতের রুটি থেকে এক কামড় খেয়ে নিল এখন আবার ওজন পরখ করে বলল, “না! এবারে বাঁ হাতেরটাই ভারী লাগছে।” এই বলে সে বাঁ হাতের রুটি থেকেও এক কামড় খেয়ে নিল ।

নির্বোধ বিড়াল দুটি হতাশভাবে বাঁদরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বাঁদর বলল, “কেউ আমার দুর্নাম করতে পারবে না, আমি ঠিক সমান ভাগ করে দেব। এই যা! এবারে আবার ডান হাতেরটা ভারী লাগছে।” এভাবে, একবার ডান হাতের রুটি থেকে, একবার বাঁ হাতের রুটি থেকে খেতে খেতে রুটির আর সামান্যই বাকি রইল!

অবশেষে বাঁদর বলল, “এই ছোট টুকরো দুটি আমি আমার পারিশ্রমিক হিসাবে খেয়ে নিলাম।”

নীতিকথা : সামান্য লাভের আশায় কারো সাথে অযথা তর্ক বা দ্বন্দ্ব ভালো কাজ নয় ।

মজার গল্প? বাঘ আর শুয়োর

একদিন এক ছুতোর বনে কাঠ জোগাড় করতে গেল। সেখানে সে এক শুয়োর ছানা দেখতে পেল। শীতে কাঁপছিল শুয়োর ছানাটা। তাই দেখে ছুতোরের ভারী
মায়া হলো। সে সেটাকে বাড়িতে নিয়ে এল ।
দিনে দিনে শুয়োরছানাটা বড়ো হলো। খেয়েদেয়ে মোটাও হলো খুব ।

একদিন ছুতোর ভাবল, মাংসের লোভে শুয়োরটাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। যদি সে তাকে বনে রেখে আসে, তাহলে কেউ আর মারতে পারবে না । এই ভেবে ছুতোর শুয়োরটাকে বনে রেখে এল ।
বনের ভিতর মোটা শুয়োরের সঙ্গে একদল শুয়োরের দেখা। হাড় জিরজিরে চেহারা তাদের।

মোটা শুয়োর তাদের জিজ্ঞেস করল, হ্যাঁ ভাই, বনে খাবারদাবারের অভাব নেই, তবু তোমরা এমন রোগা কেন?
শুয়োরের দল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ভাই, বনে একটা বাঘ আছে। সে কার ঘাড়ে কখন লাফিয়ে পড়ে, সবসময় এই ভয়ে থাকি । ভালো করে খেতেই পারি না, তাই এমন রোগা । মোটা শুয়োর সব শুনে বলল, ওই বাঘকে আমি জব্দ করব। তবে আমি যা বলব, তোমরা তাই শুনবে। আর বাঘকে দেখে কেউ পালাবে না

একথায় শুয়োরের দল রাজি হলো
মোটা শুয়োর তখন সব শুয়োরকে নিয়ে একটা উঁচু জায়গায় গেল। সেখানে সে একটা মস্ত গর্ত খুঁড়ল । গর্ত খোঁড়া সবে শেষ, এমন সময়ে কিছুদূরে ভীষণ গর্জন করে সেই বাঘটা এসে দাঁড়াল ।

বাঘকে দেখে শুয়োরের দল পালাল না। তাই দেখে বাঘ ভারী অবাক হল । সে কটমট করে শুয়োরদের দিকে তাকাল ।
মোটা শুয়োর তখন হাঁক দিয়ে বলল, ভাইসব, তোমরাও কটমট করে তাকাও। বাঘ যেমনটি করবে, তোমরাও তেমনটি কর।
বাঘ একটা মস্ত হাই তুলল। শুয়োরের দলও সঙ্গে সঙ্গে হাই তুলল । বাঘ ল্যাজ নাড়ল । শুয়োরেরাও অমনি ল্যাজ নাড়ল ।

বাঘ ভাবল, শুয়োরগুলো আগে আমাকে দেখে দৌড়ে পালাত। আজ দেখি ঠিক তার উলটো। ওই মোটা শুয়োরটার জোরেই ওদের এত সাহস। আজ ওটাকেই মারব— এই ভেবে সে শূন্যে একটা লাভ দিল। সঙ্গে সঙ্গে মোটা শুয়োর একপাশে সরে দাঁড়াল । আর বাঘ পড়ে গেল গর্তে।
গর্ত থেকে বাঘ আর উঠতে পারল না। শেষে মরে গেল ।

মজার গল্প? সাদা হাতি

নদীর ধারে বিশাল বনে এক সাদা হাতি থাকত। তার মা ছিল অন্ধ। তাই সে গাছের ফল পেড়ে, লতাপাতা ছিঁড়ে এনে মাকে খাওয়াত। মায়ের দেখাশোনা
করত।

একদিন একটা লোক বনের মধ্যে পথ হারিয়ে কাঁদছিল। সাদা হাতি তার কান্না শুনে কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ভাই, তুমি কাঁদছ কেন?
লোকটা বলল, আমি বনে পথ হারিয়ে ফেলেছি। তাই কাঁদছি।

সাদা হাতি তখন বলল, তুমি আর কেঁদো না। আমার পিঠে ওঠো। আমি তোমাকে বনের বাইরে রেখে আসব ।
লোকটা সাদা হাতির পিঠে চড়ে বসল। সাদা হাতি তাকে পিঠে নিয়ে বনের বাইরে রেখে এল ।

দেশের রাজার একটা হাতি চাই। রাজা ঘোষণা করলেন, যে তাঁকে হাতির খোঁজ এনে দেবে, তাকে তিনি অঢেল ধনরত্ন দেবেন।
রাজার ঘোষণা লোকটার কানে গেল ।
একটুও দেরি না করে সে রাজাকে বনের সাদা হাতির কথা জানাল ।

রাজা হাতিটা ধরে আনতে হুকুম দিলেন। হাতি শিকারি তখনই বন থেকে হাতিটাকে ধরে এনে শেকলে বেঁধে হাতিশালে রাখল ।
খবর পেয়ে রাজামশাই এলেন। হাতিটার গায়েপিঠে হাত বুলালেন। সোনার থালায় সুমিষ্ট ফল খেতে দিলেন
কিন্তু হাতি খেল না।

রাজা তাই দেখে মধুর স্বরে সাদা হাতিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ফল খেলে না কেন? সাদা হাতি বলল, মহারাজ, আমার মা অন্ধ । আমিই তাঁকে রোজ খাওয়াই-দাওয়াই । আপনি আমায় বন্দি করে রেখেছেন- কে আজ তাঁকে খাওয়াবে? আপনার দেওয়া ফল আমি খাব আর আমার মা না খেয়ে থাকবেন, এ কি হয়!

মায়ের ওপর সাদা হাতির মমতা দেখে রাজা মুগ্ধ হলেন। বললেন, আমি তোমাকে আর বন্দি করে রাখব না। এখনই বাঁধন খুলে দিচ্ছি। তুমি তোমার অন্ধ মায়ের কাছে ফিরে যাও। তাঁর দেখাশোনা কর ।
এই বলে রাজা সাদা হাতিকে মুক্ত করে দিলেন,
মুক্তি পেয়ে সাদা হাতি বনে চলে গেল।

মজার গল্প? হাঁস ও সূর্য

হিমালয় পাহাড়ে থাকত দুটো হাঁস। একটা ছোট, একটা বড়। তারা রোজ ভোরবেলায় উড়ে যেত । সারাদিন সরোবরে সাঁতার কাটত, টুপটুপ করে ডুব দিয়ে গুগলি খেত। কখনও পাড়ে উঠে রোদ পোহাত। সন্ধ্যে হলে আবার হিমালয়ে বাসায় ফিরে যেত।
একদিন ছোট হাঁস বাসা থেকে উঁকি মেরে দেখল, পুব আকাশে গোল থালার মতন লাল সূর্য উঠেছে। তার কী মনে হলো কে জানে। সে বড় হাঁসকে বলল, আমি সূর্যের কাছে যাব ।

বড় হাঁস বলল, ভাই, অমন কাজটি কখনো কর না। সূর্যের কাছে যেই যাবে, অমনি ভয়ানক তাপে তোমার পাখা পুড়ে যাবে। তুমি আর উড়তে পারবে না। নিচে পৃথিবীতে পড়ে মারা যাবে ।
ছোট হাঁস বড় হাঁসের নিষেধ শুনল না। সে ডানা মেলে সূর্যের দিকে উড়ে গেল ।

ছোট হাঁসের বুদ্ধিসুদ্ধি কম, সে ভারী অবুঝ। সত্যি যদি সূর্যের কাছে যাম্ভূতাহলে তো নির্ঘাত মৃত্যু! এই ভেবে বড় হাঁস ছোট হাঁসের পেছনে উড়ে চলল । সকাল গড়াল । দুপুর হলো । ঘাসের ডগায় শিশির শুকাল । সূর্য পূর্ব আকাশ থেকে মাঝ আকাশে এল ।

ভরদুপুরের গনগনে সূর্যের কাছাকাছি যেতেই ছোট হাঁসের পাখা জ্বলে গেল । গলা শুকিয়ে কাঠ হলো। সে আর উড়তে পারল না। শোঁ শোঁ করে নিচে পড়তে থাকল । বড় হাঁস তাই দেখে তাড়াতাড়ি উড়ে এসে ছোট হাঁসকে তার পিঠে করে নিল। তারপর সোজা হিমালয়ের বাসায় চলে এল ।
ক্লান্তিতে, শান্তিতে ছোট হাঁস তখন ধুঁকছিল । চিঁচিঁ করে সে বলল, একটু জল । বড় হাঁস তখনই ঠোঁটে করে শীতল জল এনে দিল। তা খেয়ে ছোট হাঁস চাঙ্গা হলো একটু ।

বড় হাঁস তখন ছোট হাঁসকে বলল, আর কখনো সূর্যের কাছে যাবে?
ছোট হাঁস আস্তে আস্তে ঘাড় নেড়ে বলল, না ভাই, ঢের শিক্ষা হয়েছে। আর কখনো এমন কাজ করব না

মজার গল্প? রাজা আর চিতল হরিণ

কোশলের রাজা একদিন হরিণ শিকারে বেরিয়েছেন। বনে ঢুকেই তিনি ঘোষণা করলেন, যার পাশ দিয়ে হরিণ পালাবে, তার কঠিন সাজা হবে।
রাজার এই ঘোষণা শুনে তাঁর সঙ্গীসাথিরা ভয় পেল। তারা শরাপরামর্শ করে ঠিক করল, বনের যত হরিণ আছে, সব রাজার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে । রাজার পাশ দিয়ে হরিণ পালাল, তিনি আর কাউকে সাজা দিতে পারবেন না ।

এই ভেবে তারা হরিণের যত ডেরা ছিল, সব খুঁজে বের করল। তারপর সেখানে দামামা বাজিয়ে, প্রাণপণ চেঁচিয়ে, বিষম শোরগোল জুড়ে দিল ।
এত হইচই হট্টগোলে, হরিণেরা ভয় পেয়ে, ডেরা ছেড়ে দলে দলে রাজার দিকেই দৌড়ে গেল ৷
একটা চিতল হরিণ ঝড়ের বেগে রাজার পাশ দিয়ে চলে গেল । রাজা তাই দেখে তাড়াতাড়ি তির ছুড়লেন, কিন্তু হরিণের গায়ে তা বিধিল না। একপলকে সে বনের গভীরে ঢুকে গেল ।

রাজা সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার পিঠে লাফিয়ে উঠে চিতল হরিণের পিছু নিলেন । প্রাণের ভয়ে চিতল হরিণ হাওয়ার বেগে দৌড়াতে লাগল । সামনে এক গভীর গর্ত। এক মুহূর্তে থমকে দাঁড়াল । তারপর মস্ত একটা লাফ দিয়ে গর্তটা পার হয়ে গেল ।

হরিণের পিছনে ছুটছেন রাজা। তারও সামনে ওই গর্ত পড়ল। লাফ দিয়ে পার হতে গেলেন, কিন্তু পারলেন না। ঘোড়ার পিঠ থেকে গভীর গর্তে পড়ে গেলেন। বাঁচাও, বাঁচাও বলে আর্তনাদ করে উঠলেন রাজা ।
সেই আর্তস্বর চিতল হরিণের গানে গেল। স্বর লক্ষ করে সেই গর্তের কাছে সে এলো। গর্তের ভেতরে রাজাকে দেখে সে বলল, মহারাজ, ভয় নেই। আমি এখনই আপনাকে উদ্ধার করছি।

রাজা হরিণের কথায় খুবই অবাক হলেন । বললেন, আমি তোমায় মারতে চেয়েছি, আর তুমি কিনা আমায় বাঁচাতে চাইছ!
হরিণ বলল, মহারাজ, আপনি বিপদে পড়েছেন। প্রাণের বিনিময়েও বিপন্নকে রক্ষা করা জীবনের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই বলে হরিণ তার শিং দিয়ে একটা লতা ছিঁড়ে নিয়ে গর্তে ফেলে দিল আর শক্ত করে লতাটা ধরে রাখাল কোশলরাজ লতাটা ধরে ওপরে উঠে এলেন ।
হরিণের মহত্ত্বে রাজা যারপরনাই মুগ্ধ হলেন। সেই মুহূর্তে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, আর কখনো হরিণ শিকার করবেন না ।

মজার গল্প? কোবরেজ ও কেউটে সাপ

এক গাঁয়ে এক কোবরেজ ডাক্তার ওষুধে গায়ের লোকের রোগ তেমন সারত না। তাই গাঁয়ের লোকে অসুখে-বিসুখে চিকিৎসার জন্য তাকে খুব একটা ডাকত না। একদিন সকাল থেকে বিকেল অবধি একজনও রোগী এলো না। একটা পয়সাও তার রোজগার হলো না। তাই কোবরেজের মনটা বেজায় খারাপ হয়ে গেল । সে কোবরেজখানা বন্ধ করে মাঠের দিকে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে একটি বট গাছের কাছে এলো। মস্ত বট গাছ। তার নিচে গাঁয়ের ছেলেরা লুকোচুরি খেলছিল।

কোবরেজ বট গাছে হেলান দিয়ে বসে তাদের খেলা দেখতে লাগল ।
হঠাৎ একটি হিসহিস আওয়াজ কোবরেজের কানে এলো। সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বট গাছের মোটা ডালের ফোকরে একটা কেউটে সাপ দেখতে পেল । কী তার কুলোপানা চক্কর! কী তার ফোঁসফোঁসানি!

ভয়ে বট গাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়াল কোবরেজ ।
ভাবল, ছেলেদের কাউকে যদি সাপটা কামড়ায়, তবে চিকিৎসার জন্য তাকে ডাকবে, আর হাতে তার রোজগার হবে। এই ভেবে সে মনে মনে একটা ফন্দি আঁটল।

যেই ছেলেদের খেলা ভাঙল, অমনি সে একটা ছোট ছেলেকে ডেকে বলল, শালিক পাখির ছানা নিবি?
মহানন্দে মাথা নেড়ে ছোট ছেলেটি বলল, হ্যাঁ, কোথায় আছে বল ।
চুপিচুপি আয় আমার সঙ্গে, দেখিয়ে দিচ্ছি- এই বলে কোবরেজ ছোট ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে বট গাছের নিচে এলো ।

উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, ওই যে মোটা ডালটাতে ফোকর দেখছিস, ওতেই শালিক পাখির ছানা আছে। গাছে চড়ে, হাত ঢুকিয়ে বের করে নে । কোবরেজের কথামতন ছোট ছেলেটা বট গাছে চড়ল । ফোকরে হাত ঢুকিয়ে শা-ি লকের ছানা ভেবে কেউটে সাপকে শক্ত করে মুঠো ধরল। হাত বের করতেই দেখল হাতে একটা কেউটে সাপ!

বাবারে! গেলুম রে! চেঁচিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি সাপটাকে সে নিচে ছুড়ে ফেলে দিল । সাপটা গিয়ে পড়ল একেবারে কোবরেজের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে ছোবল মারল তাকে। বিষের জ্বালায় ছটফট করতে করতে মারা গেল কোবরেজ ।

মজার গল্প? সিংহ, কচ্ছপ আর ঈগল

এক বনের ভিতরে মস্ত বড় একটা দিঘি ছিল। সেই দিঘির পাড়ে বিশাল এক তাল গাছ দাঁড়িয়ে। তাল গাছের মাথায় থাকত এক বাজপাখি, তার বউ আর দুটি বাচ্চা। বাচ্চা দুটি ডানা মেলে উড়তে শেখেনি তখনও ।
বউ একদিন বাজপাখিকে বলল, ‘হ্যাঁগো, তোমার বন্ধু নেই?

আছে বই-কি! এই দিঘির কচ্ছপ আর বনের পশুরাজ সিংহ আমার বন্ধু । তাছাড়া, পাখিদের ভেতর ঈগলও আমার বন্ধু বটে। তা একথা জানতে চাইছ কন? বউকে জিজ্ঞেস করল বাজ পাখি ।
বউ বলল, তুমি সারাদিন বাসায় থাক না। আমি একলা দুটি বাচ্চা নিয়ে থাকি যদি কখনও কোনো বিপদে পড়ি, তোমার বন্ধুদের জানাতে পারি। তারা নিশ্চয়ই
তখন সাহায্য করবে।

অবশ্যই। আমার তিন বন্ধু খুব ভালো- এই বলে বাজপাখি উড়ে গেল ।
একদিন এক পাখি শিকারে ওই বনে ঢুকল। তাল গাছের মাথায় বাজপাখির বউ আর তার বাচ্চাদুটোকে দেখতে পেল ।

তখন সন্ধ্যা হয় হয়। গাছ বেয়ে মাথায় ওঠার আগে যদি রাত নামে- এই ভেবে শিকারি একটা মশাল বানাল। তারপর মশাল জ্বালিয়ে তরতর করে তাল গাছে উঠতে থাকল ।

বাজপাখির বউ সব দেখল। বিপদ বুঝে উড়ে গিয়ে ইগলকে জানাল । ইগল এসে ছোঁ মেরে শিকারির হাত থেকে মশাল কেড়ে নিল আর ঠোঁট দিয়ে তাকে ঠোকরাতে লাগল । শিকারি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গাছ থেকে নেমে পড়ল । এদিকে অসাবধানে ইগলের ডানায় মশালের আগুন ধরে গেল। তাই দেখে বাজপাখির বউ তখন কচ্ছপের কাছে গেল। ঈগলের বিপদের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে কচ্ছপ দিঘি থেকে জল এনে ঈগলের গায়ে ছিটিয়ে দিল ।
আগুন নিভে গেল ।

কচ্ছপকে দেখে শিকারি তাকে ধরতে গেল । তাই দেখে বাজপাখির বউ ঝড়ের বেগে উড়ে সিংহের কাছে গেল। কচ্ছপের বিপদের কথা শুনে সিংহ ভীষণ গর্জন করে ছুটে এলো ।
সিংহকে দেখে শিকারি বেজায় ভয় পেল। তক্ষুনি সে বন থেকে ছুটে পালাল ।

মজার গল্প? কুকুরের ভোজ খাওয়া

একদিন এক গৃহস্থ তার বন্ধুকে দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত জানিয়েছিল। তাই রান্নাঘরে ভাল ভাল খাবার তৈরি হতে লাগল ।
রান্নার আয়োজন দেখে সেই বাড়ির পোষা কুকুরটি খুবই খুশি হয়েছিল । সেও তার বন্ধু রাস্তার কুকুরকে দুপুরে তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে এল।

রান্নাঘরের বাইরে দু’জনে বসেছে। সুস্বাদু লোভনীয় খাবারের গন্ধে জিভে লালা ঝরছে কুকুরের। আনন্দে পথের কুকুর ভাবল, বন্ধু তো দেখছি আমার জন্য আয়োজন খুব ভালই করেছে। মনে হচ্ছে আগামীকালও সারাদিন কিছু খাওয়ার দরকার হবে না ।

পথের কুকুর বন্ধুকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে লেজ নাড়াতে লাগল ।
এমন সময় দোরগোড়ায় কুকুরের আনাগোনা চোখে পড়ল রঁধুনীর। সে দৌড়ে বেরিয়ে এসে খপকরে পথের কুকুরের ঠ্যাং ধরে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল । তা দেখে অন্য কুকুরটি লেজ গুটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল ।

Read More: গল্পের বই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top